বছরব্যাপী সবজি চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের
কৃষি গবেষনা
সবজি একসময় ছিলো কেবল মৌসুমি চাষের অন্তর্ভুক্ত। এখন আর এটি কোন মৌসুমি ফসল না। এখন কৃষকরা সারাবছর এর উৎপাদনের দিকে ছুটছেন। সে কারণে বাণিজ্যিকভাবে শাকসবজি চাষে শামিল হচ্ছেন গ্রামের শিক্ষিত যুবকরাও। ফলে চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী শাকসবজির উৎপাদন যেমন বাড়ছে তেমনি বাড়ছে চাষের পরিধিও।
আর এ কারণে চলতি মৌসুমে দেশজুড়ে শুধু শীতকালীন সবজির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা এক কোটি ৩৭ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।
জানা যায়, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট শীতকালীন (রবি মৌসুম), গ্রীষ্ম বা বর্ষা (খরিপ-১ মৌসুম) ও শরৎকালের (খরিপ-২ মৌসুম) জন্য বিভিন্ন উন্নত জাতের শাকসবজির বীজ উদ্ভাবন করায় স্থানীয়ভাবে চাষিদের বছরব্যাপী সবজি চাষে বেগ পেতে হচ্ছে না।
তা ছাড়া উপজেলা পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সরাসরি মাঠে চাষিদের পরামর্শ দেয়ায় বছরব্যাপী সবজি চাষ বাড়ছে। চলতি ২০২০-২১ মৌসুমে দেশে পাঁচ লাখ ৮২ হাজার ৯৬২ হেক্টর জমিতে (হেক্টর-প্রতি গড়ে ২৩.৪৪ মেট্রিক টন) সবজির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক কোটি ৩৬ লাখ ৬৫ হাজার ৭০৩ মেট্রিক টন, যা গত বছরের তুলনায় ছয় লাখ মেট্রিক টন বেশি।
গত বছর দেশব্যাপী পাঁচ লাখ ৭৬ হাজার ৮৫৪ হেক্টর জমিতে (হেক্টর-প্রতি গড়ে ২২.৬৫ মেট্রিক টন হিসাবে) উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে এক কোটি ৩০ লাখ ৬৫ হাজার ৭৪৩ মেট্রিক টন। সেখানে শুধু চট্টগ্রাম জেলাতেই গত বছর উৎপাদন হয়েছে ২৭ হাজার ৭৬ হেক্টরে (প্রতি হেক্টরে গড়ে ২৪ মেট্রিক টন হিসাবে) ছয় লাখ ৪৯ হাজার ৮২৪ মেট্রিক টন সবজি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত মৌসুমে চট্টগ্রাম অঞ্চলে (পাঁচ জেলায়) ৫০ হাজার ৮০৯ হেক্টর জমিতে (হেক্টর-প্রতি ২২.৬০ মেট্রিক টন হিসাবে) ১২ লাখ ১৬ হাজার ১১০ মেট্রিক টন হরেক রকম সবজি উৎপাদন হয়েছে বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক এ কে এম মনিরুল আলম।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর চট্টগ্রাম জেলার উপপরিচালক আকতারুজ্জামান জানান, গত বছর জেলায় প্রায় ২৭ হাজার হেক্টর জমিতে শাকসবজি চাষ হয়েছে। এ বছর সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছয় লাখ ৪৯ হাজার ৮২৪ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা করছেন তিনি। তিনি বলেন, শীতকালীন শাকসবজির মধ্যে এখনো শুধু সবজি তুলছে চাষিরা।
এ দিকে গত বছর দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ জেলাজুড়ে গ্রীষ্মকালেও শীতকালীন শাকসবজিতে ভরপুর ছিল বাজার। যে কারণে মহামারী করোনাভাইরাসকে ছাপিয়ে রমজানে এসে ২০ টাকার বেগুন এক লাফে ৮০ টাকার উপরে উঠেছিল। একই সময়ের সাত টাকার টমেটো ২০ টাকায় এবং ২০ টাকার মুলা ৪০ টাকায় বিক্রি হয়।
এ কারণে বছরজুড়ে শাকসবজির চাহিদা বেশি থাকায় উৎপাদিত শাকসবজির দামে খুশি ছিল চাষিরা। এ বছর মার্চের শেষ প্রান্তে সবজির দাম কিছুটা কম থাকলেও একই সবজি রমজান শুরুর আগে গত বছরের মতো দাম বাড়বে এমন প্রত্যাশা এ অঞ্চলের সব চাষি ও পাইকারি-খুচরা সবজি ব্যবসায়ীদের।