পেলিক্যানের সঙ্গী জোটেনি ৪ বছরেও
প্রাণ ও প্রকৃতি
বিশাল আকারের জলজ পাখি গ্রেট হোয়াইট পেলিক্যান। ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের হ্রদ ও সাগরের কাছাকাছি জায়গায় তাদের বসবাস। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এ পাখির আগমন ঘটে ২০১৪ সালে।
দর্শনার্থীদের বিনোদন তৈরির লক্ষ্যে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্ক প্রতিষ্ঠালগ্নে বিদেশি নানা প্রজাতির প্রাণীর সঙ্গে দুটি পেলিক্যান পাখি আনা হয়। ২০১৭ সালের প্রথম দিকে অসুস্থ হয়ে স্ত্রী পেলিক্যানটি মারা যায়। এরপর থেকেই একাকিত্ব শুরু হয়েছে পুরুষ পাখিটির। চার বছরেও সঙ্গী জোটেনি তার।
সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য মতে, জলের পাখি পেলিক্যান। বড় ঠোঁটের জন্য এরা বিখ্যাত। ঠোঁটের নিচে চামড়ার থলি থাকে, যার মধ্যে এরা খাবার জমিয়ে রাখে। মাছ এদের প্রধান খাদ্য। জলাশয়ের ধারে শিকারের সন্ধানে এদের বসার ভঙ্গি খুবই বৈচিত্র্যময়। এ পাখি প্রায় দেড় মিটার লম্বা। এদের পা ছোট। আঙুলগুলো পরস্পরের সঙ্গে চামড়া দিয়ে জোড়া লাগানো।
খাবার শিকারের সময় এরা পানিসহ মাছ উঠিয়ে নেয়। পরে মাছ নিজের থলিতে ঢুকিয়ে পানিগুলো ফেলে দেয়। পানিতে ভালো সাঁতারও কাটতে পারে এ পেলিক্যান। এ পাখি ঝাঁক তৈরি করে ভ্রমণ করে। এখন পর্যন্ত বিশ্বে আট প্রজাতির পেলিক্যানের দেখা মেলে। প্রজননের সময় এরা মূলত গাছে বাসা তৈরি করে। ১-৪টি ডিম দেয়।
২৮-৩৬ দিন পর্যন্ত ডিমে তা দিলে তা থেকে ছানার জন্ম হয়। বিশাল আকারের পাখি হলেও এরা ঘণ্টায় ৬০ মাইল বেগে উড়তে পারে।
গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্কের বন্যপ্রাণী পরিদর্শক আনিছুর রহমান বলেন, সাফারি পার্কের ধনেশ অ্যাভিয়ারিতে পেলিক্যানের বসবাস। প্রায় এক একর আয়তনের এ জায়গার চারদিক দিয়ে বেষ্টনী তৈরি করা। মূলত, এখানেই তার দিনগুলো অতিবাহিত হচ্ছে। কখনো একাকী চুপচাপ বসে থাকা, আবার কখনো উড়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা এসবই তার সারা দিনের রুটিনে লিপিবদ্ধ। এছাড়া সে দর্শনার্থীদের নানাভাবে কসরতও দেখায়। শিশুসহ অনেকেই দেশে অপরিচিত এ পাখিকে দেখে আলাদা বিনোদন পায়।
তিনি আরও বলেন, সঙ্গী স্ত্রী মারা যাওয়ায় পুরুষ এ পাখিকে দৈনিক দেড় কেজি করে ছোট রুই মাছ (নলা) দেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত এ পাখির তেমন কোনো অসুস্থতা তৈরি হয়নি। ভিনদেশি হলেও আশা করা যায় এ পাখিটি আমাদের পরিবেশের সঙ্গে ভালোভাবেই মিশে আছে।
সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তবিবুর রহমান বলেন, পেলিক্যানের সঙ্গীটি অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ার পর চার বছর ধরে একাকী রয়েছে পুরুষ পাখিটি। তার একজন সঙ্গী হলে প্রজননের একটি সম্ভাবনা ছিল। তবে সে উপায় যে এখনো তৈরি হয়নি। তবে টিকে থাকা এ সদস্যকে কেন্দ্র করে সাফারি পার্কের পর্যটকরা ভালোই বিনোদন পাচ্ছে।