লকডাউন: ডিম নিয়ে বিপাকে খামারিরা!
পোলট্রি
করোনার প্রকোপ দিন দিন বাড়ছে। আর এই করোনার প্রকোপ থেকে রক্ষায় সারাদেশে চলছে লকডাউন। তবে এই লকডাউনে সকল দোকান পাট বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়ছেন সিরাজগঞ্জের পোল্ট্রি খামারিরা তাদের উৎপাদিত ডিম নিয়ে। দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ থাকায় তারা বিক্রি করতে পারছেন না বেশির ভাগ ডিম। যার ফলে অনেকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়া উপক্রম এই শিল্প থেকে। যদিও প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে ভ্রাম্যমাণ ডিম বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে তথাপি তেমন সাড়া নেই ক্রেতাদের।
“মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, নিরাপদ প্রাণিজ পুষ্টি হবে সবার” এই প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে গত ৯ই এপ্রিল থেকে করোনা পরিস্থিতিতে জনসাধারণের প্রাণিজ পুষ্টি নিশ্চিতকল্পে সিরাজগঞ্জে ন্যায্যমূল্যে ভ্রাম্যমাণ ভ্যানে করে ডিম বিক্রির ব্যবস্থা করেছেন জেলা প্রাণীসম্পদ অফিস। কিন্তু দোকানপাট বন্ধ এবং সাধারণ মানুষের চলাচল কম থাকায় ব্যবসায়ীরা বিক্রি করতে পারছেন না তাদের ডিম। পাচ্ছেন না ন্যায্য দামও।
জেলা প্রাণীসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে পোল্ট্রি ফার্মের অবস্থা অনেকটাই নাজুক। উৎপাদিত ডিম নিয়ে মহা বিপদে পোল্ট্রি খামারিরা। জেলায় ৩ হাজার ৭৭৭টি পোল্ট্রি খামার হতে প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ ডিম উদৎপাদন হচ্ছে। উৎপাদিত ডিম জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী সহ দেশের অনেক জেলাতে সর্বরাহ করে থাকে। প্রতিদিন ১০ লাখ ডিম উৎপাদিত হলেও এই জেলার চাহিদা মাত্র ২ লাখ বাকি ৮ লাখ ডিম কোনভাবেই অন্যত্র পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে লকডাউনের জন্য দূরপাল্লার যানবাহন না থাকায় দিন দিন ডিম বিক্রি করতে না পারায় চরম লোকসান গুনতে হচ্ছে খামারিদের। এভাবে চলতে থাকলে পোল্ট্রি ফার্ম বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে খামারিদের।
জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ আক্তারুজ্জামান ভূইয়া জানান, বর্তমানে করোনা ভাইরাসের জন্য আমার জেলার খামারীরা উৎপাদিত ডিম নিয়ে যাতে সমস্যায় না হয়। সে কারণে বাংলাদেশ পোল্ট্রি ফার্মারস এসোসিয়েশন (বিপিএফএ) এর বাস্তবায়ন এবং প্রাণী সম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি), প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় সারাদেশের ন্যায় সিরাজগঞ্জ জেলা ও উপজেলা সদরগুলোতে ১০ দিন ব্যাপী মোট ৪৪টি ন্যায্যমূল্যের ভ্রাম্যমাণ ভ্যানে বিক্রয় কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এ কেন্দ্রগুলোতে ফার্মের মুরগীর ডিম ২৬ টাকা হালি, সোনালী মুরগির মাংস প্রতি কেজি ২৫০ টাকা মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, এই ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্র চালুর ফলে খামারিরা তাদের উৎপাদিত ডিম ও মুরগি অতি সহজে বিক্রি করতে পারবে। তবে অবশিষ্ট ডিম যাতে করে রাজধানী সহ অন্যত্র জেলাতে পাঠানো যায় তার জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যেম দিয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে খামারিরা যাতে লোকসানে না পড়ে সেদিকে কঠোর নজরদারি রাখা হয়েছে।
জেলার শিয়ালকোল এলাকার পোল্ট্রি খামারী শাহীন রেজা জানান, আমার খামারে ২৮ হাজার মুরগি আছে। প্রতিদিন ১৪ হাজার ডিম উৎপাদন হয় এই খামারে। গত ১০ দিনের লকডাউনে প্রতিদিন প্রাণীসম্পদের এই ভ্রাম্যমাণ ভ্যান ২ হাজার করে ডিম নিচ্ছে। বাকি ১২ হাজার ডিম আমি কি করবো। মুরগির খাদ্যের দাম অনেক বেশি। ডিম বিক্রি করতে না পারলেও মুরগিকে খাবার দিতে হয় সময় মতো।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশন জেলা শাখার সভাপতি এসএম ফরিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, ভালো নেই আমাদের পোল্ট্রি খামারীরা। অথচ দেশের মানুষের পুষ্টির চাহিদা আমরাই পূরণ করে থাকি। গত বছরের লকডাউনের কারণে চরম লোকসান গুনতে হয়েছে আমাদের। সরকার হাতে গোনা কয়েকজন খামারীকে কিছু সহযোগিতা করলেও সিংহ ভাগ খামারী কিছুই পায়নি সরকারি সহযোগিতা। এবছর লকডাউনে যা শুরু হয়েছে এতে করে আর এই শিল্প টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। প্রতিদিন গড়ে ৮ লাখ ডিম নিয়ে মহাবিপদে আছে আমাদের খামার মালিকরা।