দুই সপ্তাহে সাতটি হাতির মৃত্যু, বিলুপ্তির আশঙ্কা
প্রাণ ও প্রকৃতি
গেল দুই সপ্তাহে সাতটি হাতির মৃত্যুর ঘটনায় বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন এভাবে চলতে থাকলে খুব দ্রুত বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে এই প্রাণীটি।
সর্বশেষ শুক্রবার উত্তরে সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরের নালিতাবাড়ি থেকে ৪-৫ বছর বয়সী এক হাতির শাবকের মৃতদেহ উদ্ধার করে বন বিভাগ। এ নিয়ে গত দুই সপ্তাহে শেরপুর ও চট্টগ্রামে সাতটি হাতির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেল।
সম্প্রতি শেরপুর ও চট্টগ্রামে হাতির বিচরণক্ষেত্রগুলোতে বন কেটে সবজি কাজ করছেন স্থানয়িরা। এ জন্য হাতির বিচরণক্ষেত্র দখল হয়ে যাচ্ছে।
একইসঙ্গে হাতিরা যেন সবজির ক্ষেত নষ্ট করতে না পারে সেজন্য ক্ষেতের চারপাশে জিআই তারের বেড়া দিয়ে তা বিদ্যুতায়িত করে রাখা হচ্ছে। এই বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়েও মারা যাচ্ছে হাতি।
স্থানীয়রা বলছেন, সন্ধ্যা নামতেই হাতিদের উৎপাত বেড়ে যায়। তাদের তাড়াতে সরকারের পক্ষ থেকে টর্চ লাইট সরবরাহ করা হলেও, হাতিরা এখন আর লাইট, আগুন বা মশালে ভয় পায় না, বলছেন স্থানীয়রা।
এমন অবস্থায় নিজেদের জানমাল রক্ষায় হাতির বিরুদ্ধে চড়াও হন তারা।
এমনটা চলতে থাকলে এই প্রাণীটি বাংলাদেশ থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মোস্তাফা ফিরোজ।
তিনি জানান, “এ ধরণের বড় স্তন্যপায়ী প্রাণীর নতুন পপুলেশন গ্রোথ কম, মানে একটা মা হাতি কয়েক বছর পর পর বাচ্চা জন্ম দেয়। সে হিসেবে শেরপুরের হাতির গ্রোথ ভালো হলেও যেভাবে হাতি মারা হচ্ছে, তাতে এই প্রজাতির টিকে থাকা নিয়েই প্রশ্ন উঠবে।”
বন্যপ্রাণী বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা- আইইউসিএন এর হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশের এশীয় প্রজাতির পূর্ণাঙ্গ বয়সী হাতির সংখ্যা ২৫০টির কম।
এজন্যে এই প্রাণীটিকে বাংলাদেশে মহা-বিপন্ন বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
বর্তমান আইনে হাতি নিধনের সর্বোচ্চ শাস্তি দুই থেকে ১২ বছরের কারাদণ্ড এবং এক থেকে ১৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।
সেইসঙ্গে হাতির হামলায় কেউ মারা গেলে তিন লাখ টাকা, আহত হলে এক লাখ টাকা এবং ফসলের ক্ষতি হলে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণের বিধানও রয়েছে। কিন্তু এই মামলার কোন প্রয়োগ নেই বলে অভিযোগ বিশেষজ্ঞদের।
এ নিয়ে বন অধিদফতরের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক এ এস এম জহির উদ্দিন আকনের দাবি, স্থানীয়দের আইন ভাঙার প্রবণতা এবং জনবল সংকটের কারণে তাদের পক্ষে এতো বিশাল এলাকা নজরদারি করা সম্ভব হচ্ছে না।
“একজন ফরেস্ট গার্ডকে দুই হাজার হেক্টর জায়গা দেখাশোনা করতে হয়। আর ঘটনাগুলো তো নির্দিষ্ট স্থানে ঘটছে না। সব বনাঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে হচ্ছে। রাতের আঁধারে কেউ যদি বিদ্যুতের তার পাতে সেটা বের করা অসম্ভব ব্যাপার।“
হাতির জন্য আরেকটি বড় বিপদ হিসেবে দেখা হচ্ছে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজারের পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প।
রেলপথটি ২৭ কিলোমিটার জুড়ে হাতির তিনটি বিচরণক্ষেত্রের ভেতর দিয়ে গিয়েছে। মহা-বিপন্ন এই প্রাণীর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে দেশব্যাপী হাতির এই বিচরণক্ষেত্রগুলো দখলমুক্ত করার পাশাপাশি হাতির নিরাপত্তার স্থানীয় মানুষদের সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন বলে মত বিশেষজ্ঞদের।