উপকূলীয় এলাকায় চলছে ১০ দিনের জলচর পাখিশুমারি
পাঁচমিশালি
ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, লক্ষীপুর ও নোয়াখালীর উপকূলীয় এলাকায় দশ দিনের জলচর পাখিশুমারি চলছে। গত রোববার সকালে ভোলা খেয়াঘাট থেকে একটি ট্রলারে বিশিষ্ট পাখি গবেষক ও বাংলাদেশ বার্ডস ক্লাবের সহ-সভাপতি সায়েম ইউ চৌধুরী’র নেতৃত্বে মোট পাঁচ সদস্যর একটি দল এ কার্যক্রম শুরু করে।
পর্যবেক্ষক দলের অন্যরা হলেন পাখি পর্যবেক্ষক ও পর্বতারোহী এম এ মুহিত, বার্ডস ক্লাবের সদস্য মো: ফয়সাল, নাজিমুদ্দিন খান ও সফিকুর রহমান। পর্যবেক্ষক দলটি গত সাত দিনে প্রায় ৪০ প্রজাতির ২২ হাজার ৬৮০ টি পাখি গণনা করেছে। আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত তাদের এ কার্যক্রম চলবে।
পাখি পর্যবেক্ষক দলের সাথে আলাপ করে জানা যায়, বাংলাদেশ বার্ডস ক্লাব, বন অধিদপ্তর, টেকসই বন ও জীবিকা প্রকল্প (সুফল), প্রকৃতি ও জীবন, প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন এ পাখি শুমারির আয়োজন করে।
শীতের সময় সাইবেরিয়া, তিব্বত, মোঙ্গলীয়াসহ বিভিন্ন এলাকা বরফে ঢেকে যায়। এতে করে পাখিদের খাবারের অভাব হয়। তখন ঐসব পাখি খাবারের খোঁজে বাংলাদেশে আসে। বিশেষ করে ভোলা খুবই সমৃদ্ধ অতিথি পাখির জন্য। তাই গত কয়েক দশক ধরে এ এলাকায় পাখিশুমারি হয়ে আসছে। গণনা শেষে প্রতিবেদনটি ওয়েটল্যান্ডস ইন্টারন্যাশনাল নামের আন্তর্জাতিক সংস্থা বই আকারে প্রকাশ করবে।
পাখি পর্যবেক্ষক ও পর্বতারোহী এম এ মুহিত জানান, ইতোমধ্যে শ্রীপুর এলাকার কিছু চর, পাতার হাট চর, তজুমদ্দিন চর, বাসনভাঙ্গা চর, চর কালকিনি, মনপুরা এলাকার বেশ কিছু চর, নোয়াখালীর নিঝুম দ্বীপ, চর পিয়াল, হাতিয়ার টমার চরসহ বেশ কিছু চরে পাখি দেখা হয়েছে। বিশেষ করে নতুন যেসব চর, জোয়ারে ডুবে যায় ভাটায় জাগে, এসব কাদা মাটির চরগুলোতেই পাখি বেশি আসে।
তিনি বলেন, আজকে রয়েছি চর কুকরি-মুকরির দিকে। চর নিজাম, ঢালচর, শীবচর, আন্দার চর, সোনার চরসহ উপকূলীয় এলাকার বিভিন্ন চরে শুমারি চলবে। একইসাথে পাখিগুলো মাটিতে যেসব পোকাসহ অন্যান্য খাবার খায় সে বিষয়ে জানার জন্য চরগুলোর মাটি নেয়া হচ্ছে পরীক্ষার জন্য
এম এ মুহিত জানান, ইতোমধ্যে দেশি গাংচোষা, পাতি চখাচখি, খয়রা চখাচখি, কার্লইউ, ইউবব্রেল, কালো মাথা কাস্তেচরা, শামোক খোল, কালা লেজ জৌরালী, উত্তরে খুন্তে হাঁস, উত্তরে লেঞ্জা হাঁস, কমনপিল হাঁস, ডুবুরী পাখি, রেড সেংক, গ্রীন সেংক, প্যাসেটিক গোল্ডেন প্লোবার্ড, লিটেল জিংক প্লোবার্ড, বিভিন্ন বকসহ অনেক দুলর্ভ পাখির দেখা মিলেছে।বিশ্বব্যাপী বিপন্ন দেশি গাংচোষার দেখা মিলেছে প্রায় ৬’শর মত। এছাড়া বেগুনী বগা, কাস্পিয়ান টার্ন, পাইড এ্যাবোসেডসহ বেশ কিছু দুূর্লভ পাখি পাওয়া যাচ্ছে।
পর্যবেক্ষক দলের প্রধান বিশিষ্ট পাখি গবেষক ও বাংলাদেশ বার্ডস ক্লাবের সহ-সভাপতি সায়েম ইউ চৌধুরী জানান, দেশে অতিথি পাখিদের বিচরণের ক্ষেত্রে এ অঞ্চল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। শুমারিতে পাখি গণনার জন্য বায়নোকূলার ও টেলিস্কপ ব্যবহার করা হয়। পাখির সংখ্যা যখন কম থাকে ৩’শ ৪’শতখন একটা একটা করে গুণে ফেলা যায়। কিন্তু যখন পাখির সংখ্যা হাজার বা লাখে থাকে তখন ব্লক ম্যাথড পদ্ধতি এর মাধ্যমে গণনা করা হয়। একটা সময় এসব অঞ্চলে প্রচুর অতিথি পাখির দেখা পাওয়া যতে। কিন্তু দিন দিন এর সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
সায়েম ইউ চৌধুরী আরো জানান, এটার জন্য যে শুধু বাংলাদেশ দায়ী বিষয়টা এমন নয়, কারণ পাখিদের আরো কয়েকটি দেশ পাড়ি দিয়ে আসতে হয়। ওসব দেশে যদি সমস্যা হয় তাহলে এর একটা প্রভাব আসে। প্রকৃতি যদি ভালো থাকে পাখি ভালো থাকে। থাকে নিরাপদে। সামনের দিনগুলোতে আরো পাখি দেখা যাবে বলে মনে করেন তিনি।