হাতিসহ বন্যপ্রাণী হত্যায় বন দখলদাররা সম্পৃক্ত: বিএনসিএ
প্রাণ ও প্রকৃতি
সাম্প্রতিক সময়ে হাতিসহ বন্যপ্রাণী হত্যায় বনভূমিতে স্থানীয় অবৈধ বন দখলদারীদের সম্পৃক্ততা পেয়েছেন পরিবেশবাদীরা। গত ৬ থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত ১৪ দিনের ব্যবধানে পাঁচটি বন্যহাতি হত্যার ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম অঞ্চলে তিনটি ও শেরপুরে দুটি হাতি হত্যা করা হয়।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের তথ্য বলছে, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত ৪৩টি হাতির মৃত্যু হয়েছে। এ তিন বছরে নয়টি হাতি হত্যা করা হয়েছে বৈদ্যুতিক তারের ফাঁদ পেতে।
গত নভেম্বরে শেরপুরসহ দেশজুড়ে একাধিক হাতিসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী হত্যার ঘটনার কারণ উদঘাটনে ছায়া তদন্তে নামে বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোট (বিএনসিএ)। এরপরই হাতি হত্যার সঙ্গে জড়িতদের তথ্য পায় পরিবেশবাদী এ সংস্থাটি।
শনিবার (১৮ ডিসেম্বর) হাতি হত্যায় স্থানীয় অবৈধ বন দখলদারীদের সস্পৃক্ততার কথা জানান বিএনসিএ’র আহ্বায়ক ও ছায়া তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার।
বন্যপ্রাণী হত্যার কারণ খুজতে শেরপুর ও কক্সবাজারে ছায়া তদন্ত শুরু হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তদন্তের অংশ হিসেবে শেরপুরে হাতি হত্যার ঘটনাস্থলসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন সংস্থাটির প্রতিনিধিরা। এসময় তারা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, বন কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয়দের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
ড. আহমদ কামরুজ্জামান বলেন, বন, বনভূমি ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় বন বিভাগ ক্রমাগতভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। বনের জায়গায় অবৈধ দখলই হাতিসহ বন্যপ্রাণীদের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাচাই-বাছাইয়ে হাতি হত্যায় বনে অবৈধ বসবাসকারীদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে। এ কাজে সহযোগিতার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের দায় কোনো অংশে কম ছিল না। তারা বনের জমিতে অবৈধ দখলদারদের বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে সুস্পষ্টভাবে আইন লঙ্ঘন করেছে। এত আলোচনা-সমালোচনার পরও সংরক্ষিত বন থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ সরানো হয়নি। ফলে এসব ঘটনার দায় বিদ্যুৎ বিভাগ কোনোভাবে এড়াতে পারে না।
তিনি বলেন, বন বিভাগ হাতি নিয়ন্ত্রণে প্রকল্পের মাধ্যমে সোলার ফেন্সিং পদ্ধতি সংযুক্ত করেছিলো। এখন সেটির কোনো কার্যকারিতা নেই। তারা বরারবই প্রকল্পের মাধ্যমে বন-বন্যপ্রাণী রক্ষার চেষ্টা করে। তবে প্রকল্প শেষ হলে বনও অনিরাপদ হয়ে পড়ে। বনে হাতির খাদ্য সংকটের কারণেও সংঘাত বেড়েছে।
জনসচেতনতার নামে নানা সময়ে প্রকল্পের টাকা ব্যয় হলেও বন্যপ্রাণী রক্ষা সংক্রান্ত তেমন জ্ঞান জনগণের মধ্যে দেখা যায়নি বলেও মনে করেন ড. কামরুজ্জামান। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে হাতি হত্যার ঘটনাগুলোর বিচার বিভাগীয় তদন্তের ব্যবস্থা এবং হাতি হত্যায় জড়িতদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি৷
অন্যদিকে বনের জায়গায় সাধারণ মানুষের বসবাসই বন উজাড় এবং বন্যপ্রাণীর জন্য সবচেয়ে বেশি হুমকির কারণ হচ্ছে বলে মনে করছেন ছায়া তদন্ত কমিটির প্রধান।