হালদার মাছের ডিম সংগ্রহে চলছে প্রস্তুতি
মৎস্য
এপ্রিল-মে এই দু‘মাসে মাছের ডিম ছাড়ার ভর মৌসুম। এসময় বজ্রসহ ভারী বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢল নামে। তখন হালদা নদীতে কার্প জাতীয় মা-মাছ ডিম ছাড়ে। তাই বংশ পরম্পরায় অভিজ্ঞ হালদাপারের ডিম সংগ্রহকারীদের ব্যস্ততার সীমা নেই। চলছে নানান কর্মযজ্ঞ। কেউ নতুন নৌকা তৈরি করছেন আবার কেউ মেরামতে ব্যস্ত। কেউ কেউ মাটির কুয়া তৈরি করছ্নে ডিম থেকে রেণু তৈরির জন্য।
বৈশ্বিক মহামারির মধ্যেও হালদা নদীর পাড়ের ডিম সংগ্রহকারীদের প্রস্তুতি এভাবেই এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে নদীতে মা-মাছের আনাগোনা বেড়েছে। এখানে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউশ মাছের নিষিক্ত ডিম আহরণ করেন জেলেরা। এরপর সেই ডিম কুয়াতে রেণু করা হয়। তারপর রেণু থেকে তৈরি হয় পোনা। হালদার প্রাকৃতিক মাছের পোনা দ্রুত বড় হওয়ায় মাছচাষিদের কাছে কদর বেশি।
ডিম সংগ্রহকারী একজন জানান, প্রতি বছর এপ্রিল ও মে মাসে মা-মাছ ডিম ছাড়ে। এ সময়টা আমাদের জন্য অনেক আনন্দের। আগ্রহ আর উদ্দীপনার শেষ থাকে না। কখন মা-মাছ ডিম ছাড়বে। হালদাপাড়েই আমাদের বেশি সময় কাটে। ডিম সংগ্রহের জন্য আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে। নতুন নৌকা, পুরাতন নৌকাগুলো ভালোমতো মেরামত করছি। মাছের পোনা সংগ্রহ করার জন্য কুয়া তৈরি করতেছি। সব মিলিয়ে আমরা ব্যস্ত সময় পার করছি।
গত বছর ২২ মে মা-ডিম ছেড়েছিল। বাংলা বছরের চৈত্র-বৈশাখ মাসে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হলে এবং ঢলের প্রকোপ বাড়লে নদীতে মা-মাছ ডিম ছাড়ে। গত বছর ২৫ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করে রেকর্ড সৃষ্টি করেছিল।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা গবেষক ড. মঞ্জুরুল কিবরীয়া জানান, হালদায় মাছ ডিম ছাড়ার এখন ভরমৌসুম। তাই আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। আশা করি অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর একটি ভালো ফালাফল আসবে।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রহুল আমিন জানান, প্রজনন মৌসুম সামনে রেখে মা-মাছ শিকারিরা তৎপর। তাই আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। প্রতিদিন আমাদের অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। সারাবছর নদী থেকে মাছ শিকার নিষিদ্ধ থাকা, নিয়মিত অভিযানে অবৈধ জাল জব্দ, বালু উত্তোলন বন্ধ, ড্রেজার পরিচালনা ও ইঞ্জিন চালিত নৌকা বন্ধ থাকায় মা-মাছের নিরাপদ বিচরণ অনেকটা নিশ্চিত হয়েছে বলে তিনি জানান।