চলনবিল থেকে ৩৬৯ মেট্রিক টন মধু সংগ্রহ
এগ্রিবিজনেস
বৃহত্তর চলনবিলের বিস্তীর্ণ সরিষা ক্ষেতে ভ্রাম্যমাণ মৌমাছির খামার বসিয়ে মৌচাষের মাধ্যমে এ বছর ৩৬৯ মেট্রিক টন মধু সংগ্রহ করেছেন মৌ-খামারীরা। এদিকে মৌমাছির ব্যাপক পরাগায়নের ফলে সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনায় খুশি কৃষকরা।
সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. আবু হানিফ বলেন, চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জ জেলার সিরাজগঞ্জ সদর, কামারখন্দ, চৌহালী, বেলকুচি, শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, কাজিপুর, রায়গঞ্জ ও তাড়াশ উপজেলাতে ৫৪ হাজার ৬৫৫ হেক্টর ক্ষেতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। সেসব ক্ষেতের সরিষার ফুল থেকে গত সোমবার দিন পর্যন্ত ২৮৮ মেট্রিক টন মধু সংগ্রহ করতে পেরেছেন মৌ-খামারীরা।
নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. মাহমুদুল ফারুক বলেন, চলনবিল অধ্যুষিত নাটোর জেলার নাটোর সদর, নলডাঙ্গা, সিংড়া, গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, লালপুর ও বাগাতিপাড়া উপজেলাতে ৭ হাজার ৭৪৮ হেক্টর ক্ষেতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। এসব ক্ষেতের সরিষা ফুল থেকে গত সোমবার পর্যন্ত ৮ মেট্রিক টন ১০ কেজি মধু সংগ্রহ করেছেন মৌ-খামারীরা।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, চলনবিল অধ্যুষিত পাবনা জেলার পাবনা সদর, আটঘরিয়া, ইশ্বরদী, বেড়া, ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর, ফরিদপুর, সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলাতে ৮ হাজার ১০০ হেক্টর ক্ষেতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। এসব ক্ষেতের সরিষা ফুল থেকে গত সোমবার পর্যন্ত ৭৩ মেট্রিকটন মধু সংগ্রহ করতে পেরেছেন মৌ-খামারীরা।
সিরাজগঞ্জ, নাটোর ও পাবনা জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এই তিন কর্তা ব্যক্তি আরও বলেন, এ বছর বিল অঞ্চলে সরিষার আবাদ বৃদ্ধির সাথে মধু উৎপাদন বেড়েছে।
সরজমিনে সোমবার (১৭ জানুয়ারি) চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ উপজেলার মাগুড়াবিনোদ ইউনিয়নের মাগুড়া গ্রাম এলাকা ও সগুনা ইউনিয়নের কুন্দইল গ্রাম এলাকার বিস্তীর্ণ মাঠের সরিষা ক্ষেতগুলোয় দেখা যায়, বহিরাগত ও স্থানীয় মৌ খামারীরা মৌ বাক্সগুলো সরিষা ক্ষেতের আশপাশে রেখেছেন। সেসব মৌ বাক্স থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাচ্ছে মৌমাছি। ঘুরে বেড়াচ্ছে সরিষার ফুলে ফুলে। এরপর মধু সংগ্রহ করে ফিরছে মৌ বাক্সের মৌচাকে। এ সময় মৌ খামারীদের অতি ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায়। অনেকে মৌ বাক্স থেকে মধু ভর্তি মৌচাক বেড় করে মেশিনের সাহায্যে মধু উৎপাদন করছেন। কেউ কাঠ দিয়ে মৌচাকের জন্য নতুন নতুন ফ্রেম তৈরি করছেন।
সাতক্ষিরা উপজেলার বহিরাগত মৌ খামারী বাবু, শহিদুল ও রেজা বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। যে কারণে বেশি মধু সংগ্রহ হয়েছে। দামও ভালো। প্রতিকেজি মধু ক্ষেত থেকেই ৩৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
নাটোরের সিংড়া উপজেলার স্থানীয় মৌ খামারী বাবুল হোসেন মুঠো ফোনে বলেন, আমি সরিষার মৌসুমে ৬০ থেকে ৭০ মণ মধু সংগ্রহ করি। এতে ৩ থেকে সারে ৪ লাখ টাকা আয় হয়।
কুন্দইল গ্রামের কৃষক ছরোয়ার হোসেন, মন্টু মিঞা, ছোহরাব আলী, সিরাজ উদ্দিন ও মইনুল ইসলাম বলেন, এ বছর মৌমাছির ব্যাপক পরাগায়নের ফলে সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনায় আমরা বাড়তি আয়ের আশা করছি।
তাড়াশ ডিগ্রী কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক মর্জিনা ইসলাম বলেন, মৌচাষ অতীব পরিবেশ সম্মত শিল্প ব্যবসা। তাছাড়া ফসলের জন্য অত্যন্ত উপকারি। এপিস মেলফেরিয়া পোষা জাতের মৌমাছির মাধ্যমে অল্প পুঁজি খাটিয়ে অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র কুটির শিল্প (বিসিক) রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের আঞ্চলিক পরিচালক (উপ সচিব) মো. রেজাউল আলম সরকার বলেন, মধু উৎপাদনের মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি ও দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে ১৮ হাজার মৌ খামারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।