৩:১৭ অপরাহ্ন

শনিবার, ২৩ নভেম্বর , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
প্রকাশ : জানুয়ারী ২১, ২০২২ ১২:০১ অপরাহ্ন
যেসব কারণে কমছে না চালের দাম
এগ্রিবিজনেস

মাঠ থেকে শতভাগ আমন ধান উঠে গেছে। চালের সরকারি মজুদও যথেষ্ট। তার পরও বাজারে কমছে না চালের দাম। উল্টো মিলগেট, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম বেড়েই চলেছে।

খুচরায় এই দাম ক্রেতাসাধারণের নাভিশ্বাস তুলেছে। বিভিন্ন পর্যায়ে খোঁজখবর নিয়ে এবং কথা বলে যে চিত্র পাওয়া গেছে তাতে দেখা যায়, মোটামুটি ছয় কারণে কমছে না চালের দাম।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে দেশের বেশির ভাগ ভোক্তা চিকন ও মাঝারি মানের চাল খায়। এই চাল উৎপাদন হয় বোরো মৌসুমে। গত বোরো মৌসুমের ধান-চালের মজুদ প্রায় শেষ। ফলে সরবরাহ কম। আবার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোয় পরিবহন খরচ বেড়েছে। বাড়তি এই পরিবহন খরচ চালের দামে প্রভাব ফেলেছে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বড় ব্র্যান্ড কম্পানিগুলো বাজারে আসায় চালের মজুদদারি বেড়েছে। আবার সরকার ধানের চেয়ে চাল বেশি কেনায় মিলাররা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এই দাম কমাতে বাজার তদারকির বিকল্প নেই। এছাড়া ওএমএসর কার্যক্রম বৃদ্ধি পেলে দাম কমে আসবে বলেও জানান তারা।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে গত মাসের তুলনায় চলতি মাসে চালের দাম ৪ শতাংশ বেড়েছে। আর গত বছরের এই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ৮ শতাংশ। সর্বাধিক বেড়েছে মিনিকেট ও নাজিরশাইল চালের দাম।

রাজধানীর বাবুবাজার, বাদামতলী ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের আড়তগুলোয় বর্তমানে চিকন চাল জিরা নাজিরশাইল বিক্রি করা হচ্ছে ৬০ থেকে ৬১ টাকা কেজি দরে। আর কাটারি নাজির (পুরনো) বিক্রি করা হচ্ছে ৬৭ টাকা কেজি দরে।

সেগুনবাগিচা, মালিবাগ, মুগদাসহ রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ওই একই চাল বিক্রি করা হচ্ছে ৬৬ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে। পাইকারি থেকে খুচরায় কেজিতে দাম বেশি তিন থেকে ছয় টাকা।

পাইকারি বাজারগুলোয় আকিজ, এসিআই, তীর, প্রাণ, রশিদ, মজুমদার, সিরাজ—এসব ব্র্যান্ডের চালের পরিমাণ বেশি। বর্তমানে পাইকারিতে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল বিক্রি করা হচ্ছে ৫৭ থেকে ৬১ টাকা কেজি দরে। আর খুচরা বাজারে এই চাল বিক্রি করা হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে। পাইকারি ও খুচরায় কেজিতে দামের পার্থক্য চার থেকে পাঁচ টাকা।

পাইকারি বাজারে বিআর আঠাশ ও উনত্রিশ বিক্রি করা হচ্ছে ৪৪ থেকে ৪৭ টাকা কেজি দরে। খুচরা বাজারে এই চাল ভোক্তারা কিনছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা কেজি দরে। দুই বাজারে কেজিতে দামের পার্থক্য পাঁচ থেকে ছয় টাকা। পাইকারি বাজারে পাইজাম বিক্রি করা হচ্ছে ৪৪ টাকা কেজি দরে। খুচরায় তা ৪৮ টাকা কেজি। দামের পার্থক্য চার টাকা। তবে উপজেলা পর্যায়ে ওএমএস কার্যক্রমের মাধ্যমে চাল বিক্রি শুরু হওয়ায় বাজারে দাম কমবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, মিলগেট থেকে পাইকারি বাজার পর্যন্ত পরিবহন খরচ কেজিতে এক টাকা ২০ পয়সা থেকে এক টাকা ৪০ পয়সা। মিলগেট থেকে ঢাকার পাইকারি বাজারে লাভসহ কেজিতে দাম বাড়ে দুই টাকা ৪০ পয়সা। রাজধানীর পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজার পর্যন্ত পরিবহন খরচ হয় বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ১০ থেকে ১২ টাকা। আর রাজধানীর আশপাশের উপজেলায় নিতে বস্তাপ্রতি খরচ হয় ১৮ থেকে ২০ টাকা। লেবার খরচ হয় প্রতি কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ পয়সা।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, গড়ে সরকারের গুদামে সাড়ে ১২ লাখ মেট্রিক টন বা দেশের মোট চাহিদার ১৫ দিনের চাল মজুদ থাকলে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের গত সপ্তাহের হিসাবে সরকারি গুদামে ১৯.৭৮ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ আছে। এর মধ্যে চাল রয়েছে ১৬.০৯ লাখ মেট্রিক টন। তবে ধানের পরিমাণ কম, মাত্র ৩৮ হাজার মেট্রিক টন। পাইকারি আড়তগুলো ঘুরেও দেখা গেছে, ১০ থেকে ১৫ দিন বিক্রি করার মতো চাল তাদের মজুদ রয়েছে।

