নিরাপদ খাদ্য: চাই শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন
মতামত-ফিচার
।।ফারজানা হক।।
নিরাপদ খাদ্য এবং মনোজগৎ শব্দ দুটি গভীর সম্পর্কযুক্ত, মনোজগতের পরিবর্তন, সৃষ্টিশীলতা, চাহিদা এবং অনুধাবন ছাড়া নিরাপদ খাদ্যের মত এত বৃহৎ একটি বিষয় কোনো ভাবেই কোনো দেশ এবং জাতির জন্য নিচিত করা সম্ভব নয়। পোলট্রি সাব-সেক্টর কৃষির উন্নয়ন ও জনগণের জন্য মাংস এবং ডিম উৎপাদনের মাধ্যমে জনগণের অপুষ্টি কমাতে এবং কৃষি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এটি বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ এবং প্রায় কয়েক মিলিয়ন লোকের জন্য প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এই উপ-খাতটি বাংলাদেশের জনগণের মূল প্রোটিন চাহিদার একটি বড় অংশ, তাছাড়াও অর্থনৈতিক দিক থেকে এর গুরুত্ত্ব প্রাণিসম্পদ খাতে অপিরিসীমম, প্রাণিসম্পদ খাতের ১৪% অবদান রাখে এবং দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বর্তমানে মুরগির মাংসই বাংলাদেশের মোট মাংস উৎপাদনের ৩৭% অবদান রাখে। দেশে মোট প্রাণী প্রোটিন সরবরাহের প্রায় ২২-২৭% পোলট্রি অবদান রাখে।
বলা হয়ছে যে এশিয়াতে, পোলট্রি এর সার মাছের জন্য খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয় যেখানে একটি সমন্বিত পদ্ধতির অংশ হিসাবে জলাশয়ের উপরে পোলট্রি স্থাপিত হয়, উদাহরণস্বরূপ, মাছ এবং হাঁস চাষ। পোলট্রি উন্নয়ন বাংলাদেশে পোলট্রি ও হাঁস-মুরগির পণ্য উৎপাদন ও বিপণনের মাধ্যমে যথেষ্ট কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।
নিরাপদ খাদ্য বলতে আমরা বুঝি সেই খাবার যাতে গ্রহণযোগ্য মাত্রায় দূষিত বস্তূর পরিমাণ থাকে যা খাদ্য বৃদ্ধি, প্রস্তুতি, প্রসেসিং, সংরক্ষণ, বিক্রয় বা পরিবেশনের যে কোনও সময়ে ঘটতে পারে। খাবারগুলি সাধারণত ফসল, পশুসম্পদ এবং মৎস সম্পদ থেকে এ পারে। নিরাপদ খাদ্য হল মানব ও প্রাণীর সুস্বাস্থ্যের পূর্বশর্ত। অনিরাপদ খাদ্য প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ এবং প্রাণীতে অসুস্থতা সৃষ্টি করে এবং বহু মৃত্যুর কারণ হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিগত দশকে প্রতিটি মহাদেশে খাদ্যজনিত রোগের মারাত্মক প্রকোপগুলি নথিভুক্ত করা হয়েছে এবং অনেক দেশে সম্পর্কিত অসুস্থতার হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলস্বরূপ, খাদ্য সুরক্ষা দেশীয়, আ লিক এবং আন্তর্জাতিক স্তরে জনস্বাস্থ্যের অগ্রাধিকার হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এছাড়াও বলা যায় উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এখনো খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ না হয়েও অনিরাপদ খাদ্য উৎপাদন এবং ব্যবহার করে দেশের অনেক ক্ষতি সাধন করছে।
নিরাপদ খাদ্য সাধারণ মানুষের, একটি স্বাধীন দেশের প্রতিটি মানুষের অধিকার, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মূল চালিকা শক্তি। কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি মানেই সে দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন নয়, আর্থিক উন্নয়নের পাশাপাশি ভবিষৎ প্রজন্মের নিরাপদ খাদ্য, সু-শিক্ষা ও জরুরী। সুতরাং যদি বলি আমার দেশের মাথা পিছু জনগণের যায় ২০০০ ডলার কিন্তু ১৫ বছরের নিচে শিশু মৃত্যু ক্যান্সার, এন্টিবায়োটিক রেসিসটেন্স এবং নবজাতকের মৃত্যু অন্নান্য সব দেশের চেয়ে বেশি তাহলে এই উন্নয়ন অবনতির চেয়েও খারাপ।
বাংলাদেশ শেখ মুজিবর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদল্যের একটি গবেষণায় বলা হয় ২০১০ এ শিশু ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৮০ যা ২০১১ তে গিয়ে দাঁড়ায় ৪০০ তে এবং ৪৫৫ ২০১২ তে। শিশুদের ক্যান্সার এর অনেক কারণের মাঝে একটি বড় কারণ অনিরাপদ খাদ্য , অনিরাপদ খাদ্য শুধু শিশু না তরুণ এবং যুব সমাজেকেও তরুণ বয়েসে বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভোগাচ্ছে। সতরাং এখন ই সময় সবার মনভাব পরিবর্তন করার এবং জাতিকে এবং নিজেকে নিরাপদ খাদ্য সম্পর্কে শুধু সচেতন না, স্ব স্ব জায়গায় নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশে অনেকদিন আগে থেকেই ফুড এন্ড এগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশান (এফ এ ও ) ইন্টারন্যাশনাল বেসরকারী সংস্থা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে সেফ ফুড এগ্রিকালচার নিয়ে। । বর্তমানে বাংলাদেশ এই শিশু অপুষ্টি দূর করতে প্রায় সক্ষম। যেখানে মুরগির মাংশ এবং ডিম এর ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।
বর্তমানে বাংলদেশে “ফুড সেফটি গভর্নেন্স ইন পোলট্রি সেক্টর” শিরোনামে একটি প্রকল্প চজঙকঅঝ প্রোগ্রাম এর সহযোগিতায় বিবিএফ, কেব এবং বিকাস নামে ৩টি সংস্থা বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ ফুড সেফটি অথরিটি এর সঙ্গে যৌথভাবে স্বল্প পরিসরে পাইলট আকারে কাজ করছে।
কিন্তু বাংলাদেশের এত বড় শিল্প এর সংরক্ষণে জাতীয় ভাবে কোনো প্রকল্প, ব্যবস্থাপনা , ট্রেইনিং প্রকল্প অথবা বিশেষ কোনো প্রোগ্রাম নেই যার সাহায্যে প্রান্তিক খামারি থেকে শুরু করে পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সবাই নিরাপদ পোলট্রি পণ্য উৎপাদনে সকল সুবিধা সহ শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে। খাদ্য বিশ্লেষণ, ভোক্তা সচেতনতা, খাদ্য জনিত অসুস্থতা নজরদারি, খাদ্য পরিদর্শন এবং প্রয়োগকরণ ইত্যাদি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো নির্দিষ্ট ফুড সেফটি নিয়ে কোনো ফলাফল দেখাতে পারেনি। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিএফএসএ এর কাছে ফুড সেফটি অথোরিটি হিসেবে খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে গভীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
প্রজেক্ট অফিসার, বীজবিস্তার ফাউন্ডেশন
MPH, MS in Microbiology, DVM
[email protected]