কোরবানির পশু বিক্রি নিয়ে হতাশায় খামার মালিকরা
প্রাণিসম্পদ
কোরবানির ঈদ দুয়ারে কড়া নাড়ছে। এই সময় মহা ব্যস্ত থাকার কথা কোরবানির পশু খামারিদের। করোনাভাইরাসের কারণে চলমান লকডাউন অব্যাহত থাকায় পশুর হাট বন্ধ থাকায় এখন পর্যন্ত কোরবানির পশু বিক্রি করতে পারেনি খামারি ও মালিকরা। পশু বিক্রি অনিশ্চিত হওয়ায় চরম বিপাকে খামার মালিকরা।
জেলা প্রাণী সম্পদ অফিস সূত্র জানায়, গাইবান্ধায় বাণিজ্যিক ও ক্ষুদ্র প্রান্তিক খামারের সংখ্যা ১২ হাজার ৬৭৭টি। এবার জেলায় মোট ৬৭ হাজার পশু কোরবানির লক্ষমাত্রা রয়েছে। এরপরও ২২ হাজার পশু উদ্বৃত্ত থাকবে।
জেলায় কোরবানির ইদকে সামনে রেখে লাভবান হওয়ার আশায় বাণিজ্যিক খামারিরা বিশেষ করে দেশি-বিদেশি গরু পালন করেছেন। স্থাপনা নির্মাণ, গো খাদ্য, পরিচর্যা, কর্মচারীদের বেতন, চিকিৎসাসহ নানা খাতে অর্থ ব্যয় করে মোটা তাজা করা হয় গরুগুলোকে। ব্যক্তিগত অর্থের বাইরে এ জন্য ব্যাংক লোন, সুদের ওপর ধারদেনাও করেন তারা। গত বছর সীমিতভাবে পশুর হাট চালু হওয়ায় লোকসান তেমন গুনতে হয়নি। কিন্তু এবার বিধিনিষেধের কড়াকড়িতে বেচা কেনা তেমন নেই বললেই চলে। যানবাহন বন্ধ থাকায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ বড় শহর থেকে গরু কিনতে আসছেন না ক্রেতারা। তাই বিপাকে খামারিরা। তারা চান স্বাস্থবিধি মেনে হাট বাজার খুলে দেওয়া হোক।
গাইবান্ধার সাদুল্যাপরের ভাতগ্রামের গরু খামারি আবদুর রশিদ জানান, সরকারি বিধিনিষেধের আওতায় থেকেই গরু বিক্রি করতে চাই। এক বছরের প্রাণান্তকর চেষ্টাতে এই গরুগুলোকে ক্রেতাদের সামনে তুলে ধরার উপযোগী করা হয়েছে। কিন্তু হাট বন্ধ, তাই লোকসানের আশংকায় রয়েছি। অনলাইনে ক্রেতাদের তেমন আগ্রহ নেই বলেই মনে হচ্ছে। এখন আমরা সরকারি সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় সহস্রাধিক খামার রয়েছে। বিশেষ করে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের তিস্তার চরাঞ্চলে প্রান্তিক খামার ও ব্যক্তিগত পশু পালনের সংখ্যা অনেক। প্রতি বছর কোরবানির সময় উপজেলার চরাঞ্চলের কোরবানির পশু দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি করা হত। আসন্ন কোরবানির ঈদে তা করতে না পারায় পশু বিক্রি অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। স্বল্পপুঁজির গরুর খামারিরা সারা বছর এই সময়ের আয় দিয়েই পাড়ি দেন।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তর জানায়, উপজেলায় বিক্রয়ের জন্য গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষ মিলে কমপক্ষে ২০ হাজার কোরবানির পশু রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ৮০ কোটি টাকা। এর বেশির ভাগই চরাঞ্চলে। এ ছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনের মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে নারী উদ্যোক্তাদের খামারেও রয়েছে অসংখ্য গরু ছাগল। এই নারী উদ্যোক্তাদের ১০০টি গরু ইতিমধ্যে অনলাইন পোর্টাল দরাজ বাংলাদেশের মাধ্যমে বিক্রি হয়েছে।
বেলকার প্রান্তিক খামারি আকবর আলী জানান, তিনি প্রতি বছর কোরবানির ইদে কমপক্ষে ১০টি গরু বিক্রি করেন। বর্তমানে তার খামারে ৬টি গরু রয়েছে। আসন্ন কোরবানির ঈদে গরু বিক্রি করতে না পারলে তার অনেক লোকসান হবে। তাছাড়া ওইসব গরু আর খামারে রাখা যাবে না। শেষ পর্যন্ত অনেক ক্ষতি করে বিক্রি করতে হবে।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আল মারুফ জানান, সরকারি নির্দেশনার বাইরে কোনো কিছু করার সুযোগ নেই। তবে সরকারি নিদের্শনা পেলে পশুর হাট চালু করার ব্যবস্থা করা হবে।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মাছুদার রহমান সরকার বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে আপাতত হাট চালু করা সম্ভব হয়নি। তবে ক্রেতারা গ্রামে গ্রামে খোঁজ নিয়ে যাতে পছন্দের পশুটি কিনতে পারেন যে জন্য বিভাগের কর্মকর্তা, কর্মচারী মাঠ কর্মীরা সক্রিয় রয়েছেন। প্রচারণাও চলছে। যেহেতু সময় আছে তাই ক্রেতারা আসবেন। শেষ পর্যন্ত ক্রেতা বিক্রেতা কারও কোনো অসুবিধা হবে না।