এত মজুদের পরও চালের দাম না কমার কারণ নিয়ে কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘চালের দাম বাড়ার পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। মিলাররা সরকারি গুদামে চাল দিলেও খোলাবাজারে সঠিকভাবে সরবরাহ করছে না। ইচ্ছামতো সরবরাহ করে বাজারে দাম বাড়াচ্ছে। আবার এক শ্রেণির ব্যবসায়ী চাচ্ছেন দেশে চাল আমদানি হোক। এর জন্য দাম বাড়িয়ে বাজারে চাপ তৈরি করছেন। তৃতীয়ত, বড় মিলাররা, বিশেষ করে করপোরেট কম্পানিগুলো চালের বাজার ও ছোট ছোট মিল নিয়ন্ত্রণ করছে। ’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নওগাঁ ও কুষ্টিয়ার বাজারগুলোয় ধানের সংকট নেই। গত বছরের তুলনায় দামও বাড়েনি। নওগাঁ সদর উপজেলা ধান-চাল আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দীন খান টিপু জানান, বর্তমানে হাটগুলোয় প্রতি মণ (৩৭.৫ কেজি) স্বর্ণা ধান সংগ্রহের পর মিল পর্যন্ত পৌঁছাতে খরচ পড়ছে এক হাজার ৫০ টাকা থেকে এক হাজার ৫৫ টাকা, যা গত বছর একই সময়ে ছিল এক হাজার ১৩০ থেকে এক হাজার ১৪০ টাকা। বর্তমানে নাজিরশাইল (সরু) ধান সংগ্রহের পর মিল পর্যন্ত পৌঁছাতে খরচ পড়ছে মণপ্রতি এক হাজার ৪৪০ টাকা। গত বছর একই সময়ে ছিল এক হাজার ৩৭২ টাকা।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (মার্কেটিং) কামরুজ্জামান কামাল বলেন, ‘কৃষকের উৎপাদন খরচ অনেক বেড়েছে। ফলে আমাদের বাড়তি দামে ধান কিনতে হচ্ছে। এই ধান থেকে চাল উৎপাদন করায় দাম কিছুটা বেশিই পড়ছে। ’

চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে দুটি পরামর্শ দিয়েছেন বাজার বিশ্লেষকরা। তাঁরা বলছেন, খোলাবাজারে চালের বিক্রি বাড়াতে হবে। সঙ্গে পরিমাণও। এ ছাড়া বাজার ব্যবস্থাপনা কঠোর করতে হবে। মিল থেকে খুচরা বাজার পর্যন্ত চাল সরবরাহ ব্যবস্থায় কঠোর নজরদারি করতে হবে, বর্তমানে যা খুবই দুর্বল।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : জানুয়ারী ২০, ২০২২ ৪:১৫ অপরাহ্ন
হিলিতে দেশি পেঁয়াজের কেজি ২৪ টাকা
এগ্রিবিজনেস

চার দিনের ব্যবধানে দিনাজপুরের হিলি বাজারে আবারও দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে কমেছে ৪ টাকা। ২৮ টাকার পেঁয়াজ এখন পাইকারি বাজারে ২৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে ব্যবসায়ীরা এসব পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ২৫ থেকে ২৬ টাকা কেজি দরে।

বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) সকালে হিলি পেঁয়াজের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চারদিন আগেও পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজের কেজি ছিল ২৮ টাকা, তা খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকা দরে। তবে বৃহস্পতিবার পেঁয়াজের দাম কমে পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৪ টাকা কেজি দরে। সেই পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা খুচরা বাজারে এনে ২৫ থেকে ২৬ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন সাধারন ক্রেতাদের কাছে।

এদিকে হিলি বন্দরে ভালো মানের ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৮ টাকা কেজিতে। আর খারাপ মানের ভারতীর পেঁয়াজ বাজারে পাইকারি হচ্ছে ২২ টাকা কেজি দরে।

হিলি বাজারের সবজি ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফ বলেন, ‘পাইকারি বাজার থেকে ২৪ টাকায় পেঁয়াজ কিনে এখন তা বিক্রি করছি ২৫ থেকে ২৬ টাকা কেজি দরে। বর্তমান দেশি পেঁয়াজের দাম কম হওয়ায় ভারতীয় পেঁয়াজের তেমন কোনো চাহিদা নেই।‘

হিলি বাজারের পেঁয়াজ পাইকারি ব্যবসায়ী ফেরদৌস রহমান বলেন, ‘দেশে এবার প্রচুর পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। ফলে দামও কম। যার কারণে ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদা তেমন নেই।’

শেয়ার করুন

প্রকাশ : জানুয়ারী ২০, ২০২২ ১:২১ অপরাহ্ন
চা উৎপাদনে রেকর্ড বাংলাদেশের
এগ্রিবিজনেস

১৬৮ বছরের ইতিহাসে বাণিজ্যিক চা চাষে রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। করোনা সংকটের মধ্যেই গেলো বছর সর্বোচ্চ ৯ কোটি ৬৫ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। বাংলাদেশ চা বোর্ডের এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত বছর ১০ কোটি কেজি চা উৎপাদনের টার্গেট থাকলেও বছর শেষে ১৬৭টি বাগান এবং ক্ষুদ্রতায়ন অন্যান্য বাগান মিলে মোট ৯ কোটি ৬৫ লাখ ৬ হাজার কেজি চা উৎপাদিত হয়।

