বাঙ্গিকে নিয়ে তর্কের শেষ নেই, দিনশেষ বাঙ্গি ভক্তের অভাব নেই!
কৃষি বিভাগ
।।সুলতান মাহমুদ আরিফ।।
বাঙ্গিকে বলা চলে একটি রাজকীয় ফল বটে। কারণ এই বাঙ্গির চাষ নিয়ে ধারণা করা হয় এটির জন্ম ইরান বা আফগানিস্তানে। আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়াতেও এই ফলের চাষ হয় ব্যাপক। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সোস্যাল মিডিয়াতে ব্যাপক তোলপাড় এই বাঙ্গি আর তরমুজ নিয়ে। আমরা খাদকরা যতই তোলপাড় করি বাঙ্গি বড় নাকি তরমুজ বড় এটা নিয়ে। কিন্তু ঠিকই ভ্যান গাড়িতে দেখা যায় তরমুজ আর বাঙ্গির কত অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। দেখে মনে হবে না এদের নিয়েই চলছে সোস্যাল মিডিয়াতে আলোচনা আর সমালোচনার ঝড়।
কেউ বলে বাঙ্গি গরিবের খাবার আর তরমুজ হলো বড় লোকের খাবার। এটা নিয়ে চলছে ভার্সুয়াল যুদ্ধ। কেউবা নিরপেক্ষতার দিক থেকে বলে বাঙ্গি আর তরমুজের মাঝে যদি হয় গরিব আর বড় লোক সম্পর্ক, তাহলে দুটোর দাম এক হয় কিভাবে। বাজারে তরমুজের দাম যা আবার বাঙ্গির দামও তা। উভয়টা বাজারে বিক্রি হচ্ছে কেজি ৫০ টাকা করে। আবার একই ভ্যানে তালমিলিয়ে আছে দু‘জন পরম আদরে। তাহলে কেন এত বিভেদ! প্রশ্ন তুলছেন নিরপেক্ষ সমাজ।
মাহমুদুল হাসান নামক একজন পোস্ট দিয়েছেন, বাঙ্গি ছাড়া আমার ইফতার চলে না…. বাঙ্গির মতো উপকারী ফল দ্বিতীয়টি মিলে না। খাও বাবা খাও… বাণীতে জনৈক আন্টি🙃
তুহিন পারভেজ বিপ্লব নামক একজন ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন, তুই ভালো জমিতে জন্মানোর চান্স পাস নাই, তাই তুই বাঙ্গি!
— তরমুজ।
মাশরিকুল আলম নামক একজন পোস্ট দিয়েছেন, বয়ফ্রেন্ডের কথায় কতোকিছু মুখে নেয় আবার বাপ-মা বাঙ্গি খাইতে কইলেই সমস্যা৷
রাকিব নাম একজন আক্ষেপ করে বলেন, কেও ই বাঙ্গি খায় না তাইলে এত বাঙ্গি যায় কই??
সোহাগ নামক একজন পোস্ট দিয়েছেন, বাঙ্গি আমার অপছন্দের একটা ফল। তবের বাঙ্গির ফ্লেবারটা অসাধারণ। এবার ভাবছি বাঙ্গি কিনবো এবং জুস বানিয়ে খাবো। জুস খাওয়ার পর আমার অনুভূতি কি, তা জানাবো।
একজনতো কড়াকড়ি জানিয়ে দিয়েছেন- ওগো তুমি যদি বাঙ্গি পছন্দ না করো তবে, শুনে রাখো তোমার আর আমার সম্পর্ক এখানেই শেষ।
এছাড়াও এটা নিয়া গত কয়েকদিন ধরে ফেসবুকে পক্ষে-বিপক্ষে নানা আলোচনা আর সমালোচনা।
তবে, যে যায় বলেন না কেন, বাঙ্গির চাহিদা কিন্তু কম না। বাজারে হরহামেশ চলছে বাঙ্গির বেচা-কেনা। আজ বাড্ডাতে তরিকুল নামক এক তরমুজ এবং বাঙ্গি বিক্রেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি বাঙ্গি এবং তরমুজ উভয়টা সমান দামেই বিক্রি করছেন।বরং সুযোগ পেলে বাঙ্গি ৫টাকা বেশিও বিক্রি করছেন বলে জানান তিনি।
আরেকজন ব্যবসায়ী জানান, দু‘টোর চাহিদা ই অনেক। সবাই বাঙ্গিও নিচ্ছে আবার তরমুজ নিচ্ছে। দিনশেষে মাশাআল্লাহ আমার বাঙ্গি এবং তরমুজ কোনটায় থাকে না।
অতএব বাঙ্গিকে নিয়ে যারা গরিব বলে পোস্ট দিচ্ছেন তারা বাজার ঘুরে এসে পোস্ট দেয়া দরকার। বাজারে গেলেই তবে বুঝা যায় বাঙ্গি আর তমুজের কি মিলবন্ধন আর সমদামের অবস্থান।
বাঙ্গিকে নিয়ে যতই হাস্যকর পোস্ট কিংবা আলোচনা আর সমালোচনা বয়ে যাক না কেন, বাঙ্গি প্রেমিকরা বাঙ্গির ভালোবাসা থেকে এক চুলও নড়বে না বলে অনেকেই জানিয়েছেন সোস্যাল মিডিয়াতে। বাঙ্গিযে কেবল মৌসুমী ফসল এমনটি নয়। বাঙ্গিতে আছে অনেক গুণাগুণ।
কাঁচা বাঙ্গি সবজি হিসেবে রান্না করে খাওয়াতে আছে অসাধারণ মজা। বাঙ্গিতে আছে আমিষ, ফ্যাটি অ্যাসিড ও খনিজ লবণ।
এছাড়া মূত্রস্বল্পতা কিংবা ক্ষুধামান্দ্য দূর করতে পারে এই বাঙ্গি। বাঙ্গিকে বলা হয় এটি অনেকটা শসাগোত্রীয় ফল। কারণ এটির গাছ দেখতে অনেকটা শসাগাছের মতো লতানো। এটি একটি স্বতন্ত্র স্বাদের ফল।এই ফলের ওজন এক থেকে চার কেজি পর্যন্ত হতে পারে।
জানা যায়, আমাদের দেশে প্রধানত বেলে ও এঁটেল বাঙ্গি নামক দু‘জাতের বাঙ্গি দেখা যায়। বেলে বাঙ্গির শাঁস নরম। খোসা খুব পাতলা, শাঁস খেতে বালু বালু লাগে। তেমন মিষ্টি নয়। অন্যদিকে, এঁটেল বাঙ্গির শাঁস কচকচে, একটু শক্ত এবং তুলনামূলকভাবে মিষ্টি।
আমিরুল আলম খান তার ‘বাংলার ফল’ বইয়ে উল্লেখ করেছেন, প্রতি ১০০ গ্রাম বাঙ্গি থেকে পাওয়া যায় ২৫ ক্যালরি পুষ্টিগুণ। ভেষজ গুণ আছে বাঙ্গির।
তবে সবচেয়ে মজার বিষয় হলো এ ফলে কোনো চর্বি নেই। যাদের ওজন নিয়ে বিশেষ চিন্তা তারা এ ফল বেশি বেশি খেতে পারেন নির্দ্বিধায়। বরং দেহের ওজন কমাতে, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে বাঙ্গির ভূমিকা অপরিহার্য।
আর বাঙ্গির এত গুণাগুণ দেখে আমার মনে হয় যারা ঝড় তুলছেন বাঙ্গির বিপক্ষে তারা নিরবে, লুকিয়ে কিংবা রাতের আঁধারে ঠিকই বাঙ্গির প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন হরহামেশ। তা না হলে সত্যি- বাজারের এত বাঙ্গি যাচ্ছে কই!!?