৩:১৭ অপরাহ্ন

শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
প্রকাশ : এপ্রিল ৩, ২০২১ ৬:৪৮ অপরাহ্ন
বাকৃবি‘র গবেষণা: আমন-বোরোর মাঝে শিম জাতীয় ফসল চাষে লাভবান হবে কৃষক
কৃষি গবেষনা

বাকৃবি প্রতিনিধি: বাংলাদেশে প্রচলিত দ্বি-ফসলি আমন-বোরোকে তিন ফসলি করা ও আবাদকৃত জমির উর্বরতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গবেষণা করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক।

শনিবার (৩এপ্রিল) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সভাকক্ষে এক সাংবাদিক সম্মেলনে গবেষকগণ এসব জানান।

গবেষকদল তিন বছরের গবেষণায় দেখেছেন, স্বল্পকালীন আগাম রোপা আমন (যেমন বিনাধান-৭) এবং নাবী বোরো ধান (যেমন বিনাধান-১৪) চাষ করে আমন-বোরোর মাঝের পতিত সময়কাল বাড়িয়ে ৭০-১০০ দিন করা সম্ভব। এই সময়ে সবজি হিসেবে খাওয়া যায় এমন শিম জাতীয় ফসল যেমন মটরশুটি, লিগনোসাস শিম, ঝাড় শিম, ফেলন, সয়াবিন এবং মুগ আবাদ করা সম্ভব। এতে করে দ্বি-ফসলি জমি থেকে তিন ফসল পাওয়া যায়।

সম্মেলনে ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষণা কার্যক্রমের কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক ড. মো. ছোলায়মান আলী ফকিরের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. কাজী ফরহাদ কাদির এবং সহযোগী গবেষক ড. মো. নেছার উদ্দীন।

এসময় গবেষকেরা বলেন, বাংলাদেশে প্রচলিত ফসলগুলোর মধ্যে দ্বি-ফসলি আমন-বোরো অন্যতম। দেশের মোট আবাদযোগ্য জমির শতকরা প্রায় ২২ ভাগ আসে এখান থেকে। আমন ও বোরোর মধ্যবর্তী সময় কম। যার ব্যাপ্তি ৬০ দিনেরও কম। আমন ও বোরোর মধ্যবর্তী স্বল্প সময়ে প্রচলিত অন্য কোনো ফসল চাষের জন্য যথেষ্ট নয়। এসময় কৃষকরা জমি পতিত রাখেন। কিন্তু স্বল্পকালীন আগাম রোপা আমন এবং নাবী বোরো ধান চাষ করে দ্বি-ফসলি জমি থেকে তিন ফসল পাওয়া সম্ভব।

শিম জাতীয় গাছগুলো থেকে বীজ সংগ্রহ করে গাছগুলোর অবশিষ্ট অংশ জমিতে সবুজ সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এতে জমির জৈব উপাদান ও পুষ্টিগুন বেড়ে যায়। ফলে জমিতে রাসায়নিক সারের প্রয়োজন কম হবে। পাশাপাশি দুই ফসলের জায়গায় তিন ফসল পেয়ে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। এই উৎপাদন ব্যবস্থায় শিম পরবর্তী বোরো ধানের উৎপাদন শতকরা ১৫-২০ ভাগ পর্যন্ত বেশি পাওয়া গেছে।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : এপ্রিল ১, ২০২১ ১০:০৬ পূর্বাহ্ন
বছরব্যাপী সবজি চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের
কৃষি গবেষনা

সবজি একসময় ছিলো কেবল মৌসুমি চাষের অন্তর্ভুক্ত। এখন আর এটি কোন মৌসুমি ফসল না। এখন কৃষকরা সারাবছর এর উৎপাদনের দিকে ছুটছেন। ​সে কারণে বাণিজ্যিকভাবে শাকসবজি চাষে শামিল হচ্ছেন গ্রামের শিক্ষিত যুবকরাও। ফলে চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী শাকসবজির উৎপাদন যেমন বাড়ছে তেমনি বাড়ছে চাষের পরিধিও।

আর এ কারণে চলতি মৌসুমে দেশজুড়ে শুধু শীতকালীন সবজির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা এক কোটি ৩৭ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।

জানা যায়, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট শীতকালীন (রবি মৌসুম), গ্রীষ্ম বা বর্ষা (খরিপ-১ মৌসুম) ও শরৎকালের (খরিপ-২ মৌসুম) জন্য বিভিন্ন উন্নত জাতের শাকসবজির বীজ উদ্ভাবন করায় স্থানীয়ভাবে চাষিদের বছরব্যাপী সবজি চাষে বেগ পেতে হচ্ছে না।

তা ছাড়া উপজেলা পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সরাসরি মাঠে চাষিদের পরামর্শ দেয়ায় বছরব্যাপী সবজি চাষ বাড়ছে। চলতি ২০২০-২১ মৌসুমে দেশে পাঁচ লাখ ৮২ হাজার ৯৬২ হেক্টর জমিতে (হেক্টর-প্রতি গড়ে ২৩.৪৪ মেট্রিক টন) সবজির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক কোটি ৩৬ লাখ ৬৫ হাজার ৭০৩ মেট্রিক টন, যা গত বছরের তুলনায় ছয় লাখ মেট্রিক টন বেশি।

​গত বছর দেশব্যাপী পাঁচ লাখ ৭৬ হাজার ৮৫৪ হেক্টর জমিতে (হেক্টর-প্রতি গড়ে ২২.৬৫ মেট্রিক টন হিসাবে) উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে এক কোটি ৩০ লাখ ৬৫ হাজার ৭৪৩ মেট্রিক টন। সেখানে শুধু চট্টগ্রাম জেলাতেই গত বছর উৎপাদন হয়েছে ২৭ হাজার ৭৬ হেক্টরে (প্রতি হেক্টরে গড়ে ২৪ মেট্রিক টন হিসাবে) ছয় লাখ ৪৯ হাজার ৮২৪ মেট্রিক টন সবজি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত মৌসুমে চট্টগ্রাম অঞ্চলে (পাঁচ জেলায়) ৫০ হাজার ৮০৯ হেক্টর জমিতে (হেক্টর-প্রতি ২২.৬০ মেট্রিক টন হিসাবে) ১২ লাখ ১৬ হাজার ১১০ মেট্রিক টন হরেক রকম সবজি উৎপাদন হয়েছে বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক এ কে এম মনিরুল আলম।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর চট্টগ্রাম জেলার উপপরিচালক আকতারুজ্জামান জানান, গত বছর জেলায় প্রায় ২৭ হাজার হেক্টর জমিতে শাকসবজি চাষ হয়েছে। এ বছর সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছয় লাখ ৪৯ হাজার ৮২৪ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা করছেন তিনি। তিনি বলেন, শীতকালীন শাকসবজির মধ্যে এখনো শুধু সবজি তুলছে চাষিরা।

