অল্প জায়গা-কম খরচে রাস পদ্ধতিতে মাছ চাষ
মৎস্য
রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) দেশীয় প্রযুক্তিতে মাছ চাষের রিসারকুলেটিং একুয়াকালচার সিস্টেম (রাস) পদ্ধতি উদ্ভাবন হয়েছে। এটি উদ্ভাবন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ, অ্যাকুয়াকালচার এবং মেরিন সায়েন্স অনুষদের অধ্যাপক ড এ এম শাহাবুদ্দিন ও তার দল।
আধুনিক প্রযুক্তি আমদানি কমিয়ে দেশীয় প্রযুক্তি ব্যাবহার করে অল্প খরচে, অল্প যায়গায় অধিক ঘনত্বে মাছ চাষে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা গবেষকদের।
কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের (কেজিএফ) অর্থায়নে ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কারিগরি সহায়তায় একটি প্রকল্পের অধীনে উদ্ভাবিত এ দেশীয় প্রযুক্তি শেকৃবিতে এরই মধ্যে স্থাপিত হয়েছে।
প্রকল্পটির প্রধান তত্ত্বাবধায়ক ড এ এম শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘রাস পদ্ধতি দেশীয় প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি ইনটেনসিভ অ্যাকুয়াকালচার সিস্টেম। যেখানে একই পানি বারবার পরিশোধন করে অল্প জায়গায় অধিক ঘনত্বে নিবিড় পরিবেশে মাছ উৎপাদন করা হয়। প্রযুক্তিতে উৎপাদিত মাছ কেমিক্যাল, এন্টিবায়োটিকমুক্ত যা খাবারের জন্য অত্যন্ত নিরাপদ ও বিদেশে রপ্তানিযোগ্য।’
অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন আরও বলেন, ‘আমাদের চাষযোগ্য জমি এবং জলাশয় দিন দিন কমে যাচ্ছে। সে তুলনায় জনসংখ্যা প্রচুর বাড়ছে। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে এবং স্বল্প স্থানে অধিক মাছ চাষ করতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যাবহার এবং যান্ত্রিকায়ন ছাড়া অন্য উপায় নেই। আমাদের এ প্রযুক্তিতে বাংলাদেশের বর্তমান চাষ পদ্ধতির সঙ্গে কম জায়গায়, কম খরচে কীভাবে মাছ চাষ করা যাবে সেটি নিয়ে কাজ করেছি।’
এ গবেষক বলেন, ‘আমাদের ট্যাংক পদ্ধতিতে যেসব পোনা পাওয়া যায় এবং যারা ফিড খায় এমন দেশি ও বিদেশি সব ধরনের মাছ চাষ সম্ভব। আমাদের এ পদ্ধতিতে পানি সর্বদা বিশুদ্ধ থাকবে। মূলত আমরা ট্যাংকে মাছের পরিবেশকে নিয়ন্ত্রণ করেই অল্প জায়গায় অধিক মাছ চাষ করবো। নদীর পানি যত বেশিই হোক দূষিত হলে মাছ বাঁচতে পারে না। অন্যদিকে আমাদের ট্যাংকের আকার ছোট হলেও এখানে পরিষ্কার পরিবেশে অধিক ঘনত্বে মাছ সুস্থভাবে বেঁচে থাকবে। মাছের ওজন বেশি হলে সংখ্যায় কম হবে, ওজন কম হলে সংখ্যায় বেশি হবে।’
রাস পদ্ধতিতে একটি ট্যাংকে অধিক ঘনত্বে মাছ থাকে উল্লেখ করে অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘ট্যাংকগুলোতে এক হাজার লিটার পানিতে ৮০-১০০ কেজি মাছ উৎপাদন সম্ভব। দশ হাজার লিটারের একটি ট্যাংক ১৫ ফুট জায়গায় বসানো সম্ভব যেখানে ৮০০-১০০০ কেজি মাছ উৎপাদন হবে।’
কম খরচের বিষয়ে তিনি বলেন, বায়োফ্লক বা অন্যান্য প্রযুক্তি সাধারণত বিদেশ থেকে আমদানি করা হয় কিন্তু আমাদের এ প্রযুক্তি দেশেই তৈরি করা সম্ভব। আমদানিকৃত যন্ত্রাংশের বেশিরভাগ মোটর ব্যাবহার হয়ে থাকে। কিন্তু রাস পদ্ধতিতে মাধ্যাকর্ষণ বল ব্যাবহারের মাধ্যমে মাছ চাষে ব্যবহৃত পানি ট্যাংক পরিবর্তন করে এবং একটি যান্ত্রিক ছাঁকনির মাধ্যমে পানি থেকে নাইট্রোজেন ঘটিত বর্জ্য ও মাছের মল পরিষ্কার হয়ে যায়। ছাঁকনিতে আটক নাইট্রোজেন বর্জ্য ও মাছের মল গুলো অ্যকুয়াফনিক্সে সবজি চাষে ব্যবহৃত হয় যেটি বদ্ধ জলাশয়ে সম্পূর্ণই অপচয় হয়।