গাভির ওলান ফোলা রোগ প্রতিরোধের উপায়
প্রাণিসম্পদ
বেকারত্ব দূর করতে গাভি পালনের দিকে এখন ঝুঁকছেন অনেকেই। তবে গাভি পালন করতে গিয়ে অনেক খামারি বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এর মধ্যে রয়েছে গাভির ওলান ফোলা রোগ। এটি এক ধরনের মারাত্মক ব্যাধি। ওলান ফোলা রোগ গাভি এবং বাচ্চার জন্য খুবই ক্ষতিকর। বিভিন্ন প্রকার জীবাণু দ্বারা গাভি ওলান ফোলা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। দ্রুত উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে গাভির ওলান আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এ রোগ একটি গাভির যে কোনো সময় হতে পারে। তবে বাছুর প্রসবের পরেই গাভি বেশি আক্রান্ত হয়।
গাভির ওলান ফোলা রোগ বিভিন্ন প্রকারের ব্যাকটেরিয়া, ফাংগাস, মাইকোপ্লাজমা ও ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়। যদি সেডের মেঝে দীর্ঘ সময় স্যাঁতস্যাঁতে ওভেজা থাকে, ওলানের বাঁট দূষিত মেঝের, সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে অথবা দুধ দোহনকারীর হাত, দুধ দোহনের যন্ত্রের মাধ্যমে জীবাণু সরাসরি ওলানে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
কারণ গাভি যখন শুইবে তখন তার ওলান দিয়ে জীবাণু ঢুকবে। সেই থেকে ওলান ফুলে যেতে পারে। এজন্য স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে রাখার কোনো বিকল্প নাই। ওলানে বা বাঁটে আঘাতজনিত ক্ষত, ক্ষুরারোগের ফলে সৃষ্ট ক্ষত বা দীর্ঘ সময় ওলানে দুধ জমা থাকলেও এ রোগ হতে পারে। বাঁটের মধ্যে কোনো শলা বা কাঠি প্রবেশ করালেও গাভি এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
গাভির ওলান ফোলা রোগ প্রতিরোধের উপায়
এ রোগে আক্রান্ত হলে গাভির ওলান ফুলে শক্ত ও গরম হয়। লাল বর্ণ হয়ে যায়। কখনও পুঁজের মতো বা রক্ত মিশ্রিত হয়। কখনও কখনও দুধের পরিবর্তে টাটকা রক্ত বের হয়। ওলানে ব্যথা হয়। দুধ কমে যায় এমনকি বন্ধও হয়ে যায়।
তীব্র রোগে ওলান হঠাৎ করে লাল, শক্ত ও ফুলে যাবে। হাত দিয়ে স্পর্শ করলে গরম অনুভূত হবে। ওলানে হাত বা কোনো কিছুর হালকা আঘাত লাগলে প্রচণ্ড ব্যথা থাকে। ওলানের সামনে পানি জমে যায়। গায়ে জ্বর থাকে। পানির মতো দুধ, পুঁজ বা রক্তযুক্ত দুধ বের হয়। ওলানে পচন ধরতে পারে। দুধ কালো কাপড়ে ছাঁকলে জমাট বাঁধা দুধ দেখা যায়। এমন কি বাছুরকেও দুধ দেয় না। দুধের রং লাল বর্ণ হয়ে যায়। দুধের মধ্যে ছানার মতো কিছু জমে থাকতে পারে। গাভির খাদ্য গ্রহণে অরুচি দেখা দেয়। অনেক সময় আক্রান্ত ওলানে গ্যাংগ্রিন হয়ে খসে যায়। গাভীর মৃত্যুও হতে পারে।
খুব দ্রুত রোগ সনাক্ত করে চিকিৎসা প্রদান করতে হবে। অ্যান্টিবায়োটিক প্রদান করতে হবে। এতে জেন্টামাইসিন ও কিটোটিফেন জাতীয় ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে। এতে অনেক ভালো ফল পাওয়া যায়। ১২ ঘণ্টার মধ্যে এর চিকিৎসা করতে হবে। এর বেশি দেরি হলে এ রোগের তীব্রতা বৃদ্ধি পাবে। তখন আর চিকিৎসা করে ফেরত পাবে না। অভিজ্ঞ প্রাণিচিকিৎসকের পরামর্শক্রমে যেসব চিকিৎসা ব্যবস্থা নিতে হবে।
চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধের জন্য কাজ করতে হবে। একটি ডেইরি ফার্মে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা নিলে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। বাঁটের স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করতে হবে। বাসস্থান উন্নত ও স্বাস্থ্যসম্মত হতে হবে। জীবাণুমুক্ত দুধ দোহন ব্যবস্থা অনুসরণ করতে হবে। ওলান ও বাঁটের স্বাস্থ্য রক্ষাসহ যে কোনো রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
খুব দ্রুত এ রোগ সনাক্ত করতে হবে এবং দ্রুত উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে হবে। অসুস্থ গাভিকে আলাদা জায়গায় রাখতে হবে। শুষ্ক ও গর্ভবতী গাভিকে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ ও সেবা দিতে হবে।