১:৩১ পূর্বাহ্ন

মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
প্রকাশ : অগাস্ট ১, ২০২৩ ১২:৩৮ অপরাহ্ন
গরু মোটাতাজাকরণে খাদ্য মিশ্রণ তৈরির উপায়
প্রাণিসম্পদ

গরু মোটাতাজাকরণে খাদ্য মিশ্রণ তৈরির উপায় খামারিরা অনেকেই জানেন না। আপনার এলাকায় প্রয়োজনীয় উপকরণের সহজ প্রাপ্যতা এবং দামের বিষয়টি বিবেচনা করে আপনি দানাদার খাদ্যের মিশ্রণের উপকরণ পরিবর্তনও করা যাবে।
প্রথম মিশ্রণঃ

উপকরণ পরিমাণ

১। গমের ভূষি ৫.৪ কেজি

২। খেসারীর ভূষি ২.০ কেজি

৩। তিলের খৈল ১.৮ কেজি

৪। শুটকি মাছের গুড়া ৭০০ গ্রাম

৫। লবন ৫০ গ্রাম

৬। ঝিনুকের গুড়া ৫০ গ্রাম

দ্বিতীয় মিশ্রণঃ

উপকরণ পরিমাণ

১। চাল ভাঙ্গা (খুদ) ২.৫ কেজি

২। গমের ভূষি ১.৫ কেজি

৩। চালের কুড়া ২.০ কেজি

৪। মসুরের ভূষি ১.৯ কেজি গ্রাম

৫। তিলের খৈল ১.৫ কেজি

৬। শুটকি মাছের গুড়া ৫০০ গ্রাম

৭। ঝিনুকের গুড়া ৫০ গ্রাম

৮। লবণ ৫০ গ্রাম

তৃতীয় মিশ্রণঃ

উপকরণ পরিমাণ

১। চাল ভাঙ্গা (খুদ) ১.০ কেজি

২। গমের ভূষি ১.৫ কেজি

৩। চালের কুড়া ৪.০ কেজি

৪। খেসারি ভাঙ্গা ১.০ কেজি গ্রাম

৫। সরিষার খৈল ২.০ কেজি

৬। শুটকি মাছের গুড়া ৪০০ গ্রাম

৭। ঝিনুকের গুড়া ৫০ গ্রাম

৮। লবণ ৫০ গ্রাম

চতুর্থ মিশ্রণঃ

উপকরণ পরিমাণ

১। খেসারীর ভূষি ১.৪ কেজি

২। গমের ভূষি ১.০ কেজি

৩। চালের কুড়া ৫.০ কেজি

৪। মসুরের ভূষি ১.০ কেজি গ্রাম

৫। তিলের খৈল ১.৫ কেজি

৬। ঝিনুকের গুড়া ৫০ গ্রাম

৭। লবণ ৫০ গ্রাম

শেয়ার করুন

প্রকাশ : জুলাই ৩০, ২০২৩ ১০:৫২ পূর্বাহ্ন
খামারে গরুকে সুস্থ রাখতে যা করবেন
প্রাণিসম্পদ

গরু পালন লাভজনক হওয়ায় অনেকেই এখন গরুর খামার গড়ে তুলছেন। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে ব্যাপকহারে গরু পালন করা হচ্ছে। তবে গরুর খামার করে অনেকেই লোকসানে পড়ছেন। এর প্রধান কারণ হল গরুর নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়া। খামারের গরুকে সুস্থ রাখতে যেসব কাজ করতে হবে সেগুলো খামারিদের অবশ্যই জেনে খামার পরিচালনা করতে হবে।

খামারের গরুকে সুস্থ রাখতে যেসব কাজ করতে হবে:
খামারের গরুগুলোকে প্রতিদিন নির্দিষ্ট হারে সুষম খাদ্য প্রদান করতে হবে। নিয়মিত গরুগুলোকে সুষম খাদ্য প্রদান করলে গরুগুলো দ্রুত বৃদ্ধি পাবে ও রোগের দ্বারা কম আক্রান্ত হবে। খামারের প্রত্যেকটি গরুর জন্য আলাদাভাবে খাদ্য প্রদানের ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর খাদ্য প্রদান করতে হবে। খামারের গরুগুলোকে সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখার জন্য খামারের চারপাশের খোলামেলা পরিবেশের ব্যবস্থা রাখতে হবে। বাইরের বাতাস ও আলো যাতে ভালোভাবে চলাচল করতে পারে সেদিকেও বিশেষ নজর দিতে হবে। আলো ও বাতাসের ব্যবস্থা রাখলে গরু সুস্থ থাকবে ও রোগের দ্বারা কম আক্রান্ত হবে।

গরুগুলোকে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরিক্ষা করাতে হবে। কোন গরু অসুস্থ হয়ে গেলে রোগের ধরণ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।পালন করা গরুগুলোকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে। গরুকে নিয়মিত কৃমির ওষুধ খাওয়ালে গরুর শরীর সুস্থ থাকে ও গরু স্বাস্থ্যবান হয়।

খামারের গরুগুলোকে বাইরে বের করে খামার ভালোকরে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করতে হবে। প্রয়োজনে জীবাণুনাশক ছিটিয়ে দিয়ে জীবাণু ধ্বংস করতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে কোন ভাবেই খামার পরিষ্কার করার পানি যাতে জমে না থাকে।

খামারের গরুগুলোকে নিয়মিত গোসল করানোর ব্যবস্থা করতে হবে। নিয়মিত গরুগুলোকে গোসল করালে গরুর শরীর পরিষ্কার থাকে ও রোগ-জীবাণুর আক্রমণ কম হয়। এছাড়াও নিয়মিত গোসল করালে গরুর ত্বক মসৃণ ও চকচকে থাকে।খামারে কোনভাবেই যাতে বাইরের কোন ব্যক্তি না প্রাণী অবাধে প্রবেশ করতে না পারে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। যদি প্রবেশ করাতেই হয় তাহলে প্রবেশের আগে জীবাণুমুক্ত করাতে হবে।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : জুলাই ২৯, ২০২৩ ১২:২৪ অপরাহ্ন
গাভীর খামার করে মাসিক আয় ৭০ হাজার টাকা
প্রাণিসম্পদ

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ফরিদাবাদ গ্রামের মাহামুদুল হক মাস্টার্স পাস করে গ্রামে গড়ে তুললেন গাভির খামার। ১০ বছরের মাথায় এখন তাঁর মাসিক আয় প্রায় ৭০ হাজার টাকা।

জানা যায়, ২০১০ সালে তিনি রংপুরের পীরগাছা উপজেলার জাদুলস্কর গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যান। সেখানে বড় বড় গাভির খামার দেখে এসে গাভি পালনের পরিকল্পনা করেন। বিষয়টি নিয়ে মাহামুদুল তাঁর বাবা মোজাহারুল ইসলামের সঙ্গে পরামর্শ করেন। একই বছরের জুনে নিজের জমানো ২০ হাজার এবং বাবার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে দুটি শংকর জাতের বকনা বাছুর কেনেন।

বছর তিনেক পর বাছুর দুটি গাভিতে পরিণত হয়। প্রতিদিন ৩০ লিটার দুধ দিতে শুরু করে। এ দুধ বিক্রি করে খরচ বাদে দিনে প্রায় ৪০০ টাকা আয় হয়। এভাবে ২ বছরে আরও চারটি শংকর জাতের গাভি কেনেন। ছয়টি গাভি দিয়ে শুরু করেন ডেইরি খামার। বর্তমানে মাহামুদুলের খামারে দেশি-বিদেশি গাভি মিলে মোট গাভির সংখ্যা ২৬টি। প্রতিদিন খামার থেকে গড়ে ১৪০-১৫০ লিটার দুধ পান। প্রতি লিটার দুধ ৪০ টাকায় বিক্রি করে খরচ বাদে দৈনিক দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা পান। বছরে ২ লাখ টাকার গাভিও বিক্রি করেন তিনি।

মাহামুদুল জানান, খামারের আয়ের টাকায় আবাদি জমি কিনেছেন। মাছ চাষের জন্য খনন করেছেন পুকুর। গাভির খামারও করেছেন পাকা। বাড়িতে বসিয়েছেন বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট। আম, কাঁঠাল, লিচু, পেঁপেগাছ ও শাকসবজি লাগিয়েছেন বাড়ির চারদিকে।

স্থানীয় লোকজন জানান, গাভি পালন করে মাহামুদুল শুধু নিজের ভাগ্যই বদল করেননি। অন্যে যুবকদেরও পরামর্শ দিয়ে স্বাবলম্বী করে তুলেছেন। গ্রামের মাহাবুব রহমান, একরামুল ইসলাম, মিজানুর রহমান, দেলওয়ার হোসেন, মিনহাজুল ইসলাম, আবু বক্করসহ অনেকে ছয়-সাত বছর ধরে গাভি পালন করে এখন অনেকেই ডেইরি খামারের মালিক।

২০০টি গাভির খামার করারও স্বপ্ন আছে মাহামুদুলের। বেকার তরুণেরা চাকরির পেছনে না ছুটে খামার করে নিজেরা স্বাবলম্বী হবেন, এমন স্বপ্নও দেখেন তিনি।

রাজুর স্ত্রী ফারিয়া খাতুন বলেন, এসব পরিশ্রমের ফল। গ্রামের অন্যদেরও তাই, আগের মতো গ্রামে বেকার কেউ নেই। সবাই এখন দুধে–ভাতে সুখি। এ কৃতিত্ব মাহামুদুলের।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ফরহাদ নোমান জানান, ‘আমি মনে করি, উদ্যম ও একাগ্রতাই মাহামুদুলের সাফল্যের মূল কারণ। আমি বেশ কয়েকবার তাঁর খামার পরিদর্শন করেছি। যেকোনো সমস্যায় আমরা তাঁর পাশে থাকি। শৃঙ্খলা ও পরিচ্ছন্নতায় তাঁর খামার অন্য খামারিদের কাছে উদাহরণ হতে পারে। তা ছাড়া তাঁর দেখানো পথে খামার করে তারাগঞ্জের অনেক তরুণ এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন বলে জানান তিনি।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : জুলাই ২৪, ২০২৩ ৩:০৭ অপরাহ্ন
গবাদি পশুর খামার যেভাবে মাছিমুক্ত রাখবেন
প্রাণিসম্পদ

মাছির যন্ত্রণায় কেবল মানুষ বিরক্ত এমনটি নয়। বরং মাছির যন্ত্রণায় সবচেয়ে বেশি বিরক্ত এবং রোগাক্রান্ত হচ্ছে গবাদিপশু। কারণ এই মাছির মাধ্যমে খামারে বিভিন্ন রোগ জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে। যা গবাদিপশুর অত্যন্ত ক্ষতিকর। এই জন্য প্রতিটা গবাদিপশু খামারিকে খামার থেকে মাছি দূর করার উপায় সম্পর্কে জানা খুবই দরকার। কারণ মাছি তাড়াতে না পারলে আপনার স্বপ্নের খামার থেকে প্রত্যাশিত আয় করতে পারবেন না।

খামার থেকে মাছি দূর করার উপায়:

মাছি তাড়ানোর সবচেয়ে ভালো কৌশল হলো খামারের আশে-পাশে গাছ লাগানো। বাতাসে গাছের নড়া-ছড়াতে খামারে মাছি আসবে কম। এছাড়া খামারে আশে-পাশে কিছু সবুজ বৃক্ষাদি থাকলে পরিবেশের জন্যও ভালো।

গবাদিপশুর মল-মূত্র নিয়মতি ও দ্রুত সেসব পরিষ্কার করতে হবে। কারণ এগুলো জমা হলেই মাছি এসে জমাট বাঁধে। আর এটাই হলো মাছিদের ডিম পাড়ার উপযুক্ত জায়গা। একবারে ৭৫–১৫০টি ডিম পাড়ে এরা। ডিম ফুটে বাচ্চা বেরোতে সময় লাগে মাত্র ২৪ ঘণ্টা।

লেবু টুকরো টুকরো করে ভেতরের অংশে অনেকগুলো লবঙ্গ গেঁথে দিন। লেবুর মধ্যে লবঙ্গের পুরোটা ঢুকাবেন শুধুমাত্র লবঙ্গের মাথার দিকের অংশ বাইরে থাকবে। এরপর লেবুর টুকরাগুলো একটি প্লেটে করে খামারের কোণায় রেখে দিন। এই পদ্ধতিতে মশা-মাছি, পোকামাকড় একেবারেই দূর হয়ে যাবে।

ব্যবহৃত চা-পাতা ফেলে না দিয়ে ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিন। এইভাবে ওই চা পাতা ধুনোর বদলে ব্যবহার করুন। শুকনো চা পাতা পোড়ানো ধোঁয়ায় সমস্ত মশা, মাছি পালিয়ে যাবে।

রসুন বেটে পানিতে মিশিয়ে তরল করে পুরো খামারে স্প্রে করতে পারেন। এটা মশা তাড়াতে খুবই কার্যকরী প্রাকৃতিক উপায়। খামারের মাছি তাড়াতে এর যেকোনো একটি উপায় প্রয়োগ করুন।

গরুর গায়ে স্প্রে করার জন্য ২ মিলি তারপিন তেল (অয়েল তারপিন, স্পিরিট তারপিন বা থিনার না), ২ গ্রাম কর্পুর (ন্যাপথালিন গুঁড়াও অনেকে দেন) এ দুইটা জিনিস ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে গরুর গায়ে স্প্রে করলে মাছি বসবে না।

মশা-মাছি কর্পুরের গন্ধ একেবারেই সহ্য করতে পারে না। একটি ৫০ গ্রামের কর্পুরের ট্যাবলেট একটি ছোট বাটিতে রেখে বাটিটি পানি দিয়ে পূর্ণ করুন। এরপর এটি খামারের কোনায় রেখে দিন।

তাৎক্ষণিকভাবেই মশা- মাছি গায়েব হয়ে যাবে। দুই দিন পর পানি পরিবর্তন করে নিন। আগের পানিটুকু ফেলে না দিয়ে ফার্মে ছিটিয়ে দিলে পোকামাকড় ও পিঁপড়ের যন্ত্রণা থেকেও মুক্তি পাবেন।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : জুলাই ২৩, ২০২৩ ৯:৩০ পূর্বাহ্ন
ছাগলের কৃমি দমনে যা করবেন
প্রাণিসম্পদ

ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালন বাংলাদেশের খামারীদের ভাগ্যবদলের অন্যতম পাথেয়। ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের মাংস যেমন সুস্বাদু, চামড়া তেমনি আন্তর্জাতিকভাবে উন্নতমানের বলে স্বীকৃত। তবে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলেও নিতে হয় আলাদা যত্ন। বিশেষ করে কৃমি দমনে কার্যকরী পদক্ষেপ খামারীদের জন্য বেশ উপকারী।

ছাগলের বাচ্চার কৃমি দমনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ:

কৃমি দমন : কৃমি ছাগলের মারাত্মক সমস্যা। বয়স্ক ছাগল ও বাচ্চার কৃমি দমনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, শুধু পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ ও উন্নত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই আশানুরূপ উৎপাদন পাওয়া যায় না।

কৃমির জন্য উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। কাজেই কাছের প্রাণিসম্পদ হাসপাতাল থেকে ছাগলের মল পরীক্ষা করে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ছাগলকে নিয়মিত কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে।

১-৪ মাস পর্যন্ত বাচ্চা দের কৃমি মুক্ত করার পদ্ধতি:

বাচ্চা ছাগল, ভেড়া, গাড়ল:- বিভিন্ন খামারী এরং ছাগল পালন কারীর সাথে আলোচনা করে এবং নিজে অভিজ্ঞতা থেকে একটি সাধারণ বিষয় লক্ষ্যণীয় হল ছাগলের ক্ষেত্রে বাচ্চা জন্মানোর প্রথম ১ মাস বাচ্চা গুলোর দৈহিক বৃদ্ধি ভাল থাকে এবং দেখতে খুব সুন্দর থাকে কৃমি মুক্ত না করা বাচ্চাগুলো দ্বিতীয় মাস থেকেই আস্তে আস্তে দৈহিক বৃদ্ধি এবং সৈন্দর্য কমতে থাকে, দিন দিন শুকিয়ে যায় আর পেটের সাইজ বড় হতে থাকে,খুবই ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হয়, আবার পায়খানার সাথে সাদা সাদা ফিতা কৃমি,হুক কৃমি,চাবুক কৃমি বের হতে থাকে ।

বাচ্চাগুলো খুবই দূর্বল হয়ে ধীরে ধীরে হাড় চামড়ার সাথে ভেসে উঠে কিছু বাচ্চা মারা যায় আবার কিছু বাচ্চা বছর পার হলেও শরির স্বাস্হ্য খারাপ হতেই থাকে । আমারা খামারে সাধারণতঃএই সমস্যার সন্মুখিন হচ্ছি বা হতে পারি। সেজন্য নিচের নিয়মে ছাগল,গাড়লের বাচ্চাদের কৃমি মুক্ত করতে পারলে খামার কে লাভবান করা সম্ভব।

বাচ্চাকে ১ মাস বয়স হলে নিওট্যাক্স,বা এক্সট্রাস মানুষের সিরাপ জেনেরিক নেইম লিভামিসোল প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১ এমএল হিসেবে খাওয়াতে হবে । (বিঃদ্রঃ কৃমির প্রভাব দেখা দিলে ১৫দিন বয়স থেকেও দেওয়া যেতে পারে।) দুই মাস বয়স পূর্ন হলে এলটিভেট জেনেরিক নেইম লিভামিসোল + ট্রাইক্লাবেন্ডাজল ৪০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১ টি ট্যাবলেট হিসেবে খাওয়াতে হবে ।

তিন মাস বয়স হলে এমেকটিন প্লাস জেনেরিক নেইম আইভারমেকটিন + ক্লোরসুলন ২৫ কেজি হিসেবে ১ এমএল চামড়ার নীচে ইঞ্জেকশন দিতে হবে। চার মাস বয়স হলে প্যারাক্লিয়র ফেনবেন্ডাজল গ্রুপের ট্যাবলেট ১০-২০ কেজির জন্য ১ টি । তার ৭-৮ মাস পূর্ণ হলে বড় ছাগলের রুটিনে কৃমি মুক্ত করতে হবে ।

বাচ্চা গাড়ল, ভেড়া, ছাগলের ক্ষেত্রে যেহেতু ১-২ মাসের অধিক সময় পর্যন্ত মায়ের দুধ পান করে তাই কৃমির ঔষধ খাওয়ানোর পর লিভার টনিক না খাওয়াতে পারলে তেমন কোন সমস্যা হবে না আর ৩-৪ মাসে কৃমির ঔষধের দেওয়ার পর লিভার টনিক খাওয়াতে হবে ।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : জুলাই ২০, ২০২৩ ১০:৫২ পূর্বাহ্ন
গবাদি পশুকে কৃমির আক্রমণ থেকে রক্ষার উপায়
প্রাণিসম্পদ

কৃমির আক্রমণের শিকার কেবল মানুষ হয় এমন না। কৃমির আক্রমণ মানুষের ন্যায় প্রাণির উপরও হয়ে থাকে বেশ। আর তাতে করে খামারির চরম ভোগান্তিতে পড়েন, হোন লসের চরম সম্মুখিন। আজকের লেখায় কৃমি থেকে কিভাবে গবাদিপশুকে রক্ষা করবেন সে সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো । যা প্রতিটা খামারিদের জন্য খুব প্রয়োজন।

জেনে রাখবেন কৃমি এক ধরনের পরজীবি। যা পশুর ওপর নির্ভর করে জীবন ধারণ করে। এসব পরজীবি পশুর ফুসফুসে, লিভারে, চোখে, চামড়ায় বাস করে ও পশুর হজমকৃত খাবারে বসে থাকে। অনেক কৃমি পশুর রক্ত চুষে দুর্বল করে ফেলে।

গবাদি পশুর বাসস্থানের জন্য নির্ধারিত স্থানের মাটি শুষ্ক ও আশপাশের জমি থেকে উঁচু হওয়া প্রয়োজন। সম্ভব হলে নদীনালা, খালবিল, হাওর-বাওড় থেকে দূরে করতে হবে। গবাদি পশুর খামারের আশপাশে যেন বৃষ্টির পানি এবং অন্যান্য বর্জ্য জমে না থাকে। খামারের জন্য নির্ধারিত স্থানের মাটিতে বালির ভাগ বেশি হওয়া প্রয়োজন যেন বর্ষাকালে খামারের মেঝে কর্দমাক্ত না হয়।

পশুর মলমূত্র ও আবর্জনা অল্প সময় পরপর পরিষ্কার করতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন ঘরে মলমূত্র ও আবর্জনা জমা না থাকে। গবাদিপশুর বাসস্থান প্রতিদিন আদর্শ ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে এবং জীবাণুনাশক মেশানো পানি দিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। প্রতি চার মাস পর পর কৃমির ওষুধ নিয়মিত খাওয়াতে হবে। সকালে খালি পেটে কৃমির ওষুধ খাওয়ালে সবচেয়ে ভালো হয়। সকালে কৃমির ওষুধ খাওয়ালে বেশি কার্যকর হয়।

গরুকে কৃমির ঔষধ খাওয়ানোর সময় কিছু নিয়ম জানা খুবই জরুরি। গরুর কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ানোর সময় ট্যাবলেটটি গুঁড়া করে চিটাগুড়ের সঙ্গে মাখিয়ে অথবা কলা পাতাতে করে খাওয়ানো যায়। গরুকে কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ানোর পর কমপক্ষে এক ঘণ্টা কোনো ধরনের খাদ্য দেওয়া যাবে না।

কোনোভাবেই দানাদার খাদ্যের সঙ্গে কৃমির ওষুধ খাওয়ানো যাবে না। গরুকে দানাদার খাদ্যের সঙ্গে মিশালে কীটনাশক ট্যাবলেটে তেমন কোনো কাজ করে না।

গর্ভবতী গাভীর ঔষধ প্রদানের কমপক্ষে ৪৫ দিন পর কীটনাশক ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে। তবে গর্ভবতী গাভীকে খাওয়ালে সমস্যা নেই। কোনোভাবে মাত্রার চেয়ে কম পরিমাণে খাওয়ানো যাবে না। মাত্রার চেয়ে কম খাওয়ালে কৃমি না মরে গিয়ে আরও বেশি আক্রমণ করবে। গর্ভবতী গাভীকে ট্যাবলেট খাওয়ানোর সময় অবশ্যই সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে।

গরু যখন ঘাস খায় তখন মুখের মাধ্যমে একটা গরু থেকে অন্য গরুতে কৃমি ছড়াতে পারে। গরুর কৃমি রোগের আক্রান্তের লক্ষণ বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে। যেমন গরুর খাবারে অরুচি হয়ে দেখা দেয়। পাশাপশি ঘনঘন পেট ফাঁপা দেখা দিবে। শক্ত না হয়ে নরম পায়খানা বের হবে, গরুর শরীরে রক্ত কমে গরু দুর্বল হয়ে পড়বে। গরুর স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে না। লোম বিবর্ণ হয়ে যায়। দুর্গন্ধযুক্ত পাতলা পায়খানা হয়। মাঝে মাঝে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। কোনো কোনো সময় গলার নিচে পানি জমে ফুলে ওঠে রক্তস্বল্পতা দেখা যায়।

কৃমি হলে গবাদি পশুকে অ্যালবেনডাজল বা প্যারাজল অথবা ফেনভিক ঔষধ খাওয়াতে হবে। এছাড়া ইঞ্জেকশন নাইট্রোকসিনিল আইভারমেকটিন সঙ্গে লিভার মিসল। এগুলো গরম পানির সঙ্গে খাওয়ানো যায়। এগুলো ৪ মাস পর পর দিতে হবে।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : জুলাই ১৯, ২০২৩ ৩:৪০ অপরাহ্ন
হাঁসের ভ্যাকসিন শিডিউল
প্রাণিসম্পদ

অল্প পুঁজি ও কম রোগাক্রান্ত হওয়ার কারনে দিন দিন আমাদের দেশে হাঁস পালন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। হাঁসের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশ ভাল হলেও বেশ কিছু ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগে হাঁস মারা যেতে পারে। তাই হাঁস পালনের জন্য টিকা প্রদান বা হাঁসের ভ্যাকসিন সিডিউল খুব জরুরী।

হাঁস বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তবে আমাদের দেশে ডাক প্লেগ ও ডাক কলেরার কারনে হাঁসের মৃত্যুর রেকর্ড সবথেকে বেশী। তাই মূলত এই দুটি রোগের টিকা প্রদানের জন্য সরকারি ভাবে বলা হয়ে থাকে।

হাঁসের টিকা প্রদান কর্মসূচি নিচে দেওয়া হলোঃ

বয়স (দিন) টিকার নাম রোগের নাম টিকার ডোজ টিকা প্রাদানের স্থান
২০-২২ ডাক প্লেগ ডাক প্লেগ ১ মিলি বুকের চামড়ার নীচে
৪০-৪২ ডাক প্লেগ ডাক প্লেগ ১ মিলি বুকের চামড়ার নীচে
৭০ ডাক কলেরা ডাক কলেরা ১ মিলি বুকের চামড়ার নীচে
৯০ ডাক কলেরা ডাক কলেরা ১ মিলি বুকের চামড়ার নীচে
১০০ ডাক প্লেগ ডাক প্লেগ ১ মিলি বুকের বা রানের মাংসে

*এরপর প্রতি চার মাস অন্তর ডাক প্লেগ টিকা এবং ৬ মাস অন্তর ডাক কলেরা টিকা প্রদান করাতে হবে।

*উল্ল্যেখ্য বার্ড ফ্লুর প্রভাব বেশী থাকলে চার মাসে বার্ড ফ্লু টিকা দিতে হবে।

হাঁসের ভ্যাকসিন দেওয়ার নিয়ম:

ডাক প্লেগ ১০০ ডোজের ভ্যাকসিন ১০০ মিলি পরিস্কার পানির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে ভ্যাকসিন গান অথবা ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে প্রইয়োগ করা হয়। ডাক কলেরার ভ্যাকসিন লাইভ হলে একই নিয়মে দিতে হবে। কিল্ড হলে সরাসরি প্রয়োগ করা যায়।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : জুলাই ১৬, ২০২৩ ২:৩৪ অপরাহ্ন
ছাগল পালনে কাঁচা ঘাস খাওয়ানোর উপকারিতা
প্রাণিসম্পদ

গরু-ছাগল পালন এখন একাংশ মানুষ তাদের অর্থনৈতিক চাকা পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসাবে নিয়েছেন। বিশেষ করে কম দামে কিনতে পাওয়া যায় ছাগল। যা মোটামুটি গ্রামের প্রতিটা কৃষকের আছে। তারা ছাগল পালনে বড় কিছু করার প্রত্যাশায় এতে শ্রম দিয়ে থাকে। তবে এই শ্রমকে সফল করতে লাগবে অনেকগুলো পদ্ধতি। তম্মধ্যে অন্যতম হলো ছাগলকে খাওয়াতে হবে নিয়মিত কাঁচা ঘাস। কারণ ছাগলকে কাঁচা ঘাস খাওয়ালে ছাগল শারীরিকভাবে সুস্থ থাকে। এছাড়াও ছাগলকে কাঁচা ঘাস খাওয়ালে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নানা উপকার পাওয়া যায়।

ছাগলকে কাঁচা ঘাস কেন খাওয়ানো প্রয়োজন:

১। মনে রাখবনে কাঁচা ঘাস কিনতে হয় না। এটি তৈরি হয় প্রাকৃতিক উপায়ে। যার কারণে এতে খরচ নেই বললেই চলে। আর তাই অর্থনৈতিক দিক বিবেচেনায় ছাগলকে কাঁচা ঘাস খাওয়ানো উচিত।

২। নিয়মিত ছাগলকে কাঁচা ঘাস খাওয়ালে দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং ছাগলের শারীরিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয় এবং ছাগল বেশি পরিমাণ দুধ প্রদান করতে সক্ষম হয়ে থাকে।

৩। ছাগলকে কাঁচা ঘাস খাওয়ালে ছাগল বাচ্চা জন্ম দেওয়ার সময় বাচ্চা মৃত্যুর হার অনেকগুনে কমে যায়। নিয়মিত কাঁচা ঘাস খাদ্য হিসেবে ছাগলকে খাওয়ালে বাচ্চার মৃত্যু কম হয়।

৪। ছাগলকে কাঁচা ঘাস খাওয়ালে ছাগলের শরীর সঠিক সময়ে প্রজননে সক্ষম হয়। এর ফলে ছাগলের প্রজননের জন্য কৃত্রিম পদ্ধতি প্রয়োগ করে সফল হওয়া যায়।

৫। ছাগলকে কাঁচা ঘাস খাওয়ালে ছাগলকে দানাদার খাদ্য কম দেওয়া লাগে। সেজন্য ছাগলকে দানাদার খাদ্য প্রদান করতে হয় না। তাই ছাগলের জন্য দানাদার খাদ্য কেনার টাকা বেঁচে যায়।

৬। ছাগলকে নিয়মিত কাঁচা ঘাস খাওয়ালে ছাগল যখন বাচ্চা জন্ম দেয় তখন বাচ্চার ওজন সঠিক পাওয়া যায়। বাচ্চা সুস্থ সবল হয়ে জন্ম নেয়।

৭। কাঁচা ঘাস ছাগলকে নিয়মিত খাওয়ালে ছাগলের মৃত্যুর হার অনেকগুনে কমে যায়। কাঁচা ঘাস ছাগলকে নিয়মিত খাওয়ালে ছাগলের জীবনীশক্তি বৃদ্ধি পায়। আর এর ফলে ছাগল অকালে মরা থেকে রক্ষা পায়।

৮। ছাগলকে কাঁচা ঘাস খাওয়ালে ছাগলের চিকিৎসা খরচ অনেকগুনে কমে যায়। কাঁচা ঘাস খাওয়ার ফলে ছাগল জটিল কোন রোগের দ্বারা আক্রান্ত হয়না। এর ফলে ছাগলের চিকিৎসার খরচ বেঁচে যায়।

ঘাস চাষ:
ছাগলের জন্য ইপিল ইপিল, কাঁঠাল পাতা, খেসারি, মাসকলাই, দুর্বা, বাকসা ইত্যাদি দেশি ঘাসগুলো বেশ পুষ্টিকর। এছাড়া উচ্চফলনশীল নেপিয়ার, স্পেনডিডা, এন্ড্রোপোগন, পিকাটউলুম ইত্যাদি ঘাস চাষ করা যায়।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : জুলাই ১৫, ২০২৩ ১১:৩০ পূর্বাহ্ন
গবাদি প্রাণির উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও করণীয়
প্রাণিসম্পদ

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের একটি বিষয়। আবহাওয়ার হঠাৎ পরিবর্তন লাইভস্টকের ক্ষেত্রে একটি বড় বাঁধা। দেশের অনেকেরই জীবিকা নির্বাহের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে গরু মহিষের খামার । জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে যা সরাসরি প্রভাব ফেলছে গবাদি প্রাণির দুধ উৎপাদন এবং স্বাস্থ্যের উপর, ফলে আর্থিক ক্ষতির সম্মূখীন হচ্ছেন কৃষক ।

দুগ্ধজাত গবাদি প্রাণির উপর জলবায়ুগত প্রভাবের ফলে যে সব সাধারণ লক্ষণ দেখা দিচ্ছে তা হলো- খাদ্য গ্রহণ হ্রাস, দুধ উৎপাদন এবং দুধের চর্বি হ্রাস, শ্বাস-প্রশ্বাসের হার বৃদ্ধি, শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস।

 

দুধ উৎপাদনের উপর প্রভাব – তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে গবাদি প্রণিরা কম খাদ্য গ্রহণ করে। যদি পানির ব্যবস্থাপনা সঠিক না হয়, তাহলে প্রাণি তার শরীরে থাকা পানিকে দুধ উৎপাদনে ব্যবহার না করে তার শরীরকে ঠান্ডা রাখার জন্য ব্যবহার করে। যার কারণে দুধ উৎপাদন ও দুধে চর্বি কমে যায়।

প্রজনন কর্মক্ষমতার উপর প্রভাব – দুগ্ধজাত প্রাণিরা শীতের তুলনায় তাপের প্রভাব বেশি অনুভব করে, যা দুগ্ধজাত প্রাণির প্রজনন কর্মক্ষমতাকে বিরূপভাবে প্রভাবিত করে। বেশি তাপের প্রভাবে প্রাণি কম গরমে আসে, গরমে এলেও ভালোভাবে তাপের লক্ষণ দেখা যায় না। এদিকে গর্ভবতী গবাদিপ্রাণির অকালে ভ্রুণ মৃত্যুর সম্ভাবনাও প্রবল।

 

প্রচন্ড গরমে গবাদিপ্রাণির যত্নে যা যা করনীয়ঃ

  • তাপ এবং শক্তিশালী সূর্যালোক থেকে প্রাণিদের রক্ষা করুন।
  • গবাদি প্রাণির জন্য ঘন ছায়াযুক্ত গাছ লাগান।
  • খোলা এবং বায়ুচলাচল শেড তৈরি করুন যা প্রাণীদের আর্দ্রতা এবং সরাসরি সূর্যালোক থেকে রক্ষা করে।
  • শেডের ছাদ পরিষ্কার এবং সাদা রঙের হতে হবে।
  • পুকুরে মহিষকে গোসল করানো এবং ধারায় ঝর্ণার পানি ছিটিয়ে দেওয়া।
  • প্রাণির জন্য সর্বদা বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন।
  • পাখা, কুলার, ফোয়ারা ইত্যাদির মতো শেড কুলিং ডিভাইসের ব্যবস্থা।
  • একটি সুষম খাদ্য নিশ্চিত করুন, যাতে প্রায় ১৬ শতাংশ হজমযোগ্য অপরিশোধিত প্রোটিন থাকা উচিত।
  • খনিজগুলির পরিপূরক করার জন্য পশুর খাদ্যে ধাতব স্ক্র্যাপ যোগ করুন।
  • গ্রীষ্মকালে ১০ টার আগে এবং ৪-৫ টার পরে খাবার প্রয়োগ করুন।
  • মাঠে চরাতে গবাদি প্রাণিকে বাইরে পাঠাবেন না। শীত না হলে ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় সকালে বা সন্ধ্যায় চরাতে হবে ।

 

আশা করা যায় উপরোক্ত বিষয়গুলো মাথায় রাখলে খামারিরা তাদের দুগ্ধজাত প্রাণিকে প্রচণ্ড গরম থেকে বাঁচাতে পারবেন এবং দুগ্ধ ব্যবসা থেকে অধিক মুনাফা অর্জন করতে পারবে।

 

শেয়ার করুন

প্রকাশ : জুলাই ১৩, ২০২৩ ৯:৪২ পূর্বাহ্ন
গবাদি পশুর গলাফুলা রোগ ও প্রতিকার
প্রাণিসম্পদ

গলাফুলা একটি তীব্র প্রকৃতির রোগ যা গরু এবং মহিষকে আক্রান্ত করে। এটি একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ যা Pasteurella multocida দ্বারা সংঘটিত হয়। এ রোগে মৃত্যুর হার খুবই বেশি। বর্ষাকালে গলাফুলা রোগ বেশি দেখা যায়। আমাদের দেশে বর্ষার শুরুতে এবং বর্ষার শেষে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। পশুর শরীরে স্বাভাবিক অবস্থায় এ রোগের জীবাণু বিদ্যমান থাকে। কোনো কারণে যদি পশু ধকল যেমন ঠান্ডা, অধিক গরম, ভ্রমণজনিত দুর্বলতা ইত্যাদির সম্মুখীন হয় তখনই এ রোগ বেশি দেখা দেয়। গলাফুলা রোগের প্রচলিত নাম ব্যাংগা, ঘটু, গলগটু, গলবেরা ইত্যাদি।

 

এপিডেমিওলজি ও রোগজননতত্ত্ব
গলাফুলা (hemorrhagic septicemia) এশিয়া, আফ্রিকা, দক্ষিণ ইউরোপের কিছু দেশ ও মধ্যপ্রাচ্যে বিদ্যমান। তবে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় এটি বেশি পরিলক্ষিত হয়। গলাফুলা মূলত গরু ও মহিষের রোগ হলেও শুকর, ছাগল, ভেড়া, ঘোড়া, বাইসন, উট, হাতী এমনকি বানরেও এ রোগ হতে পারে। এ রোগ বছরের যে কোনো সময় হতে পারে তবে বর্ষাকালে এর প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি। বাহক পশুর টনসিল ও ন্যাজো-ফ্যারিনজিয়াল মিউকোসায় এ রোগের জীবাণু থাকে। অনুকূল পরিবেশে রক্তে এ রোগের জীবাণুর সংখ্যা বেড়ে গিয়ে
septicemia করে। এই বৃদ্বিপ্রাপ্ত জীবাণু মরে গিয়ে এন্ডোটক্সিন নিঃসৃত হয় যার ফলে রক্ত দূষিত হয়ে পড়ে। এন্ডোটক্সিন রক্তের ক্যাপিলারিস নষ্ট করে; ফলে এডিমা হয়। এছাড়া এন্ডোটক্সিন একদিকে কোষ কলা বিনষ্ট করে দেহে হিস্টামিনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে অন্যদিকে টিস্যু বিনষ্টের ফলে টিস্যুর প্রোটিন ভেঙ্গে রক্তে প্রোটিনের পরিমাণ হ্রাস পায়। ফলে, এডিমার সৃষ্টি হয়। সে কারণে এ রোগে আক্রান্ত পশুর গলা ফুলে যায় ও রক্তে জীবাণুর উপস্থিতির (septicemia) কারণে পশুর দ্রুত মৃত্যু হয়।

লক্ষণ
এ রোগ অতি তীব্র ও তীব্র এ দুই ভাবে হতে পারে। অতি তীব্র প্রকৃতির রোগে হঠাৎ জ্বর (১০৬-১০৭০ ফা) হয়ে মুখ ও নাক দিয়ে তরল পদার্থ বের হতে থাকে। পশু অবসাদগ্রস্থ হয়ে পড়ে ও খাওয়া বন্ধ করে দেয় এবং ২৪ ঘন্টার মধ্যে মৃতু্য ঘটে। তীব্র প্রকৃতির রোগে আক্রান্ত পশু ২৪ ঘন্টার অধিক বেঁচে থাকে। এ সময় পশুর এডিমা দেখা দেয় যা প্রথমে গলার নিচে, পরে চোয়াল, তলপেট এবং নাক, মুখ, মাথা ও কানের অংশে বিসতৃত হয়।
গলায় স্ফীতি থাকলে গলার ভেতর ঘড় ঘড় শব্দ হয় যা অনেক সময় দূর থেকে শোনা যায়। প্রদাহযুক্ত ফোলা স্থানে ব্যথা থাকে এবং হাত দিলে গরম ও শক্ত অনুভূত হয়। সূঁচ দিয়ে ছিদ্র করলে উক্ত স্থান হতে হলুদ বর্ণের তরল পদার্থ বের হয়ে আসে। অনেক সময় কাশি হয় এবং চোখে পিচুটি দেখা যায়। নাক দিয়ে ঘন সাদা শ্লেষ্মা পড়তে দেখা যায়। সাধারণত লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার ৪৮ ঘন্টার মধ্যে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আক্রান্ত পশু মারা যায়। মারা যাবার সাথে সাথে পেট খুব ফুলে উঠে এবং নাক ও মুখ দিয়ে তরল পদার্থ বের হতে থাকে। পোস্টমর্টেম করলে পেরিকার্ডিয়াল স্যাক (pericardial sac) এ রক্ত মিশ্রিত তরল পদার্থ দেখা যায়, যা থোরাসিক (thoracic) এবং এবডোমিনাল ক্যাভিটি (abdominal cavity) তে বিসতৃত হতে পারে। ফ্যারিনজিয়াল এবং সার্ভাইক্যাল লিম্ফনোডে বিন্দু আকৃতির (petechial) রক্তক্ষরণ পরিলক্ষিত হয়।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব
গলাফুলা রোগের যথেষ্ট অর্থনৈতিক গুরুত্ব আছে বিশেষত, এশিয়া এবং আফ্রিকার কিছু দেশে। এশিয়াতে ৩০% গবাদিপশু এ রোগের প্রতি সংবেদনশীল। ভারত দুগ্ধ উৎপাদনে এশিয়াতে সর্বোচ্চ যেখানে ৫০% দুধ আসে মহিষ থেকে, যারা এ রোগের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। ভারতে গত চার দশক ধরে গলাফুলা রোগে মৃত্যু হার গবাদিপশুর মৃত্যুহারের ৪৬-৫৫%। ১৯৭৪ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ভারতে গবাদিপশুর ৫টি মহামারীতে আক্রান্ত গবাদিপশুর ৫৮.৭% মারা যায়। এই ৫টি মহামারী হল ক্ষুরারোগ, রিন্ডারপেষ্ট, বাদলা, এনথ্রাক্স এবং গলাফুলা। শ্রীলংকায় ১৯৭০ এর দশকে পরিচালিত একটি অপঃরাব সারভ্যাইল্যান্স স্টাডিতে দেখা গেছে গলাফুলা আক্রান্ত স্থানসমূহে বছরে প্রায় ১৫% মহিষ এবং ৮% গরু গলাফুলার কারণে মারা যায়। পাকিস্তানে একটি রির্পোটে দেখা গেছে সেখানে গবাদিপশুর মোট মৃত্যুর ৩৪.৪% মারা যায় গলাফুলা রোগে। মায়ানমারে পশু রোগ নিয়ন্ত্রণে বরাদ্দকৃত মোট বাজেটের ৫০ ভাগ ব্যয় হয় গলাফুলা রোগ দমনে। গলাফুলা রোগে শুধু গবাদিপশুর মৃত্যুই ঘটে না, সাথে সাথে বেশ কিছু অপ্রত্যক্ষ ক্ষতিও হয়। যেমন –
উৎপাদন হ্রাসঃ মাংস, দুধ, জোয়াল টানা, হালচাষের বিকল্প উপায়ের জন্য মোট ব্যয় ইত্যাদি। পশুর প্রজনন ক্ষমতা বিঘি্নত হওয়া, চিকিংসা খরচ ইত্যাদি।

প্রতিরোধ
এ রোগ উচ্ছেদ করা অসম্ভব কারণ এ রোগের জীবাণু স্বাভাবিক অবস্থায় পশুর দেহে থাকে। তবে নিম্নোক্ত ব্যবস্থা অবলম্বন করে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
• রোগাক্রান্ত পশুকে সুস্থ পশু থেকে আলাদা করে সুস্থ পশুকে টিকা দানের ব্যবস্থা করতে হবে।
• মড়কের সময় পশুর চলাচল নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
• হঠাৎ আবহাওয়া পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পশুর পরিচর্যার ব্যবস্থা করতে হবে।
• টিকা প্রয়োগের মাধ্যমে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।

ঢাকার মহাখালীতে অবস্থিত এল.আর. আই কতৃর্ক প্রস্তুতকৃত টিকার নাম গলাফুলা টিকা। লোকাল স্ট্রেইন দ্বারা প্রস্তুতকৃত এই অয়েল এডজুভেন্ট টিকা সাধারণত প্রাপ্তবয়স্ক (৬ মাস বয়সের উপরে) গবাদিপশুকে ২ মিলি মাত্রায় ও ছাগল ভেড়াকে ১ মিলি মাত্রায় প্রয়োগ করতে হয়। এ রোগের প্রাদুর্ভাব আছে এরূপ এলাকায় ৬ মাস বা তদুধর্ব বয়সী বাছুরে প্রাপ্ত বয়স্ক গরুর অর্ধেক মাত্রায় টিকা দিতে হয়। এলাম অধঃপাতিত (Alum precipitated) টিকা মাংসে প্রদান করা হয়। যেহেতু দুই ধরনের টিকাই মাঠপর্যায়ে ব্যবহার হয় তাই বিষয়টির দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। কারণ অয়েল এডজুভেন্ট টিকা তেল থেকে প্রস্তুতকৃত বিধায় এই টিকা ভুলক্রমে মাংসে প্রদান করলে মাংসে প্রদাহ সৃষ্টি হয়ে মাংসের ক্ষতি হয় এবং সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। টিকা প্রদানের ২-৩ সপ্তাহ পর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মাতে শুরু করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ১ বৎসর কাল পর্যন্ত বজায় থাকে। এই টিকা মৃত জীবাণুর দ্বারা প্রস্তুত বিধায় এই টিকা প্রদানের মাধ্যমে রোগ বিস্তারের কোনো সম্ভাবনা নাই। টিকা প্রয়োগের স্থান ২/৩ দিন পর্যন্ত ফোলা থাকতে পারে। ত্রুটিপূর্ণ ইনজেকশনের কারণে এই ফোলা স্বাভাবিক এর চেয়ে কয়েকদিন বেশি থাকতে পারে। ক্ষেত্র বিশেষে এনাফাইলেকটিক শক দেখা দিতে পারে। কোনো এলাকায় বা খামারে টিকা প্রদানের পূর্বে অল্প কয়েকটি গবাদিপশুকে টিকা প্রদানের পর ২৫-৩০ মিনিট অপেক্ষা করে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায় কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা শ্রেয়। যদি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায় তবে উক্ত বোতলের টিকা পুনরায় ব্যবহার করা যাবে না। অয়েল এডজুভেন্ট টিকা বেশ ঘন হওয়ায় এই টিকা প্রদানে মোটা বারের নিডল ব্যবহার করা সুবিধাজনক।

রোগ নির্ণয়
হঠাৎ মৃত্যু হয় এ ধরনের রোগ যেমন বজ্রপাত, সাপে কাটা, বাদলা রোগ, রিন্ডারপেস্ট, এনথ্রাক্স ইত্যাদি থেকে গলাফোলা রোগকে আলাদা করতে হবে। সেরোলজিক্যাল টেস্ট যেমন
Indirect hemagglutination test এ উচ্চ টাইটার লেভেল (১:১৬০ বা তার বেশি) পাওয়া গেলে এ রোগ সমন্ধে নিশ্চিত হওয়া যায়।

চিকিৎসা
আক্রান্ত পশুর চিকিৎসায় বিলম্ব হলে সুফল পাওয়া যাবে না। তাই রোগের উপসর্গ দেখা দেয়ার সাথে সাথে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রতিরোধ
ভ্যাকসিনই এ রোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে ভাল উপায়। মূলত তিন ধরনের ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এগুলো হল প্লেইন ব্যাকটেরিন, এলাম অধ:পাতিত ব্যাকটেরিন এবং অয়েল এডজুভেন্ট ব্যাকটেরিন। এর মধ্যে ৬ মাস বিরতিতে এলাম অধ:পাতিত ব্যাকটেরিন এবং ৯ থেকে ১২ মাস অন্তর অয়েল এডজুভেন্ট ভ্যাকসিন দিতে হয়। ভালো ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত খামারে বাছুরকে ৩ থেকে ৬ মাস বয়সে প্রথম, ৩ মাস পরে বুস্টার এবং এরপর বছরে একবার টিকা দিতে হয়। উন্মুক্ত খামারে বর্ষা শুরু হওয়ার আগেই বাৎসরিক টিকার কোর্স শুরু করতে হয়।

লেখক: ডাঃ এ, এইচ. এম. সাইদুল হক
এক্সিকিউটিভ, ভেটেরিনারী সার্ভিসেস, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল

শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop