বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেমের (বাউরেস) গবেষণা অগ্রগতির বার্ষিক কর্মশালা শুরু
ক্যাম্পাস
দীন মোহাম্মদ দীনু: পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে স্মার্ট দেশের রূপান্তর করতে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশের জিডিপিতে কৃষির বৃহৎ ভূমিকা রয়েছে। করোনা মহামারির কারণে জাতিসংঘ দূর্ভিক্ষের আশংকা করলেও আমাদের দেশের কৃষি দ্রব্যমূল্যস্ফীতি আতিক্রম পর্যন্ত করেনি। এটা কিস্তু সরকারের বড় সফলতা। কোভিট মোকাবেলায় বাংলাদেশ বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে যা সারা বিশ্বে ৫ম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম। এছাড়া সব ধরনের উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ এশিয়ার বৃহৎ দেশসমূহকে পেছনে ফেলে দৃটান্ত দেখিয়েছে। যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঠিক নেতৃত্বের জন্য সম্ভব হয়েছে। কৃষির অর্থনৈতিক স্থীতিশীলতা ছাড়া জাতীয় অর্থনৈতিক স্থীতিশীলতা সম্ভব নয়। আর এজন্য কৃষির উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে এবং কৃষিতে ব্যাপক গবেষণার উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। বর্তমান সরকার কৃষিবান্ধব সরকার । কৃষিখাতে উল্লিখিত বাজেটের মধ্যে কৃষি গবেষণার জন্য বরাদ্দ অর্থ পুরোটাই ব্যয় হওয়া প্রয়োজন। শনিবার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেম বাউরেস এর গবেষণা অগ্রগতির বার্ষিক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন,জলবায়ু পরিবর্তন বিবেচনায় নিয়ে এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় কৃষির উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে কৃষিতে আধুনিক গবেষণার বিকল্প নেই। কৃষির একাডেমিক কোর্সগুলো মাঠের সাথে তাল মিলিয়ে আপডেট করতে হবে। বর্তমান সরকার সবসময় কৃষিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে আসছে। বাংলাদেশ সরকার এবছর ৭৫হাজার কোটি টাকা কৃষিখাতে ভর্তুকি এবং স্বল্প সুদে ৪হাজার কোটি টাকা কৃষকঋণ দিয়েছে। আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদগুলোর যত্ন ও তার সুষম ব্যবহার করতে হবে।
ভূমি, খাদ্য ও ভবিষ্যতের জন্য টেকসই এবং স্মার্ট কৃষি’ প্রতিপাদ্য বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন দিনব্যাপী বাউরেস বার্ষিক গবেষণা অগ্রগতি কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায়( ১৮ মাচ ২০২৩) সৈয়দ নজরুল ইসলাম সম্মেলন ভবনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বাউরেসের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. জয়নাল আবেদীন এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ড. শামসুল আলম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব সাজ্জাদুল হাসান এবং ফুড এন্ড এগ্রিকালচার অরগানাইজেশন (ফাউ)-বাংলাদেশের সিনিয়র টেকনিক্যাল উপদেষ্টা ড. কাতারজিনা জাপলিনা। অনুষ্ঠানে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উপস্থিত আছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান, স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাউরেস এর সহযোগী পরিচালক প্রফেসর ড.একেএম মমিনুল ইসলাম।
কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গবেষণা মূল্যায়নের আন্তর্জাতিক মানদন্ড এইচ-ইনডেক্সের উপর ভিত্তি করে সেরা ১৭ গবেষককে গ্লোবাল রিসার্চ ইমপ্যাক্ট রিকগনাইজেশন অ্যাওয়ার্ড-২০২২ প্রদান করা হয়, এর মধ্যে সর্বোচ্চ স্কোরধারী ৫ জন এবং অনুষদভিত্তিক একজন করে সিনিয়র ও জুনিয়র শিক্ষকসহ মোট ১২ জনকে এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
এছাড়াও কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষি উৎপাদনে বিশেষ অবদান রাখার জন্য খামার পর্যায়ের ৬ জন উদ্যোক্তাকে ‘প্রফেসর ড. আশরাফ আলী খান স্মৃতি কৃষি পুরস্কার-২০২২’ প্রদান করা হয়।
আগামী ২দিনব্যাপী কর্মশালায় মোট ১৮টি টেকনিক্যাল সেশন ও দুটি পোস্টার সেশন অনুষ্ঠিত হবে। এসব সেশনে ৫৩৯টি গবেষণা প্রকল্পের ফলাফল উপস্থাপন করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে ৩৮৫টি মৌখিক ও ১৫৪টি পোস্টার উপস্থাপনা। উপস্থাপিত গবেষণা প্রকল্পগুলোর মধ্যে টেকনিক্যাল সেশনভিত্তিক ১ জন করে মোট ১৮ জন এবং প্রতিটি পোস্টার সেশন থেকে ৩ জন করে মোট ৬ জনকে সেরা উপস্থাপকের পুরস্কার দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে পরিচালিত গবেষণাগুলো উন্নত মানের ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর–বিশিষ্ট সাময়িকীতে প্রকাশনা বাবদ ২৩ জনকে সর্বমোট ৮ লাখ ৫৩ হাজার ৩০০ টাকা দেওয়া হয়েছে ।
উল্লেখ্য, এবছর গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ৯ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা প্রদান করেছে। পাশাপাশি এবছর সিটি ব্যাংক লিমিটেড হাওর ও চর অঞ্চলের কৃষি উন্নয়নের গবেষণার জন্য ৪ কোটি টাকা অনুদান প্রদান করেছে।
বাকৃবিতে ১৯৮৪ সালের ৩০ আগস্ট বাউরেস প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত বাউরেসের মাধ্যমে বাকৃবিতে ৩ হাজার ৮ শ ৭৪ টি গবেষণা প্রকল্প সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে মোট ৬ শ ৩২ টি গবেষণা প্রকল্প চলমান রয়েছে।