আমে ভরা পাহাড়, বিক্রিতে দুশ্চিন্তা চাষিদের!
প্রাণ ও প্রকৃতি
আবহাওয়া ভালো থাকায় খাগড়াছড়ির রামগড়ে আম্রপালি, রুপালি, মল্লিকা, ল্যাংরা, গোপালভোগ, মোহনভোগ প্রভৃতি জাতের থোকায় থোকায় দোল খাচ্ছে। তবে আম বাজারে পৌঁছানো যায় কিনা তা নিয়ে উদ্বেগ উৎকন্ঠায় পাহাড়ের আম চাষিরা। বাগান মালিকদের পাশাপাশি ছোটখাটো চাষিদের মাঝেও এখন দুশ্চিন্তা।
জানা যায়, রামগড়ের তৈছালা, পাতাছড়া, নাকাপা এবং খাগড়াবিল এলাকার পাহাড়ে আমের প্রচুর ফলন হয়। একসময় সনাতন পদ্ধতিতে আম চাষে ফলন বেশি পাওয়া যেত না। পরবর্তীতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বৈজ্ঞানিক উপায়ে চাষাবাদ শুরু হয়। এতে ফলন বেড়ে যায়। কয়েক বছর ধরে পাহাড়ে বৈজ্ঞানিকভাবে আম চাষ হচ্ছে। শত শত হেক্টর জমিতে চলছে আমের উৎপাদন। আমবাগানের পাশাপাশি আনারস, লেবু, লিচুসহ নানা ফলের ভান্ডার হয়ে উঠছে পাহাড়।
কিন্তু এসব ফল বাজারজাতে এবার সংকট তৈরি হতে পারে। করোনা পরিস্থিতিতে আম বিক্রির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা কতটুকু করা যাবে তা নিয়ে সংশয়ে সংশ্লিষ্টরা। বড় বড় বাগান কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা আছে এমন বাগান মালিক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিশেষ উদ্যোগ নিলেও ছোটখাটো মালিকরা আছেন শঙ্কায়। বর্তমানে তীব্র গরম পড়ছে। পাকা ফল কিভাবে বিক্রি করবেন, ন্যায্য দাম পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে উদ্বেগে তারা। পরিবেশ ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে রামগড়ের নানা স্থানে আম্রপালি, রাংগোয়াই (মিয়ানমারের জাত), থাই এবং স্থানীয় জাতের আমের ভালো ফলন হয়েছে।
বাগান মালিকরা জানান, গতবারের চেয়ে ফলন অনেক ভালো হয়েছে। আম ঠিকভাবে বাজারে পৌঁছানোর ওপর তাদের ভাগ্য নির্ভর করছে। তারা বলেন, চট্টগ্রাম থেকে বেপারিরা রামগড় এসে আম কিনে নিয়ে যায়। তবে বিশ্বব্যাপী করোনার যে সংকট দেখা দিয়েছে তাতে তারা উদ্বিগ্ন। করোনা পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলে শহর থেকে ব্যাপারীরা কিভাবে আম পরিবহন এবং সংরক্ষণ করবেন তা নিয়ে চিন্তিত। এসব বিষয়ের ওপর পাহাড়ের হাজার হাজার মানুষের ভাগ্য নির্ভর করছে।
রামগড় উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম জানান, এবার আমের ভালো ফলন হয়েছে। আমচাষে অল্প সময়ে ফলন পাওয়া যায়। ২/৩ বছর বয়স থেকে আমের ফলন শুরু হয়। দীর্ঘসময় পর্যন্ত টানা ফলন পাওয়া যায়। এ ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের মাটি আমচাষের জন্য উপযোগী। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নানা জাতের আমের চাষ করায় প্রতিটি বাগান এখন অতীতের তুলনায় সমৃদ্ধ। বিষমুক্ত আমের চাষ হচ্ছে পাহাড়ে-পাহাড়ে।
এখন প্রচুর কাঁচা আম বিক্রি হচ্ছে। চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা বেপারিরা কাঁচা আম কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। যেসব আম ঝড়ে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে সেসব আম কাঁচা বিক্রি করা হলেও গাছে গাছে থোকায় থোকায় আম ঝুলছে। যেগুলো পাকলে স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি দেশের নানা স্থানে বিক্রি হয়। দেশের আমের চাহিদার কিছু অংশ পার্বত্য চট্টগ্রাম যোগান দেয়।