উৎপাদনের এই পরিমাণ ২০২০-এর তুলনায় এক কোটি ১১ লাখ কেজি বেশি। এর আগে ২০১৯-এ ৯ কোটি ৬০ লাখ ৬৯ হাজার কেজি চা উৎপাদিত হয়েছিলো, যা ছিলো সেসময় পর্যন্ত দেশে চা শিল্পের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পরিমাণ।

এর আগে গত অক্টোবরে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক মাসে সর্বোচ্চ এক কোটি ৪৫ লাখ কেজি চা উৎপাদনের তথ্য জানায় চা বোর্ড।

বিজ্ঞপ্তিতে চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, কোভিড পরিস্থিতিতেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় দেশের সব চা বাগানের সার্বিক কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিলো। সরকারের আর্থিক প্রণোদনা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ চা বোর্ডের নিয়মিত মনিটরিং ও পরামর্শ প্রদান, বাগান মালিক ও শ্রমিকদের নিরলস প্রচেষ্টা, ঠিক সময়ে ভর্তুকি মূল্যে সার বিতরণ, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চা নিলাম কেন্দ্র চালু রাখা, চা শ্রমিকদের মজুরি, রেশন এবং স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণের ফলে ২০২১-এ দেশের চা উৎপাদন অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গিয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, উত্তরাঞ্চলে সমতলের চা বাগান ও ক্ষুদ্র চা চাষ থেকে ২০২১-এ রেকর্ড এক কোটি ৪৫ লাখ মিলিয়ন কেজি চা জাতীয় উৎপাদনে যুক্ত হয়েছে, আগের বছর এই সংখ্যা ছিলো এক কোটি তিন লাখ কেজি।

রেকর্ড অনুযায়ী ১৮৫৪-এ সিলেটের মালনীছড়ায় দেশের প্রথম বাণিজ্যিক চা বাগান প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই থেকে ২০১৬-এ সর্বোচ্চ আট কোটি কেজি চা উৎপাদন ছিল সর্বোচ্চ, যা ছাপিয়ে ২০১৯-এ উৎপাদন হয় ৯ কোটি ৬০ লাখ কেজি। এবার ছাড়িয়ে গেলো সেই রেকর্ডও।

বাংলাদেশের এই ১৬৭টি চা বাগানের মধ্যে ১৩৬টিই চা চাষের বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে। সর্বোচ্চ এক জেলায় মৌলভীবাজারে ৯১টি, হবিগঞ্জে ২৫টি এবং সিলেটে রয়েছে ১৯টি চা বাগান। সিলেট অঞ্চল ব্যতীত চট্টগ্রামে ২১টি এবং রাঙামাটিতে আছে দুইটি চা বাগান। অন্যদিকে উত্তরাঞ্চলের সমতল ভূমিতে দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে আটটি, ঠাকুরগাঁওয়ে ১ টি চা বাগান রয়েছে।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : জানুয়ারী ১৮, ২০২২ ১২:৪৮ অপরাহ্ন
চলনবিল থেকে ৩৬৯ মেট্রিক টন মধু সংগ্রহ
এগ্রিবিজনেস

বৃহত্তর চলনবিলের বিস্তীর্ণ সরিষা ক্ষেতে ভ্রাম্যমাণ মৌমাছির খামার বসিয়ে মৌচাষের মাধ্যমে এ বছর ৩৬৯ মেট্রিক টন মধু সংগ্রহ করেছেন মৌ-খামারীরা। এদিকে মৌমাছির ব্যাপক পরাগায়নের ফলে সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনায় খুশি কৃষকরা।

সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. আবু হানিফ বলেন, চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জ জেলার সিরাজগঞ্জ সদর, কামারখন্দ, চৌহালী, বেলকুচি, শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, কাজিপুর, রায়গঞ্জ ও তাড়াশ উপজেলাতে ৫৪ হাজার ৬৫৫ হেক্টর ক্ষেতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। সেসব ক্ষেতের সরিষার ফুল থেকে গত সোমবার দিন পর্যন্ত ২৮৮ মেট্রিক টন মধু সংগ্রহ করতে পেরেছেন মৌ-খামারীরা।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. মাহমুদুল ফারুক বলেন, চলনবিল অধ্যুষিত নাটোর জেলার নাটোর সদর, নলডাঙ্গা, সিংড়া, গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, লালপুর ও বাগাতিপাড়া উপজেলাতে ৭ হাজার ৭৪৮ হেক্টর ক্ষেতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। এসব ক্ষেতের সরিষা ফুল থেকে গত সোমবার পর্যন্ত ৮ মেট্রিক টন ১০ কেজি  মধু সংগ্রহ করেছেন মৌ-খামারীরা।

পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, চলনবিল অধ্যুষিত পাবনা জেলার পাবনা সদর, আটঘরিয়া, ইশ্বরদী, বেড়া, ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর, ফরিদপুর, সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলাতে ৮ হাজার ১০০ হেক্টর ক্ষেতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। এসব ক্ষেতের সরিষা ফুল থেকে গত সোমবার পর্যন্ত ৭৩ মেট্রিকটন মধু সংগ্রহ করতে পেরেছেন মৌ-খামারীরা।

