মৎস্য ও পোল্ট্রি ফিডের বিকল্প ‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই’
পোলট্রি
প্যারোট পোকা হাঁস-মুরগি ও মাছের প্রাকৃতিক খাবার। এই পোকা প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হচ্ছে ‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই’ থেকে। অল্প খরচে এই পোকা উৎপাদন করে হাঁস-মুরগি ও মাছের খাবারের চাহিদা মেটানো সম্ভব।
এতে খামারিদের বেশি দামে বাজার থেকে ফিড কিনতে হবে না। তারা নিজেরাই পোকা উৎপাদন করতে পারবেন।
রংপুর বিভাগের কয়েকটি স্থানে গড়ে উঠেছে পোকার খামার। বিশেষ করে শিক্ষিত যুবকরা ‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই’ থেকে প্যারোট পোকা উৎপাদনে দেখছেন কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ।
পোকার খামারিরা জানান, ‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই’ থেকে প্যারোট পোকা উৎপাদন আমেরিকার সংস্কৃতি। চলতি বছর রংপুর বিভাগের কয়েকটি স্থানে যুবকরা এই পোকা উৎপাদন শুরু করেছেন।
বর্তমানে স্বল্প সংখ্যায় উৎপাদিত হচ্ছে এই পোকা। তবে দিনদিন এর পরিধি বাড়ছে। ‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই’ থেকে প্যরোট পোকা উৎপাদন বৃহৎ আকার ধারণ করলে এটি এক দিকে যেমন অনেক মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে অন্যদিকে হাঁস-মুরগি ও মাছের খাদ্য চাহিদা পূরণ হবে। এখান থেকে প্রস্তুত হবে বিপুল পরিমাণে জৈব সার।
ময়লা-আবর্জনা, তরকারির অবশিষ্টাংশ, মুরগির বিষ্ঠা ও খৈলের সংমিশ্রণে দুর্গন্ধযুক্ত খাদ্যে তৈরি হয় ‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই’। প্রত্যেক ফ্লাই ৯০০ থেকে ১ হাজার পিউপা দিয়ে মারা যায়। এসব পিউপা একটি পাত্রে নিয়ে দুর্গন্ধযুক্ত খাবারে রাখা হয়। ১৪-১৬ দিনের মধ্যে এসব পিউপা থেকে জন্ম নেয় প্যারোট পোকা।
‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই’ থেকে প্যারোট পোকা উৎপন্ন করতে দরকার মশারি নেট, কয়েকটি পাতিল ও কয়েকটি কাঠের টুকরো। একজন খামারি বড় পরিসরে এই পোকা চাষ করলে প্রতিদিন ১০০ থেকে ৫০০ কেজি পর্যন্ত পোকা উৎপন্ন করে লাভবান হতে পারবেন।
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার থেতরাই গ্রামের স্নাতক শিক্ষার্থী নুর আমিন বলেন, ‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০ কেজি পোকা উৎপন্ন করছি। এসব পোকা মুরগির খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পোকার উৎপাদন দিনদিন বাড়ছে। আগামী ৪-৫ মাস উৎপাদিত পোকা দিয়েই মুরগির খাবারের চাহিদা মেটানো যাবে।’
লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রামের কলেজ পড়ুয়া নিবারণ চন্দ্র রায় বলেন, ‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই থেকে পোকা উৎপাদন করা সহজ। রংপুরের এক খামারির কাছে ৩ দিন দেখেই এ পদ্ধতি শিখে ফেলেছি। এখন ২ কেজি ফ্লাই দিয়ে পোকা উৎপাদন করছি।’
‘ভবিষ্যতে উৎপাদিত পোকা দিয়ে নিজের পুকুরে মাছ চাষ করার কথা ভাবছি,’ যোগ করেন তিনি।
রামদেব গ্রামের মাস্টার্স শিক্ষার্থী দীপ্ত কুমার মোহন্ত বলেন, ‘৩ সপ্তাহ আগে ১ কেজি “ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই” দিয়ে ছোট পরিসরে “পোকার খামার” শুরু করি। ৩ সপ্তাহে ৫ কেজি “ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই” উৎপাদন করি। খামারটি বড় করতে কাজ করছি।’
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামিম আশরাফ বলেন, ‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই থেকে প্যারোট পোকা উৎপাদন করার পর বর্জ্যের যে অংশ অবশিষ্ট থাকে তা দিয়ে তৈরি হচ্ছে উৎকৃষ্টমানের জৈব সার। পোকার খামারের সঙ্গে অনেকে যুক্ত হচ্ছেন। ধীরে ধীরে এর পরিধি বাড়ছে।’