২:৫৩ অপরাহ্ন

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
  • হোম
  • ভবিষ্যতের ডিএনএ বিজ্ঞান: ভাইরাসকে জেলে পাঠানো নাকি উলি ম্যামোথের ফিরে আসা
ads
প্রকাশ : এপ্রিল ২৫, ২০২১ ১২:০৪ পূর্বাহ্ন
ভবিষ্যতের ডিএনএ বিজ্ঞান: ভাইরাসকে জেলে পাঠানো নাকি উলি ম্যামোথের ফিরে আসা
মতামত-ফিচার

বিজ্ঞানের শিক্ষানবীষরা হয়তো ১৯৮০ দশকের “মানব জিনোম প্রকল্প” কে আধুনিক ডিএনএ  বিজ্ঞানের উৎস বলে অভিহিত করতে পারেন। কিন্তু শুরুটা হয়েছে তারও তিন দশক আগে ১৯৫০ দশকে ডিএনএর রাসায়নিক গঠন আবিষ্কার ও পরবর্তিতে ১৯৭০ দশকে “ডিএনএ সিকোয়েন্সিং” আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে। এই আবিষ্কার গুলিই ডিএনএ বিজ্ঞানের ভিত্তি রচনা করেছিলো। ডিএনএ  বিজ্ঞানের অনেক সম্ভাবনার মধ্যে সম্ভাব্য প্রয়োগগুলির সন্ধান করতে আমরা শুরু করেছি মাত্র।

ডিএনএর মধ্যে যে জীবন সৃষ্টির সমস্ত রহস্য লুকায়িত তা সবার সন্মুখে নিয়ে আসে, “জিনোমিক্স”( জীবের মোট জেনেটিক সিকোয়েন্স তথ্য /জীবন রহস্য উন্মোচনকরা)-এর অধ্যয়ন। “জিনোমিক্স” গবেষনার বর্তমান রুপের শুরুটা হয়েছিলো ১৯৮০ দশকের শেষের দিকে। ১৯৮৭ সালে “জিনোমিক্স” নামক পিয়ার-রিভিউ বিজ্ঞান সাময়িকী শুরুর মাধ্যমে “জিনোমিক্স”  শব্দটি  প্রবর্তিত হয়। সেই সময়ে, কম্পিউটিং প্রযুক্তি দ্রুত অগ্রসর হতে শুরু করে যা বিজ্ঞানীদের একসাথে একবারে একটি জিনের পরিবর্তে পুরো জিনোমটি অধ্যয়ন করার সুযোগ করে দেয় । মানুষ প্রথমবারের মতো, তাদের জীবনের বিল্ডিং ব্লক ৩০,০০০ জিন  খোঁজার সক্ষমতা অর্জন করে।

এরপর হতে বিগত কয়েক দশকে ডিএনএ বিজ্ঞান কৃষি, ফরেনসিক ও চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যাপক বিপ্লব ঘটিয়েছে। বর্তমানে চলমান কোভিড মহামারীর করোনা ভাইরাস সনাক্তকরন, করোনা ভাইরাসের উৎস নির্ধারন, ভাইরাসের  জীবন রহস্য উন্মোচন ও ভাইরাসের পরিবর্তন খুঁজে বের করা এর বাহিরে নয়। অগ্রসরমান ডিএনএ বিজ্ঞানের কালানুক্রমে অনেক প্রযুক্তি মানুষের হাতে পৌছায়। যার মধ্যে ডিএনএ ফিংগার প্রিন্টিং, জিন ম্যাপিং, ট্রান্সজেনেসিস ও জিন নকআউট উল্লেখযোগ্য।