সিরাজগঞ্জ, নাটোর ও পাবনা জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এই তিন কর্তা ব্যক্তি আরও বলেন, এ বছর বিল অঞ্চলে সরিষার আবাদ বৃদ্ধির সাথে মধু উৎপাদন বেড়েছে।

সরজমিনে সোমবার (১৭ জানুয়ারি) চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ উপজেলার মাগুড়াবিনোদ ইউনিয়নের মাগুড়া গ্রাম এলাকা ও সগুনা ইউনিয়নের কুন্দইল গ্রাম এলাকার বিস্তীর্ণ মাঠের সরিষা ক্ষেতগুলোয় দেখা যায়, বহিরাগত ও স্থানীয় মৌ খামারীরা মৌ বাক্সগুলো সরিষা ক্ষেতের আশপাশে রেখেছেন। সেসব মৌ বাক্স থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাচ্ছে মৌমাছি। ঘুরে বেড়াচ্ছে সরিষার ফুলে ফুলে। এরপর মধু সংগ্রহ করে ফিরছে মৌ বাক্সের মৌচাকে। এ সময় মৌ খামারীদের অতি ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায়। অনেকে মৌ বাক্স থেকে মধু ভর্তি মৌচাক বেড় করে মেশিনের সাহায্যে মধু উৎপাদন করছেন। কেউ কাঠ দিয়ে মৌচাকের জন্য নতুন নতুন ফ্রেম তৈরি করছেন।

সাতক্ষিরা উপজেলার বহিরাগত মৌ খামারী বাবু, শহিদুল ও রেজা বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। যে কারণে বেশি মধু সংগ্রহ হয়েছে। দামও ভালো। প্রতিকেজি মধু ক্ষেত থেকেই ৩৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।

নাটোরের সিংড়া উপজেলার স্থানীয় মৌ খামারী বাবুল হোসেন মুঠো ফোনে বলেন, আমি সরিষার মৌসুমে ৬০ থেকে ৭০ মণ মধু সংগ্রহ করি। এতে ৩ থেকে সারে ৪ লাখ টাকা আয় হয়।

কুন্দইল গ্রামের কৃষক ছরোয়ার হোসেন, মন্টু মিঞা, ছোহরাব আলী, সিরাজ উদ্দিন ও মইনুল ইসলাম বলেন, এ বছর মৌমাছির ব্যাপক পরাগায়নের ফলে সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনায় আমরা বাড়তি আয়ের আশা করছি।

তাড়াশ ডিগ্রী কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক মর্জিনা ইসলাম বলেন, মৌচাষ অতীব পরিবেশ সম্মত শিল্প ব্যবসা। তাছাড়া ফসলের জন্য অত্যন্ত উপকারি। এপিস মেলফেরিয়া পোষা জাতের মৌমাছির মাধ্যমে অল্প পুঁজি খাটিয়ে অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র কুটির শিল্প (বিসিক) রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের আঞ্চলিক পরিচালক (উপ সচিব) মো. রেজাউল আলম সরকার বলেন, মধু উৎপাদনের মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি ও দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে ১৮ হাজার মৌ খামারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : জানুয়ারী ১৭, ২০২২ ১:১৫ অপরাহ্ন
দিনাজপুরে আগাম আলুর বাম্পার ফলন, দাম না পেয়ে হতাশ চাষিরা
এগ্রিবিজনেস

আগাম জাতের আলু উত্তোলনের ধুম পড়েছে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর মাঠে মাঠে। এই আলুর ফলন কম হলেও দাম ভালো থাকে। তাই প্রতিবছর ভালো দাম পাওয়ার আশায় চাষিরা আগাম জাতের আলু রোপণ করেন। কিন্তু এবার আলুর ফলন গত মৌসুমের চেয়ে ভালো হলেও দাম নিয়ে হতাশায় রয়েছেন চাষিরা। চাষাবাদে খরচ বৃদ্ধি পেলেও মাঠে কিংবা হাটে মিলছে না কাঙ্খিত মূল্য।

উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের পাঠকপাড়া গ্রামের আগাম জাতের আলুচাষি নিপিন চন্দ্র রায়, দীলিপ চন্দ্র দাস, নবাব আলী শাহ ও বাবলু মিয়া বলেন বলেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর বাজার প্রতি মণে এক’শ থেকে দেড়’শ টাকা কমে গেছে। এভাবে কমতে থাকলে আগামী সপ্তাহে যারা আলু তুলবেন তাদেরকে লোকসানের মুখে পড়তে হবে। এতে হতাশায় আছেন আলুচাষিরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার পাঠকপাড়া, বুজরুক সমশের নগর, সমশের নগর, পলি শিবনগর, পলিপাড়া, গোয়ালপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় কৃষাণ-কৃষাণিরা আগাম জাতের আলু তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এখন মূলত গ্রানোলা, ফ্রেশ, ক্যারেজ, রোমানা পাকরি এবং বট পাকরি আলু বেশি তোলা হচ্ছে।

ফুলবাড়ী পাইকারী আলু বাজারে সোমবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে আলু বিক্রি করতে আসা চাষিরা জানান, আজকের বাজারে প্রতি মণ ক্যারেজ আলু ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। আর গ্রানোলা আলু ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা মণ। আলুর দাম দিনদিন নেমেই যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে চাষিদের লোকসানে পড়তে হবে।

এবার ১৫ শতক জমিতে আগাম জাতের ক্যারেজ জাতের আলু চাষ করেছেন উপজেলার বুজরুক সমশের নগর গ্রামের আলুচাষি বাবলু মিয়া। তিনি বলেন, রোপণের ৫৮ দিন বয়সে আমি আলু তুলেছি। জমিতে বিঘাপ্রতি ফলন হয়েছে ৬৫ মণ।

গোয়ালপাড়া গ্রামের আলু চাষি পরিক্ষিত চন্দ্র রায় বলেন, ৪৫ শতক জমিতে আগাম জাতের আলু চাষ করেছে। আলুর ফলন হয়েছে ৬৬ মণ। ৪৬০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়েছে।

আলুর পাইকারি ক্রেতা উজ্জল কুমার, নবিউল ইসলাম ও কালু দত্ত বলেন, বাজারে এখন আগাম জাতের আলু উঠতে শুরু করেছে। এসব আলু ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের মোকামে সরবরাহ করা হচ্ছে। এক সপ্তাহ পরে আলুর দাম বাড়তেও পারে। আবার কমতেও পারে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এক হাজার ৯৯৪ হেক্টর জমিতে আলু রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু ইতোমধ্যে নির্ধারিত পরিমাণ জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৪০ মেট্রিক টন আলু।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুম্মান আক্তার বলেন, বর্তমানে আলুর বাজার নিম্নমুখী। হিমাগারগুলোতে এখনও আলু মজুদ আছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই হিমাগারে সংরক্ষিত আলু শেষ হলে নতুন আলুর চাহিদা ও দামও দুই-ই বৃদ্ধি পাবে।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : জানুয়ারী ১৭, ২০২২ ১২:০৮ অপরাহ্ন
দিনাজপুরে চালের বাজারে অস্থিরতা
এগ্রিবিজনেস

দিনাজপুরে ১৩টি উপজেলায় চালের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। কয়েকজন মিল মালিক সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়াচ্ছেন দফায় দফায়। এর ফলে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি চালের দাম বেড়েছে ৪ থেকে ৬ টাকা। আর ঐতিহ্যবাহী কাটারিভোগ চালের দাম বেড়েছে ১০ টাকা।

জানা গেছে, ধানের জেলা হিসেবে পরিচিত দিনাজপুরে মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি চালের দাম বেড়েছে প্রকারভেদে ৪ থেকে ৬ টাকা। আর ৫০ কেজি বস্তায় বেড়েছে ২শ থেকে ৩শ টাকা। তবে কাটারি চালের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি কাটারি চালের দাম বেড়েছে ১০ টাকা। চাল বিক্রেতারা বলছেন, মিল মালিকরা দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় বেশি দরে চাল বিক্রি করতে হচ্ছে। আর মিল মালিকরা বলছেন, বাজারে ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেশি, এ কারণে বেড়েছে চালের দাম।

দিনাজপুরের প্রধান চালের বাজার বাহাদুর বাজারে গত রবিবার গিয়ে দেখা যায়, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি

কেজি নাজিরশাইল চাল ৬২ থেকে বেড়ে ৬৮ টাকা, গুটি স্বর্ণা ৪০ থেকে বেড়ে ৪৫ টাকা, বিআর-২৮ চাল ৪৮ থেকে বেড়ে ৫৪ টাকায়, বিআর-২৯ চাল ৪৪ থেকে বেড়ে ৪৮ টাকায় এবং প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৫৫ থেকে বেড়ে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি বস্তায় চালের দাম বেড়েছে প্রকারভেদে ২শ থেকে ৩শ টাকা পর্যন্ত। এ দাম ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে বলে জানান চাল বিক্রেতারা।

প্রায় সব চালের দাম বাড়লেও দিনাজপুরের বিখ্যাত কাটারিভোগ চালের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে এই কাটারিভোগ চালের দাম বেড়েছে প্রতি কেজি ১০ টাকা। দুই সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি কাটারিভোগ চালের দাম ৯০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১শ টাকায়।

বাহাদুর বাজারের চাল বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন জানান, মিল মালিকরা চালের দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় বেশি দামে চাল কিনতে হচ্ছে। তাই তাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে ক্রেতাদের সঙ্গে তাদের প্রায় বচসা হচ্ছে। তিনি বলেন, দাম বেড়ে যাওয়ায় চালের বিক্রি কিছুটা কমেছে। বেশি দাম থাকার কারণে ক্রেতারা বাজারে ঘোরাঘুরি করছেন। বাজার নিয়ন্ত্রণে বিদেশ থেকে চাল আমদানির পাশাপাশি খোলাবাজারে চাল বিক্রির ওপর গুরুত্বারোপ করেন দীর্ঘদিনের চাল বিক্রেতা লিয়াকত আলী।

বাহাদুর বাজারের আরেক চাল ব্যবসায়ী আফসার আলী জানান, ধাপে ধাপে চালের দাম বাড়ছে। বাজারে ধানের দাম ৫০ টাকা বাড়লে মিল মালিকরা চালের দাম ১০০ থেকে ২০০ টাকা বাড়িয়ে দেন।