এ দিকে গত বছর দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ জেলাজুড়ে গ্রীষ্মকালেও শীতকালীন শাকসবজিতে ভরপুর ছিল বাজার। যে কারণে মহামারী করোনাভাইরাসকে ছাপিয়ে রমজানে এসে ২০ টাকার বেগুন এক লাফে ৮০ টাকার উপরে উঠেছিল। একই সময়ের সাত টাকার টমেটো ২০ টাকায় এবং ২০ টাকার মুলা ৪০ টাকায় বিক্রি হয়।

এ কারণে বছরজুড়ে শাকসবজির চাহিদা বেশি থাকায় উৎপাদিত শাকসবজির দামে খুশি ছিল চাষিরা। এ বছর মার্চের শেষ প্রান্তে সবজির দাম কিছুটা কম থাকলেও একই সবজি রমজান শুরুর আগে গত বছরের মতো দাম বাড়বে এমন প্রত্যাশা এ অঞ্চলের সব চাষি ও পাইকারি-খুচরা সবজি ব্যবসায়ীদের।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : মার্চ ৩১, ২০২১ ১২:০৮ অপরাহ্ন
আমেরিকার “ফাইটোপ্যাথলজি নিউজ ইভেন্ট” এ উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব নিয়ে গবেষণার স্বীকৃতি পেলেন খুবির শিক্ষক
কৃষি গবেষনা

উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিষয়ক গবেষণা প্রকাশের জন্য বিখ্যাত আমেরিকার প্রকাশনা সংস্থা ” আমেরিকান ফাইটোফ্যাথলজি এসোসিয়েশন” তাদের ২০২০-২০২১ সেশনের “ফাইটোপ্যাথলজি নিউজ ইভেন্ট ” এ স্টুডেন্ট ক্যাটাগরি থেকে উদ্ভিদ
রােগতত্ত্বের উপরে গবেষণায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযােগী অধ্যাপক ড. শিমুল দাস-কে মনােনয়ন করে তার গবেষণালব্ধ আবিষ্কার নিয়ে ফিচার করেছে। তিনি তার পিএইচডি
গবেষণায় শীম জাতীয় সবজির সবচেয়ে
বিধ্বংসী রােগ বিন কমন মােজাইক ভাইরাস’ ও ‘কাউপি মাইল্ড মটল ভাইরাস রােগের সম্পূর্ণ জেনেটিক মেকআপ এক্সপ্লোরসহ তাদের প্রত্যেকটি জীনের “NT” ও “AA” ম্যাপিং করেছেন যা বাংলাদেশ ও আমেরিকার কৃষির জন্য এক যুগান্তকারী আবিষ্কার। তার এ গবেষণার মাধ্যমে উপরােক্ত দুটি ভাইরাসের লােকাল ও সিস্টেমিক মুভমেন্টসহ তাদের জেনেটিক লেভেলে প্রতিরােধ করার দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে।

তিনি তার অন্য একটি গবেষণায় লেনটিল জাতীয় ডালের জার্মপ্লাজমের জেনােম ওয়াইড অ্যাসােসিয়েশন এনালাইসিসের (GWAS) মাধ্যমে Insect Vector এপিড বাহিত ভাইরাস রােগ বিন লিফ রােল ভাইরাস’ ও ‘পি এনেশন মােজাইক ভাইরাস এর বিপরীতে ১৩টি সিগিনিফিক্যান্ট
SNPs এবং ১৭টি ক্যান্ডিডেট জীন ডিসকভার করেছেন যা আমেরিকা ও বাংলাদেশের লেনটিল ক্রপ ইমপ্রুভমেন্ট গবেষণার জন্য একটি মাইলফলক। আর তার এই গবেষণালব্ধ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বিগত বছরের ন্যায় এ বছর আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা
প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে উদ্ভিদ রােগতত্ত্ব বিষয়ে উদীয়মান ও প্রমিসিং সাইনটিস্টের স্বীকৃতিস্বরূপ ড. শিমুল দাসকে তাদের ম্যাগাজিনে হাইলাইট করেছেন।

সূত্র : খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ফেইসবুক পেজ

শেয়ার করুন

প্রকাশ : মার্চ ২৯, ২০২১ ৪:৩৭ অপরাহ্ন
বরিশালে মিষ্টি কুমড়া চাষের ওপর মাঠদিবস অনুষ্ঠিত
কৃষি গবেষনা

নাহিদ বিন রফিক (বরিশাল): আন্তঃফসল হিসেবে মাল্টা ও ড্রাগন বাগানে বারি হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া-১’র উৎপাদনশীলতা শীর্ষক কৃষক মাঠদিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল ২৮ মার্চ বরিশালের আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে (আরএআরএস) এটি অনুষ্ঠিত হয়।

আরএআরএস’র আয়োজনে এ উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আয়োজক প্রতিষ্ঠানের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. রফিউদ্দিন।

তিনি বলেন, জমিতে যত বেশি ফসল ফলানো যাবে, কৃষকরা তত লাভবান হবেন। এর অংশ হিসেবে আন্তঃফসল অনন্য উদহারণ। এতে শস্যঝুঁকি হ্রাস পায়। এর মাধ্যমে এক ফসলের ক্ষতি অন্য ফসল দিয়ে পুষিয়ে নেয়া সম্ভব। তাই ফসল উৎপাদনে ক্ষতির আশঙ্কা কম থাকে।

অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার ছিলেন উদ্যানতাত্ত্বিক ফসলের গবেষণা জোরদারকরণ এবং চর এলাকায় উদ্যান ও মাঠফসলের প্রযুক্তি বিস্তার প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মো. আবু তাহের মাসুদ। আরএআরএস’র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. গোলাম কিবরিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ভাসমান প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান তালুকদার এবং প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আলিমুর রহমান।

বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. রাশেদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আরএআরএস’র ঊধর্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আনওয়ারুল মোনিম, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মাহবুবুর রহমান, এসও শর্মীলা দাস সেতু, স্মৃতি হাসনা এবং কৃষি তথ্য সার্ভিসের কর্মকর্তা নাহিদ বিন রফিক অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বরিশাল সদর, বাবুগঞ্জ এবং উজিরপুরের ১০০ জন কৃষাণ-কৃষাণী অংশগ্রহণ করেন।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : মার্চ ২৭, ২০২১ ১০:৪৬ পূর্বাহ্ন
স্বাধীনতার ৫০ বছরে কৃষিতেও বিপ্লব
কৃষি গবেষনা

স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশের কৃষিতেও ঘটেছে বিপ্লব। রেকর্ড হয়েছে অল্প জমিতে বেশি পরিমাণ খাদ্যশস্য উৎপাদনের। এই সময়ে কৃষিতে সংযুক্ত হয়েছে পরিবেশসহিষ্ণু উচ্চফলনশীল শস্যের জাত। এক-ফসলি জমিতেও সারা দেশে আবাদ হয়েছে গড়ে দুটি ফসল। এলাকাভেদে এ চাষাবাদ গড়িয়েছে তিন থেকে চার ফসলেও।

