ধরলায় নেই পানি, চলছে চাষাবাদ!
কৃষি বিভাগ
১৬টি নদ-নদী রয়েছে উত্তরের সীমান্তবর্তী এলাকা কুড়িগ্রাম জেলায়।তার মধ্যে ধরলা নদী অন্যতম। বছরের এই সময়টাতে ধরলাতে কোন পানি না থাকার কারনে জাগে ছোট-বড় অনেক চর। ইরি-বোরো বীজ লাগানো হয়েছে ধরলার অনেক স্থানে। কালের সাক্ষী এখন শুধু ধরলা। তবে ধরলা নদীতে তেমন কোন পানি না থাকায় ইরি-বোরো চাষাবাদ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। ফলে অনেকেই তীরবর্তী স্থানে সেচ পাম্প বসিয়ে লাগানো ক্ষেতে পানির ব্যবস্থা নিয়েছেন।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ও রিভারাইন পিপল’র পরিচালক ড. তুহিন ওয়াদুদ জানান, মাত্র ৫৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ধরলা নদীটি লালমনিহাট জেলার মোগলহাটের কর্ণপুর দিয়ে প্রবেশ করেছে। ক্রমান্বয় ফুলবাড়ী উপজেলা নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের গোরুকমন্ড দিয়ে প্রবেশ করেছে। মিলিত হয়েছে কুড়িগ্রাম সদরের মোগলবাসা এলাকায় ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গে। এ দীর্ঘতম ধরলার দুই ধারে জেগে উঠেছে অসংখ্য ছোট বড় দ্বীপচর। তার মধ্যে রয়েছে ফুলবাড়ী উপজেলার চর শিমুলবাড়ী. মেকলি চর, চর ধনিরাম, মরানদী, বাঘ খাওয়ার চর, চরবড়ভিটা, চর যতিন্দ্র নারায়ণ, জোৎকৃষ্টহরি, চর পেচাই, চর-বড়লই, কুলাঘাট, পেচাই, খোচাবাড়ী, রাঙ্গামাটি, গুয়াবাড়ীর ঘাট, চরগোরক মন্ডপ, চরখারুয়া, বোয়ালমারি ও বিলুপ্ত ছিটমহল বাঁশপেচাই, কুড়িগ্রাম সদরের জগমহনের চর, মাধবরাম, চরগ্রাম, সিতাইঝাড়, চরকৃষ্ণ পুর।
তিনি আরো জানান, চর্তুদিকে ধরলা বেষ্টিত এ দ্বীপ চর গুলোতে প্রায় ৩০ হাজার লোকের বসবাস রয়েছে। নদীতে নাব্যতা না থাকায় ইঞ্জিন চালিত নৌকা বা ডিঙ্গি নৌকা চলাচল সম্ভব হচ্ছে না। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কোমড় বেঁধে ধরলার দুই ধারে ইরি ক্ষেত লাগাচ্ছে কৃষক। প্রথমে ধরলার পানি দিয়ে ক্ষেত লাগানো হলেও পানি নিচে পড়ায় এখন মাঝে মধ্যে সেচ পাম্প বসানো হচ্ছে। অনেকেই আবার ধরলার মূল স্রোতে যে পানি রয়েছে সেখানেও ক্ষেত লাগার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
অথচ ১০৯ কোটি টাকা ব্যয়ে শেখ হাসিনা কুলাঘাট ধরলা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। তখন গভীর ছিল ৬০-৭০ ফুট। এখন সেখানে তার নিচেও ক্ষেত লাগাচ্ছেন কৃষক। তবে আগাম বর্ষা দেখা দিলে ক্ষেতের ধান উঠানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। এতে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়। তার পড়েও মনের আনন্দে ইরি-বোরো ক্ষেত লাগাচ্ছে কৃষকরা। ধরলায় বোরো চাষাবাদকারী সোনাইকাজী গ্রামের আ. হামিদ ও শাহালম মিয়া জানান, আগে ধরলার বুকে কোন ফসল উৎপাদন করা যায়নি। এখন কষ্ট করে ক্ষেত লাগানো হয়েছে। আবহাওয়া ভাল হলে এ ক্ষেত গুলো হতে অতিরিক্তি ফসল পাওয়া যাবে।
ফুলবাড়ী জেলে রমনি কান্ত, হরিস চন্দ্র ,লেংগা চন্দ্র বলেন শুকনো মৌসুম হওয়ায় এ সময় ধরলা নদীতে পানি থাকে না। পানি না থাকায় ছোট-বড় অনেক গুলো চর। তাই এখন নৌকাও নামানো যায় না, মাছও ধরা যাচ্ছে না। এতে করে কোন দিন মাছ পাই, আবার কোন দিন মাছ পাই না। মাছ পেলেও তা অতি সামান্য। যা বিক্রি করে ১৫০-২০০ টাকা আয় হয়। এ সামান্য আয় দিয়ে সংসাররে ব্যয় মেটানো ও ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ বহন করা অসম্ভব হয়ে পড়ছে।
ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার মাহবুবুর রশিদ জানান, ধরলার তীরবর্তী এলাকা গুলোতে চলতি বোরো মৌসুমে ১৮০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ধান লাগিয়েছেন কৃষক। আবহাওয়া ভাল হলে এ সব জমিতে অতিরিক্ত ৫শ মে. টন ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। আগে এ সব জমি অপরিত্যক্ত থাকতো। এখন অতিরিক্ত শ্রম দিয়ে কৃষকরা ক্ষেত লাগিয়েছেন।
দর্শনার্থী স্বপন সরকার ও শিক্ষার্থী ঐশি খাতুন জানান, আমরা সময়-সুযোগ পেলেই ধরলা নদীর অববাহিকায় নদী রক্ষা বাঁধে বেড়াতে আসি। ধরলায় পানি থাকলে এখানকার প্রকৃতি অনেক সুন্দর দেখায়। নদীতে পানি থাকলে আমরা নৌকায় চড়ে ঘুরতে পারি। এখন নদীতে পানি নেই, তাই ঘুরতে ভাল লাগছে না। হেঁটে পারাপার হওয়া যায়।