চালের ‘সর্বোচ্চ’ মজুদেও কমছে না দাম
এগ্রিবিজনেস
সরকারিভাবে চালের মজুদ ‘সর্বোচ্চ’ পর্যায়ে থাকলেও গত এক মাস ধরেই বাজারে চালের দাম বাড়তি।
আমনের ভালো ফলন আর সবশেষ বোরো মৌসুমে ধান উৎপাদনের রেকর্ড হলেও শনিবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে পুরনো চালের দাম কেজিতে অন্তত দুই টাকা করে বেড়েছে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ- টিসিবির হিসাবে গত একমাসে সব ধরনের চালের দাম গড়ে ৩ শতাংশ করে বেড়েছে। এক বছর আগের তুলনায় সরু চালের দাম বেড়েছে ৮ শতাংশ।
রাজধানীর নয়াটোলায় একটি মুদি দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভালো মানের সরু চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৬৮ টাকায় যা একমাস আগেও ছিল ৬৫ টাকা।আর বিআর ২৮ হিসাবে পরিচিতি মধ্যম মানের সরু চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৫৫ টাকায়। মাঝারি আকারের পাইজাম চালের দাম প্রতিকেজি ৫৫ টাকা।
কারওয়ান বাজারে জনতা রাইস এজেন্সির বিক্রেতা মোহাম্মদ রাসেল বলেন, “গত একমাস ধরে মিনিকেট ও নাজির শাইলের বাজার বেশি বাড়তি।”
তিনি বলেন, এ দুটো চালের ৫০ কেজির বস্তা ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বাজারে মিনিকেট চালের বস্তা এখন তিন হাজার টাকার নিচে নেই।
এ দোকানের মূল্য তালিকায় দেখা যায়, মিনিকেট চাল প্রতিকেজি ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, নাজিরশাইল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, বিআর ২৮ চাল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা, পাইজাম ৪৫ টাকা, চিনিগুড়া ৭৬ থেকে ৮৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মিরপুর-১ নম্বর সেকশনে চালের পাইকারি বাজার শাহ আলী মার্কেটের জননী রাইস এজেন্সির মহিউদ্দিন হারুন বলেন, পুরাতন মিনিকেট, পোলাও চাল ও নাজির চালের দাম বেড়েছে। একমাস আগেই দামটা বেড়ে গেছে।নতুন মৌসুমের নাজিরশাইল চাল প্রতিকেজি ৫৮ টাকা এবং পুরান মৌসুমের চাল ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে দাম বেড়েছে ২ টাকা করে।
বাজারে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৬ টাকা থেকে ৬২ টাকার মধ্যে। মিনিকেট চালের ৫০ কেজির বস্তার দামও ১০০ টাকা করে বেড়ে ৩ হাজার ১০০ টাকায় উঠেছিল। দুই মাস আগে ২ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হত মিনিকেট।
সম্প্রতি ঢাকায় ডি-৮ সম্মেলন উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে চালের দাম নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বলেছিলেন, চালের উৎপাদন প্রতিবছর বাড়ছে। বাজারে চালও আছে ‘পর্যাপ্ত’।
সরকারি হিসাবে দেশে খাদ্যের মজুদও সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। খাদ্যমন্ত্রণালয়ের গত ১১ জানুয়ারির তথ্য অনুযায়ী, খাদ্যশস্যের মোট মজুদ এখন ১৯ লাখ ৬৩ হাজার টন।এর মধ্যে চাল ১৫ লাখ ৯২ হাজার মেট্রিক টন, ধান ৩৬ হাজার মেট্রিক টন আর গমের মজুদ ৩ লাখ ৪৮ হাজার টন।
চলতি আমন মৌসুমে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৩ লাখ মেট্রক টন আমন ধান এবং ৫ লাখ মেট্রিক টন সিদ্ধ আমন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার। এর মধ্যে গত ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত ৪ লাখ ৩৪ হাজার টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে।
কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক জানিয়েছিলেন, গত বোরো মৌসুমে (২০২০-২১ অর্থবছর) ২ কোটি ৮ লাখ টন বোরো ধান উৎপাদিত হয়েছিল যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
একই সময়ে সব ধরনের খাদ্যের উৎপাদনও বেড়েছে। মোটা চাল উৎপাদন হয়েছে ৩ কোটি ৮৬ লাখ টন,গম ১২ লাখ টন, ভুট্টা ১৭ লাখ টন, আলু এক কোটি ৬ লাখ টন এবং পেঁয়াজের উৎপাদন এক লাখ টন বেড়ে ৩৩ লাখ টন হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতেও চালের দাম বাড়ছে কেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, দাম বৃদ্ধির বৈশ্বিক কারণ ছাড়াও একটা বড় কারণ হচ্ছে সম্প্রতি গমের দাম বেড়ে যাওয়া। গমের দাম বাড়লে চালেরও দাম বাড়ে।
“এখন গমের দাম চালের চেয়েও বেশি। যখন আটার দাম কম থাকে তখন মানুষ আটা খায়। এখন আটার দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে মানুষ আটা খাওয়া ছেড়ে দিয়ে চাল খাওয়া শুরু করেছে।প্রতি টন ২৫০ থেকে ৩০০ ডলারে গম আমদানি করা যেত কয়েক বছর আগে। এখন তা আমদানি করতে হচ্ছে ৪৫০ ডলারে।
টিসিবির হিসাবে দুই মাস ধরে আটার দাম বেড়েছে। এক বছর আগের তুলনায় আটার দাম বেড়েছে ২৪ থেকে ৩৮ শতাংশ। খুচরা বাজারে এখন খোলা আটা ৩৮ টাকা আর প্যাকেট আটা প্রতিকেজি ৪৫ টাকা।