মুরগির খামার থেকে মাসে ৬৫ হাজার টাকা আয় করেন শিমুল
পোলট্রি
চাকরির পিছে ছুটে হতাশ না হয়ে মুরগির খামার করে ভাগ্যবদল করেছন ভোলা সদর উপজেলার উত্তর দিঘলদী ইউনিয়ন এর ১ নং ওয়ার্ড লামছি পাতা গ্রামের সিকদার বাড়ির শাখাওয়াত হোসেনের ছেলে মো. শিমুল সিকদার। দরিদ্র বাবার পরিত্যক্ত খামার পুনরায় শুরু করে পাঁচ বছরেই তিনি আজ তিনটি খামারের মালিক। প্রতি মাসে আয় করেন প্রায় ৬৫ হাজার টাকা তার বাবার ঠিকাদারি ব্যবসার পাশাপাশি ৫০০ পোলট্রি (ব্রয়লার) মুরগি ধারণক্ষমতার একটি খামার ছিল। প্রাথমিক অভিজ্ঞতা লাভ সেখানেই হয় শিমুলের।
শিমুলের সঙ্গে কথা হলে জানান, এসএসসি পাস করার পর পরিবারে অভাব-অনটনের কারণে এক পর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায় পড়ালেখা। বেশ কয়েক বছর বেকার বসে থাকি। সংসারে অভাব-অনটনের চাপ। বিভিন্ন জায়গায় চাকরির জন্য আবেদন করি। কিন্তু যেখানেই যাই, চাকরির বিনিময়ে চাওয়া হয় মোটা অঙ্কের টাকা। তাই সেসব চাকরিও আর ধরা দেয় না। একপর্যায়ে ধারদেনা করে বাড়ির সামনে ছোট একটি মুদির দোকান দিই। সেখানেও দেখা দেয় মন্দা। পর্যায়ক্রমে ব্যবসায়ের মূলধনটুকুও শেষ হয়ে যায়।
শিমুল জাননা, প্রায় পাঁচ বছর আগের কথা। একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে বাবার পরিত্যক্ত ফার্ম মেরামত করি। ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে মুরগি পালনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এক হাজার ব্রয়লার মুরগি পালন করা শুরু করি। এই মুরগি থেকেই তার ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। সেখান থেকেই শুরু হয় শিমুলের সফলতার গল্প।
এলাকার বেশ কয়েকটি খামারির মধ্যে তিনি এখন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত। খামার থেকে অর্জিত আয় দিয়ে ব্যাংকঋণ পরিশোধ করা, সংসারের খরচ মেটাতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। খামারের পাশাপাশি একটি মুদির দোকানও দিয়েছেন তিনি। খামারের পরিচর্যা শেষে নিজের দোকানে বসেই পার করেন অবসর সময়।
জানা যায়, এক হাজার মুরগি থেকে এখন তার তিনটি মুরগির খামার হয়েছে। ব্রয়লার, সোনালি ও লেয়ার― এই তিন জাতের আলাদা আলাদা শেডে মুরগি পালন করেন তিনি। খামারে এক হাজার ব্রয়লার, ১৫০০ সোনালি ও ২৫০০ লেয়ার মুরগি পালনের ব্যবস্থা রয়েছে। এতে এলাকার মাংস ও ডিমের চাহিদা পূরণ করে এগুলো যাচ্ছে জেলার বিভিন্ন উপজেলায়।
লাভ সম্পর্কে শিমুলের দেওয়া তথ্যমতে, ১ হাজার ব্রয়লার মুরগি থেকে এখন তার মাসিক আয় ২৫ হাজার টাকা। ১৫০০ সোনালি মুরগি থেকে প্রতি দুই মাস পরে আয় ৪০ হাজার টাকা এবং ২৫০০ লেয়ার মুরগির ডিম বিক্রি করে মাসে আয় হয় ২০ হাজার টাকা। এই মুরগির খামার থেকে প্রতি মাসে ৬৫ হাজার টাকা লাভবান হন তিনি। তার খামারে মুরগির সব ধরনের চিকিৎসাও তিনিই করে থাকেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ইন্দ্রজিত কুমার দে জানান, শিমুল মুরগির খামার করে সফল হয়েছেন। তার চেষ্টা আর উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই। তার উদ্যোগের কারণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। তাকে অনুসরণ করে এলাকায় ৮ থেকে ১০টি খামার গড়ে উঠেছে। এসব খামারকে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পক্ষ থেকে সহযোগিতা দিয়ে আসছি।