লালমনিরহাটে আলু চাষে সার সংকট
কৃষি বিভাগ
আলু চাষের শুরুতেই লালমনিরহাটে সারের সংকট দেখা দিয়েছে। চাষিদের অভিযোগ, সংকট তৈরি করে ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বাড়িয়ে দিয়েছে আলু চাষের জন্য প্রয়োজনীয় টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি সারের দাম। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বস্তাপ্রতি ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেশি আদায় করছে বিক্রেতারা।
মৌসুমের শুরুতেই সারের দামে নৈরাজ্য শুরু হলেও এখন পর্যন্ত জেলা অথবা উপজেলা সার মনিটরিং কমিটি কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। চাষিরা বলছেন, লালমনিরহাটে সব ধরনের সারের পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকলেও ডিলার ও খুচরা কারবারিরা কারসাজি করে দাম বাড়িয়েছে। অন্যদিকে সার উত্তোলন ও চলাচলের বিষয়ে কোনো মনিটরিং ব্যবস্থা নেই। যাদের ওপর মনিটরিংয়ের দায়িত্ব রয়েছে তারাও এই কারসাজির সঙ্গে জড়িত।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে ডিলার ও খুচরা কারবারিদের গভীর যোগাযোগ রয়েছে। কোন ডিলার তার নামে বরাদ্দ করা সার উত্তোলন করে গুদামে রেখে বিক্রি করছে তা মনিটরিং কমিটি দেখছে না। ফলে এক এলাকার সার অন্য এলাকায় অবাধে চলে যাচ্ছে। তাদের অভিযোগ, লালমনিরহাটের জন্য বরাদ্দকৃত সার তুলে কতিপয় ডিলার যশোরের নওয়াপাড়া মোকামেই বিক্রি করে দিয়ে আসছে। ওইসব সার চলে যাচ্ছে সিন্ডিকেটের গুদামে। এসব সার অবৈধ লাইনে চলে যাচ্ছে অন্য জেলার মজুদ কারবারিদের কাছে। এর ফলে লালমনিরহাটে সারের সংকট তীব্র হয়েছে।
জেলার কালিগঞ্জের শিয়াল খোয়ার আলু চাষি মিরাজুল ইসলাম, সদরের হরাটির সফিউল আলম ও আদিতমারীর কমলাবাড়ীর আজিজুলের অভিযোগ, দেশের যেসব জেলায় সবচেয়ে বেশি আলু চাষ হয় লালমনিরহাট তার মধ্যে অন্যতম। দুই সপ্তাহ আগে লালমনিরহাটে আগাম আলু আবাদ শুরু হয়েছে। এখন মাঠে মাঠে জমি তৈরিতে ব্যস্ত চাষিরা।
চাষিরা জানান, আলুর জমি তৈরির সময়েই পর্যাপ্ত পরিমাণ টিএসপি, ডিওপি ও এমওপি সারের প্রয়োজন। কিন্তু চাষিরা সার পাচ্ছেন না ডিলারদের দোকানে। আবার অনুমোদিত নয় এমন অবৈধ সার বিক্রেতাদের দোকানে দোকানে এসব সরকারি সার বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।
সদরের মহেন্দ্রনগরের আলু চাষি শরিফুল ইসলাম বলেন, চাষি পর্যায়ে প্রতি কেজি ২২ টাকা হিসাবে ৫০ কেজির এক বস্তা টিএসপির দাম ১ হাজার ১০০ টাকা নির্ধারণ করা আছে। কিন্তু খুচরা বিক্রেতারা এসব সার চাষিদের কাছে বিক্রি করছে ১ হাজার ২৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা করে। প্রতি কেজি এমওপির দাম ১৫ টাকা হিসাবে ৫০ কেজির এক বস্তার দাম ৭৫০ টাকা।লালমনিরহাটের ৫ উপজেলায় বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকা বস্তা করে। একইভাবে ১৬ টাকা প্রতি কেজির ডিএপির ৫০ কেজির বস্তার বিক্রি মূল্য ৮০০ টাকা হলেও চাষিরা কিনছেন ১ হাজার টাকা থেকে হাজার ৫০ টাকা করে। আর চাষিরা ডিলারদের দোকানে গিয়ে কোনো সার পাচ্ছে না। এভাবেই লালমনিরহাটে সার বিক্রিতে নৈরাজ্য চালাচ্ছে ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা।
জানা গেছে, চলতি অক্টোবর থেকে লালমনিরহাটে আগাম আলু চাষ মৌসুম শুরু হয়েছে। এবার আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০ হাজার ৬৯৩ হেক্টর। এই পরিমাণ জমি থেকে সাড়ে ৪ লাখ টন আলু ফলনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। শুধু আলু চাষকে সফল করতে বিএডিসির ৭১ জন ডিলারের জন্য ২ হাজার ৬৭৩ মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের নন-ইউরিয়া সার বরাদ্দ করেছে।