১১:২৬ অপরাহ্ন

রবিবার, ১৭ নভেম্বর , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
প্রকাশ : জানুয়ারী ৩, ২০২২ ১:৩৯ অপরাহ্ন
শীতে মাছের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে করণীয়
মৎস্য

শীতে মাছের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে করণীয়

মাছ আমাদের আমিষ জোগানের প্রধান উৎস। বাজার থেকে মাছ কিনে খাওয়ার চেয়ে নিজের পুকুরে জলাশয়ে মাছ চাষ করে নিজেরা খাওয়া যায়। অতিরিক্ত অংশ বিক্রি করে লাভবান হওয়া যায়। তবে মাছ চাষে অবশ্যই বৈজ্ঞানিক বা আধুনিক প্রযুক্তি পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। নিয়মিত ও পরিমিত যত্নআত্তি করলে মাছ চাষে লাভাবান হওয়া যায়। শীতকাল মাছ চাষে অতিরিক্ত কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। একটু সচেতন হলেই সেসব সমস্যা সমাধান করা যায় অনায়াসে। আমাদের দেশে শীতকালে মাছের বিশেষ কিছু কিছু রোগ দেখা যায়। এ সময় সঠিকভাবে মাছের যত্ন না নিলে এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে মাছ মরে যেতে পারে। শীতকালে মাছের ক্ষতরোগ, লেজ ও পাখনা পচা রোগ, ফুলকা পচা রোগ এবং উদর ফোলা রোগ দেখা দিতে পারে। বিশেষ যত্ন ও পরিচর্যা করলে মাছের উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা যায়। শীতকালে মাছের বিশেষ যত্ন নেয়া প্রয়োজন। কারণ এ সময়ে পুকুরের পানি কমে যায়, পানি দূষিত হয়, মাছের রোগবালাই হয়। ফলে মাছের বৃদ্ধি ও উৎপাদন ব্যাহত হয়। বিশেষ যত্ন ও পরিচর্যা করলে মাছের উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা যায়।

মাছের ক্ষতরোগ : এফানোমাইসেস ছত্রাক পড়ে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়। বাংলাদেশে প্রায় ৩২ প্রজাতির স্বাদু পানির মাছে এ রোগ হয়। যেমন- টাকি, শোল, পুঁটি, বাইন, কই, শিং, মৃগেল, কাতলসহ বিভিন্ন কার্পজাতীয় মাছে এ রোগ হয়। মাছের ক্ষত রোগ হলে প্রথমে মাছের গায়ে ছোট ছোট লাল দাগ দেখা যায়। লাল দাগে ঘা ও ক্ষত হয়। ক্ষতে চাপ দিলে দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজ বের হয়। লেজের অংশ খসে পড়ে। মাছের চোখ নষ্ট হতে পারে। মাছ ভারসাম্যহীনভাবে পানির ওপরে ভেসে থাকে। মাছ খাদ্য খায় না। আক্রান্ত মাছ ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে মারা যায়। এ রোগে করণীয় হলো শীতের শুরুতে ১৫ থেকে ২০ দিন পরপর পুকুরে প্রতি শতাংশে ০১ কেজি ডলোচুন ও ০১ কেজি লবণ মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। পুকুর আগাছামুক্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। জৈবসার প্রয়োগ বন্ধ রাখতে হবে। জলাশয়ের পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখতে হবে। মাছের ঘনত্ব কম রাখতে হবে। ক্ষতরোগ হওয়ার আগে এসব ব্যবস্থা নিতে হবে। মাছ ক্ষতরোগে আক্রান্ত হলে প্রতি কেজি খাদ্যের সাথে ৬০ থেকে ১০০ মিলিগ্রাম টেরামাইসিন ওষুধ দিতে হবে। অথবা তুঁত দ্রবণে মাছ ডুবিয়ে রেখে পুকুরে ছাড়তে হবে। আক্রান্ত মাছপুকুর থেকে সরাতে হবে।

লেজ ও পাখনা পচা রোগ : অ্যারোমোনাসে ওমিক্সো ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়ে এ রোগ হয়। কার্প ও ক্যাটফিস জাতীয় মাছে বেশি হয়। তবে রুই, কাতলা, মৃগেলসহ প্রায় সব মাছেই এ রোগ হতে পারে। রোগের লক্ষণ হলো মাছের পাখনা ও লেজের মাথায় সাদা সাদা দাগ পড়ে।  লেজ ও পাখনা পচে খসে পড়ে। দেহের পিচ্ছিলতা কমে যায়। দেহের ভারসাম্য হারায় এবং ঝাঁকুনি দিয়ে পানিতে চলাচল করে। মাছ ফ্যাকাশে হয়। মাছ খাদ্য কম খায়। আক্রান্ত বেশি হলে মাছ মারা যায়। রোগ প্রতিরোধ বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়। রোগ হওয়ার আগেই ওই ব্যবস্থাগুলো নিলে লেজ ও পাখনা পচা রোগ হয় না। আক্রান্ত পাখনা কেটে মাছকে শতকরা ২.৫ ভাগ লবণে ধুয়ে নিতে হবে। এক লিটার পানিতে ০.৫ গ্রাম তুঁত মিশিয়ে ওই দ্রবণে আক্রান্ত মাছকে এক মিনিট ডুবিয়ে পুকুরে ছাড়তে হবে। মাছের পরিমাণ কমাতে হবে। আক্রান্ত মাছ পুকুর থেকে সরাতে হবে।

ফুলকা পচা রোগ : ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে অধিকাংশ বড় মাছে এ রোগ হয়। তবে সব প্রজাতির পোনা মাছেই এ রোগ হতে পারে। লক্ষণ হলো মাছের ফুলকা পচে যায় এবং আক্রান্ত অংশ খসে পড়ে।  শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হয়। মাছ পানির ওপর ভেসে ওঠে। মাছের ফুলকা ফুলে যায়। ফুলকা থেকে রক্তক্ষরণ হয়। আক্রান্ত মারাত্মক হলে মাছ মারা যায়। এ রোগ হলে করণীয় হচ্ছে শতকরা ২.৫ ভাগ লবণে আক্রান্ত মাছকে ধুয়ে আবার পুকুরে ছাড়তে হবে। এক লিটার পানিতে ০.৫ গ্রাম তুঁত মিশিয়ে ওই দ্রবণে আক্রান্ত মাছকে এক মিনিট ডুবিয়ে রেখে পুকুরে ছাড়তে হবে।

উদর ফোলা বা শোঁথ রোগ : অ্যারোমোনাস নামক ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে কার্পও শিং জাতীয় মাছে ড্রপসি রোগ বেশি হয়। এ রোগ সাধারণত বড় মাছে বেশি হয়। লক্ষণ হলো দেহের ভেতর হলুদ বা সবুজ তরল পদার্থ জমা হয়। পেট খুব বেশি ফুলে। দেহের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। তরল পিচ্ছিল পদার্থ বের হয়। মাছ উল্টা হয়ে পানিতে ভেসে ওঠে। দেহে পিচ্ছিল পদার্থ কমে যায়। খাদ্য গ্রহণে অনীহা হয়। প্রতিকার হলো- আঙুল দিয়ে পেটে চাপ দিয়ে কিংবা সিরিঞ্জ দিয়ে তরল পদার্থ বের করতে হবে। প্রতি কেজি খাদ্যের সঙ্গে ১০০ মিলিগ্রাম টেরামাইসিন বা স্ট্রেপটোমাইসিন পরপর ৭ দিন খাওয়াতে হবে। অন্যান্য পরিচর্যা-১. পানির অক্সিজেন বৃদ্ধির জন্য বাঁশ দিয়ে অথবা সাঁতার কেটে অথবা পানি নাড়াচাড়া করতে হবে।
একরপ্রতি ০৫ থেকে ১০ কেজি টিএসপি দিলেও হবে। ২. পুকুরের পানিতে সরাসরি রোদ পড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে পুকুরের পানি গরম হয় এবং প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হয়। ৩. শেওলা, আবর্জনা, কচুরিপানা, আগাছাসহ সব ক্ষতিকর জলজ উদ্ভিদ পরিষ্কার করতে হবে। ৪. ১৫ দিন পরপর জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। ৫. পানিতে অ্যামোনিয়া গ্যাস হলে চুন প্রয়োগ করতে হবে। ৬. পানি ঘোলা হলে ১ মিটার গভীরতায় ১ শতক পুকুরে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করতে হবে। ৭. পুকুরের পানি কমে গেলে পানি সরবরাহ করতে হবে। ৮. পুকুরের পানি বেশি দূষিত হলে পানি পরিবর্তন করতে হবে। ৯. সুষম খাদ্য নিয়মিত সরবরাহ করতে হবে। শীতকালে মাছের বিশেষ যত্ন নিতে হয়। কারণ এ সময়ে পুকুরে পানি কমে, পানি দূষিত হয়, পানি গরম হয়, অক্সিজেন কমে যায়, গ্যাস সৃষ্টি হয়, রোগবালাইসহ বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়। এসব সমস্যার জন্য মাছের মড়ক দেখা দিতে পারে। এতে মাছ চাষি  ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সমস্যার আগেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিলে ও সমস্যা হওয়ার পরেও সমাধান করে মাছের উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা যায়।

খাবি খাওয়া : পানিতে অক্সিজেনের অভাব হলে মাছ পানির ওপর ভেসে ওঠে খাবি খায়। অর্থাৎ বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণের চেষ্টা করে। মনে হয় মাছ পানি খাচ্ছে। মাছ খুব ক্লান্ত হয়। এতে মাছের ফলন কমে। পানিতে সাঁতারকাটা, বাঁশ পানির ওপর পেটানো, হররা টেনে তলার গ্যাস বের করে দেয়া, পুকুরে পাম্প বসিয়ে ঢেউয়ের সৃষ্টি করা, পানি নাড়াচাড়া করে অক্সিজেন বাড়ানো যায়। নতুন পানি সরবরাহ করেও অক্সিজেন বাড়ানো যায়। প্রতি শতাংশে এক কেজি চুন দিলে উপকার পাওয়া যায়।
কার্বন-ডাই-অক্সাইডজনিত পানি দূষণ : পানিতে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বেড়ে গেলে মাছের দেহে বিষক্রিয়া হয় এবং শ্বাসকষ্ট হয়। মাছ পানিতে ভেসে ওঠে। খাবি খাওয়া প্রতিকারের মতো পানি নাড়াচাড়া করে অক্সিজেন বাড়ালে কার্বন-ডাই-অক্সাইড কমে যায়। পুকুর তৈরির সময় অতিরিক্ত কাদা সরাতে হবে।
অ্যামোনিয়াজনিত সমস্যা : পুকুরে অ্যামোনিয়া বেড়ে গেলে পানির রঙ তামাটে অথবা কালচে রঙের হয়। এতে মাছের ছোটাছুটি বেড়ে যায়। মাছ খাদ্য খায় না। বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। মাছের মজুদ ঘনত্ব কমাতে হবে। সার ও খাদ্য প্রয়োগ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হবে। নতুন পানি সরবরাহ করতে হবে।
নাইট্রোজেনজনিত সমস্যা : পানিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বেড়ে গেলে মাছের দেহে অক্সিজেন সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয়ে বিষাক্ততার সৃষ্টি করে। এতে মাছের দেহ বাদামি রঙ ধারণ করে। মাছ খাদ্যগ্রহণ বন্ধ করে দেয়। পুকুরে মাছের ঘনত্ব কমাতে হবে। পুকুরে ২৫০ মিলিগ্রাম লবণ প্রতি লিটার হারে দিতে হবে।
পিএইচজনিত সমস্যা : পানিতে পিএইচ কমে গেলে মাছের দেহ থেকে প্রচুর পিচ্ছিল পদার্থ বের হয়। মাছ খাদ্য কম খায়। পিএইচ বেশি হলে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন কমে যায় এবং মাছের খাদ্য চাহিদা কমে যায়। দেহ খসখসে হয়। মাছ রোগাক্রান্ত হয়। পিএইচ কম হলে চুন, ডলোমাইড বা জিপসাম ১ থেকে ২ কেজি প্রতি শতাংশ পুকুরে প্রয়োগ করতে হবে। পিএইচ বেশি হলে পুকুরে তেঁতুল বা সাজনা গাছের ডালপালা তিনচার দিন ভিজিয়ে রেখে পরে তুলে ফেলতে হবে। তেঁতুল পানিতে গুলে দেয়া যায়।

পানির ওপর সবুজ স্তর : পুকুরের পানির রঙ ঘন সবুজ হয়ে গেলে বা পানির ওপর শ্যাওলা জন্মালে খাদ্য ও সার প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। প্রতি শতাংশে ১২ থেকে ১৫ গ্রাম তুঁতে বা কপার সালফেট অনেক ভাগ করে ছোট ছোট পোটলায় বেঁধে ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার পানির নিচে বাঁশের খুঁটিতে বেঁধে রাখতে হবে। প্রতি শতাংশ পুকুরে ৮০০ থেকে ১২০০ গ্রাম চুন প্রয়োগ করতে হবে।
পানির ওপর লাল স্তর : পুকুরের পানির ওপর লাল স্তর পড়লে ধানের খড়ের বিচালি বা কলাগাছের শুকনো পাতা পেঁচিয়ে দড়ি তৈরি করে পানির ওপর দিয়ে ভাসিয়ে নিলে পরিষ্কার হয়।
পানির ঘোলাত্ব : পানি ঘোলা হলে মাছ খাদ্য কম খায়, চোখে দেখে না, প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হয় না, প্রজননে সমস্যা হয় ও রোগবালাই বেশি হয়। প্রতি শতাংশে ৮০ থেকে ১৬০ গ্রাম ফিটকিরি দিতে হবে। পুকুর তৈরির সময় জৈবসার বেশি দিলে স্থায়ীভাবে ঘোলা দূর হয়। পানিতে কলাপাতা ও কচুরিপানা রাখলেও ঘোলা কমে।

পানির ক্ষারত্ব : পানি ক্ষারীয় হলে প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি কম হয়। মাছের দৈহিক বৃদ্ধি কমে যায়। মাছের দেহে পিচ্ছিল পদার্থ কমে যায়। পুকুর তৈরির সময় ওপরে শতাংশ প্রতি ১ থেকে ২ কেজি চুন প্রয়োগ করতে হয়। লেবু কেটে দিলেও ক্ষারত্ব কমে। ছাই প্রয়োগেও ক্ষারত্ব নিয়ন্ত্রণ হয়।
জলজ উদ্ভিদ : কচুরিপানা, কলমিলতা, চেচরা, পাতাঝাঝি, শাপলা, হেলেঞ্চা, মালঞ্চ এসব জলজ উদ্ভিদ জলাশয়ে রোদ পড়তে বাধা দেয়, মাছের চলাচল, খাদ্য গ্রহণ, প্রজননে সমস্যা করে। এসব ক্ষতিকর জলজ উদ্ভিদ কাঁচি দিয়ে কেটে সব সময় পুকুরের পানি ও পুকুর পরিষ্কার রাখতে হয়।

রোগবালাই : শীতে মাছের ক্ষতরোগ, লেজ ও পাখনা পচা রোগ ও ফুলকা পচা রোগ হয়। এসব রোগ প্রতিরোধের জন্য যেসব ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন তাহলো-
১. পুকুরের পরিবেশ ও পানির গুণাগুণ ঠিক রাখা; ২. জলজ আগাছামুক্ত রাখা; ৩. পুকুরে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পড়ার ব্যবস্থা করা; ৪. অনাকাক্সিক্ষত জলজ প্রাণী অপসারণ করা; ৫. অতিরিক্ত কাদা সরানো; ৬. দুই তিন বছর পর পর পুকুর শুকানো; ৭. নিয়মিত ও পরিমিত চুন প্রয়োগ করা; ৮. মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা; ৯. প্রাকৃতিক খাদ্যের উপস্থিতি পরীক্ষা করা; ১০. হররা টানা; ১১. পাখি বসতে না দেয়া; ১২. জাল শোধন করে ব্যবহার করা; ১৩. রোগাক্রান্ত মাছ অপসারণ করা; ১৪. সব সময় ঢেউয়ের ব্যবস্থা রাখা; ১৫. পানি কমে গেলে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা; ১৬. ভাসমান খাদ্য প্রয়োগ করা; ১৭. পানি বেশি দূষিত হলে পানি পরিবর্তন করা; ১৮. পুকুরে বিভিন্ন স্থানে একটু গভীর বা গর্ত করা যাতে পানি কমে গেলে মাছ সেখানে আশ্রয় নিতে পারে।
শীত ও গ্রীষ্মে প্রতিদিন পুকুরে যেতে হবে। পুকুরের অবস্থা দেখতে হবে। সাত দিন পর পর মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। আর মাছ সংক্রান্ত যে কোনো সমস্যা হলে উপজেলা মৎস্য অফিসে যোগাযোগ করে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। এতে খরচ কমে যাবে, লাভ বেশি হবে।

 

লেখকঃ

ভুঁইয়া মো. মাহবুব আলম
মৎস্য চাষী, আমতলী, বরগুনা

আরো পড়ুনঃ শীতকালে মাছের ক্ষতরোগ দূর করার উপায়

শেয়ার করুন

প্রকাশ : জানুয়ারী ২, ২০২২ ৫:১৫ অপরাহ্ন
অবৈধ জাল অপসারণে বিশেষ কম্বিং অপারেশন শুরু
মৎস্য

মোঃ ইফতেখার হোসেন : দেশের মৎস্যসম্পদ ধ্বংসকারী অবৈধ জাল অপসারণে বিশেষ কম্বিং অপারেশন শুরু করেছে সরকার। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় চলতি বছর ১৭টি জেলায় বেহুন্দী জাল, কারেন্টজালসহ মৎস্য সম্পদ ধ্বংসকারী সকল প্রকার অবৈধ জাল অপসারণে ৩০ দিনব্যাপী বিশেষ এ অভিযান পরিচালনা করছে

জাটকা ও সামুদ্রিক মাছের ডিম, লার্ভী ও পোনা রক্ষায় গত ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখ থেকে থেকে শুরু হওয়া এ অভিযান চার ধাপে চলবে ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত।

বিশেষ কম্বিং অপারেশনের আওতাভুক্ত ১৭টি জেলা হচ্ছে পিরোজপুর, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, বরিশাল, নোয়াখালী, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, মুন্সিগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, শরিয়তপুর, মাদারীপুর ও চাঁদপুর।

উল্লেখ্য, দি প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিশ রুলস্, ১৯৮৫ অনুযায়ী সরকার ২০১৩ সালে মৎস্য সম্পদ ধ্বংসকারী বেহুন্দি জাল, মশারি জাল, চরঘেরা জাল, বেড়/জগৎবেড় জাল, কারেন্ট জাল প্রভৃতি ক্ষতিকারক জালের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে এবং ইলিশ আহরণের জালের ফাঁস ৬ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার বা ২ দশমিক ৬ ইঞ্চি নির্ধারণ করেছে। মৎস্যসম্পদের জন্য ক্ষতিকর এসব জালের ব্যবহার বৃদ্ধি পেলে জাটকাসহ সামুদ্রিক ও উপকূলীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছের ডিম, রেণু ও পোনা বিনষ্ট হবে এবং উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছের উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়ার পাশাপাশি জলজ জীববৈচিত্র্য নষ্ট হবে। সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধঘোষিত এসব জাল ব্যবহারকারীকে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা ১ বছর থেকে সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার বিধান রয়েছে।

আরো পড়ুনঃ বেড়েছে ইলিশের সরবরাহ, কমেনি দাম

শেয়ার করুন

প্রকাশ : জানুয়ারী ১, ২০২২ ৩:৩২ অপরাহ্ন
নববর্ষের প্রথম দিনে মাছের দাম চড়া
মৎস্য

মানিকগঞ্জের কালীগঙ্গা নদীর পাড়ের মৎস্য আড়তে ইংরেজি বর্ষের প্রথম প্রহরে দেশীয় মাছের সরবরাহ বাড়লেও কমেনি দর। দাম ও বেশি মাছ ধরা পড়ায় খুশি জেলেরা।

ঐতিহ্যবাহী দেশীয় মাছের এ আড়তে পানি নিষ্কাশনসহ নানা সমস্যার কথা জানিয়েছেন আড়ত কমিটি।

ইংরেজি বর্ষের প্রথম দিনে কনকনে শীত উপলক্ষে করে জেলে এবং পাইকারদের পদচারণায় সরগরম মানিকগঞ্জ সদরের ঐতিহ্যবাহী তরা ঘাটের দেশীয় মাছের আড়ত।এখানে পাওয়া যাচ্ছে টাটকা ও সুস্বাদু দেশীয় মুক্ত জলাশয়ের মলা, কাতল, রয়না, সরপুঁটি, কই, শোল, টাটকিনি, চিতল, আইড়সহ নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ।

পদ্মা, যমুনা, ইছামতী, কালীগঙ্গা, ধলেশ্বরীসহ মুক্ত-জলাশয়ের পানি কমে আসায় বেড়েছে মাছের সরবরাহ। ভালো দাম পেয়ে খুশি জেলেরা।

মলা ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা, কাতল ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, নওলা ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, কই ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকা, রয়না ৩৬০ থেকে ৩৭০ টাকা, শোল ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, টাটকিনি ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা, খোসলা ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা, সরপুঁটি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, বোয়াল ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা, চিতল ৮০০ থেকে ৮২০ টাকা এবং আইড় ৮৫০ থেকে ৮৮০ টাকা।

তরা ঘাটের মৎস্য আড়ত সমিতির সভাপতি ভোলানাথ সরকার জানান, ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী এ আড়তে ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ রয়েছে নানা সমস্যা।

তিনি আরও জানান, মানিকগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী তরা দেশীয় মাছের আড়তে প্রতিদিন অর্ধশতাধিক আড়তদার এবং ৮ শতাধিক পাইকারদের মাধ্যমে ৮০ থেকে ৯০ লাখ টাকার দেশীয় মাছ বেচাকেনা হয়।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : ডিসেম্বর ৩১, ২০২১ ৪:৩৮ অপরাহ্ন
বেড়েছে ইলিশের সরবরাহ, কমেনি দাম
মৎস্য

মুন্সিগঞ্জের পদ্মা তীরের মাওয়া মৎস্য আড়তে ইলিশে ভরপুর। ছুটির দিন ও থার্টি ফার্স্ট নাইটের কারণে নানা অঞ্চলের ক্রেতাদের ভিড়ে রেকর্ড দামে বিক্রি হয় ইলিশ। বড় আকারের ইলিশ কেজিপ্রতি দাম হাঁকা হয় দুই হাজার টাকা পর্যন্ত।

এ যেন ইলিশের রাজ্য। চারদিকে রুপালি ইলিশের ছড়াছড়ি৷ শীত উপক্ষো করেই ভোরে মুন্সীগঞ্জের মাওয়ার পদ্মা তীরে ইলিশ কিনতে ভিড় করছেন ক্রেতারা।

পাইকারদের পাশাপাশি সৌখিন ক্রেতারা ইলিশের স্বাদ নিতে নানা অঞ্চল থেকে ছুটে আসেন এই হাটে। ইলিশের বিপুল সমারোহ সত্ত্বেও ছুটির দিন এবং থার্টি ফার্স্ট নাইটের কারণে রেকর্ড দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। বড় ইলিশের দাম হাঁকা হচ্ছে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত।

ইলিশের আগুন দামের কারণে অসন্তোষ ক্রেতাদের। অনেকে ইলিশ না কিনেই ফিরে যাচ্ছেন। খুশি হলেও ক্রেতারা দামের কারণে ক্ষুব্ধ।

এ ব্যাপারে ইলিশ কিনতে আসা ক্রেতারা জানান, মাছের সরবারহ অনেক কিন্তু দাম একদমই কমেনি। দাম বেশি থাকার কারণে ইলিশ কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, পদ্মার ইলিশের পাইকারি দর কেজিপ্রতি বড় ইলিশ ২ হাজার টাকা, এক কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা, ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ইলিশ ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা। অন্যদিকে ৪০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, এক বছরে জেলায় ইলিশ শিকার হয়েছে ২ হাজার ৭০ মেট্রিক টন।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : ডিসেম্বর ৩১, ২০২১ ২:২৭ অপরাহ্ন
চিংড়িতে ভারী দ্রব্য ভরে বিক্রি
মৎস্য

খুলনায় সাদা সোনা হিসেবে খ্যাত চিংড়িতে জেলি, সাগু কিংবা লোহার মতো দ্রব্য ভরে ওজন বাড়িয়ে বিক্রি করছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। অতি মুনাফার লোভে চলছে এই অবৈধ কাজ। আর এসব চিংড়ি কিনে প্রতারিত হচ্ছেন দেশ বিদেশের ক্রেতারা। নষ্ট হচ্ছে সুনাম। বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা করে আর্থিক জরিমানা ও কারাদণ্ড দেয়ার পাশাপাশি অপদ্রব্য ভরা চিংড়ি নষ্ট করার পরও এই বেআইনি কাজ বন্ধ করতে পারছে না প্রশাসন। 

খুলনা জেলায় আশির দশক থেকে হাজারো চাষী বাণিজ্যিকভাবে চিংড়ি চাষ করে আসছেন। এই অঞ্চলে চিংড়ি চাষ লাভজনক হওয়ায় ‘সাদা সোনা’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। কিন্তু কিছু অসাধু মুনাফালোভী ব্যবসায়ী অধিক লাভের আশায় গলদা চিংড়িতে জেলি, সাগু, পানি, পাউডার ও সাদা লোহার মত দ্রব্য ভরে ওজন বাড়িয়ে তা বিক্রি করছে।

যার কারণে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে চলে যাচ্ছে অপদ্রব্য ভরা এসব চিংড়ি। ফলে ঠকছেন দেশি ও বিদেশি ক্রেতারা। আর সুনাম নষ্ট হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে প্রকৃত ব্যবসায়িদের।

মাঠ পর্যায়ে চিংড়িতে অপদ্রব্য ভরে দিয়ে বিক্রির চেষ্টা বন্ধে মৎস্য অধিদপ্তর নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন মৎস কর্মকর্তারা।

চিংড়ির মতো একটি রপ্তানিযোগ্য পণ্যের গুনগত মান ঠিক রাখতে মৎস্য অধিদপ্তর প্রশাসনের সহায়তায় নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে বলে জানান খুলনা জেলা মৎস কর্মকর্তা জয়দেব পাল।

২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় ৩৩ কোটি ডলারের চিংড়ি রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : ডিসেম্বর ২৯, ২০২১ ৩:৪৫ অপরাহ্ন
আখাউড়ায় জেলেদের মাঝে ছাগল বিতরণ
মৎস্য

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বিকল্প কর্মসংস্থানের উৎস হিসাবে ১৬ জন নিবন্ধিত জেলে পরিবারকে ছাগল প্রদান করা হয়েছে।

আখাউড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের আয়োজনে বুধবার দুপুরে উপজেলা পরিষদ মাঠে উপকারভোগী জেলেদের মাঝে ২টি করে ছাগল দেওয়া হয়। ছাগল বিতরণে উপস্থিত ছিলেন আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আক্তার, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা তাজমহল বেগম, উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা রৌনক জাহান, মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল করিম প্রমুখ।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা তাজমহল বেগম বলেন, আখাউড়া উপজেলা ১ হাজার ৪১০ জন নিবন্ধিত জেলে আছে। গত ৫ বছর যাবত তাদেরকে বিকল্প আয় বর্ধনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে সেলাই মেশিন, ভেড়া, ছাগল ইত্যাদি দেওয়া হচ্ছে। আজ ১৬ জনকে এক জোড়া করে ছাগল দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুনামা আক্তার বলেন, বছরের নির্দিষ্ট একটা সময় জেলেরা মাছ ধরতে পারে না। তখন তাদের আয় রোজগার থাকে না। তাদের বিকল্প আয়ের জন্য এসব ছাগল দেওয়া হয়েছে। উদ্দেশ্যে হলো ছাগলগুলো পালন করে তারা যেন আয় বাড়াতে পারে। পর্যায়ক্রমে সবাইকে দেওয়া হবে।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : ডিসেম্বর ২৯, ২০২১ ২:৩৬ অপরাহ্ন
খুলনায় মাছের আকাল
মৎস্য

হঠাৎ করেই সব ধরনের মাছের সরবরাহ কমেছে খুলনার রূপসা পাইকারি মাছ বাজারে। মূলত সাগর থেকে ট্রলার ফিরে না আসায় এবং বিলের পানি কমে যাওয়ায় মাছের সরবরাহ কম বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সরবারহ কম থাকায় গত সপ্তাহের তুলনায় দামও বেড়েছে কিছুটা।

তবে আগামী মাসেই রূপসা পাইকারি মাছ বাজার আবারও চাঙা হয়ে উঠবে বলে আশাবাদী ব্যবসায়ীদের।

বুধবার (২৯ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই রূপসার মাছ বাজারে আসতে শুরু করেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। সময় বাড়ার সাথে ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকও বাড়ে। তবে চাহিদা অনুযায়ী মাছের সরবরাহ ছিল কম।

বাজারে পাঙাস, ভেটকি, রুই, কাতলা, তেলাপিয়া, চিংড়িসহ সামুদ্রিক মাছের সরবরাহ ভালো। তবে দাম নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতারা বলছেন ভিন্ন কথা।

ক্রেতারা জানান, পছন্দসই মাছ পাচ্ছেন না তারা। অন্যদিকে দামও বেশ চড়া।

এ ব্যাপারে বিক্রেতারা বলেন, বাজারে মাছের সরবারহে ঘাটতি রয়েছে। এতে করে দাম সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সমুদ্র থেকে ট্রলার ফিরে আসলে মাছের দাম স্বাভাবিক হবে বলে মন্তব্য করেন বিক্রেতারা।

বাজারে চাহিদা থাকলেও ইলিশের সরবরাহ কম। দামও আকাশ ছোঁয়া। এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজিতে।

এদিকে রূপসা পাইকারি মাছ বাজার নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে আগামী মাসেই বাজারও আরও চাঙা হবে বলে আশা ব্যবসায়ীদের।

ঐতিহ্যবাহী এই রূপসা পাইকারি মাছ বাজারে প্রতিদিন গড়ে অর্ধকোটি টাকার কেনাবেচা হয়। 

শেয়ার করুন

প্রকাশ : ডিসেম্বর ২৮, ২০২১ ৩:১৪ অপরাহ্ন
গবেষণা পুকুরের বেহাল দশা, মাছের প্রজনন ব্যাহত
মৎস্য

জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স (এফএমবি) বিভাগের একমাত্র গবেষণা পুকুর ‌‘ব্রুড পনড’।

মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইটি আবাসিক হলের ময়লা পানিসহ খাবারের উচ্ছিষ্ট ও মসজিদের ব্যবহৃত পানি সরাসরি ফেলা হচ্ছে পুকুরে। এতে নষ্ট হচ্ছে পানির গুণগত মান, ব্যাহত হচ্ছে মাছের স্বাভাবিক প্রজনন।

মূলত পুকুরের অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইটি আবাসিক হল ও কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন হওয়ায় এবং ভবনগুলোর পানি নিষ্কাশনের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা না থাকায় সরাসরি পুকুরে ফেলা হচ্ছে দূষিত পানি, ময়লা-আবর্জনা। পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পুকুরে জন্মাচ্ছে শ্যাওলা, যা মাছের প্রাকৃতিক খাবার তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করছে। পুকুর খনন, সংস্কার ও পাড় বেঁধে ছোট ছোট ব্রুড পনড করার কথা থাকলেও করোনাকালীন সময়ে সেটা করা সম্ভব হয়নি। পুকুরের অবস্থা খারাপ হওয়ায় ইতোমধ্যে বেশকিছু মা মাছ অন্য গবেষণা পুকুরে স্থানান্তর করা হয়েছে।

এবিষয়ে ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‌‘পুকুরটিকে এখন আর গবেষণা কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে না। মূলত আমরা একে মা মাছের মজুদ পুকুর হিসেবে ব্যবহার করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকার কারণে হলের পানি ও ময়লা আবর্জনাগুলো পুকুরে ফেলা হচ্ছে । এতে পানির গুণগতমান নষ্ট হচ্ছে। ফলে মাছ চাষ ও গবেষণার জন্য প্রকৃত অর্থে এই পুকুরটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এ সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা পুকুরটি খনন ও উঁচু করে পাড় বেঁধে একাধিক ছোট ছোট গবেষণা পুকুর করার পরিকল্পনা করেছিলাম । তবে করোনাকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় সেটা সম্ভব হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করছি দ্রুত এটির সংস্কার কাজ শুরু করে আগামী মৌসুম থেকে গবেষণার জন্য ব্যবহার করবো। ইতোমধ্যে বেশকিছু মা মাছ নতুন গবেষণা পুকুরে স্থানান্তর করেছি। মা মাছের প্রজননের জন্য বড় ও আলাদা ধরনের জলাধার প্রয়োজন হয়। মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ে জায়গার সংকট ও লোকবলের অভাবে পরিপূর্ণভাবে কাজগুলো চালিয়ে যেতে পারছি না। এই বিষয়ে আমরা উপাচার্যকে জানিয়েছি এবং তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা বর্ধিত করা হলে আমাদের জন্য আলাদা গবেষণা পুকুরের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।’

প্রসঙ্গত, ‘ব্রুড পনড’ হচ্ছে মা মাছের প্রজননের জন্য ব্যবহৃত পুকুর বা জলাধার।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : ডিসেম্বর ২৭, ২০২১ ৩:০৩ অপরাহ্ন
হাজার কেজি জেলিযুক্ত চিংড়ি জব্দ
মৎস্য

চাঁদপুরে কোস্ট গার্ডের পৃথক ২টি অভিযানে ১ হাজার কেজি জেলিযুক্ত চিংড়ি জব্দ করা হয়েছে। সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে পশ্চিম-দক্ষিণ ধেররা এবং হাজীগঞ্জ মাছের আড়ৎ থেকে এই জেলিযুক্ত বিষাক্ত চিংড়ি জব্দ করা হয়।

চাঁদপুর কোস্টগার্ডের স্টেশন কমান্ডার লে. রুহান মনজুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ৪৮টি ককসিট থেকে প্রায় ১ হাজার কেজি জেলি যুক্ত চিংড়ি জব্দ করা হয়েছে।

এ সময় অবৈধ চিংড়ি ব্যবসায়ীরা কোস্ট গার্ডের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যাওয়ায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মঞ্জুরুল মোর্শেদ ও সদর উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুব রশীদ এর উপস্থিতিতে এই জেলি যুক্ত চিংড়িগুলো মাটিতে পুঁতে বিনষ্ট করা হয়।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : ডিসেম্বর ২৬, ২০২১ ৪:০৬ অপরাহ্ন
শীতকালে মাছের ক্ষতরোগ দূর করার উপায়
মৎস্য

শীতকালে মাছ চাষিদের একটু বেশি সতর্ক হতে হয়। কারণ এসময়ে মাছের রোগ-বালাই বেশি দেখা দেয়। ফলে খামারিরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। শীতে দূষিত পানি বা পানির চেয়ে মাছ বেশি হলে মাছের বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়। এছাড়া পরজীবী ও জীবাণুর আক্রমণে শীতকালে মাছ রোগাক্রান্ত হয়।

রোগাক্রান্ত মাছের কিছু অস্বাভাবিক আচরণ ও শারীরিক অসঙ্গতি দেখা যায়। এসব অসঙ্গতির মধ্যে রয়েছে খাবারের প্রতি অনিহা, কঠিন বস্তুতে গা ঘর্ষণ ও চলার গতি ধীর হওয়া। অন্যদিকে পানির উপর ভেসে থাকা, লাফালাফি করা এছাড়াও দেহের যেকোনা অংশে ঘা হতে পারে। আবার মাছের রূপালি রঙের সাদা ফোঁসকা উঠে পেট ফুলে যায়, ফুলকা ফুলে উঠে এবং গা থেকে আঠাঁলো বিজলা বের হয়।

আমাদের দেশে শীতকালে সাধারণত মাছের ক্ষত রোগটি মহামারি আকার ধারণ করে। উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে এসময় খমারিরা ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হন। একানোমাইসিস নামের একপ্রকার ব্যাকটেরিয়ার কারণে মাছের ক্ষত রোগ হয়। এ রোগের জীবাণু সম্পর্কে দ্বিমত থাকলেও প্রতিকূল পারিপার্শ্বিকতা এ রোগের মূল কারণ বলে মৎস্য বিজ্ঞানীরা মনে করেন।

মাছের শরীরে ছোটছোট লাল রঙের দাগ হওয়া, দাগগুলো বড় ক্ষতে পরিণত হওয়া, লেজ, ফুলকা ও পাখনাতে পচন ধরা, কোনো কোনো সময় ফুলকা ও পাখনা পচে গিয়ে খসে পড়া। ক্ষত রোগে আক্রান্ত মাছগুলো পানির মধ্যে কাত হয়ে দল ছাড়াভাবে ভাসতে থাকে এবং মাছ দুর্বলভাবে সাঁতার কাটে।

শীতকালে পুকুরের পানির পিএইচ ঠিক রাখার জন্য নিয়মিতভাবে চুন দিতে হবে। ঘন ঘন জাল ফেলে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে হবে। জাল ফেললেও মাছগুলোকে পটাশিয়াম পারমাঙ্গানেট দ্রবণে ডুবিয়ে তারপর পুনরায় পানিতে ছাড়তে হবে।

পুকুরে নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে বেশি মাছ রাখা ঠিক হবে না। বর্ষার সময় বাইরের পানি পুকুরে ঢুকতে দেওয়া ঠিক হবে না। পুকুরের তলদেশের গাদ প্রতি দুই-তিন বছর পরপর একবার সরিয়ে নিতে হবে। মরা মাছগুলোতে চুন লাগিয়ে পুকুর থেকে দূরে মাটির নিচে পুঁতে রাখতে হবে।

ঘা হওয়া মাছগুলো তুত বা কপার সালফেট পরিমিত পরিমাণে তৈরি করে তাতে সামান্য সময়ে গোসল করিয়ে আবার পানিতে ছেড়ে দিতে হবে। ব্যাপকহারে এ রোগ দেখা দিলে বিঘাপ্রতি ২০০ কিলোগ্রাম লবণ দুই কিস্তিতে ভাগ করে তিন দিনের ব্যবধানে পানিতে প্রয়োগ করতে হবে।

মাছের অতিরিক্ত খাবারের সঙ্গে টিরামাইসিন নামক ঔষধ (১০০ মিলিগ্রাম ঔষধ প্রতি কিলোগ্রাম খাদ্যের সঙ্গে) ভালোভাবে মিশিয়ে ছিটিয়ে দিতে হবে। সিফেক্স প্রতি হেক্টর পানিতে ১ লিটার ঔষধ প্রয়োগ করে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। এছাড়া কাঁচা হলুদ ১০:২ অনুপাতে বিঘাপ্রতি পানিতে একসঙ্গে মিশিয়ে শীতের সময়ে ব্যবহার করলে এ রোগ থেকে খামারের মাছকে ভালো রাখা যায়।

শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop