ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ঠাকুরগাঁও সুগার মিলে আখ মাড়াই শুরু
কৃষি বিভাগ
ঋণ ও লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে আখ মাড়াই শুরু করেছে ঠাকুরগাঁও সুগার মিল। তবে এ থেকে উত্তরণের উপায় না খুঁজে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের খেয়ালখুশি মতো মিলটি পরিচালনা করছেন বলে মিলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন।
জানা যায়, চলতি মৌসুমে ২০২১-২২ অর্থ বছরে প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে মিল কর্তৃপক্ষ। এতে প্রায় ৩৫০০ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন করা সম্ভব হবে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ২৬ কোটি টাকা। সুগার মিলের ব্যবস্থাপনায় নিজস্ব ফার্মে এক হাজার একর লিজ নেয়া জমিতে আখ উৎপাদন করা হয়েছে। এছাড়াও আগামী মার্চ পর্যন্ত ৪-৫ হাজার চাষি প্রায় ১০ হাজার একর জমিতে আখ রোপণ করে। এ পর্যন্ত ১৪০০ একর জমিতে আখ রোপণ করা হয়েছে। এ মৌসুমে প্রায় ১২০০ কৃষক মিলে আখ সরবরাহ করবে।
ঠাকুরগাঁওয়ের কয়েকজন আখচাষি জানান, মিল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে চাষিরা আখ চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। যদি উন্নত জাতের আখ সরবরাহ করা হতো তাহলে তারা ফলন ভালো পেতেন। ফলে মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই মিল আর বন্ধ হতো না। এখন যে আখ চাষ হচ্ছে তাতে ফলন পাওয়া যাচ্ছে না। একবার আখ রোপণ করলে প্রায় দেড় বছর অন্যান্য ফসল ফলানো যায় না।
এদিকে অধিক লাভের আশায় কিছু আখচাষি পাওয়ার ক্রেশার মেশিন দিয়ে আখ মাড়াই করে গুড় উৎপাদন করে বাজারে বিক্রি করে। তাদের মতে, যে আখ মিলে দিলে পাওয়া যায় ১০-১১ হাজার টাকা, সেই আখ নিজেরা মাড়াই করলে পাওয়া যায় ২১-২৪ হাজার টাকা। তাছাড়া মিল সময়মতো টাকা পরিশোধ করে না।
ঠাকুরগাঁও সুগার মিল সূত্রে জানা যায়, এখন পর্যন্ত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৩৮ কোটি ৪৭ লাখ ৩১ হাজার টাকা। ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে লোকসান হয়েছে ৭৬৩ কোটি ৩৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা। মিলটিতে স্থায়ী জনবল ৪৮৩ জন, মৌসুমী ৩৪৩ জন, মাস্টাররোলে আছেন ২৩৯ জন। এই জনবলকে প্রতি মাসে মৌসুমে বেতন দেয়া লাগে ২ কোটি ৭১ লাখ ৯২ হাজার টাকা, আর মৌসুম ছাড়া ১ কোটি ৭১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। সবমিলে বছরে বেতন-বোনাস ২৬ কোটি ৬৩ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। বেতন-বোনাস দিয়ে আরও লোকসান হবে প্রায় ৭৩ লাখ ৩৭ হাজার টাকাসহ মোট ৭৬৪ কোটি ১০ লাখ ১৭ হাজার টাকা।
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, মিলটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর লাভেই চলছিল। এখন যতদিন যাচ্ছে ততই লোকসানের দিকে ধাবিত হচ্ছে। লোকসান থেকে বাঁচাতে হলে মিলটিকে আধুনিকায়ন করতে হবে। কৃষকরা উন্নত জাতের আখের আবাদ করলে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হবে।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান জানান, এটা আসলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সম্পত্তি, শিল্প মন্ত্রণালয় দেখাশুনা করে। মিলটি ঋণ ও লোকসানের হাত থেকে বাঁচাতে আমার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে। আর যে সমস্ত আখচাষি পাওয়ার ক্রেশার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে আখ মাড়াই করে তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।