সাউথ ক্যারোলিনা থেকে বীজ এনে কুমিল্লায় কালো টমেটোর চাষ
কৃষি বিভাগ
বাংলাদেশের কুমিল্লার একজন সৌখিন চাষী আহমেদ জামিল। পেশায় ব্যবসায়ী জামিল ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ক্যারোলিনা থেকে কালো টমেটোর বীজ আনান। পরের বছর প্রথম নিজের বাড়িতে টবে কালো টমেটো চাষ করেন। যদিও এখনো বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু হয়নি। কৃষি গবেষকেরা বলছেন, এটি প্রচলিত টমেটোর চেয়ে বেশি মাংসল হয়।
কালো টমেটো প্রচলিত দেশি জাতের টমেটো- যা সাধারণত লাল এবং গবেষণাগারে উদ্ভাবিত সাদাটে সবুজ টমেটোর মতোই দেখতে। কিন্তু এটি আকারে বড় হয়।
এই টমেটো গাছের উচ্চতাও বেশি। ফলন কেবল শীতকালে হয়। স্বাভাবিক তাপমাত্রায় কালো টমেটো বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায়। এই টমেটোর নানা রকম ওষুধি গুণাগুণ রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট জানিয়েছে, কালো টমেটোর ওষুধি গুণাবলী নিয়ে দেশে কোনো পরীক্ষা এখনো হয়নি।
কালো টমেটো চাষী আহমেদ জামিল বলেন, শুরুতে বর্ষা মৌসুমে টমেটোর বীজ বুনলেও বৃষ্টির কারণে তখন ফলন হয়নি। পরে শীতে বীজ বোনার পর গাছ হয় এবং ফল পান তিনি। এখনো পর্যন্ত কুমিল্লা শহরে নিজের বাড়ির বাগানে চাষ করছেন এই টমেটো।
দেশের আরও বিভিন্ন জায়গায় চাষ হচ্ছে কালো টমেটো, তবে তা সৌখিন পর্যায়েই হচ্ছে।
কালো টমেটো অনেক দেশে ‘অর্নামেন্টাল ফ্রুট’ হিসেবে চাষ হয়। আমেরিকাতে যেখান থেকে প্রথম বীজ সংগ্রহ করেন আহমেদ জামিল, সেখানে একেকটি গাছে ৪-৫টি টমেটো হয় বলে তিনি জানতে পেরেছেন। তার দাবি, তার টমেটোর ফলন অনেক বেশি হয়েছে। তার লাগানো প্রতিটি গাছে ৫০-৬০টির মতো কালো টমেটো ধরেছে। দেশি টমেটোর চাইতে এগুলোর আকারও বড়। এই টমেটোর ভেতরটা লাল এবং খেতে টক-মিষ্টি স্বাদের।
ইতিমধ্যে জামিলের কালো টমেটো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট এবং কৃষি অধিদপ্তর। কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর তিনি বাণিজ্যিক চাষাবাদ শুরু করবেন।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটে টমেটো নিয়ে গবেষণা করছেন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ফেরদৌসি ইসলাম। তিনি বলেন, প্রচলিত টমেটোর সঙ্গে কালো টমেটোর কিছু গুণগত পার্থক্য রয়েছে।
কালো টমেটো নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা এখনো হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, প্রাথমিক বিশ্লেষণে তারা দেখেছেন এই টমেটোর খাদ্যগুণ দেশি টমেটোর চেয়ে বেশি। এই টমেটোতে ভিটামিন এ এবং আয়রনের পরিমাণ বেশি থাকে। একই সঙ্গে এতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের পরিমাণও সাধারণ টমেটোর চেয়ে বেশি। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এর ফলন অনেক বেশি হয়, যা দেশিয় চাষীদের জন্য উপকারী ব্যাপার। এর ফলে তারা অল্প জমিতে চাষ করে অধিক লাভবান হতে পারবেন।
এখনো বাণিজ্যিক চাষাবাদ শুরু না হলেও ইতিমধ্যেই কৃষি অধিদপ্তর দেশের বিভিন্ন সরকারি নার্সারিতে কালো টমেটোর বীজ ও চারা রাখতে শুরু করেছেন।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন কৃষি কর্মকর্তা পাপিয়া রহমান মৌরি জানান, কুমিল্লায় এখনো স্বল্প পরিসরে কালো টমেটোর চাষ হলেও এখন দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরকারি নার্সারিতে এই টমেটো প্রমোট করা হচ্ছে। কালো টমেটোর ভেতরে পানি কম থাকে, যে কারণে এই টমেটো সহজে নষ্ট হয় না। ফলে কৃষকদের কাছ থেকে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে বলে জানান তিনি।