চলছে কোরবানির প্রস্তুতি, সারাদেশে হাট বসবে ২,৪০০টি
প্রাণিসম্পদ
এগ্রিভিউ ডেস্ক: কোরবানির পশু প্রস্তুতির চলছে একেবারে শেষ সময়। খামারিরা ইতোমধ্যে গরু ছাগল করা শুরু করে দিয়েছেন। করোনার প্রাদুর্ভাবে এবারের কোরবানি গুরুর বেচা-কেনা একটু অন্যরকম হলেও থেমে নেই খামারিরা।ইতোমধ্যে অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রয়ের প্রচারণাও চালিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। অনলাইনে বিক্রিও হচ্ছে অনেক।
জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গবাদি পশুর খামার রয়েছে ১২ হাজার ৩৭০টি। তারা এবার কোরবানির জন্য প্রায় ১ লাখ গরু প্রস্তুত করেছে। তবে করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে পশু বিক্রি নিয়ে উদ্বিগ্ন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খামারিরা। জেলার প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ের তথ্য মতে জানা যায়, খামারে কোরবানির জন্য এক লাখ ৭৭ হাজার পশু লালন-পালন করা হয়েছে। এর মধ্যে গরু রয়েছে এক লাখ ২৪ হাজার।
ঝিনাইদহের ছোট-বড় মিলিয়ে ১৮ হাজার খামারি প্রায় ৭১ হাজার গরু-ছাগল প্রস্তুত করেছে। তবে, গত কোরবানিতে গরুর দামে ধস নামলে এবার পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা থাকলেও করোনাভাইরাস এতে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে শঙ্কা কাজ করছে সেখানকার খামারিদের মাঝে। জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, করোনার প্রভাব থাকলেও অনলাইনে গবাদি পশু বিক্রি হবে। ফলে ভারতীয় সীমান্তের জেলা ঝিনাইদহের চাষিরা সঠিক দাম পাবেন।
ঝিনাইদহের প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, জেলায় ছোট-বড় ও ব্যক্তি পর্যায়ে ক্ষুদ্র খামার রয়েছে ১৭ হাজার ৪৫০টি। এসব খামারে আসন্ন কোরবানির ঈদের জন্য প্রস্তুতকৃত গরু রয়েছে ৭১ হাজার ৪১৫টি। এছাড়া ছাগল ও ভেড়া রয়েছে ৫৪ হাজার ৪৪৪টি। ঝিনাইদহে সরকারিভাবে বড় ধরনের কোনো খামার বা গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্প না থাকলেও গ্রামের স্বল্প আয়ের মানুষগুলো বাড়তি লাভের আশায় কোরবানিকে সামনে রেখে গরু-ছাগল লালন-পালন করে থাকেন। তবে গরু পালনে তারা কোনো ক্ষতিকারক ইনজেকশন ব্যবহার করেন না বলে দাবি করেন।
খুলনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, খুলনা জেলায় এবার পাঁচ হাজার ২১২ জন খামারি ৪৭ হাজার ৭৮৯টি পশু প্রস্তুত করেছেন। এই পশুগুলোর মধ্যে ২৮ হাজার ৫৬৮টি ষাঁড়, দুই হাজার ৩১৯টি বলদ, দুই হাজার ৪০৪টি গাভি, ৯টি মহিষ, ১২ হাজার ২৩৯টি ছাগল এবং দুই হাজার ২৫০টি ভেড়া রয়েছে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে খুলনা মহানগরী, বটিয়াঘাটা, ডুমুরিয়া, পাইকগাছা কয়রায় উত্তরাংশ, দাকোপ, রূপসা, তেরখাদা, দিঘলিয়া ও ফুলতলা গবাদি পশু মোটাতাজা করা হয়েছে।
এছাড়াও দেশের বিভিন্নস্থানে চলছে কোরবানির গরু প্রস্তুতের আয়োজন। খামারিদের মাঝে চলছে দারুণ আনন্দ আবার উৎকণ্ঠা। গত বছরের ধস কাটিয়ে এবার ঈদের লাভ করার চেষ্টায় খামারিরা মরিয়া। তবে করোনার ছোবলের কারণেও এবারও কঠোর লকডাউনে নিজেরাই ডাউন হবার শঙ্ক প্রকাশ করছেন অনেক খামারিরা।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গরু, ছাগল, ভেড়া ও উট মিলিয়ে মোট ১ কোটি ১৯ লাখের মতো পশু রয়েছে, যা কোরবানি উপলক্ষে হাটে উঠবে এবার।
জানা যায়, গত বছর দেশে ৯৫ লাখের মতো পশু কোরবানি হয়েছিল, যদিও প্রাক্কলন ছিল ১ কোটি ১০ লাখ। বিপরীতে বাজারে আনার মতো পশুর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১৯ লাখ। তবে হাটে কেনাবেচা শুরুর প্রথম দিকে দাম কম থাকায় খামারিরা গরু–ছাগল বিক্রিতে নিরুৎসাহিত হন। এতে ২৩ লাখের মতো পশু অবিক্রীত থাকে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এবার ঈদুল আজহায় ৪৫ লাখ ৪৭ হাজার গরু-মহিষ, ৭৩ লাখ ৬৫ হাজার ছাগল ও ভেড়া এবং ৪ হাজার ৭৬৫টি উট-দুম্বা উঠতে পারে। গত বছর গরু–মহিষ প্রস্তুত করা হয়েছিল ৪৫ লাখ ৩৮ হাজারটি।
এবারের ঈদুল আজহাকেন্দ্রিক গবাদিপশু বিক্রির জন্য সারা দেশে ২ হাজার ৪০০টি আনুষ্ঠানিক হাট বসানো হবে। রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে মোট ২৩টি অস্থায়ী ও একটি স্থায়ী হাট বসবে।
প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন বলছে, আনুষ্ঠানিক হাটগুলোতে যাতে ভিড় কম হয়, সে জন্য বিভিন্ন এলাকায় খালি ও উন্মুক্ত স্থানে ছোট ছোট অনানুষ্ঠানিক হাট বসানোকেও উৎসাহিত করা হবে। অনলাইনেও গরু বিক্রির জন্য আলাদা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানা যায়।
বাংলাদেশ ডেইরি ফারমারস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ ইমরান জানান, হাটে জনসমাগম কমাতে অনলাইন গবাদিপশু বিক্রিতে জোর দিতে হবে। রাজধানীর মতো দেশের অন্য জেলাগুলোতেও অনলাইনে গরু-ছাগল বিক্রি করা এবং জবাই করে মাংস ক্রেতাদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ আরও বাড়ানো দরকার।
এগ্রিভিউ/এসএমএ