কৃষিতে বাংলাদেশের সাফল্যকে বিশ্বের জন্য উদাহরণ হিসেবে প্রচার করছে জাতিসংঘ। প্রধান খাদ্যশস্য ধান উৎপাদনে বিশ্বে এখন তৃতীয় থেকে চতুর্থ অবস্থানে ওঠানামা করছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার আগে বেশি পরিমাণ জমি চাষাবাদে ফসল মিলত কম। এতে তখনকার সাড়ে ৭ কোটি মানুষের সংখ্যাগরিষ্ঠেরই তিন বেলা দুই মুঠো খাবার জোটানো কষ্টকর হতো। এখন সময় বদলেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ বলছে, বিশ্বজুড়ে প্রতি হেক্টরে শস্যের গড় উৎপাদনহার যেখানে প্রায় তিন টন, সেখানে বাংলাদেশে তা সোয়া চার টনে উন্নীত হয়েছে। ৫০ বছরে বাংলাদেশে ধানের উৎপাদন বেড়েছে তিন গুণেরও বেশি। গমের উৎপাদন দ্বিগুণ হয়েছে। সবজি উৎপাদন বেড়েছে পাঁচ গুণ। ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে ১০ গুণ।

১৯৭১ সালে দেশে যেখানে মোট দানাদার খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ১৮ লাখ টন, সেখানে ২০২০ সালে খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়েছে প্রায় সোয়া ৪ কোটি টন। ২০১৯ সালে উৎপাদন হয়েছে সাড়ে চার লাখ টন খাদ্যশস্য। তবে দেশে সর্বোচ্চ উৎপাদনের রেকর্ড হয় ২০১৭ সালে। তখন দেশে খাদ্যশস্যের উৎপাদন হয় ৫ কোটি ৪২ লাখ ৬২ হাজার টন।

শুধু দানাদার খাদ্যশস্য উৎপাদনেই নয়, কৃষির আরেক উপখাত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদেও সমৃদ্ধির স্বাক্ষর রেখেছে বাংলাদেশ। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার জরিপ বলছে, সবজি ও মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান এখন তৃতীয়। ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম। বিশ্বে ইলিশ উৎপাদনের ৮৬ শতাংশই হয় এ দেশে।

পাট উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। তবে পাট রপ্তানিতে বিশ্বে বাংলাদেশই প্রথম। ছাগল উৎপাদনেও অবস্থান চতুর্থ। আর ছাগলের মাংস উৎপাদনে পঞ্চম। আলু ও আম উৎপাদনে সপ্তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। চা উৎপাদনে অবস্থান নবমে। সার্বিক ফল উৎপাদনে রয়েছে দশম অবস্থানে। গবাদিপশু পালনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে দ্বাদশ অবস্থানে রয়েছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য বলছে, যে বছর বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে, সে বছর দেশে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ছিল ২ কোটি ১৭ লাখ হেক্টর। এসব জমিতে গড়ে ফসল ফলত একটি। ফলে খাদ্য চাহিদা মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের পাশাপাশি বিদেশি অনুদান ও খাদ্য সহায়তার ওপর দেশকে নির্ভর করতে হতো।

৫০ বছর পর আবাদযোগ্য ৬০ শতাংশ জমি কমে যাওয়া সত্তেও আগের চেয়ে সোয়া দুই গুণ জনসংখ্যার চাপ নিয়েও নিজস্ব উৎপাদন দিয়ে পুরো খাদ্য চাহিদা মেটাতে সক্ষম হচ্ছে বাংলাদেশ।

কৃষির এই বিপ্লবের স্বীকৃতি এসেছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) থেকে। সংস্থাটির বৈশ্বিক খাদ্য উৎপাদন পরিস্থিতি সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে শীর্ষ খাদ্য উৎপাদনকারী ১১ দেশের কাতারে বাংলাদেশকে গণ্য করা হয়েছে।

অর্থনীতি বিশ্লেষকেরা বলছেন, মূলত কৃষিতে পাওয়া ঈর্ষণীয় সাফল্যকে পুঁজি করেই বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা ও স্বনির্ভরতা অর্জন সম্ভব হয়েছে। একসময়ের দুর্ভিক্ষপীড়িত বাংলাদেশ এখন দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে নিরাপদ স্তরে আপৎকালীন মজুদ রেখেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করছে উদ্বৃত্ত খাদ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাত পণ্য।

আর কৃষি অর্থনীতিবিদরা দাবি করছেন, বর্তমান সরকারের কৃষিতে যুগোপযোগী পরিকল্পনা, উন্নত প্রযুক্তি, বীজ ও সারের ব্যবহার, কৃষিবিজ্ঞানীদের উচ্চফলনশীল নতুন জাত উদ্ভাবন বাংলাদেশের এই অর্জনের নেপথ্যে ভূমিকা রেখেছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, গত ১৬ মার্চ পর্যন্ত সময়ে দেশে ৫ লাখ ৯৩ হাজার টন খাদ্যশস্য (চাল ও গম) আপৎকালীন হিসেবে মজুদ রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, ‘দেশে প্রধান খাদ্যশস্যের মধ্যে রয়েছে চাল, গম ও ভুট্টা। করোনা পরিস্থিতির আগে দেশে চাহিদা মেটানোর পরও অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও সংগ্রহের মাধ্যমে শুধু সরকারি গুদামেই চালের মজুদ স্তর ছিল ১১ লাখ টনের কাছাকাছি।

‘ধান উৎপাদনে আমরা বিশ্বে চতুর্থ। উৎপাদিত ধান থেকে পাওয়া চাল আমরা রপ্তানি করারও নজির তৈরি করেছি। মানুষের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের কারণে আমরা গম ও ভুট্টা আমদানি করলেও প্রতি বছর এসব খাদ্যশস্যের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন, সংগ্রহ ও মজুদ বাড়ছে এবং আমদানি কমছে। এটা বাংলাদেশের সক্ষমতার প্রতীক।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খলীকুজ্জামান আহমদ বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছরে কৃষি খাতে যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে। বীজে নতুন নতুন উদ্ভাবনী জাত সংযুক্ত হয়েছে। চাষাবাদে প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে।

‘পারিবারিক পর্যায়ের উৎপাদন বৃত্ত থেকে বেরিয়ে কৃষি এখন বাণিজ্যিকীকরণ খামারে পরিণত হয়েছে। সেখানে প্রতি মৌসুমেই উৎপাদন উৎকর্ষতার শীর্ষে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এসব কিছুর সুফলই হলো দেশের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন।’

এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘দেশে আজ দারিদ্র্য দূর করায় যে সফলতা এসেছে, তার নেপথ্যেও ভূমিকা রেখেছে কৃষি খাত। এ কারণে গ্রামীণ কর্মসংস্থান বেড়েছে। এটি মানুষের উপার্জনে প্রভাব ফেলেছে এবং পারিবারিক খাদ্য সংকট দূর করতে সক্ষম হয়েছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের হেক্টরপ্রতি শস্যের গড় উৎপাদন সোয়া চার টনের মতো হলেও আমাদের উপরে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের গড় উৎপাদন ১০ টনের উপরে। উৎপাদন সক্ষমতার সর্বোচ্চ শিখরে আমাদের যেতে হবে। এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে শুধু খামারভিত্তিক নয়, প্রান্তিক পর্যায়ের চাষাবাদকেও আধুনিকায়নের আওতায় আনতে হবে।

‘গবেষণার ক্ষেত্র আরও বাড়াতে হবে। কৃষকের সুযোগ-সুবিধা আরও বাড়াতে হবে। পাশাপাশি দেশে কৃষিভিত্তিক শিল্পায়নে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। কৃষিপণ্যের ন্যায্য দামও নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে ভবিষ্যতে আরও কম জমিতে আমরা বর্তমানের চেয়েও বেশি পরিমাণ খাদ্যশস্য উৎপাদন করতে সক্ষম হব।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘আগামীর লক্ষ্য হলো ২০৩০ সালের মধ্যে কৃষিজ উৎপাদনশীলতা দ্বিগুণে উন্নীত করা। এর জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে প্রতিকূলতাসহিষ্ণু নতুন নতুন জাত চাষাবাদের আওতায় আনতে হবে।

‘চরাঞ্চল ও পাহাড়ে চাষাবাদকে টেকসই করা জরুরি। এ ছাড়া দেশের দক্ষিণাঞ্চল ও হাওরাঞ্চলে ভাসমান সবজি চাষ বাড়াতে হবে।’-নিউজ বাংলা

শেয়ার করুন

প্রকাশ : মার্চ ২৪, ২০২১ ২:৪২ অপরাহ্ন
কুলবোট প্রযুক্তি ব্যবহার করে মিনি কোল্ড স্টোরেজ
কৃষি গবেষনা

কুলবোট প্রযুক্তি ব্যবহার করে খুবি গবেষকের স্বল্প মূল্যের হিমায়িত সংরক্ষণাগার তৈরি করা হয়েছে।
পরিসংখ্যান বলে উন্নয়নশীল দেশসমূহে ফল ও শাক-সবজির সংগ্রহত্তোর ক্ষতি ৫০% এর উপর; বাংলাদেশে তার ব্যতিক্রম নয়। খবরের কাগজ খুললে নজরে আসে সবজির সঠিক সংরক্ষণের অভাবে কৃষক সঠিক দাম পাচ্ছে না। এছাড়া দিনমজুরের উচ্চমূল্যের ফলে সবজি সংগ্রহ করাই দুরূহ কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার ফলে প্রতিবছর মাঠেই নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সবজি। কুলবোট প্রযুক্তি ব্যবহার করে ক্ষুদ্র পরিসরে তৈরি হিমায়িত সংরক্ষণাগার এই ক্ষতি লাঘবে অনেক ভূমিকা রাখতে পারবে। এর ফলে কৃষকের আয় বাড়াতে সহায়তা করবে এবং গ্রামীণ পর্যায়ে এই মিনি কোল্ড স্টোরেজ তৈরি করে কৃষিপণ্য সংরক্ষণের এক বিপ্লব সাধিত হতে পারে এমনটি অভিমত ব্যক্ত করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রকল্পের গবেষক ড. প্রশান্ত কুমার দাশ। তিনিই এই কুলবোট প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করেছেন মিনি কোল্ড স্টোরেজ।
জানা যায়, হিমায়িত ফল ও শাক সবজির সংরক্ষণাগার প্রয়োজনের তুলনায় খুব বেশি নেই বাংলাদেশে। এর প্রধান কারণ সংরক্ষণাগার তৈরির নির্মাণ খরচ ও কৃষকদের প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাব অথবা ফল ও শাক-সবজি শীতলীকরণের উপকারিতা পুরাপুরিভাবে না জানা। অথচ শুধু তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণই ফল ও শাক-সবজি সংরক্ষণকাল ১ সপ্তাহ থেকে ১ মাস পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারে। বাস্তবতার ক্ষেত্রে কৃষক তার উৎপাদিত ফল ও শাক-সবজি বেশিদিন সংগ্রহ করে রাখতে পারে সে সব কৃষক বেশি দামে তাঁর উৎপাদিত দ্রব্য বাজারের চাহিদা অনুযায়ী বিক্রি করতে পারে ও আর্থিকভাবে লাভবান হন। ফল ও শাক সবজি সংরক্ষণাগার নির্মাণ খরচ কমানো ও সহজে বোধগম্য প্রযুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ‘স্টোর ইট কোল্ড’ কোম্পানি যুগোপযোগী এক নতুন শীতলীকরণ যন্ত্র আবিষ্কার করে যার নাম কুলবোট। এই প্রযুক্তি উদ্ভাবনে অগ্রণী ভূমিকা রাখে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালির্ফোনিয়া ডেভিস এর হর্টিকালচার ইনোভেশন ল্যাবরেটরি। এই কুলবোট প্রযুক্তি ছোট পরিসরের কৃষকের ফল ও শাক-সবজির সংরক্ষণাগার হিসেবে বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশে আজ ব্যবহৃত হচ্ছে। এ গবেষণা কাজের প্রধান তত্ত্বাবধায়ক ড. প্রশান্ত কুমার দাশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পের অধীনে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্ম প্লাজম সেন্টারে এই কুলবোট প্রযুক্তি ব্যবহার করে ১০ ফিট * ৮ ফিট * ৯ ফিট মাপের স্বল্পমূল্যের একটি হিমাগার তৈরি করেছেন। প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ছিল বিভিন্ন প্যাকেজিং দ্রব্য এবং প্রি-কুলিং মাধ্যম ব্যবহার করে সহজে পচনশীল আকর্ষণীয় দামি স্ট্রবেরি ফলের সংরক্ষণকাল বাড়ানো। প্রধান গবেষক উল্লেখ করেন তিনি স্ট্রবেরি ফলের প্রি-কুলিং এর জন্য তিনটি মাধ্যম ব্যবহার করেন, যেমন কুলবোট প্রযুক্তি, হাইড্রোকুলার এবং সাধারণ টেবিল ফ্যানের বাতাসে শীতলীকরণ। প্রাথমিকভাবে ব্যয় কুলবোট প্রযুক্তিতে বেশি হলেও দীর্ঘমেয়াদে ফলাফল বিবেচনায় কুলবোট এই তিন মাধ্যমের মধ্যে সবচেয়ে উপযোগী। কুলবোট প্রযুক্তির মাধ্যমে হিমাগার তৈরির জন্য একটি স্বতন্ত্র পাকা ঘর, একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (্এসি), একটি কুলবোট, শোলা, ইনসুলেশন পেপার ও একটি কনসিল দরজা প্রয়োজন। যদি কারো স্বতন্ত্র ঘর থাকে তবে হিমাগারে নির্মাণ খরচ অনেকাংশে কমে যাবে বলে প্রধান গবেষক মনে করেন। হিমাগার নির্মাণের সম্ভাব্য উল্লেখযোগ্য খরচ হিসেবে যেখানে থাকবে কুলবোটের দাম- ২৫,৫০০ টাকা, এসি ১.৫ টন বা ২ টন ৮৫,০০০ টাকা, ইনসুলেশন ও শোলা ৫০০০ টাকা, ঘর নির্মাণ খরচ ১,৫০,০০০ টাকা, বিবিধ ১০,০০০ টাকা সর্বমোট ২,৭৫,৫০০ টাকা (আনুমানিক)। পক্ষান্তরে, জমির দামসহ একটি ছোট আকারের হিমাগার তৈরির জন্য আনুমানিক এক থেকে দুই কোটি টাকার বেশি প্রয়োজন যা সাাধারণ কৃষকের পক্ষে জোগাড় করা দুরূহ ব্যাপার। কুলবোট প্রযুক্তির বড় অন্তরায় সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সংযোগ। যদিও সোলার প্যানেল ব্যবহার করে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব বলে প্রধান গবেষক মনে করেন। তাছাড়া দেশে এখন আর ততোটা লোডশেডিং হয় না।
তিনি মনে করেন ১০ ফিট * ৮ ফিট * ৯ ফিট ঘরে একজন কৃষক ৪০-৫০ মন ফল ও শাক-সবজি যেমন আলু, আম, স্ট্রবেরি, ফুলকপি, টমেটো ইত্যাদি দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন। বিশেষ করে অসময়ে ফল ও শাক-সবজি সরবরাহে বাড়তি একটি ভূমিকা রাখতে পারবে এবং বিভিন্ন পুষ্টির ঘাটতি পূরণে সহায়ক হিসাবে কাজ করবে। এই অল্প খরচের হিমাগার (মিনি কোল্ড স্টোরেজ) বাংলাদেশের মত কৃষিপ্রধান দেশে অনস্বীকার্য বলে প্রধান গবেষক মনে করেন। কৃষক চাইলেই তাদের বিভিন্ন সমবায় সমিতির মাধ্যমে বিভিন্ন অঞ্চলে বা সক্ষম শ্রেণির কৃষক বা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা এই হিমাগার তৈরি করতে পারে বলেও তিনি মনে করেন।
গবেষণা কাজের প্রধান তত্ত্বাবধায়ক ড. প্রশান্ত কুমার দাশ আরও মনে করেন, নন ক্লাইম্যাকট্রিক ফল (স্ট্রবেরি) সম্পূর্ণ পাকা অবস্থায় সংগ্রহ করতে হয়। এই ফলের বৈশিষ্ট্য সংগ্রহের পর ফলের ভিতর শ্বসন প্রক্রিয়া বেড়ে যায় যা ফল দ্রুত পচনের অন্যতম কারণ। এজন্য ফল সংগ্রহের পরপরই প্রি-কুলিং করা খুবই প্রযোজন। যার ফলস্বরূপ শ্বসন প্রক্রিয়া কমে যাবে এবং ফলের সংরক্ষণকাল বেড়ে যাবে অনেকদিন। যদিও প্রি-কুলিং অপারেশন বাংলাদেশে চোখে পড়ে না। আমাদের দেশের উত্তরাঞ্চলে এখন স্ট্রবেরির চাষাবাদ অনেকাংশে বেড়েছে এবং কৃষকরা আকর্ষণীয় লাভজনক ফল হিসাবে স্ট্রবেরি উৎপাদন করছে। কিন্তু ফল সংরক্ষণাগারের অভাবে তারা সঠিক দাম পাচ্ছে না এবং বেশি দিন স্ট্রবেরি সংরক্ষণ করে রাখতে পারছে না। আলু, টমেটো, গাজরসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রেও একই সমস্যা বিরাজমান।
গবেষক মনে করেন, কুলবোট প্রযুক্তির হিমাগার এ সমস্যার সমাধানে অনেকাংশেই সফল হবে। এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের ডুমুরিয়া, তালা, কেশবপুর উপজেলা বাংলাদেশের সবজি উৎপাদনের এক রোল মডেল। এ সকল অঞ্চলে এই হিমাগার তৈরি করলে এই অঞ্চলের কৃষকরা ফল ও শাক-সবজির অনাকাঙ্খিত সংগ্রহত্তোর ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা ও আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। এছাড়া পরিবারের পুষ্টির সুষম বন্টন নিশ্চিত হবে বলেও প্রধান গবেষক মনে করেন। একই সাথে এই কুলবোট প্রযুক্তিতে তৈরি মিনি কোল্ড স্টোরেজ বাংলাদেশে ক্ষুদ্র পরিসরে কৃষিপণ্য সংরক্ষণে বিপ্লব ঘটাতে পারবে বলে আশাবাদ পর্যবেক্ষক মহলের।
তথ্যসূত্রঃ খুবি ফেসবুক পেইজ
শেয়ার করুন

