লাভ-লসে ভেঙ্গে না পড়া নোয়াখালীর খামারী আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ
পোলট্রি
স্বাবলম্বী হওয়ার সুবাদে বাবার করা খামারকে আবারো তৈরি করতে কাজ করছেন নোয়াখালী জেলার চাটখিলের আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ। “যে মুরগি আমরা খাই তা কেউ না কেউ তো পালন করেছে”, আর সেই পালনকারীর কাতারে থেকে দেশকে আরো সম্মৃদ্ধ করার প্রয়াসে পোল্ট্রি খামারসহ বিভিন্ন উদ্যোক্তামূলক কাজে নামেন তিনি। আর পোল্ট্রি খামার করতে গিয়ে তিনি এগ্রিভিউ২৪.কম’কে একান্ত সাক্ষাৎকারে জানান নানান সমস্যা আর সম্ভাবনার কথা। এগ্রিভিউ২৪.কম’কে দেয়া সাক্ষাৎকারাটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো ।
এগ্রিভিউ২৪.কমঃ খামারের শুরু কবে থেকে?
আব্দুল্লাহ আল মাহফুজঃ আমি যে খামার নতুন শুরু করেছি এমনটি নয়। ২০০০ সালে আমার বাবা প্রথম খামার শুরু করেন, খামার থেকে লাভ করেছেন বেশ। তখন আমি দাখিলে পড়ি। বাবা বিদেশ যাওয়ার পর সেই খামার বন্ধ থাকে। ২০১৯ সালে আমি আবার খামার শুরু করি।
এগ্রিভিউ২৪.কমঃ কতটি মুরগির বাচ্চা দিয়ে খামার শুরু করলেন?
আব্দুল্লাহ আল মাহফুজঃ আমি প্রথম প্রায় ৪৩ হাজার টাকায় ১৫‘শ বাচ্চা দিয়ে ২০১৯ সালের অক্টোবরে খামার শুরু করি। আলহামদুলিল্লাহ, প্রথম শেডেই আমি ত্রিশ হাজার টাকা লাভ করি। তারপর আরেক শেডে ৫০ হাজার টাকার মত লাভ করলেও ২০২০ সালে আমার লসের অংকটা একটু বেশি গুনতে হয়। আমি প্রায় তিন লক্ষ টাকার মত লস করি।
এগ্রিভিউ২৪.কমঃ এই লসের কারণ কি বলে আপনি মনে করেন?
আব্দুল্লাহ আল মাহফুজঃ করোনার কারণে অনেকটা লসে পড়তে হয়। তার উপর ছিলো সিন্ডিকেট বানিজ্য। সিন্ডিকেট বলতে বাচ্চা যারা উৎপাদন করে আবার তারাই খাদ্য উৎপাদনও করে আবার মুরগিও তারাই উৎপাদন করে। এতে করে একজন প্রান্তিক খামারির চাইতে তাদের উৎপাদন খরচ অনেক কম পড়ে। অন্যদিকে তারাই আবার মুরগির বাজার মূল্য নির্ধারণ করে। ফলে বাচ্চা, খাদ্য এবং একই সাথে মুরগী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উৎপাদন ব্যায় অনুযায়ী বাজার মূল্য নির্ধারণ করায় প্রান্তিক খামারিগন ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হন, প্রান্তিক খামারিগন আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন।
এগ্রিভিউ২৪.কমঃ ২০২১ সালে ব্যবসা কেমন যাচ্ছে?
আব্দুল্লাহ আল মাহফুজঃ ২০২১ সালের এসে প্রথম ব্যাচ ভালো করতে পারি নাই। শীতের কারণে আবার নানারকম রোগের কারণে প্রায় ২০ হাজার টাকার মত লস দিয়েছি। তারপর ভালো মন্দ মিলিয়ে যাচ্ছে ।
এগ্রিভিউ২৪.কমঃ একজন খামারী কিভাবে লাভবান হতে পারবে বলে আপনি মনে করেন?
আব্দুল্লাহ আল মাহফুজঃ একজন খামারীর লাভ করতে হলে প্রথমত বাচ্চার দাম কমাতে হবে। একটা খামারের ৭০-৭৫% খরচ ধরা হয় খাদ্যে। তাই খাদ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। বাজারের অন্যান্য দ্রব্যের ন্যায় মুরগির দামেরও একটা স্থিতিশীল পরিস্থিতি থাকতে হবে। হুট করে বাচ্চার দাম, খাদ্যের দাম বাড়ানোর প্রবণতা কমাতে হবে। একটা স্থিতিশীল বাজার মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। যাতে বাচ্চা উৎপাদনকারী, খাদ্য উৎপাদনকারী এবং খামারি ক্ষতিগ্রস্ত না হয় আবার জনগণকেও উচ্চমূল্যে মুরগী কিনতে না হয়। প্রয়োজনের তুলনায় অধিক বাচ্চা উৎপাদন কমাতে হবে। আবার বাজারে কেবল বাচ্চার দাম কমালেই হবে না। বাচ্চার সাথে সাথে তার প্রাসঙ্গিক সব কিছুর দাম কমাতে হবে। এক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক একটা কমিটি গঠন করা উচিত। যারা বাজার মনিটরিং করবে।
এগ্রিভিউ২৪.কমঃ করোনায় সরকার থেকে কোন সহযোগিতা পেয়েছেন?
আব্দুল্লাহ আল মাহফুজঃ করোনায় সরকার খুব ভালো একটা কাজ করেছে। আমাদের মত খামারিদের জন্য প্রনোদনার ব্যবস্থা করেছে । অনেকেই বলে যে তারা কোন টাকা পায়নি কিন্তু আমি প্রণোদনার টাকা পেয়েছি। আমি প্রায় ২৩ হাজার টাকা পেয়েছি সরকার থেকে। সরকারের এই উদ্যোগের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই ।
এগ্রিভিউ২৪.কমঃ পোল্ট্রির খামার দিয়েই কি প্রতিষ্ঠিত হবেন ?
আব্দুল্লাহ আল মাহফুজঃ পোল্ট্রি নিয়ে অনেক পরিকল্পনা আছে। আবার মাছ, গরু, দুগ্ধজাত দ্রব্য নিয়েও কাজ করার ইচ্ছা আছে। এসবের উপরে আমি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর এর বিভিন্ন প্রশিক্ষণের আওতায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছি। ব্যক্তি পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও প্রশিক্ষণ নিয়েছি। এ ছাড়া উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্প থেকেও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। আমার ছোট আরো দুই ভাই আছে তারাও লেখাপড়ার পাশাপাশি যুব উন্নয়নসহ ব্যক্তিকেন্দ্রিক নানান প্রতিষ্ঠানে গরু মোটাতাজা করন, গাভী পালন, দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন, মৎস্য পালন সহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহন করেছে। মূলত আমরা খামারিরা ব্যক্তিগত উদ্যোগেই খামার করি। এই শিল্পকে এগিয়ে নিতে সরকারের অনেক পরিকল্পনা আছে। যদিও তা যথাসময়ে প্রান্তিক খামারিদের কাছে এসে পৌঁছায়না। সরকারি সুবিধাগুলো যদি যথাসময়ে প্রান্তিক খামারিদের কাছে এসে পৌঁছায় তা হলে এই শিল্প আরো এগিয়ে যাবে বলে আমি মনে করি। এতে জাতীয় চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি করার সুযোগে সৃষ্টি হবে। সুযোগ সুবিধা এবং নিজেরর দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে খামার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ইচ্ছা আছে ।