ফরেনসিক বিজ্ঞানে ডিএনএ ফিংগার প্রিন্টিং -এর ব্যবহার শুরু হয় ১৯৮০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে। একজন মানুষের ডিএনএ ফিংগার প্রিন্ট ঐ মানুষটির জন্য নির্দিষ্ট হয়, যা মানুষটিকে অন্যসব মানুষ থেকে আলাদা করে থাকে। ডিএনএ ভিত্তিক এ প্রযুক্তি পৃথিবীতে অনেক রহস্যময় খুন ধর্ষনসহ বড় অপরাধ বা বিপর্যয়ের শিকার অনেক মানুষকে ন্যায়বিচার পাইয়ে দিয়েছে।

জিন ম্যাপিং ও ট্রান্সজেনেসিসের মতো কিছু ডিএনএ ভিত্তিক প্রযুক্তি শস্য ও প্রানী প্রজনন কর্মসূচির দক্ষতা বৃদ্ধি, জার্মপ্লাজম সংরক্ষন, কৃষিজাত পণ্যের ফলনও মান উন্নতকরণএবং পরিবেশ সুরক্ষার মাধ্যমে আধুনিক কৃষিতে ডিএনএ বিজ্ঞানের ভূমিকাকে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ করার ক্ষেত্রে দুর্দান্ত সম্ভাবনা দেখিয়েছে । জিন ম্যাপিং এর মাধ্যমে অধিকতর উৎপাদনের সাথে সম্পর্কিত জিনগুলি খুজে বের করা যায়। এরই ভিত্তিতে প্রজনন কর্মসূচি সমন্বয় করে অধিকতর উৎপাদনক্ষম শস্য ও প্রানী সৃষ্টি করা সম্ভব। ট্রান্সজেনেসিস প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রয়োজনভেদে রোগ, পোকামাকড়, খরা ও লবনাক্ততা প্রতিরোধী শস্য প্রজাতি সৃষ্টি করে ফলন ও খাদ্যের গুনগত মান বাড়ানো যায়।

ট্রান্সজেনিক ইদুর (ট্রান্সজেনেসিস প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা ইদুর) মানুষের রোগ ও অন্যান্য শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার গবেষণায় ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, আলঝাইমার এবং ক্যান্সারের মতো রোগের জন্য ট্রান্সজেনিক প্রানী মডেল রয়েছে। ট্রান্সজেনিক প্রাণী থেকে পুষ্টির পরিপূরক পণ্যও তৈরি করা যায়। প্রথম ট্রান্সজেনিক গাভী রোজি মানব প্রোটিন (প্রতি লিটারে ২.৪ গ্রাম) যুক্ত দুধ উৎপাদন করে। এই দুধে মানব জিন আলফা-ল্যাক্টালবুমিন রয়েছে যেটিকে প্রাকৃতিক গরুর দুধের বিকল্প হিসাবে হয়।

 

উল্লেখিত ব্যবহার সমূহের পাশাপাশি ডিএনএ প্রযুক্তি চিকিৎসা বিজ্ঞানকে অনেক সমৃদ্ধ করেছে। পিসিআর ও আরটি-পিসিআর এর মতো প্রযুক্তি পৃথিবীর হাজারো রোগ নির্নয়ে নির্ভেদ্য ভূমিকা পালন করে চলেছে। রিকম্ভিনেন্ট ডিএনএ প্রযুক্তি বিভিন্ন রোগের টিকা, এন্টিবডি, ইনসুলিন ও এন্টিবায়োটিক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ২০০৩ সালে মানব জিনোম  প্রকাশের পর জিনোম নির্দেশিত পারসোনাল মেডিসিনের ব্যবহারও শুরু হয়েছে।

 

চিকিৎসা বিজ্ঞানে ডিএনএ প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় সম্ভাবনার নাম “CRISPR”(ক্রিসপার)। ক্রিসপার একটি নতুন প্রযুক্তি যা ২০১২ সালে আমাদের সামনে আসে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে একটি জিনকে সম্পাদনা করে নতুন জিন তৈরি করা যায়।  যদি কোন ব্যক্তি ত্রুটিযুক্ত জিন বহন করেন ক্রিসপারের মাধ্যমে তা সনাক্ত ও সম্পাদনা করে ত্রুটিমুক্ত করা যায়। ক্রিসপারের বড় সম্ভাবনার দিক হলো নিরাময়হীন জেনেটিক রোগের চিকিৎসা, মানে জিন থেরাপি। ক্রিসপার ব্যবহার করে ডায়াবেটিস, ক্যান্সার এবং এথেরোস্ক্লেরোসিসের মতো রোগের সংবেদনশীল জিনগুলি সংশোধন করে ঐসব রোগের ঝুঁকিমুক্ত করা যাবে। এক্ষেত্রে একটি বিতরণ ডিভাইসের মাধ্যমে রোগীর শরীরে ক্রিসপার প্রয়োগ করা হয়। এই বিতরণ ডিভাইস কোনও নির্দিষ্ট অঙ্গে গিয়ে জিনগুলি পরিবর্তন করে। এখন থেকে পাঁচ বা দশ বছর পরে ক্রিসপার ব্যবহার করে জিন থেরাপির এমন রুপও হয়তো আসবে এসব রোগগুলির সংবেদনশীল জিনগুলি সত্যিকার অর্থে আর থাকবেই না। মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্রিসপারের তৃতীয় প্রয়োগটি হলো ভ্রূণ স্তরে একটি ত্রুটিযুক্ত জিনকে সংশোধন করা। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনও দম্পতির ত্রুটিযুক্ত জিন থাকে তা একটি ভ্রূণকে ভয়ংকর রোগের দিকে ধাবিত করে, এক্ষেত্রে ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন করে জিনগুলি ভ্রূণ স্তরই সংশোধন করা সম্ভব। ক্রিসপারের মাধ্যমে নির্দিষ্ট জিনগত রোগ ও এইচআইভি বা ইবোলা ভাইরাসের মতো সংক্রামক রোগও সনাক্ত করা যায়।

 

ভবিষ্যতের ডিএনএ বিজ্ঞান প্রত্নতত্ত্ব, চারুকলা এবং কম্পিউটিংয়ের মতো সুদূর প্রসারী শাখায়ও প্রসারিত হওয়ার প্রক্রিয়ার রয়েছে। যার কয়েকটি এখানে তুলে ধরছি-

 

ডিএনএ প্রযুক্তির মাধ্যমে ছদ্মবেশ উন্মোচন করাও সম্ভব। ধরা যাক কোনো অপরাধী ছদ্মবেশ ধারন করে একটি অপরাধ করলো। ক্রাইম সিন থেকে সংগৃহীত নমুনাগুলি থেকে ডিএনএ ব্যবহার করে ফেসিয়াল কম্পোজিট তৈরি করা সম্ভব। যেহেতু জিনগুলি চুলের রঙ, চোখের রঙ এবং মুখের কাঠামোর উপর প্রকট প্রভাব ফেলে তাই কোনও ব্যক্তির ডিএনএ বিশ্লেষণ করে ঐ ব্যক্তি দেখতে কেমন তার মোটামুটি একটি ধারণা পাওয়া সম্ভব। এই ধরনের ফেসিয়াল কম্পোজিট প্রতিকৃতি-মানের চিত্র তৈরি করতে না পারলেও এটি প্রত্যক্ষদর্শীর পক্ষপাত এবং ত্রুটিযুক্ত স্মৃতির সমস্যামুক্ত হয়ে অপরাধিকে সনাক্ত করতে সহায়তা করতে পারে। এই ফেসিয়াল প্রোফাইলিং প্রযুক্তিটি প্রত্নতাত্ত্বিকদেরও সহায়তা করতে পারে। ডিএনএ  ভিত্তিক ফেসিয়াল প্রোফাইলিং ব্যবহার করে  বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে কিছু নিয়ান্ডারথাল সম্ভবত লালচে চুল এবং ফর্সা ত্বকের অধিকারী ছিলো।

 

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ডিএনএ প্রযুক্তির অধিকতর পরিশীলিত ব্যবহারে উলি ম্যামথ, ডোডোস এবং অন্যান্য বিলুপ্ত প্রজাতিগুলিকে ফিরেয়ে আনা যাবে। বিলুপ্ত প্রজাতির ডিএনএ সিকোয়েন্সিং করেএবং ঐ প্রজাতির কাছাকাছি কোনো প্রজাতির ডিমে ডিএনএ অনুলিপিগুলি ইনজেকশনের মাধ্যমে বিলুপ্ত প্রজাতির ভ্রূণের তৈরি সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, একটি উলি ম্যামথের ভ্রূণের জন্য একটি হাতির ডিম এবং গর্ভাশয় ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে ডাইনোসরদের ফিরিয়ে আনা বেশ কঠিন হবে, কারণ৬৫ মিলিয়ন বছর আগে তারা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল, তাই তাদের ডিএনএ ক্ষয় হয়ে পড়েছে।

 

প্রত্নতত্ত্বের পাশাপাশি সমসাময়িক শিল্পের ও বিষয় হয়ে উঠছে ডিএনএ বিজ্ঞান।  যেমন ডিএনএর রাসায়নিক “অক্ষর” (এ, সি, জি এবং টি) এর দীর্ঘ স্ট্রিং ব্যবহার করে কম্পিউটার প্রোগ্রাম লিখা যায় যা এই স্ট্রিংগুলিকে আক্ষরিক গানে অনুবাদ করতে পারে। ফ্লোরোসেন্ট ব্যাকটিরিয়া জিনগতভাবে পরিবর্তিত করে মনের মতো সৈকত দৃশ্যও তৈরি করা যায়। এই প্রযুক্তিতে আলোর সংস্পর্শে আসার সময় ব্যাকটিরিয়া বিভিন্ন রং ধারণ করে নয়নাভিরাম সৈকতের দৃশ্য দিয়ে থাকে।

 

ডিএনএ প্রযুক্তি শিল্পকর্মের জালিয়াতির রোধ করতেও ব্যবহৃত হতে পারে। পিকাসু-র চিত্রকর্ম ও অবিকল নকল করে এমন জালিয়াতি হয় যেখানে পেশাদার বিশেষজ্ঞরা আসল নকল পার্থক্য করতে ব্যর্থ হন। এধরনের জালিয়াতি ঠেকাতে বিজ্ঞানীরা চিত্রকর্মের সাথে অন্য একটি প্রাণীর ডিএনএ ভর্তি ছোট একটি সিন্থেটিক লেভেল ব্যবহার করতে বলেন। পরবর্তীতে সিন্থেটিক  বিটগুলিকে ব্যবহার করে ডিএনএ সিকোয়েন্সিং করে ডাটাবেসের সাথে যাচাইপূর্বক আসল শিল্পকর্মটি খুজে বের করা সম্ভব।

 

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, শুধু আমেরিকাতেই মুদি দোকানগুলি বিক্রি করা মাছের প্রায় এক-পঞ্চমাংশকে ভুলভাবে চিহ্নিত করেছিল। সুশির রেস্তোরাঁগুলি ছিল আরও খারাপ। তারা তিন-চতুর্থাংশ মেনুতে দেওয়া মাছের পরিবর্তে অন্য কোন মাছ পরিবেশন করেছিলো। ডিএনএ বার কোডিং এই ধরণের প্রতারণা উদঘাটনে সহায়তা করতে পারে। একটি মাছ থেকে কিছুটা পেশী বের করে এবং তার ভিতরের ডিএনএ সিকোয়েন্স করে বিজ্ঞানীরা দ্রুত একটি প্রজাতিটিকে অন্যটি থে কেআলাদা করতে পারেন। যদি প্রযুক্তিটি বিকশিত হতে থাকে তবে ভোক্তারা একদিন বার কোডারকে টেবিলে আনতে পারবে, তারা নিজেরাই তাদের স্মার্টফোনে দেখতে পাবে যেটা তারা অর্ডার করেছিল সত্যিই তারা সেটি পাচ্ছে কিনা।

 

“ডিএনএ অরিগামী” হলো ডিএনএ প্রযুক্তির সাম্প্রতিক উদ্ভাবনের একটি। এ প্রক্রিয়ায় ডিএনএ-কে ন্যানুস্কেলে ভাঁজ করে দ্বি- অথবা ত্রিমাত্রিক কাঠামো তৈরি করা হয়। অদ্যাবধি বিজ্ঞানীদের বেশিরভাগই মাইক্রোস্কোপিক তারা, স্মাইলি ফেস এবং অন্যান্য চিত্র তৈরি করতে এই প্রযুক্তিটি ব্যবহার করেছেন। তবে ডিএনএ অরিগামি ভবিষ্যতে ঔষধ বিতরণ ডিভাইস তৈরিতে ব্যবহৃত হতে পারে। বিশেষভাবে কারুকৃত ডিএনএ-অরিগামির খাঁচাগুলি সরাসরি কোন টিউমারে ড্রাগ সরবরাহ করতে ব্যবহৃত হতে পারে। বন্ধ  খাঁচাগুলি কেবল টার্গেটযুক্ত টিউমার কোষগুলির সাথে আবদ্ধ হওয়ার পরে  খুলবে। একইভাবে, খাঁচাগুলি ভাইরাসের জন্য জেল হিসাবে কাজ করতে পারে। অদুর ভবিষ্যতে কোভিড-১৯ এর মতো নিরাময়হীন ভাইরাসের প্রতিরোধক কারাগার হিসেবে ডিএনএ-অরিগামির খাঁচাগুলি ব্যবহার করা সম্ভব হবে।

তথ্য সংরক্ষণের প্রাচীনতম মাধ্যম হল ডিএনএ। ডিএনএ অণু বিপুল পরিমাণে তথ্য সঞ্চয় করতে সক্ষম এবং যা কয়েক হাজার বছর ধরেও নষ্ট হয় না। সুতরাং ডাবল হেলিক্সযে কম্পিউটিংয়ে ব্যবহার করা সম্ভব এটি সহজে বোঝা যায়। বিজ্ঞানীরা কোনো অক্ষর বা নম্বরকে ডিএনএ-র এ, সি, জি,টি-র স্ট্রিং-এ (যেমন অনেক আধুনিক কম্পিউটার ১ এবং ০ এর হিসাবে তথ্য কোড করে) তথ্য কোড করেসিন্থেটিক ডেটা ডিএনএ তৈরি করতে পারেন। ডিএনএ-সিকোয়েন্সিং মেশিনপরে সেই ডেটা বের করতে পারে। এক (১) গ্রাম ডিএনএ-তে ৭০০ টেট্রাবাইট ডাটা সংরক্ষণ করা সম্ভব, যা ১ মিলিয়ন সিডি-র ডাটা সমতূল্য। যদিও তাত্ত্বিকভাবে এটি অনেক বেশি ডাটা ধারণ করতে পারে। বর্তমানে বিশ্বের সমস্ত ডিস্ক ড্রাইভে থাকা সংরক্ষিত ডাটা যদি ডিএনএতে এনকোড করা যায় আপনি তা হাতের তালুতে নিয়ে চলতে পারবেন।

পুরানো সিনেমাগুলি ডিএনএ-র মাধ্যমে সংরক্ষণের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। টেকনিকালার নামে একটি বিনোদন সংস্থা ১৯০২ সালে নির্মিত “অ্যা ট্রিপ টু দ্য মুন” নামক সিনেমা সংরক্ষণের  মধ্য দিয়ে পুরানো সিনেমাগুলিকে ডিএনএ হিসাবে সংরক্ষণ করার কাজ শুরু করেছে।

হার্ভার্ডের জিনবিজ্ঞানী জর্জ চার্চ সম্প্রতি তাঁর লেখা একটি বইকে ডিএনএ-তে রূপান্তরিত করেছেন, তারপরে তিনি একটি টেস্টটিউবে ৭০ বিলিয়ন কপি সংরক্ষণে সক্ষম হয়েছেন। এটিই অদ্যাবধী পাঠ্যবই-এর ইতিহাসে সর্বাধিক পুনঃ উত্পাদিত বই। ডিএনএ গবেষকদের কেউ কেউ এ পরিকল্পনাও করছেন যে উইকিপিডিয়ায় প্রতিটি নিবন্ধকে ডিএনএ বর্ণের সিন্থেটিক স্ট্রিংগুলিতে এনকোড করার জন্য, তারপরে সেই ডিএনএকে প্রাকৃতিক আপেলের জিনোমে স্থাপন করে জ্ঞানের একটি আপেল ফল তৈরি করবেন।

 

কিছু গবেষক বায়োলজিকাল কম্পিউটার তৈরিতে ডিএনএ ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন। এই বায়ো-কম্পিউটারগুলি স্ক্রিন এবং কীবোর্ড সহ ল্যাপটপের মতো হয়তো দেখাবে না। বরং, তারা টেস্ট টিউব বা বায়োলজিকাল পর্দা দিয়ে তৈরি হবে। তবে ল্যাপটপের মতো, তাদের কাছে তথ্য নেওয়ার, এটি প্রক্রিয়াজাত করার ক্ষমতা থাকবে। ডিএনএ কয়েক মিলিয়ন বা এমনকি কয়েক বিলিয়ন কম্পিউটিং প্রক্রিয়া সমান্তরালে করার ক্ষমতা রাখে। বায়ো-কম্পিউটারগুলি  তাই অনেক জটিল কম্পিউটিংয়ে ব্যবহার হতে  পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আবহাওয়ার পূর্বাভাস নির্ণয়ের কথা, যার মধ্যে তাপমাত্রা, ব্যারোমেট্রিক চাপ এবং আর্দ্রতাসহ পৃথিবীর উপরিভাগের অনেকগুলি তথ্য একসাথে হিসেবে নিতে হয়। রোগের বিরুদ্ধে লড়াই  করার ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক ডিভাইস (যা সহজে জীবন্ত কোষগুলিতে অনুপ্রবেশ করতে পারে না)-এর বিপরীতে ডিএনএ ভিত্তিক কম্পিউটারগুলি সম্ভবত অনেক বেশী বাস্তব সময়ে রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারবে কারণ জীবন্ত কোষে ডিএনএ সহজে প্রবেশ করে তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে।

 

সভ্যতার অগ্রযাত্রায় ও বিজ্ঞানের কালানুক্রমে কতশত প্রযুক্তির প্রতি মানুষ তার আগ্রহ হারিয়েছে। আমরা ফ্লপি ড্রাইভ থেকে গুগল ড্রাইভে এসে গেছি, কিন্তু ডিএনএ নিয়ে কিছুটা আগ্রহ আমাদের সবসময়ই ছিলো, থাকবে, কারণ খালি চোখে অদৃশ্য এই ডিএনএ-তেই যে লুকায়িত আছে জীবন সৃষ্টির সমস্ত রহস্য। এই অদম্য আগ্রহই আমাদেরকে পিসিআর থেকে বায়ো-কম্পিউটার পর্যন্ত নিয়ে যাচ্ছে। ঐখান থেকে আমরা কোথায় যাবো? এই প্রশ্নের তো ভবিষ্যতের ডিএনএ বিজ্ঞানই দিতে পারবে।

 

সবাইকে “ডিএনএ দিবস-২০২১” এর শুভেচ্ছা।

 

লেখকঃ

অধ্যাপক ড. আশুতোষ দাশ

বিভাগীয় প্রধান

জেনেটিক্স ও এনিম্যাল ব্রিডিং বিভাগ

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়।

শেয়ার করুন

ads

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop