দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বোরোর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা
কৃষি গবেষনা
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৬ জেলা তথা, যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে এবার বোরোর সোনালী ধানের মিষ্টি গন্ধে মাতোয়ারা কৃষকরা। চলতি মৌসুমে একদিকে যেমন প্রকৃতিতে লাগছে অসাধারণ তেমনি অর্থনৈতিক সচ্ছলতারও স্বপ্ন দেখছেন সেখান কৃষকরা।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে,গত এক সপ্তাহ আগে থেকে কৃষাণ-কৃষাণীরা আনন্দের সাথে ধান কাটা ও মাড়াই শুরু করেছেন।ধান কাটা শুরুর পর ব্যস্ততা বেড়েছে কৃষাণ-কৃষাণীর। শনিবার পর্যন্ত প্রায় ২০ শতাংশ ধান কাটার কাজ শেষ হয়েছে।ঝড়-বৃষ্টি না হলে আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে ধান কাটার কাজ সম্পন্ন হবে বলে।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস জানান,কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে চলতি মৌসুমে বোরো চাষিদের উদ্বুদ্ধকরণ,পরামর্শ,মাঠ দিবস,উঠান বৈঠক,নতুন নতুন জাতের বীজ সরবরাহ ও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
যশোর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক জাহিদুল আমীন জানান, চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৪ হাজার ১৩১ হেক্টর বেশি জমিতে বোরো আবাদ হওয়ায় ফলনেও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। এ অঞ্চলের ছয় জেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন লাখ ৫৩ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গিয়ে আবাদ হয়েছে তিন লাখ ৬৭ হাজার ৯১১ হেক্টর জমিতে।গত কয়েক বছর চালের দাম ভালো পাওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষকরা অধিক জমিতে বোরো চাষ করেছেন।
যশোর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলায় হাইব্রিড জাতের বোরো ধান ২৭ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমিতে ও উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের বোরো ধান এক লাখ ৩০ হাজার ২২৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। ঝিনাইদহ জেলায় হাইব্রিড জাতের বোরো ধান আট হাজার ২১৭ হেক্টর জমিতে ও উচ্চ ফলনশীল জাতের বোরো ধান ৭২ হাজার ১৭ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।
মাগুরা জেলায় হাইব্রিড জাতের ধান ৭ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে ও উচ্চ ফলনশীল জাতের বোরো ধান ৩২ হাজার ২৪১ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।কুষ্টিয়া জেলায় হাইব্রিড জাতের বোরো ধান চার হাজার ৬৯৫ হেক্টর জমিতে ও উচ্চ ফলনশীল জাতের বোরো ধান ৩০ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলায় হাইব্রিড জাতের বোরো ধান দুই হাজার ৪৬১ হেক্টর জমিতে ও উচ্চ ফলনশীল জাতের বোরো ধান ৩৩ হাজার ২৮৫ হেক্টর জমিতে এবং মেহেরপুর জেলায় হাইব্রিড জাতের ধান এক হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে ও উচ্চ ফলনশীল জাতের বোরো ধান ১৭ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।
এ বছরে চালের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ৯৮৩ মেট্রিকটন। ধান কেটে ঘরে তোলার আগে যদি শিলাবৃষ্টি না হয় তবে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে উদ্বৃত্ত হবে বলে কৃষি কর্মকর্তারা জানান।
তিনি আরো জানান, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক বোরো চাষিদের প্রয়োজনীয় কৃষি লোন প্রদান করেছে।বাজারে সারেরও কোন সংকট ছিল না। বিভিন্ন জাতের ধান ও চালের দাম ভালো থাকায় এ অঞ্চলে বোরোর চাষ বেড়েছে। কৃষি যান্ত্রীকরণ উদ্যোগের আওতায় এ জেলায় ১৮টি কম্বাইন্ড হারভেষ্টারের মাধ্যমে বোরো কাটা, মাড়াই ও ঘরে তোলার কাছ চলছে।