নার্য্য মূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় আড়তে ধান দিচ্ছেন কৃষক
এগ্রিবিজনেস
দিনাজপুরের হিলিতে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে খোলা বাজারে বেশি দাম পাওয়ায় ও ঝামেলা না থাকায় সরকারি খাদ্যগুদামে ধান দিতে আগ্রহ নেই কৃষকদের। এতে চলতি আমন মৌসুমে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে খাদ্য বিভাগ বলছে, ধান সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা আশা করছে, নির্ধারিত ধান সংগ্রহ করতে পারবে।
হিলির পালপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ধান খোলা বাজারে বিক্রি করাই ভালো। গুদামে ধান দিতে গিয়ে নানা ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আড়তগুলোতে ধান বিক্রি করা খুব সহজ। বললে বাড়ি থেকে ধান নিয়ে যান আড়তদারের লোকজন। অপরদিকে, টাকা খরচ করে ধান গুদামে নিয়ে গেলে নানা ধরনের ত্রুটি ধরে। আবার টাকা পেতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। আড়তে কাঁচা ধান বিক্রি হয়ে যায়। গুদামে টাকা খরচ করে ধান নিয়ে গিলে বলে ভেজা, ১৪ শতাংশ চিটা। এসব ঝামেলার কারণে গুদামে ধান দিই না। গুদামের চেয়ে কিছুটা দাম কম হলেও আড়তে ধান বিক্রি দিচ্ছি আমরা।
আরেক কৃষক আশরাফুল ইসলাম বলেন, এবার আমন মৌসুমে নানা রোগ, পোকামাকড়ের আক্রমণের কারণে ধানের ফলন নিয়ে শঙ্কা থাকলেও আল্লাহর রহমতে ভালো ফলন হয়েছে। বিঘাপ্রতি ১৪ থেকে ১৫ মণ ফলন হয়েছে। ধানের যে দাম তাতে আমরা লাভবান হচ্ছি। তবে গুদামে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে খোলা বাজারে ধানের দাম বেশি। গুদামে ধান দিতে গেলে অনেক ঝামেলা। লটারিতে নাম উঠলে ধান দিতে পারেন কৃষক। এ ছাড়া ধান দিতে পারেন না। আড়তদাররা বাড়ি থেকে ধান কিনে নিয়ে যান। গুদামে ধান নিয়ে গেলে বাড়তি যে ভ্যান ভাড়া লাগতো, তা লাগছে না।
তিনি বলেন, গুদামে ভালো ধান দিতে হয়। এর ওপর ধান দিয়ে টাকা সঙ্গে সঙ্গে পাওয়া যায় না। ওই ধান আড়তে দিলে সঙ্গে সঙ্গে টাকা পাওয়া যায়; সে কাঁচা হোক আর পাকা। কিন্তু গুদামে দিতে গেলে সেটি হয় না। ফলে গুদামে ধান দিতে আগ্রহী নই।
হিলির ছাতনি চারমাথা মোড়ের ধানের আড়তদার নুর মোহাম্মদ বলেন, আমরা স্বর্ণা-৫ জাতের ধান কিনছি এক হাজার ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। গুটি স্বর্ণা জাতের ধান কিনছি এক হাজার ১০ টাকা। তবে কিছুদিন আগে এসব ধানের দাম আরও বাড়তি ছিল। বর্তমানে কিছুটা কমেছে। এসব ধান ঢাকা, নওগাঁসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের মোকামগুলোতে সরবরাহ করা হয়। সরকারি গুদামে ধান দিতে গেলে কৃষকদের বাড়তি খরচ লাগে। এর ওপর বাজারে ধানের যেই দাম, সরকারি খাদ্যগুদামে একই দাম। ফলে কৃষকরা গুদামে ধান সরবরাহ করছেন না।
হিলি এলএসডি খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা জোসেফ হাসদা বলেন, চলতি আমন মৌসুমে এই উপজেলায় ৪৪৬ টন ধান সংগ্রহের জন্য বরাদ্দ পেয়েছি। প্রতি কেজি ধান ২৭ টাকা কেজি দরে কিনছি। গত ৭ নভেম্বর সারাদেশের মতো হিলি খাদ্যগুদামেও ধান সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী দিনে দুই কৃষকের কাছ থেকে দুই টন ধান সংগ্রহ করতে পেরেছি। এরপর আর কোনও ধান সংগ্রহ করতে পারিনি। তবে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, যাতে বাকি ৪৪৪ টন ধান সংগ্রহ করতে পারি।