প্রকাশ : মার্চ ২৩, ২০২১ ৭:৩৬ অপরাহ্ন
দাকোপে লবণাক্ত জমিতে বিনাচাষে সূর্যমুখী ও গম চাষ
কৃষি গবেষনা

খুবির এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের গবেষণা প্রকল্পের আওতায় দাকোপে লবণাক্ত জমিতে বিনাচাষে সূর্যমুখী ও গম চাষ এবং সার ব্যবস্থাপনার উপর মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের গবেষকবৃন্দ খুলনার দাকোপে লবণাক্ত জমিতে বিনাচাষে সূর্যমুখী ও গম ফসলের চাষাবাদ এবং সার ব্যবস্থাপনার উপর একটি গবেষণা পরিচালিত করছেন। কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন (KGF) বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল এগ্রিকালচার রিসার্চ (ACIAR) এর আর্থিক সহযোগিতায় এই গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে। আজ ২৩ মার্চ ২০২১ খ্রি. তারিখ মঙ্গলবার দাকোপ উপজেলার পানখালীতে এই গবেষণা প্রকল্পের প্রদর্শনী প্লটে মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিন আয়োজিত এ মাঠ দিবসে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আলোচনা করেন খুুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান স্কুলের ডিন প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস। এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. মোঃ সারওয়ার জাহান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ হাফিজুর রহমান। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন খুবির এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের শিক্ষক ও চারুকলা স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. মোঃ মনিরুল ইসলাম, খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মোর্তজা নজরুল। স্বাগত বক্তৃতা করেন প্রকল্পের প্রধান গবেষক এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মোঃ এনামুল কবির। অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন দাকোপ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান, ইউপি সদস্য আবুল কালাম আজাদ, কৃষক সমিতির সভাপতি মোস্তাক আহমেদ, কৃষাণী গীতা বালা প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রকল্পের সহ-গবেষক এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক বিধান চন্দ্র সরকার।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, খুলনা অঞ্চলের লবণাক্ত জমিতে কৃষকদের ধান চাষের পর যে সময়টা পাওয়া যায় সেটা কাজে লাগিয়ে বিনাচাষে সূর্যমুখী ও গম ফসল চাষাবাদ করা যাবে। পরিমিত পরিমাণে ইউরিয়া সার ব্যবহার করেই ধান তোলার পর দ্বিতীয় ফসলের চাষাবাদ করা সম্ভব। আগস্টের মাঝামাঝি ধান রোপণ করলে দ্বিতীয় ফসল চাষে সুবিধা পাওয়া পাবে। এর ফলে কৃষকরা অতিরিক্ত ফসল পাবেন। তাদের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে তা উপকারে আসবে। কর্মসংস্থান হবে, খাদ্য উৎপাদন বাড়বে এবং ভোজ্যতেল পাওয়া যাবে।
বক্তারা বলেন, এই প্রকল্পের মুখ্য উদ্দেশ্য উপকূলীয় লবণাক্ত একফসলী এলাকায় অতিরিক্ত ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে কৃষকের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন। বক্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা বেড়েই চলেছে। এই চাহিদা মেটাতে খুলনা অঞ্চলের ফাঁকা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করে দেশকে ভোজ্যতেলে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে দেওয়া সম্ভব।
এর আগে গবেষক ও অতিথিবৃন্দ বিনাচাষে সূর্যমুখী ও গম চাষাবাদের প্রদর্শনী প্লট পরিদর্শন করেন।
তথ্যসুত্রঃ খুবি ফেসবুক পেইজ
শেয়ার করুন

প্রকাশ : মার্চ ২৩, ২০২১ ৭:৩৫ অপরাহ্ন
বিস্ময়কর উদ্ভাবন; এক গাছেই উপরে বেগুন, নিচে আলুু!
কৃষি গবেষনা

গাছ একটাই, কিন্তু উপরের অংশে ফলবে বেগুন আর মাটির নিচের অংশে আলু। এমন উদ্ভাবনের ফল রীতিমতো বিস্ময়ের খোরাক জাগাচ্ছে সবার মনে। একইগাছে একসাথে বেগুন ও আলু ধরে বিধায়, গবেষক এক্ষেত্রে বেগুনের ইংরেজি পরিভাষা ‘ব্রিঞ্জাল’ আর ‘আলু’ একত্রে নিয়ে গাছটির নাম দিয়েছেন ‘ব্রিঞ্জালু বা বেগুন-আলু।’

রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) অবসরপ্রাপ্ত ভাইস-চ্যান্সেলর ড. আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ ফারুক ব্রিঞ্জালু’র উদ্ভাবক। গত বছরের নভেম্বর মাসে শুরু করা এ গবেষণা চলতি মাসে সফলতার মুখ দেখেছে। ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস, এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি) ক্যাম্পাসের গবেষণা মাঠে গবেষণাটি সম্পন্ন হয়েছে।

গবেষক ড. ফারুক জানান, ‘এখানে জোড় কলমের মাধ্যমে আলু ও বেগুন গাছের কলম সৃষ্টি  করে একটি স্বতন্ত্রধর্মী গাছে রূপ দেওয়া হয়েছে। গাছটির উপরের অংশে বেগুন ধরবে আর নিচের অংশে আলু।’ বিএডিসি’র সহকারি পরিচালক ফাহাদ উল হক ও আইইউবিএটি শিক্ষার্থী মাহাদী হাসান সংশ্লিষ্ট এ গবেষণার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।

 

ব্রিঞ্জালু নিয়ে গবেষকের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে গবেষক ড. ফারুক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বছর দুয়েক আগে একইগাছে টমেটো ও আলু ধরিয়ে টমালু উদ্ভাবন করেছিলাম। টমালু এ বছরই বগুরার কিছু চাষী বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করছে। নিশ্চয়ই আনন্দের বিষয় এটি। সেই আলোকে ব্রিঞ্জালুকেও বাণিজ্যিকীকরণের উদ্দেশে মাঠপর্যায়ে ছড়িয়ে দেবার সর্বাত্ম চেষ্টা থাকবে। এক্ষেত্রে সরকারি কিংবা বেসরকারি কোন সংস্থার পৃৃষ্ঠপোষকতা গবেষণার সার্বিক দিককে তরান্বিত করবে।

আরও পড়ুনঃ তাল ও ডিম বেগুনের লাভজনক সংযোজন

সূত্রঃবিডি প্রতিদিন

শেয়ার করুন

প্রকাশ : মার্চ ২৩, ২০২১ ১০:২৪ পূর্বাহ্ন
সবজি উৎপাদন বৃদ্ধির এক অনন্য হাতিয়ার হাইব্রিড বীজ
কৃষি গবেষনা

সুস্থ-সবল জীবনের জন্য প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণ বিভিন্ন ধরনের সবজি খাওয়া অপরিহার্য। কারণ জীবন ধারণের জন্য অত্যাবশ্যকীয় ভিটামিন ও খনিজ লবণের অন্যতম উৎস হলো সবজি। বর্তমানে বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সবজির চাহিদা পূরণ করতে হলে ১১.২৪ মিলিয়ন টন সবজির প্রয়োজন। সবজি উৎপাদন হয় ৪.০৫ মিলিয়ন টন।

ক্রমহ্রাসমান আবাদি ভূমির চাপকে সমান রেখে সবজির উৎপাদন প্রায় তিনগুণ বাড়াতে হবে। এ পরিস্থিতিতে একমাত্র হাইব্রিড সবজির জাত ব্যবহার ও উন্নত চাষাবাদ প্রযুক্তির মাধ্যমেই এই বিশাল সবজির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।

বর্তমানে বাংলাদেশের কৃষকরা খুব অল্প পরিমাণে (৩০-৪০ শতাংশ) সবজির হাইব্রিড বীজ ব্যবহার করেন। কিন্তু বিশ্বের অনেক দেশেই শতভাগ পর্যন্ত সবজির হাইব্রিড জাত ব্যবহার হচ্ছে।

সংকর (হাইব্রিড) ও সংকরায়ন

সংকরায়ন হলো একটি উদ্ভিদ প্রজনন প্রদ্ধতি যার মাধ্যমে দুই বা ততোধিক ভিন্ন রকম জেনোটাইপ সম্পন্ন উদ্ভিদগুলোর যৌনমিলনের ফলে নতুন ধরনের জাত সৃষ্টি করা। এর ফলে যে নতুন জাত তৈরি হয় তা হলো সংকর বা হাইব্রিড, আর এ প্রক্রিয়াটি হলো সংকরায়ন (Hybridi“ation)।

সংকরায়নের উদ্দেশ্য

সংকরায়নের প্রধান উদ্দেশ্য হলো কৌলিক বিভিন্নতা সৃষ্টি করা।

সংকরায়নের মাধ্যমে কোনো একটি জাতে অন্যান্য জাত বা বন্য প্রজাতিগুলো থেকে এক বা একাধিক বৈশিষ্ট্য স্থানান্তরিত করা যায়।

সংকরায়নের অন্য একটি উদ্দেশ্য হলো প্রজনকদ্বয় অপেক্ষা উন্নতর বা অধিক ফলনশীল (১০-৫০ শতাংশ) পর্যন্ত জাত সৃষ্টি করা।

সংকরায়ন করার আগে নিম্নোক্ত তথ্যাবলি জানা একান্ত প্রয়োজন

পুং-প্রজনক (Male line) সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান।

স্ত্রী-প্রজনক (Female line) সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান।

গাছগুলো এক লিঙ্গ না উভয়লিঙ্গ।

ফুল প্রস্ফুটিত হওয়ার সময়।

ফুল স্বপরাগী (Self pollinated) বা পর-পরাগী (Cross pollinated)।

ফসল সংগ্রহের সময়।

যে কোনো ফসলের হাইব্রিড জাত তৈরি বা সংকরায়নের জন্য অনেকগুলো ধাপ আছে। প্রতিটি ধাপ সতর্কতার সঙ্গে অতিক্রম করলেই শুধু সংকরায়নে কৃতকার্যতা আসতে পারে। ধাপগুলো নিম্নে বর্ণনা করা হলো :

প্রজনক নির্বাচন : সংকরায়নের প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো প্রজনক নির্বাচন। উদ্দেশ্যের ওপর নির্ভর করে প্রজনক নির্বাচন করতে হয়। যদি আমাদের উদ্দেশ্য হয় সবজির ফলন বৃদ্ধি, তাবে যে লাইনদ্বয়ের ফলন বেশি শুধু তাদেরই নির্বাচন করতে হবে। এক্ষেত্রে একটিকে পুরুষ লাইন হিসেবে নির্বাচন করতে হবে এবং অন্যটিকে স্ত্রী লাইন নির্বাচন করতে হবে। তবে উভয় লাইন অবশ্যই সমসত্ব (Homoyygous) হতে হবে। নিদিষ্ট লাইন দুটি যদি সমসত্ব (Homoyygous) না হয় তবে কখনোই সংকর বা হাইব্রিড জাত তৈরি করা যাবে না।

স্ত্রী ও পুরুষ ফুলকে সংকরায়নের জন্য উপযুক্তকরণ : নির্বাচিত স্ত্রী লাইন ও পুরুষ লাইনের নিজ নিজ ফুলকে সংকরায়নের জন্য উপযুক্ত করে নেওয়া সংকরায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।

এক্ষেত্রে ফুলের বৈশিষ্ট্যের জ্ঞান থাকা খুবই জরুরি। কোনো কোনো সবজিতে একই ফুলে পুরুষ (পুংকেশর) ও স্ত্রী (গর্ভমু-) অংগ বিদ্যমান (যেমন- টমেটো, বেগুন ইত্যাদি) আবার কোনো কোনো সবজিতে পুরুষ ফুল ও স্ত্রী ফুল একই গাছে আলাদা আলাদাভাবে থাকে (যেমন কুমড়া জাতীয় ফসল), আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুরুষ ও স্ত্রী গাছেই আলাদা (যেমন পটোল, কাঁকরোল ইত্যাদি)। সবজির প্রকার ভেদ অনুযায়ী কাজের ধরন ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, টমেটো ও বেগুনের ক্ষেত্রে ফুল ফোটার আগের দিন স্ত্রী লাইনের ওই নিদিষ্ট ফুল থেকে পুরুষ অঙ্গ (পুংকেশর) চিমটার সাহায্যে অপসারণ করা হয়। এ কাজটিকে বলা হয় পুংহীনকরণ (Emasculation) এ পুংহীনকরণ কাজটি বিভিন্নভাবে করা যেতে পারে। তবে চিমটার সাহায্যে অপরিণত ফুল হতে পুরুষ অংগ (পুংকেশর) অপসারণ বেশ প্রচলিত।

কিন্তু কুমড়া জাতীয় সবজির ক্ষেত্রে এই কাজটি করা হয় ভিন্নভাবে। এক্ষেত্রে যে স্ত্রী ও পুরুষ ফুল পরের দিন ফোটার সম্ভাবনা আছে, এমন পুরুষ ও স্ত্রী ফুলকে এক বিশেষ ধরনের কাগজের ব্যাগ (Butter paper bag) দিয়ে ঢেকে দিতে হবে, যেন কোনোভাবেই প্রাকৃতিকভাবে পরাগায়ন না হতে পারে। কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে এই ধরনের কাগজের ব্যাগকে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

পরাগায়ন : প্রত্যেক সবজির পরাগায়নের সময় নিদিষ্ট এবং এই সময়কাল ২-৩ ঘণ্টা হয়ে থাকে। ওই নিদিষ্ট সময়ে মধ্যে পরাগায়ন না হলে ফল সেট হয় না। যেমন মিষ্টিকুমড়ার ক্ষেত্রে সকাল ৬টা থেকে সকাল ৯টা ৩০ পর্যন্ত সবচেয়ে উপযোগী সময়। এর আগে বা পরে পরাগধানী ও পরাগ রেণু কার্যকর অবস্থায় থাকে না। এই নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে (টমেটো ও বেগুনের ক্ষেত্রে (সকাল ৮টা ৩০ থেকে ১০টা ৩০ পর্যন্ত) ফুটন্ত স্ত্রী ফুল যা আগে পুংহীন করা হয়েছে, তার গর্ভমু-ের ওপর কাক্সিক্ষত পুরুষ লাইনের গাছ থেকে পুংরেণু (চড়ষষবহ) সংগ্রহ করে তা ভালোভাবে লাগিয়ে দিতে হবে।

এরপর বেগুনের ক্ষেত্রে উক্ত স্ত্রী ফুলটিকে আগে উল্লেখিত বিশেষ ব্যাগ দিয়ে ঢেকে দিতে হবে; কিন্তু টমেটোর ক্ষেত্রে তার প্রয়োজন হয় না। কুমড়াজাতীয় সবজির ক্ষেত্রে, পরাগায়নের আগের দিন ব্যাগ দিয়ে ঢেকে রাখা স্ত্রী ফুলটিকে নির্দিষ্ট সময়ে খুলে কাক্সিক্ষত পুরুষ লাইন থেকে পুরুষ ফুলটিকে ছিঁড়ে পাপড়িগুলোকে আলাদা করে স্ত্রী ফুলের গর্ভমু-ের ওপর ভালোভাবে লাগিয়ে দিতে হবে এবং স্ত্রী ফুলটিকে পুনরায় ঢেকে দিতে হবে।

এক্ষেত্রে একটি পুরুষ ফুল দিয়ে ২-৩টি স্ত্রী ফুলকে পরাগায়ন করা যায়। ফুল ঢাকার ক্ষেত্রে একটি বিশেষ সতকর্তা অবলম্বন করতে হবে, তা হলো ফুল ঢাকার পর ফুলের ভেতর যেন কোনো পিঁপড়া বা অন্য কোনো পোকা প্রবেশ করতে না পারে। কাক্সিক্ষত সংকর (হাইব্রিড) ফল সেট হওয়ার ৩-৪ দিন পর ব্যাগ অপসারণ করে দিতে হবে। সংকরায়িত ফলে অবশ্যই বিভিন্ন তথ্য সংবলিত একটি ট্যাগ ঝুলিয়ে দিতে হবে। ট্যাগের মধ্যে পরাগায়নের তারিখ ও প্রজনকদ্বয়ের নাম অবশ্যই লিখে রাখতে হয়।

বীজ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ : বীজ পরিপক্ব হলে প্রতি গাছের বীজ আলাদা আলাদা ব্যাগে ট্যাগ সহকারে সংগ্রহ করা হয়। বীজ শুকিয়ে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়, যেন তা অন্যান্য বীজের সঙ্গে মিশে যেতে না পারে এবং পোকামাকড় কর্তৃক আক্রান্ত হতে না পারে।

হাইব্রিড বীজের ব্যবহার : উপরোক্তভাবে উৎপাদিত সংকর (হাইব্রিড) বীজকে শুধু একবারেই ব্যবহার করা যাবে। কোনোভাবেই পরবর্তী বছর তা থেকে বীজ রাখা যাবে না এবং খাবারের জন্য ব্যবহার করা উচিত নয়।

দিন দিন আমাদের দেশে হাইব্রিড সবজি চাষাবাদ বাড়ছে। আমাদের দেশকে ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করার লক্ষ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সুখী, সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে সবজি উৎপাদন কয়েকগুণ বাড়াতে হবে। আর এক্ষেত্রে অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে সবজিতে শতভাগ হাইব্রিড বীজের ব্যবহার। হাইব্রিড বীজকে কৃষকের মধ্যে জনপ্রিয় করতে হবে এবং সে সঙ্গে সঙ্গে হাইব্রিড সবজি বীজের প্রাপ্যতাও নিশ্চিত করতে হবে।

এক্ষেত্রে একটি ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত আছে যে, হাইব্রিড সবজির স্বাদ দেশি সবজির মতো হয় না। এ ধারণা সঠিক নয়। হাইব্রিড সবজির স্বাদ নির্ভর করে প্রজনকদ্বয়ের স্বাদের ওপর এবং রাসায়নিক সারের ব্যবহারের ওপর। মাত্রাঅতিরিক্ত রাসায়নিক সারের ব্যবহারের কারণে সবজির স্বাদে কিছুটা ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়।

বর্তমানে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওয়াতাধীন বিএডিসি ‘বিএডিসির সবজি বীজ বিভাগের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে হাইব্রিড সবজি বীজ উৎপাদন প্রক্রিয়াজতকরণ, সংরক্ষণ ও বিতরণ কার্যক্রম শক্তিশালীকরণ প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

আশা করা যায়, এই প্রকল্পের গবেষণা প্রান্তিক পর্যায়ে হাইব্রিড সবজি বীজের স্বল্পমূলে প্রাপ্যতা নিশ্চিত হবে এবং দেশে সবজি চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব হবে।

ড. বাহাউদ্দিন আহমদ ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সবজি বিভাগ, উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র বিএআরআই, জয়দেবপুর, গাজীপুর

শেয়ার করুন

প্রকাশ : মার্চ ২১, ২০২১ ৭:১৭ অপরাহ্ন
লবণ সহিষ্ণু তিনটি সরিষার জাত উদ্ভাবন করলো বাকৃবি
কৃষি গবেষনা

বাকৃবি প্রতিনিধি:লবণ সহিষ্ণু ও স্বল্প সময়ে উৎপাদনক্ষম উচ্চফলনশীল তিনটি সরিষার জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের (বাকৃবি) গবেষকবৃন্দ। জাতীয় কৃষি প্রযুক্তি প্রকল্পের পিএইচডি প্রোগামের আওতায় বাকৃবি এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই) যৌথভাবে জাতগুলো উদ্ভাবনে কাজ করেন। গবেষণায় বাকৃবির বর্তমান ভিসি এবং কৌলিতত্ত¡ ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসানের তত্ত¡াবধানে প্রধান গবেষক হিসেবে ছিলেন বিএআরইয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ফেরদৌসী বেগম। এছাড়াও সহকারী গবেষক হিসেবে ছিলেন বাকৃবির কৌলিতত্ত¡ ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আশরাফুল হক ও কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সিরাজুল ইসলাম এবং বিএআরআইয়ের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. রোজিনা আফরোজ। কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে বাকৃবি ও বিএআরআইয়ের যৌথভাবে উদ্ভাবিত তিনটি সরিষার জাত হলো ‘বাউ সরিষা-১’, ‘বাউ সরিষা-২’ এবং ‘বাউ সরিষা-৩’। উদ্ভাবিত জাতগুলো ১২ ডেসিসিমেন্স পর্যন্ত লবণ সহনশীল।

রবিবার (২১ মার্চ) দুপুরে বিশ^বিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের সম্মেলন কক্ষে ‘স্বল্প মেয়াদে লবণ সহনশীল র‌্যাপসীড জাতের সরিষার বিকাশ’ শীর্ষক এক কর্মশালায় এসব তথ্য জানানো হয়।

কর্মশালায় কৌলিতত্ত¡ ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক শরীফ আর রাফির সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন বাকৃবি ভিসি অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের কার্যনির্বাহী পরিচালক ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ^াস, কৃষি অনুষদীয় ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুর রহিম, উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা কমিটির সহ-সমন্বয়ক ড. মো. রফিকুল ইসলাম, বাকৃবি রিসার্চ সিস্টেমের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আবু হাদী নূর আলী খান।

গবেষকরা জানান, বাকৃবির উদ্ভাবিত এই তিনটি সরিষার জাত থেকে লবণাক্ত মাটিতে প্রতি হেক্টরে ২ দশমিক ৫ মেট্রিক টন এবং অন্যান্য মাটিতে প্রতি হেক্টরে ৩ মেট্রিক টন ফলন পাওয়া যাবে। এই জাতগুলো থেকে ৪০-৪১ শতাংশ তেল পাওয়া যাবে। উদ্ভাবিত জাতগুলো অলবণাক্ত ও লবণাক্ত উভয় এলাকায় চাষ করা যায় বলে দেশে সরিষা উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। উদ্ভাবিত তিনটি জাত ইতিমধ্যেই জাতীয় বীজ বোর্ড থেকে নিবন্ধিত হয়েছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে ভোজ্য তেলের চাহিদা প্রায় ৫১ দশমিক ২৭ লাখ মেট্রিক টন যার মধ্যে ৪৬ দশমিক ২১ লাখ মেট্রিক টন আমদানি করতে হয়। এর মূল্য প্রায় ২৩ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশে সরিষা, তিল ও সূর্যমুখী থেকেই সাধারণত ভোজ্য তেল তৈরী করা হয়। দেশের মানুষ গড়ে প্রতিদিন ২০ থেকে ২২ গ্রাম করে তেল খায়। দেশে মোট ৪ দশমিক ৪৪ লাখ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়। নতুন উদ্ভাবিত সরিষার চাষাবাদ করলে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।

 

শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop