ক্ষতিকারক বাদামি গাছ ফড়িং দমনের কৌশল
কৃষি বিভাগ
বাচ্চা ও পূর্ণবয়স্ক উভয় অবস্থায় বাদামি গাছফড়িং ধান গাছের গোড়ায় বসে গাছের রস চুষে খায় ফলে গাছ নিস্তেজ হয়ে পড়ে। তবে ধানের ক্ষতিকারক গাছফড়িং দমনের সঠিক কৌশল জানা থাকলে সহজেই দম করা যায়।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের প্রধান তথ্য অফিসার কৃষিবিদ তুষার কান্তি সমদ্দার জানান,এক সঙ্গে অনেকগুলো পোকা রস চুষে খাওয়ার ফলে ধানের পাতা প্রথমে হলদে ও পরে শুকিয়ে মারা যায়। আক্রমণ বেশি হলে দূর থেকে বাজ পড়ার মতো (হপার বার্ন) মনে হয়। ধানের শীষ আসার সময় বা তার আগে হপার বার্ন হলে কোনো ফলনই পাওয়া যায় না। তবে ধানের দানা শক্ত হওয়ার পর ধান গাছ আক্রান্ত হলে ক্ষতি কম হয়।
জীবন বৃত্তান্ত: মৌসুমের শুরুতে লম্বা পাখা বিশিষ্ট পূর্ণবয়স্ক বাদামি গাছফড়িং পাতার খোলে এবং পাতার মধ্য শিরায় ৮-১৬টি ডিম গুচ্ছাকারে পাড়ে। ডিমের রঙ হলুদ এবং দেখতে অনেকটা কলার কাঁদির মতো। ডিমগুলোর উপর পাতলা চওড়া একটি আবরণ থাকে।
ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে ৭-৯ দিন সময় লাগে। সদ্য ফোটা বাচ্চাগুলো দেখতে পূর্ণবয়স্ক পোকার মতো তবে আকারে খুবই ছোট। বাচ্চাগুলো পাঁচ বার খোলস বদলানোর পর পূর্ণবয়স্ক পোকায় পরিণত হয়। এতে ১৩-১৫ দিন সময় লাগে। পূর্ণবয়স্ক বাদামি গাছফড়িং ৩-৫ মিলিমিটার লম্বা হয়ে থাকে। পূর্ণবয়স্ক পোকার গায়ের রঙ বাদামি। বাদামি গাছফড়িং ছোট পাখা ও লম্বা পাখা বিশিষ্ট এ দুই ধরনের হতে পারে। এর স্ত্রী পোকাগুলো সাধারণত গাছের গোড়ার দিকে বেশি থাকে।
গাছের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লম্বা পাখা বিশিষ্ট ফড়িংয়ের সংখ্যাও বাড়তে থাকে, যারা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় উড়ে যেতে পারে। পূর্ণবয়স্ক বাদামি গাছফড়িং প্রায় তিন সপ্তাহ বেঁচে থাকতে পারে এবং এক জোড়া পোকা থেকে ২-৩ মাসের মধ্যে হাজার হাজার পোকা জন্ম নিতে পারে।
ক্ষতির অনুকূল পরিবেশ: বাদামি গাছফড়িং আলো-বাতাস পছন্দ করে না। এদের বংশ বৃদ্ধি এবং বেঁচে থাকার জন্য আর্দ্র ও ছায়াযুক্ত স্থান খুবই পছন্দ। ঘন করে গাছ লাগালে, জমিতে অধিক নাইট্রোজেন সার ব্যবহার করলে, জমিতে পর্যাপ্ত আগাছা থাকলে এবং সব সময় জমিতে পানি জমে থাকলে এ পোকার আক্রমণ বেশি হয়।
বাদামি গাছফড়িংয়ের প্রাকৃতিক শত্রু: এমন অনেক বন্ধু পোকামাকড় আছে যেগুলো ধানের জমিতে প্রাকৃতিকভাবেই গাছফড়িং দমন করে থাকে। বাদামি গাছফড়িংয়ের যেসব প্রাকৃতিক শত্রু আছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মাকড়সা, মিরিডবাগ, লেডিবার্ড বিটল, ক্যারাবিড বিটল, ড্যামসেল ফ্লাইয়ের বাচ্চা, মাইক্রোভেলিয়া, মেসোভেলিয়া ইত্যাদি পরভোজী। ব্যাঙ বাদামি গাছফড়িংকে দমিয়ে রাখতে সাহায্য করে।
দমন ব্যবস্থাপনা: জমিতে আলোক ফাঁদ ব্যবহার করতে হবে। চারা রোপণের দূরত্ব বাড়িয়ে দিতে হবে। থোড় আসার আগ পর্যন্ত আক্রান্ত জমিতে হাঁস ছেড়ে দিলে পোকা কিছুটা দমন করা যায়। লাইন ও লোগো পদ্ধতিতে ধানের চারা রোপণ করতে হবে। উর্বর জমিতে ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ থেকে বিরত থাকতে হবে। জমি আগাছামুক্ত রাখা প্রয়োজন। আক্রান্ত জমি থেকে ৫-৬ দিনের জন্য পানি বের করে দিয়ে স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থা দূর করতে হবে।
জমির অধিকাংশ গাছে যদি ৩-৪টি পেট মোটা ডিমওয়ালা পূর্ণবয়স্ক বাদামি গাছফড়িং বা ৮-১০টি নিম্ফ অথবা উভয়ই দেখতে পাওয়া যায় তাহলে যেকোনো একটি অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। কীটনাশক অবশ্যই গাছের গোড়ায় স্প্রে করতে হবে।