চীন কেন মাছ চাষে প্রথম? তারা কি করে, যা আমরা করিনা?
মৎস্য
চীনে মাছের রোগ নিয়ন্ত্রণের নীতি হল Profylaxis: Prevention is Better then Treatment “চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম”। তারা মানে রোগ নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি হলো প্রতিরোধ।
পক্ষান্তরে আমরা বাংলাদেশে কি করি! যখন কোনো ডিজিজ ব্যাপকভাবে প্রকাশ পায় তখন আমরা ট্রিটমেন্ট শুরু করি।
এতে আমাদের খামারিদের খরচ অনেক বেশি হয়, কিছু মাছে মর্টালিটি আছে, খাবার অপচয় হয়, টক্সিক গ্যাস সৃষ্টি হয়, মাছের ওজন কমে যায়। তাহলে যদি আমরা চীনাদের মতো নিয়মিত প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা গ্রহন করতাম তাহলে কিন্তু উপরোক্ত ক্ষতি গুলোর সম্মুখীন হতে হতো না।
সংক্রামক রোগ সাধারণত মাছের টিস্যু এবং বিভিন্ন অঙ্গ (ত্বক, ফুলকা, অন্ত্র বা মলত্যাগের অঙ্গ) মাধ্যমে মাছকে আক্রমণ করে। তবে ত্বকের গঠন এবং মাছের শ্লেষ্মা ঝিল্লি সংক্রামক অণুজীবের প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে। পাচনতন্ত্রের প্রবেশকারী প্যাথোজেনিক জীবাণুগুলি মাছের অন্ত্রে থাকা প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক দ্বারা নিধন হয়ে থাকে ।মাছের রক্তকণিকা, লিম্ফয়েড টিস্যু, প্লীহা, লিভার এবং রক্তনালীর রেটিকুলো এন্ডোথেলিয়াল কোষগুলি প্যাথোজেনিক অণুজীবকে নির্মূল করতে পারে। এছাড়াও, মাছের রক্তে ব্যাকটেরিসিডিন থাকে, যা প্যাথোজেনিক ব্যাকটেরিয়ার জন্য বিষাক্ত। কিন্তু শীতকালে পানি ঠান্ডা এবং সূর্যের আলো কম থাকায় মাছের এই প্রাকৃতিক ডিফেন্স ক্ষমতা অনেকাংশে কমে যায়।
জলাশয়ে মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী দুই ভাবে সংক্রমিত হয় – ১) প্রাইমারি ইনফেকশন এবং ২) সেকেন্ডারি ইনফেকশন।
১) প্রাইমারি বা প্রাথমিক সংক্রমণ মাছের ইমিউনিটি ভেদে পুকুরের মধ্যেই তৈরি হয়। জীবাণু মাছকে সরাসরি অথবা “স্বাস্থ্যকর” মাছ রোগের বাহক হিসেবে কাজে লাগিয়ে অন্যান্য দুর্বল মাছ কে আক্রান্ত করে। কারণ একটি স্বাস্থ্যকর মাছ দুর্বল মাছ এর চেয়ে বেশি যায়গায় সাতার কাটে ফলে রোগ জীবাণু সর্বত্র পৌঁছাতে পারে।
২) সেকেন্ডারি ইনফেকশন বা গৌণ সংক্রমণ পুকুরের বাইরে থেকে প্রবেশ করে। যেমন, একটি রোগমুক্ত পুকুরে একটি রোগাক্রান্ত পুকুরের রোগাক্রান্ত বা দূষিত পলি মাটি, পানি, ব্যবহৃত জাল বা অন্যান্য মাছ ধরা সরঞ্জাম, বিভিন্ন মাছ খেকো পাখি দ্বারা রোগের আক্রমণ ঘটে।
চীনারা এক পুকুরে ব্যবহৃত সরঞ্জাম অন্য পুকুরে ব্যবহার করে না, এমনকি এক এক পুকুরের জন্য আলাদা আলাদা শ্রমিক নিয়োজিত করে। মুলত তারা বায়ো সিকিউরিটি শতভাগ মেনে চলে।
চীনারা, তাদের জলাশয়ে মাছের পোনা ছাড়ার পুর্বে হ্যাচারী থেকে আনা পোনা গুলো কে মৃদু জীবানুনাষক দিয়ে পরিশোধন করে তারপর কালচার পুকুরে অবমুক্ত করে। আমাদের দেশে কয়জন খামারি এটা করে !
চীনারা তাদের পুকুরে খাদ্য প্রয়োগ এর নিয়মিত জায়গায় কাপরের পোটলা বা টিস্যু ব্যাগে বিভিন্ন জীবানুনাষক (ব্লিচিং পাউডার/ পাউডার জীবানুনাষক) বেধে রাখে। ফলে মাছ যখন খাদ্য খেতে আসে তখন কাপরের পোটলা থেকে নিসৃত জীবানুনাষক এর সংস্পর্শে এসে মাছ জীবানু মুক্ত হয়।
আমাদের দেশে কেউ কি এটা মেইনটেইন করে !
চীনারা তাদের পুকুরে জৈব সার প্রয়োগ এর সময় প্রতি ৫০০ কেজি জৈব উপাদানের সাথে ১৫০ গ্রাম করে ব্লিচিং পাউডার মিশিয়ে নিয়ে তারপর প্রয়োগ করে। কারণ এই জৈব উপাদান গুলোতে বিভিন্ন রোগজীবাণু থাকতে পারে। আমাদের দেশে কি এটা করা হয় !
চীনারা শীতের পুর্বে তাদের পুকুরের মাছের ইমিউনিটি বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন হারবাল ইমিউনিটি বিল্ডার প্রয়োগ করে, যেমন: ২ কেজি রসুন এর পেস্ট প্রতি ৫০০ কেজি ফিডের সাথে মিসিয়ে পর পর ৬ দিন একটানা খাওয়ায়। এছাড়াও প্রতি ৫ কেজি ফিডের সাথে ৪০ গ্রাম করে লবণ ৬ দিন একটানা খাওয়ায়। ফলে মাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আমাদের দেশের কয়জন খামারি এটা করে !
এই সামান্য কয়েকটা পদ্ধতি যদি আমরা মেনে মাছ চাষ করি তাহলে মাছ চাষের বিপ্লব সময়ের ব্যাপার মাত্র।
লেখক
মাৎস্যবিদ মো: রাশেদুজ্জামান দিপু
দপ্তর সম্পাদক, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি
বাংলাদেশ ফিশারিজ এক্সিকিউটিভ এসোসিয়েশন।
ন্যাশনাল সেলস ম্যানেজার
এভানকো বাংলাদেশ লিমিটেড