দিনাজপুর চালকল মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইকবাল চৌধুরী জানান, তারা বাজারে ধান কিনে চাল উৎপাদন করে বিক্রি করেন। বেশি দামে ধান কিনে চাল উৎপাদন করতে তাদের উৎপাদন খরচ বেশি পড়ছে। উৎপাদন খরচের সঙ্গে সমন্বয় করেই তাদের চাল বিক্রি করতে হচ্ছে। এ কারণেই বেড়েছে চালের দাম।

বাংলাদেশ মেজর ও অটো মের হাসকিং মিল মালিক সমিতির সহসভাপতি শহীদুর রহমান পাটোয়ারী মোহন জানান, কৃষকরাও এখন অনেক স্বাবলম্বী। অনেক কৃষকই ধান মজুদ করে রেখেছেন। দাম বেশি না হলে তারা ধান বাজারে ছাড়েন না। এ কারণে বাজারে ধানের দাম বেড়েছে। তার প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে। তবে কৃষকরা ধানের ভালো দাম পেলে তারা ফসল উৎপাদনে আরও বেশি আগ্রহী হবেন এবং এতে দেশে খাদ্য উৎপাদনও বাড়বে। এজন্য কৃষকরা লাভবান হওয়ায় বিষয়টিকে তিনি দেশের জন্য ভালো বলে উল্লেখ করেন।

উল্লেখ্য, দিনাজপুরে প্রতিবছর চাল উৎপাদন হয় ১৪ লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি। এই অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে প্রতিবছর ৯ লাখ মেট্রিক টন চাল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : জানুয়ারী ১৬, ২০২২ ১১:৫৯ পূর্বাহ্ন
মধু সংগ্রহে মৌচাষে ঝুঁকছেন যুবকরা
এগ্রিবিজনেস

জয়পুরহাটের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সরিষার খেত। এবার জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। সরিষার গাছে গাছে হলুদ ফুল আর সেই ফুলের মৌ মৌ গন্ধ। মৌমাছি তার গুনগুন শব্দে মধু আহরণে ব্যস্ত। এসব মধু সংগ্রহ করতে সরিষাখেতের পাশে বাক্স বসিয়েছেন মৌচাষিরা। এতে মৌমাছির মাধ্যমে সরিষা ফুলের পরাগায়ন হচ্ছে। ফলে একদিকে সরিষার উৎপাদন বাড়ছে, অন্যদিকে মধু আহরণ করা যাচ্ছে। সমন্বিত এই চাষে সরিষা ও মৌচাষি উভয়ই লাভবান হচ্ছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গত মৌসুমে ১১ হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। আর চলতি মৌসুমে জেলার পাঁচ উপজেলায় ১১ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। চলতি মৌসুমে ১২ হাজার ২০৫ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়, যা গত বছরের চেয়ে ১ হাজার ১৭৫ হেক্টর জমিতে সরিষা বেশি চাষ হয়েছে।

এসব খেতের পাশে বিভিন্ন দলের মৌচাষিরা তাদের বাক্স স্থাপন করেছেন। আর বাক্স থেকে এবার ৩০ মেট্রিক টন মধু আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আরও অন্তত ১৫ দিন বিভিন্ন এলাকায় মধু আহরণ চলবে বলে মৌচাষিরা জানিয়েছেন।

সদরের পুরানাপৈল দস্তপুর গ্রামের কৃষক ছাইদার হোসেন বলেন, আমি একজন কৃষক। সাড়ে ৫ বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছি। জমির পাশেই মৌমাছি থেকে মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে। এই মৌমাছি চাষে মধু সংগ্রহের ক্ষেত্রে গত বারের চেষে এবার ফলন ভালো হবে এবং হচ্ছে।

মৌচাষের প্রশিক্ষণ নিয়ে গত বছর ২৫ বাক্স দিয়ে এই চাষ শুরু করেছিলেন মো. নয়ন। তিনি বলেন, গত বছর মধুতে ভালো লাভবান হওয়ার কারণে এ বছর ১৫০টি বাক্স নিয়ে শুরু করেছি। উত্তরবঙ্গের জয়পুরহাট একটি মৌচাষের সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। সরকার থেকে যদি আরও সহযোগিতা পাই তাহলে এটি বৃহত্তর করা সম্ভব ছিল।

এ বছরের ২ জানুয়ারি থেকে ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত মৌচাষের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন সদরের দস্তপুর গ্রামের বাসিন্দা আবু ইউসুফ। তিনি বলেন, আমি প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর জানলাম এই কাজে আমরা সফলতার দ্বারপ্রান্তে উঠতে পারব। আমরা পড়াশোনা শেষ করেই চাকরির জন্য এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে বেড়াই। আমাদের বেকারত্ব দূর করার জন্য। আমরা অনেক জায়গায় দরখাস্ত করি। কিন্তু এতো কর্মক্ষেত্র নেই। তাই আমরা এই মৌচাষ শুরু করলে অল্প সময়ে এবং অল্প পুঁজি দিয়ে লাভবান হতে পারব।

দস্তপুর মাঠে সরিষা চাষ ও সেখানে মৌবাক্স দিয়ে মধু আহরণ করা হচ্ছে। তাই পাঁচবিবি উপজেলা থেকে মধু কিনতে এসেছেন আহমেদ আব্দুল মাজেদ। তিনি বলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক মানুষ এখানে আসছেন। আমিও আসছি। এতে অনেকে আগ্রহী হয়ে মধু কিনছেন। আমিও কিনব। এটা খুবই ভালো ও আমরা সহজেই মধু পাচ্ছি।

১৯৭৭ সাল থেকে মৌমাছি চাষের সঙ্গে জড়িত আছেন হাফিজুর রহমান। তার বাড়ি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার গোমানিগঞ্জ মিরকুচিমদন গ্রামের বাসিন্দা। তিনি দিনাজপুর বিসিকের সহকারী কারিগরি কর্মকর্তা ও মৌমাছি পালনের সঙ্গে যুবক উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দেন।

তিনি বলেন, ১৯৭৭ সাল থেকে এই চাষ শুরু করে প্রথম তিন বছর বাড়িতে নিজেই মধু আহরণ করি। এ রকম দেখে আমাকে ধরে নিয়ে এই প্রকল্পে চাকরি দেয় এবং তখন থেকেই বেশি করে এ কাজে জড়িয়ে পড়ি। এখন পর্যন্ত আমি অনেক চাষিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। তারা এখন দেশে অনেক কিছু করবে এবং করতে পারছে। সরিষা, ধনিয়া, খেসারি, কালজিরা, লিচু, মিষ্টি কুমড়া, তিলসহ অনেক ফসলের ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করা যায়।

তিনি আরও বলেন, একজনকে প্রশিক্ষণ নিতে হলে সঙ্গে ছবি, ভোটার আইডি ও ফি হিসেবে ৫০০ টাকা দিতে হয়। প্রশিক্ষণ শেষে আমরা একটি করে মৌ বাক্স দেই। একটি বাক্সে ১০টি ফ্রেম লাগানো যায়। এক ফ্রেম মৌমাছি নিতে ৭০০ টাকা খরচ করতে হয়। বর্তমানে সরকারিভাবে সরিষার মধু ৫০০ টাকা কেজি। কিন্তু আমরা ৪০০ টাকা হিসেবে বিক্রি করছি।

জয়পুরহাট বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক লিটন কুমার ঘোষ বলেন, আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ইতোপূর্বে এ জেলায় ১০০ জনকে তিন ক্যাটাগরিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও তাদের মৌবাক্স, মধু নিষ্কাশন যন্ত্রসহ যাবতীয় কিছু দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেককেই আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে। এখনও অনেকেই প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। এ জেলায় এবার ৩০ টন মধু আহরণ হবে বলে আমরা আশা করছি। ভবিষ্যতে তাদের জন্য সরকারিভাবে কোনো আর্থিক সহায়তা আসলে তা দেওয়া হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শফিকুল ইসলাম বলেন, জেলায় এবার ১ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যে সরিষায় ফুল আসছে এবং সেই ফুলে মৌমাছির আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সরিষা তৈলাক্ত ফলস হিসেবে আমাদের দেশে সমাদৃত। গত বছরের তুলনায় এবার জেলায় সরিষা আবাদ বেশি হয়েছে। সরিষার ফুল আসা অবস্থায় অনেক মৌচাষিরা মৌবাক্স স্থাপন করেছে। আমরা কৃষি বিভাগ থেকে অনেক কৃষককে মৌবাক্স ও প্রশিক্ষণ দিয়েছি।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : জানুয়ারী ১৫, ২০২২ ৪:৫২ অপরাহ্ন
চালের ‘সর্বোচ্চ’ মজুদেও কমছে না দাম
এগ্রিবিজনেস

শেয়ার করুন

প্রকাশ : জানুয়ারী ১৫, ২০২২ ১:১৫ অপরাহ্ন
হিলিতে পেঁয়াজের কেজি ২০ টাকা
এগ্রিবিজনেস

দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে পাইকারিতে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৬ থেকে ৮ টাকা কমেছে। এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছিল ২৬ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে। বর্তমানে ২০ থেকে ২২ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।

হিলি বন্দরে পেঁয়াজের দাম কমায় খুশি পাইকাররা। তবে খুচরা বাজারে ক্রেতা তেমন নেই বলছেন ব্যবসায়ীরা। শনিবার (১৫ জানুয়ারি) হিলি বাজার ঘুরে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

হিলি বাজারের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পাবনা ও মেহেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন পেঁয়াজ উঠেছে। এতে বাজারে দেশীয় পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। সরবরাহ বাড়ায় আগের তুলনায় দামও কম। সেই সঙ্গে ক্রেতা সংকট।

পেঁয়াজ আমদানিকারী হারুন-উর রশিদ জানিয়েছেন, বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রয়েছে। তবে আমদানির পরিমাণ মাঝে মাঝে ওঠা-নামা করছে। কারণ, দেশের বাজারে এখন প্রচুর দেশীয় পেঁয়াজের সরবরাহ রয়েছে; যার জন্য আমদানিকারকরা ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।

হিলি কাস্টমসের তথ্যমতে, গত সপ্তাহে ৬ কর্মদিবসে ভারতীয় ৫৬ ট্রাকে ১ হাজার ৫৬৪ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে এই বন্দর দিয়ে।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : জানুয়ারী ১৪, ২০২২ ২:২৯ অপরাহ্ন
দক্ষিণাঞ্চলের অর্থকরী ফসল গোলগাছ
এগ্রিবিজনেস

নাম গোলগাছ হলেও দেখতে কিছুটা নারিকেল পাতার মতো। এটি দক্ষিণাঞ্চলের অর্থকরী ফসল। নোনাজলে জন্ম, নোনা সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। অথচ এর ডগা থেকে বেরিয়ে আসছে মিষ্টি রস।

সেই রস দিয়ে তৈরি হচ্ছে গুড়। সুস্বাদু এই গুড়ের চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক। প্রতি বছর শীত মৌসুমে প্রতিদিন সূর্য ওঠার সাথে সাথে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় প্রায় শতাধিক কৃষক ব্যস্ত হয়ে পড়ে এ গাছের রস সংগ্রহ করতে। এরপর বাড়ির উঠানে বসে শুরু হয় রস দিয়ে গুড় তৈরির কাজ।

আর সেই গুড় স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে চলছে এলাকার কৃষকদের জীবন-জীবিকা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের নবীপুর গ্রামে কৃষকরা প্রতিদিন সকাল হলেই রস সংগ্রহ করতে ছুটে যায় গোলবাগানে। আর ব্যস্ত হয়ে পড়ে ওইসব কৃষক পরিবারের গৃহবধূরা। কেউ কলস কিংবা বালতি নিয়ে যাচ্ছে।

অবার কেউ রস ভর্তি কলস বালতি নিয়ে বাড়ি ফিরছে। কেউ কেউ সংগৃহীত রস বাড়ির উঠানে নিয়ে আসছেন। আর সেই রস গৃহবধূরা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ছেঁকে ঢোঙ্গায় রাখছেন। এরপর তারা তাফালে খড়কুটা দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে রস দিয়ে তৈরি করেন গুড় বা মিঠা। ওই গ্রামের সুনিতি রানী বলেন, বিয়ের পর থেকে গোলের রস দিয়ে গুড় তৌর করছি।আগে অনেক বেশি গুড় হতো। এখন কমে গেছে।

গৃহবধূ বিথীকা রানী বলেন, এখন রস জ্বাল দিতে হবে। এখন কথা বলার সময় নেই। একটু বসতে হবে।

সংশ্লিষ্ট গোল গাছের মালিকরা জানান, প্রতিটি গোলগাছ পাতাসহ উচ্চতা হয় ১২ থেকে ১৫ ফুট পর্যন্ত। এর ফুল হয় হলুদ এবং লাল বর্ণের। ফুল থেকে গাবনা পরিপক্ব হলে সেটি তালগাছের আঁটির মতো কেটে শাস খাওয়াও যায়। এটি পাম জাতীয় উদ্ভিদ। এসব গাছ নদী কিংবা খালের পাড়ে প্রাকৃতিকভাবেই জন্ম নেয়। তবে গোলগাছ চাষাবাদ অত্যন্ত লাভজনক, সহজসাধ্য এবং ব্যয়ও খুব কম। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োজন হয় না। এতে কোনো পরিচর্যাও করতে হয় না। এক সময় এ উপজেলার বিভিন্ন খাল-বিল ও নদীর তীরে প্রচুর গোলের বাগান দেখা যেত। কিন্তু জলবায়ুর প্রভাবজনিত কারণ ও প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ আর চাষাবাদের অভাবে এ গাছ ক্রমশই ধ্বংস হতে বসেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের সর্ববৃহৎ বনাঞ্চল সুন্দরবনসহ দক্ষিণ উপকূলের বিভিন্ন স্থানে গোলগাছ রয়েছে। তবে বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া, কুয়াকাটা, রাঙ্গাবালি, গলাচিপা, দশমিনা, বাউফল, বরগুনার আমতলী, তালতলী, পাথরঘাটা, ভোলা ও খুলনা জেলার বিস্তীর্ণ এলাকাসহ চরাঞ্চলে গোলগাছের বাগান রয়েছে। শীত মৌসুমে গোলবাগানের মালিকরা এর রস দিয়ে গুড় উৎপাদন করে বাড়তি অর্থ উপার্জন করে থাকেন।

নবীপুর গ্রামে গোল গাছ চাষি নিঠুর হাওলাদার বলেন, তার বাগান থেকে প্রতিদিন ৪ কলস রস বের হয়। এতে মোট ১৩ কেজি গুড় আসে। প্রতিদিন কাক ডাকা ভোরে উঠে কলস নিয়ে বাগানে যেতে হয়। এরপর প্রতিটি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে আনতে হয়। অগ্রহায়ণ মাস থেকে শুরু হয়ে চৈত্র মাস পর্যন্ত রস সংগ্রহের কাজ চলবে।

একই গ্রামের মনিন্দ্র শিকারী বলেন, গোলগাছের গুড়ের স্থানীয় বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ উপজেলায় শতাধিক পরিবার গোলগাছের উপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করছে।

উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা আব্দুস সালাম জানান, এ উপজেলার চাকামইয়া, নীলগঞ্জ ও টিয়াখালীর ইউনিয়নের লোন্দা গ্রামে পরীক্ষামূলকভাবে গোলগাছের বীজ রোপণ করা হয়েছে। এতে ব্যাপক সফলতা এসেছে।

শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop