টাঙ্গাইলে মধু চাষে বাড়তি আয়
এগ্রিবিজনেস
টাঙ্গাইলের সখীপুর ও বাসাইল উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন শর্ষে ফুলের হলুদ রঙের সমারোহ। শর্ষের এসব জমির পাশেই মৌ চাষের বাক্স বসিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ চাষিরা। এতে মৌমাছির মাধ্যমে শর্ষে ফুলের পরাগায়নে সহায়তা হচ্ছে। ফলে একদিকে শর্ষের উৎপাদন বাড়ছে, অন্যদিকে মধু আহরণ করা যাচ্ছে। সমন্বিত এই চাষে শর্ষেচাষি ও মৌচাষি উভয়ই লাভবান হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলার সখীপুর ও বাসাইল উপজেলায় এ বছর প্রায় ছয় হাজার হেক্টর জমিতে শর্ষের আবাদ হয়েছে। এসব খেতের পাশে কয়েক শতাধিক মৌ চাষের বাক্স স্থাপন করা হয়েছে। এই বাক্স থেকে এবার কমপক্ষে ১০ টন মধু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। সখীপুর উপজেলায় ৮২০ ও বাসাইলে ১ হাজার ৮০টি বাক্স বসানো হয়েছে।
স্থানীয় কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, উচ্চফলনশীল ও স্থানীয় উভয় জাতের শর্ষে কৃষকেরা চাষ করেন। দুই জাতের শর্ষে নভেম্বরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আবাদ করতে হয়। ফসল ঘরে উঠতে সময় লাগে জাতভেদে ৭০ থেকে ৯০ দিন।
সখীপুর ও বাসাইল বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন শর্ষে ফুলের সমারোহ। কৃষকেরা যেমন মাঠে শর্ষের পরিচর্যা করছেন, তেমনি খেতের পাশে মৌমাছির বাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করছেন ভ্রাম্যমাণ মৌচাষিরা।
গত রোববার উপজেলার বেড়বাড়ী ও লাঙ্গুলিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, শর্ষেখেতের পাশে টাঙ্গাইলের গোপালপুর থেকে আসা মুন্না আহমেদ ১৮০টি ও ধনবাড়ী উপজেলা থেকে আসা আশরাফ আলী ২৫০টি মৌ চাষের বাক্স স্থাপন করেছেন। এসব বাক্স থেকে তাঁরা সপ্তাহে পাঁচ থেকে সাত মণ মধু সংগ্রহ করছেন বলে জানান।
সখীপুর উপজেলার পলাশতলী গ্রামে ১০০টি বাক্স বসিয়েছেন সাতক্ষীরার রফিকুল ও মনিরুল ইসলাম। ওই গ্রামেরই সেতুর পশ্চিম পাশে গোপালপুরের আবদুল মালেক ১২০টি বাক্স বসিয়ে মধু আহরণ করছেন। মৌ চাষ সম্পর্কে জানতে চাইলে তাঁরা জানান, শুধু সখীপুর ও বাসাইল অঞ্চলে শর্ষে ফুলের মধু সংগ্রহে ১০ থেকে ১২ জন ব্যবসায়ী এসেছেন। পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ের মৌচাষিরাও মধু সংগ্রহ করছেন। সংগ্রহ করা মধু ঢাকার বিভিন্ন কোম্পানির কাছে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা মণদরে বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন মধু সংগ্রাহকেরা।
উপজেলার বেড়বাড়ী গ্রামের শর্ষেচাষি মকবুল হোসেন বলেন, শর্ষেখেত থেকে মধু আহরণ করলে পরাগায়ন হয়। এতে উৎপাদন বাড়ে। তাই তিনি ও আশপাশের জমির মালিকেরা মৌচাষিদের উৎসাহিত করছেন।
ভ্রাম্যমাণ মধুচাষি আশরাফ আলী বলেন, ‘তাঁরা শর্ষেখেত থেকে মধু সংগ্রহ করায় শর্ষের উৎপাদন বাড়ছে। পাশাপাশি মধু আহরণ করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে যাতে মধু রপ্তানি করা যায়, সেদিকে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিয়ন্তা বর্মণ বলেন, সখীপুর উপজেলায় প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে শর্ষের আবাদ হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে। মৌমাছি শর্ষের ফুলে উড়ে উড়ে বসে মধু সংগ্রহ করে। এতে শর্ষে ফুলে সহজে পরাগায়ন ঘটে। তাই শর্ষেখেতের পাশে মৌ চাষের বাক্স স্থাপন করলে শর্ষের ফলন অন্তত ২০ শতাংশ বাড়ে। পাশাপাশি মৌচাষিরাও মধু আহরণ করে লাভবান হন।