২:০৪ পূর্বাহ্ন

রবিবার, ২৪ নভেম্বর , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
প্রকাশ : ডিসেম্বর ১৯, ২০২১ ২:৪৯ অপরাহ্ন
টাঙ্গাইলের নাগরপুরে তুলার বাম্পার ফলন
এগ্রিবিজনেস

টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলায় চলতি মৌসুমে তুলা চাষ করে ব্যাপক লাভবান হবার স্বপ্ন বুনছেন কৃষকরা। সরকারি প্রণোদনা, অনুকূল পরিবেশ, পরিচর্যা এবং ভালো বীজের কারণে তুলার বাম্পার ফলন হওয়ায় আশাবাদী কৃষকরা।

সরকারি প্রকল্পের বিভিন্ন প্রণোদনার কারণে উপজেলায় চলতি মৌসুমে তুলা চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষকরা জানান, আগে তুলা চাষ করে অনেকে লোকসানে পড়েছেন। কিন্তু গতবছর তুলার দাম ভালো পাওয়ায় তারা লাভবান হয়েছেন। এ কারনে চলতি মৌসুমে গতবারের চেয়ে বেশী জমিতে এ অঞ্চলে তুলার চাষ হয়েছে।

আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবং তুলা উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে তুলার ফলন হয়েছে অন্য বছররের তুলনায় অনেক ভালো। তুলা উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের পরামর্শে ও প্রণোদনায় কৃষকরা তুলার জমিতে এ বছর সাথী ফসল হিসেবে বিভিন্ন শাক-সবজীর চাষ করেও বাড়তি লাভ পেয়েছেন। এ বছর সরকারি সুবিধাদি ও পরামর্শের কারণে তুলার ভালো ফলন আশা করা হচ্ছে। বর্তমানে কৃষকরা ব্যস্ত জমি পরিচর্চায়।

ঢাকা খামারবাড়ি তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক আখতারুজ্জামান জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা কোনো ধরনের আপদ না হলে এই উপজেলায় তুলার বাম্পার ফলন হবে। কৃষকরা যাতে উৎপাদিত তুলার ন্যায্যমূল্য পায় সে জন্য তুলার মুল্যও বাড়ানো হয়েছে সরকারীভাবে। অন্য ফসলের চেয়ে তুলা চাষ লাভজনক হওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষকরা তুলা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। সারা জেলায় সরকারি প্রণোদনায় তুলা চাষ সম্প্রসারণ করা গেলে তুলা আমদানীর নির্ভরতা অনেকটাই কমে আসবে বলে মনে করছেন তিনি।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : ডিসেম্বর ১৮, ২০২১ ৩:৩৮ অপরাহ্ন
দামে স্বস্তি ফেরাচ্ছে নতুন পেঁয়াজ
এগ্রিবিজনেস

শেয়ার করুন

প্রকাশ : ডিসেম্বর ১৮, ২০২১ ২:২৯ অপরাহ্ন
পাঁচ মাসে কৃষি পণ্যের রপ্তানি আয় ৫৫ কোটি ডলার
এগ্রিবিজনেস

চলতি ২০২১-২২ অর্থ বছরের প্রথম ৫ মাসে (জুলাই-নভেম্বব) ৫৫ কোটি ৬৪ লাখ মার্কিন ডলারের কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য রপ্তানি হয়েছে। এর আগের অর্থ বছরের একই সময়ের তুলনায় এই আয় ২৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেশি।

বিগত ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ প্রথমবারের মত ১০০ কোটি ডলারের কৃষি পণ্য রপ্তানির মাইলফলক অর্জন করে। চলতি অর্থবছরে সেই ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে। গত অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে রপ্তানি আয় ছিল ৪৪ কোটি ৭৪ লাখ ডলারের।

বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যানুসারে, উল্লেখযোগ্য কৃষিজাত রপ্তানি পণ্য হলো-শাকসবজি, চা, ফুল, ফলমুল, নানা রকম মসলা, তামাক, শুকনা খাবার ইত্যাদি। তবে এর মধ্যে ‘ড্রাই ফুড’ বা শুকনো খাদ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। এ সব ড্রাই ফুডের মধ্যে আছে-বিস্কুট, চানাচুর, কেক, পটেটো ক্রাকার ও বাদামের মতো নানান রকম পণ্য।

বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন (বাপা) জানায়, গত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে যে ১শ’ কোটি ডলারের কৃষি পণ্য রপ্তানি হয়েছে, তার মধ্যে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য পণ্যের হিস্যাই বেশি। কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্য পণ্য উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে পাঁচ শতাধিক প্রতিষ্ঠান। তার মধ্যে বড় ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান আছে ২০টি। আর রপ্তানি করছে ১শ’টির বেশি প্রতিষ্ঠান।

কৃষি পণ্য রপ্তানি আয়ের বিষয়ে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ পণ্য রপ্তানিতে কর রেয়াত ও ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। যার ফলে গত চার বছর ধরে এই খাতে রপ্তানি আয় বেড়েছে। তিনি মনে করেন এই খাতের উদ্যোক্তারা বৈশ্বিক বাজারের চাহিদা বিবেচনায় রেখে নতুন নতুন পণ্য রপ্তানি শুরু করেছে, যার ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে।

তিনি বলেন, করোনা মহামারির কারণে বৈশ্বিক বাজারে কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের চাহিদা বেড়েছে। সরকার চাচ্ছে এই সুযোগ দেশের উদ্যোক্তারা যেন কাজে লাগায় এবং সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে।

কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের মধ্যে বেশি রপ্তানি হয় রুটি, বিস্কুট ও চানাচুর– জাতীয় শুকনা খাবার, ভোজ্য তেল ও সমজাতীয় পণ্য, ফলের রস, বিভিন্ন ধরনের মসলা,পানীয় এবং জ্যাম-জেলির মতো বিভিন্ন সুগার কনফেকশনারি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বিস্কুট, রুটি জাতীয় শুকনা খাবার রপ্তানি করে চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে দেশীয় কোম্পানিগুলো ৮ কোটি ৮৬ লাখ ডলার আয় করেছে।

বাংলাদেশের কৃষি পণ্য রপ্তানির প্রধান গন্তব্য হলো-ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মধ্যপ্রাচ্য ও উপসাগরীয় অঞ্চল। তবে এসব দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশী ও অন্যান্য দক্ষিণ এশীয় প্রবাসীরা হচ্ছেন মূল ভোক্তা। বর্তমানে বিশ্বের ১৪৫টি দেশে বাংলাদেশের প্রক্রিয়াজাত খাদ্য রপ্তানি হচ্ছে।

কৃষিপণ্যের রপ্তানির বড় অংশ করে প্রাণ গ্রুপ। বিদায়ী অর্থবছরে তাদের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩৪ কোটি ডলার। ১৯৯৭ সালে ফ্রান্সে খাদ্য পণ্য রপ্তানি শুরু করা এই শিল্পগোষ্ঠী বর্তমানে ১৪৫টি দেশে পৌঁছে গেছে। ফ্রুট ড্রিংক, পানীয়, বিস্কুট, সস, নুডলস, জেলি, মসলা, সুগন্ধি চাল, পটেটো ক্রাকার, চানাচুর, ঝাল-মুড়ি ইত্যাদি পণ্য রপ্তানি করে প্রতিষ্ঠানটি।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপনন) কামরুজ্জামান কামাল বলেন, করোনা মহমারির কারণে সারাবিশ্বে অনেক মানুষ খাদ্য অভ্যাসে পরিবর্তন এনেছে। খরচ কমাতে তারা সাশ্রয়ী মূল্যের খাবার বিশেষ করে শুকনো খাবারের প্রতি ঝুঁকছে। যে কারণে গত অর্থবছরে কৃষি পণ্য রপ্তানিতে আমরা ১শ’ কোটি ডলারের মাইলফলক অর্জন করতে পেরেছি।

তিনি বলেন, প্রযুক্তির আধুনিকায়ন ও মানসম্মত পণ্য উৎপাদন নিশ্চিত করার ফলে বাংলাদেশের দ্রুত অগ্রগতি হচ্ছে। এ ছাড়া কর রেয়াত ও নগদ সহায়তার মতো সরকারের নীতি সহায়তা কৃষি পণ্য রপ্তানিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

কামরুজ্জামান কামাল বলেন, ‘পৃথিবীর অনেক দেশেই প্রচুর পরিমাণে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য উৎপাদিত হয় না। তারা মূলত আমদানি নির্ভর। সব মিলিয়ে আগামী দিনে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের চাহিদা আরও বাড়বে। পণ্যটির রপ্তানি বাড়াতে হলে আমাদের দেশের কৃষিকে আরও বেশি উৎপাদনমুখী হতে হবে।’
তিনি মনে করেন এই খাতের পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে এখনও বিশ্বের অনেক দেশের সাথে আমাদের শুল্ক ও অশুল্ক বাঁধা রয়ে গেছে। দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে এসব জটিলতা দূর করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়ার আহবান জানান তিনি।

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে কৃষি ও খাদ্যপণ্যের নির্ধারিত রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১১০ কোটি ৯২ লাখ ডলার।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : ডিসেম্বর ১৮, ২০২১ ১২:০১ অপরাহ্ন
লাগামহীন বাজার দিশাহারা ক্রেতা
এগ্রিবিজনেস

শীতের সবজির মৌসুমেও লাগামহীন খাদ্যপণ্যের বাজার। ভরপুর বাজারে পণ্য কিনতে দিশাহারা হতে হচ্ছে ক্রেতাদের। বছরের এই সময় বেশির ভাগ সবজির দর ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ টাকায় নেমে আসে। এ বছর ৩০ টাকার নিচে নেমেছে- এমন একটি সবজিও এখনো বাজারে পাওয়া যায় না। বাজারে নতুন পিঁয়াজ এলেও দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকার বেশি। শুধু রাজধানী নয়, সারা দেশের বাজারগুলোতে পণ্যের দর নিয়ে দিশাহারা অবস্থা সব ক্রেতার। প্রসঙ্গত, গ্রাম থেকে শহরে পৌঁছাতে সব ধরনের কৃষিপণ্যের দর কয়েকগুণ বেড়ে যায়। আর সেই বাড়তি দামেই কিনতে হচ্ছে সবাইকে। কেন দর বাড়ছে বা কেন প্রতিটি পণ্য বেশি দামে কিনতে হচ্ছে- কেউ তার জবাব দিতে পারছে না।

অর্থনীতিবিদ, বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, উৎপাদন ও সরবরাহের ত্রুটিপূর্ণ কাঠামোর কারণেই দর কমছে না। কিছু মানুষের মুনাফার লোভের কারণে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না। এরই প্রভাব সব খাতে।

রাজধানীর বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি খুচরা দোকান কাঁচা সবজিতে ভরপুর। কোনো সবজি বা পণ্যের ঘাটতি নেই। বিক্রেতারা বলছেন, স্বাভাবিক যোগাযোগ ব্যবস্থা, আবহাওয়া অনুকূল থাকায় সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। ফলে বাজার এখন ভরপুর। দামও তুলনামূলক কমেছে। এ ব্যাপারে বিক্রেতাদের ব্যাখ্যা, দাম কমেছে গত কয়েক সপ্তাহের তুলনায়।

শীতের মৌসুম হিসেবে প্রতিবছর যে দাম থাকে এ বছর তার চেয়ে অনেক বেশি দরেই কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। গতকাল ঢাকার বেশ কিছু সবজি বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, সারা বছর বেশি দামে যে পণ্যটি ভোক্তাদের কিনতে হয় সেটি হলো টমেটো। সময় বিশেষে ১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। কিন্তু শীতের পুরো মৌসুমে দর ১৫ থেকে ২০ টাকায় নেমে আসে। এ বছর সেই টমেটো বিক্রি হচ্ছে এখন ৪০-৬০ টাকায়। আগের সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে ১০ টাকা কমে নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। আলুর দর তুলনামূলক এই সময় এমনই থাকে। তবে এই সময় শিম বিক্রি হয় সাধারণত ১০ থেকে ১৫ টাকায়। এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা কেজিতে। বর্তমান বাজার দর হিসেবে গাজরের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৬০ টাকায়। বরবটির কেজি ৫০-৭০ টাকায়। ফুলকপির পিস ৩০-৪০ টাকা এবং বাঁধাকপির পিস ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সস্তা সবজি হিসেবে যে পণ্যটি ক্রেতাদের কাছে সহজলভ্য হিসেবে থাকে, সেটি হচ্ছে মুলা। গ্রামের বাজারে মুলার দাম না পেয়ে কৃষকরা ফেলে দিয়ে চলে যান। ঢাকায় সেই মুলার কেজি এখনো ৪০-৫০ টাকা। শালগমের (ওলকপি) কেজি ৩০-৪০ টাকা। অবশ্য আগের সপ্তাহের তুলনায় সবগুলো সবজির দর কিছুটা কমেছে। তবে বছরের সময় হিসাব করলে প্রতিটি সবজি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা ক্ষেত্র বিশেষে তার চেয়ে বেশি দরে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। প্রোটিনের সহজ উৎস ব্রয়লার মুরগি বছরজুড়েই ক্রেতাদের ভুগিয়েছে। এখনো ভোগাচ্ছে এই পণ্যটি। সাদা মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬৫-১৭০ টাকা কেজি দরে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৬০-১৬৫ টাকা। আর দুই সপ্তাহ আগে ছিল ১৫০-১৫৫ টাকা। মানে দুই সপ্তাহে বেড়েছে কেজিপ্রতি ১৫ টাকা। সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৭০-২৮০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ২৫০-২৭০ টাকা।

বাজার পরিস্থিতি নিয়ে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, পণ্যের বাজার কোনো নিয়ম মেনে চলছে- এটা মনে হয় না। সম্ভবত কিছু মানুষ একসঙ্গে কল্পনা করছে- এখনি সময় মুনাফা করার। বাজারে সরবরাহ বাড়ছে কিন্তু বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে। বিশ্ববাজারে অনেক পণ্যের দর কমলেও দেশের বাজারে দর বেশি। মানুষেরও যেন গা সওয়া হয়ে গেছে। উত্তরণের উপায় কী- তা নিয়ে কারও ভাবনা নেই। কর্তৃপক্ষ উন্নয়নের জিডিপিতে খুশি। কিন্তু এর পরিবর্তন হওয়া দরকার। এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে।

অর্থনীতিবিদ মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে দর বেশির ভাগ পণ্যের কমেছে। কিন্তু বছরের এই সময়ে যে দর থাকা উচিত তার চেয়ে এখনো অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এর একটি কারণ হতে পারে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি। কৃষকের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। খুচরা পর্যায়ে এসে শ্রমিকদের মজুরি হয়তো বেশি দিতে হচ্ছে। তার প্রভাব পড়েছে দরের ক্ষেত্রে। এটা একটি দুষ্ট চক্রের মধ্যে যেন পড়ে না যায় তার দিকে কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া উচিত। মূল্যস্ফীতি যেন লাগামহীন হয়ে না পড়ে তার ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে। কৃষকের বাজার তৈরি করা উচিত। সাধারণ কৃষক সরাসরি বিক্রি করতে পারে না। ডিজিটাল কাঠামোগত সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারলে হয়তো উন্নতি হতে পারে। কৃষক ও সাধারণ ক্রেতারা উপকৃত হবে।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : ডিসেম্বর ১৭, ২০২১ ১২:০৮ অপরাহ্ন
দাম বেড়েছে ডাল-মুরগির, কমেছে পেঁয়াজ-রসুন ও সবজির
এগ্রিবিজনেস

সপ্তাহের ব্যবধানে আবারও বেড়েছে ডাল ও মুরগির দাম। অন্যদিকে বাজারে কমেছে পেঁয়াজ-রসুন, আলু ও সবজির দাম। এছাড়াও অপরিবর্তিত রয়েছে অন্যান্য পণ্যের দাম।

শুক্রবার (১৭ ডিসেম্বর ) সকালে রাজধানীর মিরপুরের ১১ নম্বর বাজার, মিরপুর কালশী বাজার ও পল্লবী এলাকা ঘুরে এসব চিত্র ওঠে এসেছে।

বাজারে বেশিরভাগ সবজির দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা কমেছে। এসব বাজারে প্রতিকেজি টমেটো ২০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, সিম বিক্রি হচ্ছে ৪০-৬০ টাকা, (গোল) বেগুন ৬০ টাকা, (লম্বা) বেগুন ৪০ টাকা, ফুলকপি প্রতি পিস ৫০ টাকা, পাতা কফি ৪০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ৮০ টাকা, চাল কুমড়া পিস ৪০ টাকা, প্রতি পিস লাউ আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, লতি ৬০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা, কচুর লতি ৬০ টাকা ও পেঁপের কেজি ৪০ টাকা।

মিরপুর ১১ নম্বর বাজারের সবজি বিক্রেতা আল আমিন বলেন, শীতের মৌসুমে সবজির দাম কমছে। এখন বাজারে সবজির সরবরাহ ও আমদানি ভালো আছে।

এদিকে বাজারে কমেছে আলুর দাম। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকায়। গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৩০ টাকা। এছাড়া দাম কমে নতুন আলুর কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কমেছে, প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৭৫-৭০ টাকা।

কালশী বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা সাহাদাত হোসেন বলেন, সপ্তাহের ব্যবধানে কমেছে পেঁয়াজের দাম ৫ থেকে ১০ টাকা কমেছে। বাজারে পেঁয়াজের আমদানি ভাল থাকায় দাম কমছে।

এছাড়াও কমেছে রসুনের দাম। চায়না রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। গত সপ্তাহে এসব বাজারে চায়না রসুন বিক্রি হয়েছিল ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। দেশি আদার কেজি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। চায়না আদা বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা।

মিরপুর ১১ নম্বর বাজারের রসুন বিক্রেতা মো. কবির হোসেন বলেন, আমদানি বেড়েছে বলেই দাম কমেছে আদা ও রসুনের।

এসব বাজারে কাঁচামরিচ প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। কাঁচা কলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। পেঁপে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা। শসা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকায়।

এছাড়া শুকনা মরিচ প্রতিকেজি ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা, রসুনের কেজি ৮০ থেকে ১৩০ টাকা, আদা বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজি। হলুদের কেজি ১৬০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেড়েছে দেশি ডালের দাম। কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা। গতসপ্তাহে দেশি ডালের কেজি ১০০ টাকা ছিল। ইন্ডিয়ান ডাল কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়।

এসব বাজারে ভোজ্যতেলের প্রতি লিটার খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা। বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের তেলের লিটারও বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়।

বাজারে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। এছাড়া প্যাকেট চিনি বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকায়। আটা প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায়।

গত সপ্তাহের দামেই বিক্রি হচ্ছে ডিম। লাল ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। হাঁসের ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা। সোনালী (কক) মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়।

বাজারে বেড়েছে মুরগির দাম। ১৫ টাকা দাম বেড়ে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকা। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকায়। গত সপ্তাহে সোনালি মুরগির কেজি ছিল ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা। লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা।

১১ নম্বর বাজারের মুরগি বিক্রেতা মো. রুবেল বলেন, সরকারি ছুটি ও বিজয় দিবসের কারণে মুরগির দাম বেড়েছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান থাকায় মুরগির দাম বাড়তির দিকে।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : ডিসেম্বর ১৭, ২০২১ ১১:৫৬ পূর্বাহ্ন
ফুলের ভালো দাম পেয়ে হাসি ফুটেছে চাষিদের মুখে
এগ্রিবিজনেস

ফুলের সম্রাজ্যখ্যাত যশোরের গদখালী এলাকার কৃষক আলমগীর হোসেন বুদ্ধিজীবী দিবস আর বিজয় দিবসে লক্ষাধিক টাকার ফুল বিক্রি করেছেন তিনি। প্রায় দুই বছর পর দুই বিঘা জমিতে উৎপাদন করা ফুল ভালো দামে বিক্রিতে তার মুখে হাসি ফুটেছে।

তিনি জানান, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে কিছুদিন আগেও ফুল চাষীদের গলার ফাঁস হয়ে তাদের সব স্বপ্নসাধ কেড়ে নিয়েছিল। চলতি বছরে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ফুলের ব্যাপক চাহিদা ও ভালো দাম থাকায় সেই ফাস এখন চাষীদের গলার মালা হয়ে উঠেছে।

দুই দিবস ঘিরে আগের তুলনায় বেচাকেনা বেড়েছে গদখালীর ফুল বাজারে। চাহিদা বেশি থাকায় আগের বাজারদর থেকে বেশি দামে ফুল বিক্রি হয়েছে। প্রতিদিন ভোরে এই ফুলের হাট বসে গদখালীতে। গত তিন দিনে বাজারটিতে দেড় কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়েছে গাঁদা ফুল। বাজারে প্রতি হাজার গাঁদা ফুল বিক্রি হয়েছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা দরে। যা আগে দাম ছিল দেড় শ’ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২৫০-৩০০ টাকা। একেকটি গোলাপ বিক্রি হয় ৪-৬ টাকায়, যা আগে ছিল দেড় থেকে ২ টাকা। রজনীগন্ধা একেকটি বিক্রি হয়েছে সাড়ে ৮ থেকে ১০ টাকায়, যা আগে ছিল ৭ থেকে ৮ টাকা। রঙিন গ্লাডিউলাস প্রতিটি মান ভেদে বিক্রি হয়েছে ৬ থেকে ১৫ টাকায়, যা পূর্বে ছিল ৩-৬ টাকা। জারবেরা বিক্রি হয়েছে ১২ থেকে ১৪ টাকায়, যা আগে দাম ছিল ৬ থেকে ৮ টাকা। ফুল বাঁধাইয়ের জন্য কামিনীর পাতা বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা আঁটি, যা আগে ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। জিপসির আঁটি বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। যা আগে বিক্রি হতো ২০ থেকে ২৫ টাকায়।

ফুল চাষিরা জানিয়েছেন,মাস খানেক আগের থেকে বর্তমানে প্রতিটি ফুলের দাম দ্বিগুন হয়েছে। আসছে ১৩ ফেব্রুয়ারি পয়লা ফাল্গুন, ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা ও মহান শহীদ দিবস এবং ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের আগ মুহুর্তে ফুলের দাম আরো ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষকেরা প্রায় দুই বছরের করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানের সারাবছরের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে তারা আশা করছেন।

পানিসারার পটুয়াপাড়া গ্রামের ফুল চাষী আলমগীর হোসেন বলেন, করোনার কারণে গত বছর এই সময়ে ১০ হাজার টাকার ফুলও বিক্রি করতে পারেনি। এবার ১৫ কাটা জমির জারবেরা আর দেড় বিঘা জমির গাঁদা থেকে এই দুই দিবসে ৫০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করতে পেরেছি। করোনায় সারা বছর ফুল বিক্রি ছিলো না। আশা করছি, সামনের চারটি অনুষ্ঠানে গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবো।’

হাড়িয়া গ্রামের কৃষক মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘দেড় বিঘা জমিতে চীনের লং স্টিক রোজ জাতের গোলাপ ফুলের চাষ এ অঞ্চলে আমিই প্রথম শুরু করেছিলাম। করোনা পরিস্থিতিতে ফুল বিক্রি হয়নি। বাগান পরিচর্যায় খরচও বাড়ছিলো। যে কারণে বাগান পরিচর্যা অনেকটা বাদ দিয়েছিলাম। এবার করোনা কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় ফুল চাষ শুরু করি। ডিসেম্বর থেকে ফুলের চাহিদা বেড়েছে। সেই সাথে আগের চেয়ে দামও বেড়েছে কয়েকগুণ। বিজয় দিবস উপলক্ষে ৭০ হাজার টাকার মতো ফুল বিক্রি হয়েছে। এ বছর ফেব্রুযারি মাসে দুই লাখ টাকার গোলাপ ও দেড় লাখ টাকার চীনের লং স্টিক ফুল বিক্রি হবে বলে আশা করছি। হাঁড়িয়া গ্রামের আশরাফ হোসেন বলেন, ‘১৭ কাঠা জমির গাঁদা ফুল বিক্রি করেছি ৭০ হাজার টাকায়। গত বছর মে মাসে আম্ফানের সময় একই খেতে গাঁদা ফুল চাষ করেছিলাম। তখন মাত্র দু শ টাকার ফুল বিক্রি করতে পেরেছি।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির (বিএফএস) কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, যশোর জেলার আট উপজেলায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়। তার মধ্যে ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী-পানিসারার প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কৃষক ৬ হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ করছেন। ‘প্রায় দুই বছর ধরে করোনাভাইরাস, লকডাউন, আম্ফান ঘূর্ণিঝড় ফুলচাষিরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। গত তিন দিনে দেড় কোটি টাকার ফুল বিক্রি হওয়ায় চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে।’

facebook sharing button
twitter sharing button
messenger sharing button
whatsapp sharing button
শেয়ার করুন

প্রকাশ : ডিসেম্বর ১৬, ২০২১ ২:২৭ অপরাহ্ন
উৎপাদনে রেকর্ড ভাঙছে বাংলাদেশ
এগ্রিবিজনেস

পাকিস্তানি শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। স্বাধীনতা পরবর্তী বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের যে পরিচিতি আর ভাবমূর্তি ছিল সেটি পাল্টেছে বহুভাবে।

স্বাধীনতার ৫ দশকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতিতে বাংলাদেশের ইতিবাচক ইমেজ তৈরি হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে ক্রমাগত উৎপাদন বাড়ায় এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ। এতে দেশীয় চাহিদা যেমন পূরণ হচ্ছে, তেমনি শস্য, মাছ এবং মাংস উৎপাদনে নিজেদের রেকর্ড ভাঙছে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, স্বাধীনতার ৫০ বছরে বেশ কিছু পণ্য রপ্তানিতেও বিশ্বে শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে। ৭০-এর দশকে স্বাধীন বাংলাদেশকে খাদ্য ঘাটতি, দুর্ভিক্ষ আর প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত জনপদ হিসেবে চিনেছে বিশ্ববাসী। ১৯৭০-৭১ সালে যেখানে বাংলাদেশের চাল উৎপাদন ছিল ১০.৮ মিলিয়ন টন, এখন সেখানে ২০২০-২১ অর্থবছরে উৎপাদন প্রায় চার গুণ বেড়ে ৩৮.৭ মিলিয়ন টনে দাঁড়িয়েছে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) মতে, ১.২ মিলিয়ন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে হিসাবে ধরে বাংলাদেশের প্রধান খাদ্য তথা চালের বর্তমান চাহিদা প্রায় ৩৫.৩ মিলিয়ন টন।

মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে লাল-সবুজের বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উত্তরণের সুপারিশ করেছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ। এই অর্জন বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রার এক মহান মাইলফলক।

চলতি বছরের ২৯শে নভেম্বর কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলনের একটি অধিবেশনে বলেন, ২০১৫ সাল থেকে খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমাদের বর্তমান লক্ষ্য পুষ্টিকর এবং মানসম্পন্ন খাদ্য নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, মানসম্মত এবং পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করতে আমরা জনগণ এবং কৃষকদের আয় বাড়ানোর চেষ্টা করছি। মন্ত্রী অবশ্য স্বীকার করেন, জনগণের আয় কমে যাওয়ায়, ক্রয় ক্ষমতার ওপর প্রভাব পড়েছে। গত অর্থবছরে মোটা চালের গড় দাম খুচরা বাজারে ১০.৮৯ শতাংশ এবং পাইকারি বাজারে ১০ শতাংশ বেড়েছে।

মানসম্পন্ন ও নিরাপদ খাদ্য বিভাগে ১১৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৯তম। গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স (জিএইচআই) ২০২১-এ এটি ১১৬টি দেশের মধ্যে ৭৬তম অবস্থানে রয়েছে। প্রতিবেশী ভারত ৭১তম এবং মিয়ানমারের অবস্থান ৭২তম, পাকিস্তান ৭৫তম, শ্রীলঙ্কা ৭৭তম এবং নেপাল ৭৯তম স্থানে রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গরিব-ধনীর মধ্যে সম্পদ ও আয়ের ব্যবধান, মানসম্পন্ন ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত কঠিন করে তোলে। উদ্বৃত্ত খাদ্য উৎপাদন করা সত্ত্বেও অনেক সময় উচ্চমূল্যের কারণে বাজার থেকে খাদ্য কিনতে পারছে না মানুষ। তাদের মতে, একজন কৃষক তার প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় সব খাবারই উৎপাদন করেন না। ১৯৭০-এর দশকের তুলনায় কৃষক বর্তমানে তিন থেকে চার গুণ বেশি উৎপাদন করেন। কিন্তু সীমিত বাজার ব্যবস্থাপনা, কৃষক ও বাজারের মধ্যে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে সুফল মিলছে না। তিনি বলেন, বাজার মূল্যের চেয়ে তিনগুণ কম মূল্য পান কৃষকরা। আমাদের জনসংখ্যার প্রায় ৫০ শতাংশ কৃষক। বাজারে দাম বেশি। কিন্তু কৃষকের কাছে দাম কম। দামের ব্যবধান চাষিদের ক্রয়ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে। অতএব, খাদ্যে ভেজাল এবং খাদ্য দূষণও একটি বড় উদ্বেগের বিষয়। কারণ ভেজাল খাদ্য জনস্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে।

বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৬৯ মিলিয়ন। ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে চালের উৎপাদন প্রায় চার গুণ বেড়ে ৩৮.৭ মিলিয়ন টন হয়েছে। বর্তমানে চালের চাহিদা প্রায় ৩৫.৩ মিলিয়ন টন। একইভাবে গত ৫০ বছরে আলুর উৎপাদন প্রায় ১৩ গুণ বেড়েছে, ভুট্টা ১৯০০ গুণ এবং গম ১০ গুণ।
কাঁঠাল উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয়, উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছ ধরা ও সবজি চাষে তৃতীয়, ধান ও তেলাপিয়া মাছ উৎপাদনে চতুর্থ, মিঠা পানির মাছ চাষে পঞ্চম, আলু উৎপাদনে ষষ্ঠ এবং আম ও পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম স্থানে।

২০১০ সালে ৩১.৫ শতাংশ থেকে ২০২১ সালে মাথাপিছু ক্যালরির পরিমাণ কমে ২২ শতাংশে নেমে এসেছে। বাংলাদেশে দৈনিক মাথাপিছু ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ ১৯৬০ সালে গড়ে প্রায় ২ হাজার ১০০ (কিলো) ক্যালোরি ছিল। কিন্তু ১৯৬০ সালে তা কমে ১ হাজার ৮৪০-এ নেমে আসে। দ্য জার্নাল অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের তথ্যানুসারে, শুধুমাত্র ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং ১৯৮৭ সালের মধ্যে এটি আবার ২ হাজারে (কিলো) পৌঁছেছিল।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সমীক্ষা ২০১৬ অনুসারে, দেশে মাথাপিছু ক্যালরি গ্রহণ ২০১০ সালে ২ হাজার ৩১৮.৩ কিলোক্যালরি থেকে ২০১৬ সালে দিনে ২ হাজার ২১০.৪ কিলোক্যালরিতে নেমে এসেছে।

২০১০ সালে ৬ হাজার ৩১ টাকা থেকে ২০১৬ সালে খাদ্যের ওপর পারিবারিক ব্যয় বেড়ে ৭ হাজার ৩৫৪ টাকা হয়েছে। গৃহস্থালি আয় ও ব্যয় জরিপ (এইচআইইএস)-এর করা ২০১৬ সালের জরিপে পরামর্শ দেয়, চাল খাওয়ার হ্রাসের প্রবণতা কম ক্যালোরি গ্রহণের কারণ হতে পারে। তবে পরিসংখ্যানগত দিক থেকে এটা সমর্থিত নয়।

২০২০-২১ অর্থবছরে মাথাপিছু চাল প্রতি বছর ১৮১.৩ কেজি হবে, যা এশিয়াতে সর্বোচ্চ হবে। জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থার ‘দ্য ফুড আউটলুক’ শিরোনামের প্রতিবেদন অনুসারে, যখন ২০১৬-১৯ সালে এই পরিমাণ ছিল ১৭৯.৯ কেজি প্রতি বছর।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে সরকারি খাদ্য সংরক্ষণের ক্ষমতা ২২ লাখ টন এবং ২০২৫ সালের মধ্যে এটি ৩০ লাখ টনে বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। গত নভেম্বর পর্যন্ত খাদ্য মজুত ছিল ১৫.১৩ লাখ টন। এর মধ্যে ১২.২৯ লাখ টন চাল, ২.৮৪ লাখ টন গম এবং ১০ হাজার টন ধান। সরকার বিভিন্ন কর্মসূচির বিপরীতে স্বল্পমূল্যে ১৫.৬০ লাখ টন খাদ্যশস্য এবং ৭.৮৪ লাখ টন ত্রাণ বিতরণ করছে।

২০২০-২১ অর্থবছরে মোট ২২.৮৯ লাখ টন খাদ্যশস্য বিতরণ করা হয়েছে। গত অর্থবছরে জাতীয় গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫.৫৬ শতাংশ।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি, ২০০৫-৬ অর্থবছরে শ্রমিকের একদিনের মজুরির বিপরীতে ৪-৫ কেজি চাল কেনা যেতো, যা ২০১৮ সালে ক্রয় ক্ষমতা বেড়ে ১১ কেজি হয়েছে।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : ডিসেম্বর ১৫, ২০২১ ৩:৪৯ অপরাহ্ন
সারের দাম বাড়ায় বিপাকে কৃষক
এগ্রিবিজনেস

কৃত্রিম সংকটে নন-ইউরিয়া সারের দাম বাড়ায় আলুর আবাদ নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন রংপুরের কৃষকরা।খুচরা পর্যায়ে টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি সারের ৫০ কেজির বস্তা প্রতি ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত বেশি নেওয়ার অভিযোগ করছেন কৃষকরা। যদিও সরকার নির্ধারিত দামে সার বিক্রি নিশ্চিত করতে মনিটরিং জোরদারের কথা বলছে কৃষি বিভাগ।

অসময়ের বন্যা আর ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের কারণে এবার আমন ধান উঠেছে সপ্তাহ দু-এক পর। বোরো-মৌসুম আসার আগেই আলুর আবাদ ঘরে তুলতে এমনিতেই ধাওয়া করছে সময় স্বল্পতা। তার ওপর খুচরা বাজারে নন-ইউরিয়া সারের বাড়তি দাম বিড়ম্বনায় ফেলেছে আলু চাষিদের।

সারের ৫০ কেজির বস্তার সরকার নির্ধারিত মূল্য ইউরিয়া ৮০০ টাকা, টিএসপি ১ হাজার ১০০ টাকা, ডিএপি ৮০০ টাকা, এমওপি ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি করার কথা থাকলেও মানছে না ব্যবসায়ীরা।

৫০ কেজির এক বস্তা টিএসপির সরকার নির্ধারিত দাম ১ হাজার ১০০ টাকা। কিন্তু কৃষকদের কিনতে হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায়।

অন্যদিকে ৮০০ টাকার ডিএপি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২৫০ টাকা। ৭৫০ টাকার এমওপি ১ হাজার ১০০ টাকাতেও না মেলার অভিযোগ করেছে  কৃষকরা।

এদিকে চলতি মাসের রংপুর জেলার মজুত পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ডিলার পর্যায়ে ইউরিয়া রয়েছে ৩ হাজার ৩৬ মেট্রিক টন, বাফার গুদামে রয়েছে ৯ হাজার ৭৯২ মেট্রিক টন। এ ছাড়া টিএসপি ডিলার পর্যায়ে রয়েছে ৯ হাজার ৭৭৬ মেট্রিক টন, বাফার গুদামে রয়েছে ৩ হাজার ৪৪৩ মেট্রিক টন, ডিএপি ডিলার পর্যায়ে রয়েছে ৩ হাজার ৬৭৬ মেট্রিক টন, বাফার গুদামে ৬ হাজার ২৬৬ মেট্রিক টন, এমওপি ডিলার পর্যায়ে রয়েছে ৫৮৬ মেট্রিক টন, বাফার গুদামে রয়েছে ২২১ মেট্রিক টন।

তবে সংকটের কথা না মানলেও পরিবহন ধর্মঘট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে কিছুটা বিঘ্ন সৃষ্টির কথা স্বীকার করছে ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন। আর পর্যাপ্ত বরাদ্দের পরও দাম বাড়লে মনিটরিং জোরদারের হুঁশিয়ারি কৃষি বিভাগের।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন মওলা বলেন, ‘আমরা এটিকে সংকট বলতে চাচ্ছি না। মূলত সরবারহ বিঘ্ন ঘটার কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।’

এ ছাড়া রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বলেন, ‘ডিলারের দোকানে দোকানে আমাদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা অবস্থান করছে। কোনোভাবেই যাতে ডিলাররা সারের অতিরিক্ত মূল্য নিতে না পারে এবং সরকার নির্ধারিত দামেই যাতে সার বিক্রি হয় সেদিকে আমরা কঠোর দৃষ্টি রাখছি।’

চলতি মৌসুমে রংপুর অঞ্চলে এবার ৯৭ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে ২২ লাখ ৬৪ হাজার ৫৯৬ মেট্রিক টন আলু উৎপাদনের লক্ষমাত্রা স্থির করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। তবে সার সংকট এবং সারের মূল্যবৃদ্ধিতে লক্ষ্যমাত্রা আদৌ অর্জন করা যাবে কি না সেটিই এখন শঙ্কার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

শেয়ার করুন

প্রকাশ : ডিসেম্বর ১৫, ২০২১ ৩:১৭ অপরাহ্ন
চায়না কমলায় কৃষকের স্বপ্ন ভঙ্গ, গাছ কেটে ফেলছেন চাষীরা
এগ্রিবিজনেস

সততার সাথে আরেকটু স্বচ্ছল জীবন যাপনের স্বপ্ন দেখতেন গোলাম রসুল। কৃষকের সন্তান,তাই পরিবারে স্বচ্ছলতা আনতে কৃষিকেই বেঁচে নেন তিনি। প্রায় ৩ বছর আগে নিজের জমানো কিছু টাকা ও চাকুরীর সুবাদে জিবি ফান্ড থেকে লোন নেয়া সাড়ে ৪ লাখ টাকা দিয়ে সাড়ে ৫ বিঘা জমিতে চায়না কমলা চাষ শুরু করেন। গত বছর অল্প পরিমাণে ফল আসলেও এ বছর গাছ ভর্তি ফল আসে। আশায় বুক বাঁধেন তিনি। কমলা বিক্রি করে অনেক টাকা হবে, পরিবারে স্বচ্ছলতা আসবে। এবার থেকে স্ত্রী-সন্তান ও পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালোভাবে চলতে পারবেন। বেশ ফুরফুরে মেজাজেই ছিলেন তিনি। কিন্তু ফল বিক্রি করতে গিয়ে বাধে বিপত্তি। মুহুর্তেই সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়।

বাজারে চাহিদা নেই। ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছেনা। যাও একজনকে পেলেন তিনি তার কমলা নিয়ে বাজারে গিয়ে অর্ধেকও বিক্রি করতে পারলেন না। কমলা বিক্রির এ অবস্থা দেখে হতাশ গোলাম রসুল। ক্ষতিগ্রস্থ গোলাম রসুল এখন পরিবারের কাছে অবহেলার পাত্র। চায়না কমলা চাষে শুধু গোলাম রসুল নন এমন স্বপ্ন দেখা হাজারো তরুন উদ্যোক্তার স্বপ্ন ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেছে। চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবন নগরের নিধি কুন্ডু গ্রামের ওমর ফারুকের চায়না কমলার চারা নিয়ে দেশজুড়ে হাজার হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। চায়না কমলা বিক্রির না হওয়ার কারন হিসেবে চাষীরা জানিয়েছেন, এ কমলার মধ্যে বীজ রয়েছে। এছাড়া গাছেই কমলার রস শুকিয়ে যাচ্ছে। খেতেও সুস্বাদু না।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়নের মাসলিয়া গ্রামের গোলাম রসুল জানান, তিনি বাংলাদেশ পুলিশের এ এস আই পদে কর্মরত আছেন। প্রায় ৩ বছর পূর্বে তিনি বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলে চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবন নগরের নিধিকুন্ডু গ্রামের ওমর ফারুকের চায়না কমলার চাষ নিয়ে প্রতিবেদন দেখেন। প্রতিবেদন দেখে তিনি উদ্বুদ্ধ হয়েছেন ঠিকই কিন্তু চায়না কমলা চাষ করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না। এমন সময় তার নজরে আসে চুয়াডাঙ্গা জেলার সদর উপজেলার কৃষি অফিসার তালহা জুবাইর মাসরুর পরিচালিত ইউটিউব চ্যানেল কৃষি বায়োস্কোপ। সেখানে তিনি বলেন জীবন নগরে খুব সফলতার সাথে বানিজ্যিকভাবে চায়না কমলার চাষ হচ্ছে।

তিনি ভিডিওতে বলেন, বাজারের চাইনিজ কমলা থেকেও ওমর ফারুকের কমলার স্বাদ অনেক ভালো। এমনকি ১’শ গাছ থেকে প্রায় ৪ লাখ টাকা আয় হওয়ার স্বপ্ন দেখান তিনি। এই কৃষি কর্মকর্তার ভিডিও দেখার পর, কালবিলম্ব না করে ওমর ফারুকের কাছ থেকে চারা এনে সাড়ে ৫ বিঘা জমিতে চায়না কমলা চাষ করেন গোলাম রসুল। এ বছর গাছে যখন ফল আসলো তখন বিক্রি করতে গিয়ে বিপাকে পড়েন। কমলার ক্রেতা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। অনেক খোঁজা খুঁজির এক পর্যায়ে একজনকে পেলেও তিনি বাগান থেকে কমলা নিয়ে বাজারে অর্ধেকটাও বিক্রি করতে পারলেন না।

গোলাম রসুল দুঃখ ভারাক্রান্ত কন্ঠে জানান, কমলা চাষ করতে গিয়ে লাখ লাখ টাকার ক্ষতিতে পড়ে পরিবারের কাছে তিনি আজ অবহেলার পাত্রে পরিণত হয়েছেন তিনি আক্ষেপ করে বলেন তালাহা সাহেব তার ইউটিউবে এখনও চায়না কমলার প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। তার সর্বশেষ ভিডিওতে তিনি ছবি তোলার জন্য হলেও চায়না কমলা গাছ লাগাতে বলে কৃষকের সাথে মস্করা করছেন। কোথা থেকে চারা কিনবেন সেটিও বলছেন খামারীর বাগানে দাঁড়িয়ে। সারা বাংলাদেশে হাজারো কৃষকের যে ক্ষতি হয়েছে এর জন্য তালহা সাহেবকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি করেন তিনি। আবেগ তাড়িত হয়ে গোলাম রসুল চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কৃষি অফিসার তালহার ফাঁসি দাবি করেন। তিনি কৃষিতে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ওমর ফারুক ও কৃষি অফিসার তালহা জুবাইর মাসরুরের পদক কেড়ে নেওয়ারও দাবি করেন।

চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার বিঞ্চুপুর গ্রামের সাইদুল ইসলাম তালহা জোবাইয়ের মাসরুরের ইউটিউব চ্যানেল কৃষি বায়োস্কোপ দেখে ৪ বিঘা জমিতে চায়না কমলা লাগান। ফল আসার পর তার পূর্ব পরিচিত ঢাকার এক ব্যপারি এসে কমলা খেয়ে বলেছে এটা ঢাকাতে বিক্রি হয়না। কাজেই চায়না কমলা তারা কিনতে পারবে না। তাই এ বছরের অক্টোবর মাসে তার ৪ বিঘা জমির সব কমলা গাছ কেটে ফেলেছেন। তার মোট ক্ষতির পরিমাণ ৪ লাখ টাকা। তিনি জানান, গাছ কাটার পূর্বে চুয়াডাঙ্গা সদরের কৃষি কর্মকর্তা তালহা জোবাইয়ের মাসরুর সাহেবের কাছে গিয়েছিলেন। তালহা সাহেব তাকে বলেন, তুমি এতো লাগিয়েছো কেন। দুই চারটি গাছ লাগানো ভালো ছিল। কৃষি অফিসার তাকে গাছ কেটে ফেলার পরামর্শ দেন।

ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষি উদ্যোক্তা মফিজুর রহমান মাফি বলেন, তিনি ইউটিউব দেখে ২০১৯ সালে সাড়ে তিন বিঘা জমিতে চায়না কমলা চাষ করেন। এবছর গাছে অনেক ফল এসেছে। কিন্তু কোয়ালিটি ভালো না হওয়ায় তিনি একটি ফলও বাজারজাত করেননি। চায়না কমলা লাগিয়ে তার প্রায় ৪লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তিনিও খুব দ্রুতই গাছগুলো কেটে ফেলবেন বলে জানান।

এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা সদরের কৃষি অফিসার তালহা জোবাইয়ের মাসরুরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বাংলাদেশে কমলা চাষ হচ্ছে এটা বেশ ভালোলাগার একটি বিষয় ছিল। ভালোলাগা থেকে তিনি জীবননগরের নিধিকুন্ডু গ্রামের ওমর ফারুকের বাগানের চায়না কমলা নিয়ে প্রতিবেদন করেছিলেন। কিন্তু তিনি ওই ভিডিওতে কাউকে বানিজ্যিকভাবে চায়না কমলা লাগানোর পারমর্শ দেননি। তিনি বলেন কৃষক চাষ করার পূর্বে আমার সাথে যোগাযোগ করলে আমি তাদেরকে বাণিজ্যিকভাবে চায়না কমলা চাষে নিরুৎসাহিত করতাম।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : ডিসেম্বর ১৫, ২০২১ ২:১১ অপরাহ্ন
নার্য্য মূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় আড়তে ধান দিচ্ছেন কৃষক
এগ্রিবিজনেস

দিনাজপুরের হিলিতে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে খোলা বাজারে বেশি দাম পাওয়ায় ও ঝামেলা না থাকায় সরকারি খাদ্যগুদামে ধান দিতে আগ্রহ নেই কৃষকদের। এতে চলতি আমন মৌসুমে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে খাদ্য বিভাগ বলছে, ধান সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা আশা করছে, নির্ধারিত ধান সংগ্রহ করতে পারবে। 

হিলির পালপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ধান খোলা বাজারে বিক্রি করাই ভালো। গুদামে ধান দিতে গিয়ে নানা ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আড়তগুলোতে ধান বিক্রি করা খুব সহজ। বললে বাড়ি থেকে ধান নিয়ে যান আড়তদারের লোকজন। অপরদিকে, টাকা খরচ করে ধান গুদামে নিয়ে গেলে নানা ধরনের ত্রুটি ধরে। আবার টাকা পেতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। আড়তে কাঁচা ধান বিক্রি হয়ে যায়। গুদামে টাকা খরচ করে ধান নিয়ে গিলে বলে ভেজা, ১৪ শতাংশ চিটা। এসব ঝামেলার কারণে গুদামে ধান দিই না। গুদামের চেয়ে কিছুটা দাম কম হলেও আড়তে ধান বিক্রি দিচ্ছি আমরা।

আরেক কৃষক আশরাফুল ইসলাম বলেন, এবার আমন মৌসুমে নানা রোগ, পোকামাকড়ের আক্রমণের কারণে ধানের ফলন নিয়ে শঙ্কা থাকলেও আল্লাহর রহমতে ভালো ফলন হয়েছে। বিঘাপ্রতি ১৪ থেকে ১৫ মণ ফলন হয়েছে। ধানের যে দাম তাতে আমরা লাভবান হচ্ছি। তবে গুদামে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে খোলা বাজারে ধানের দাম বেশি। গুদামে ধান দিতে গেলে অনেক ঝামেলা। লটারিতে নাম উঠলে ধান দিতে পারেন কৃষক। এ ছাড়া ধান দিতে পারেন না। আড়তদাররা বাড়ি থেকে ধান কিনে নিয়ে যান। গুদামে ধান নিয়ে গেলে বাড়তি যে ভ্যান ভাড়া লাগতো, তা লাগছে না।

তিনি বলেন, গুদামে ভালো ধান দিতে হয়। এর ওপর ধান দিয়ে টাকা সঙ্গে সঙ্গে পাওয়া যায় না। ওই ধান আড়তে দিলে সঙ্গে সঙ্গে টাকা পাওয়া যায়; সে কাঁচা হোক আর পাকা। কিন্তু গুদামে দিতে গেলে সেটি হয় না। ফলে গুদামে ধান দিতে আগ্রহী নই।

হিলির ছাতনি চারমাথা মোড়ের ধানের আড়তদার নুর মোহাম্মদ বলেন, আমরা স্বর্ণা-৫ জাতের ধান কিনছি এক হাজার ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। গুটি স্বর্ণা জাতের ধান কিনছি এক হাজার ১০ টাকা। তবে কিছুদিন আগে এসব ধানের দাম আরও বাড়তি ছিল। বর্তমানে কিছুটা কমেছে। এসব ধান ঢাকা, নওগাঁসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের মোকামগুলোতে সরবরাহ করা হয়। সরকারি গুদামে ধান দিতে গেলে কৃষকদের বাড়তি খরচ লাগে। এর ওপর বাজারে ধানের যেই দাম, সরকারি খাদ্যগুদামে একই দাম। ফলে কৃষকরা গুদামে ধান সরবরাহ করছেন না।

হিলি এলএসডি খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা জোসেফ হাসদা বলেন, চলতি আমন মৌসুমে এই উপজেলায় ৪৪৬ টন ধান সংগ্রহের জন্য বরাদ্দ পেয়েছি। প্রতি কেজি ধান ২৭ টাকা কেজি দরে কিনছি। গত ৭ নভেম্বর সারাদেশের মতো হিলি খাদ্যগুদামেও ধান সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী দিনে দুই কৃষকের কাছ থেকে দুই টন ধান সংগ্রহ করতে পেরেছি। এরপর আর কোনও ধান সংগ্রহ করতে পারিনি। তবে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, যাতে বাকি ৪৪৪ টন ধান সংগ্রহ করতে পারি।

শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop