২:৪৯ অপরাহ্ন

রবিবার, ২২ ডিসেম্বর , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
  • হোম
  • কুমিল্লার মাছের আঁশ যাচ্ছে চীন-জাপান
ads
প্রকাশ : নভেম্বর ১৯, ২০২১ ৭:৩৮ অপরাহ্ন
কুমিল্লার মাছের আঁশ যাচ্ছে চীন-জাপান
মৎস্য

কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার ঝাকুনিপাড়া এলাকা। ঝাকুনিপাড়া অতিক্রম করতে নাকে লাগবে মাছের গন্ধ। অনেকটা শুঁটকি খোলায় করতে মাছ শুকাতে দেয়ার গন্ধের মতো। তিরপলে রোদে শুকানো হচ্ছে সাদা রঙের কিছু। কাছে গেলে ভুল ভাঙবে। এতো মাছের আঁশ। ছয় জন যুবক এখানে কাজ করছেন। কেউ মাছের আঁশ পরিষ্কা করছেন, কেউ সেই আঁশ রোদে উল্টে দিচ্ছেন। যে মাছের আঁশ উচ্ছিষ্ট হিসেবে ফেলে দেয়া হতো, সেই উচ্ছিষ্ট চীন-জাপান রপ্তানি করা হয়।

জানা গেছে, মাছের আঁশ দিয়ে ঘরের শো-পিস, ক্যাপসুলের বাহ্যিক অংশ ও গহনা তৈরি করা হয়। মাছের আঁশে সচ্ছলতা এসেছে অনেক পরিবারে। এখানে মাছের আঁশ শুকানোর উদ্যোক্তা মো. মাহবুব আলম। তার বাড়ি পাশের কুমিল্লা নগরীর সংরাইশ এলাকায়। মাহবুবের মতো নগরীর আরো দুই ব্যক্তি মাছের আঁশ সংগ্রহ করেন।

আঁশ শুকানো শ্রমিকদের একজন বিল্লাল হোসেন। তিনি বলেন, আমরা ৬ জন আঁশ শুকানোর কাজ করি। সবার বাড়ি মুরাদনগরের নহল চৌমুহনী। মাছের আঁশ শুকানো দেখতে অনেক মানুষ আসে। জানতে চায় এগুলো দিয়ে কি হয়। ফোন পেয়ে আঁশ শুকানোর স্থানে আসেন মাহবুব আলম। নদীর পাড়ে মোটরসাইকেল রেখে নিচে আঁশ শুকানোর স্থানে নামেন। গায়ে সাদা রঙের সুতির দামি পাঞ্জাবি। চোখে দামি সানগ্লাস।

মাহবুব আলম বলেন, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছি। জীবনে অনেক পরিশ্রম করেছি। নগরীর রাজগঞ্জ মাছ বাজারে নানার বাড়ি সূত্রে একটি ঘর পেয়েছেন। সেখানে তিনিসহ কয়েকজন মাছ কাটেন। বছর দশেক আগে তার কাছে নারায়ণগঞ্জ সাইনবোর্ড এলাকার এছহাক বেপারী নামের একজন লোক আসেন। তিনি মাছের আঁশ কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি শুকানো ১০ কেজি মাছের আঁশ বিক্রি করে পান ৪০০ টাকা। সেই থেকে শুরু।

তিনি রাজগঞ্জ মাছ বাজারের ১৮টি দোকান থেকে মাছের আঁশ সংগ্রহ করেন। এছাড়া নগরীর বাদশা মিয়া বাজার, টমসমব্রিজ, কোটবাড়ি, পদুয়ার বাজার, চৌয়ারা, মগবাড়ী ও সেনানিবাসসহ বেশ কয়েকটি বাজার থেকে মাছের আঁশ সংগ্রহ করেন। প্রতিদিন গড়ে ১০০ কেজি আঁশ সংগ্রহ করেন। মাসে প্রায় ৩ টন। রোদে শুকানোর পর প্রতিকেজি আঁশ ৪০ টাকা দরে বিক্রি করেন। আঁশ শুকানোর তার ছয়জন কর্মচারী রয়েছে। প্রতিজনকে থাকা খাওয়াসহ মাস শেষে ১০ হাজার টাকা করে বেতন দেন। সব খরচ বাদে প্রতিমাসে এখন তার ১৫ হাজার টাকার মতো লাভ হয়।

মাহবুব জানান, ঢাকা থেকে যারা তার কাছ থেকে শুকনো আঁশগুলো কিনেন তারা চীন, জাপানে, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়াতে এইগুলো রপ্তানি করেন।

মাছের আঁশ দিয়ে ঘরের শো-পিস, ওষুধ, ক্যাপসুলের বাহ্যিক অংশ ও গহনা তৈরি করা হয়। তিনি বলেন, ১০ বছর আগে যে আঁশ কেজি ৪০ টাকা ছিলো তা মাঝে কমে যায়। এখন তা আবার ৪০ টাকা হয়েছে। দাম বাড়লে আমরা ভালো লাভ করতে পারতাম।

মাহবুব জানান, প্রথম প্রথম এ কাজে অনেকেই নাক সিটকাতো। দুর্গন্ধ বলে দূরে থাকতো। তবে আমি কাজ চালিয়ে যেতাম। কোন কাজই ছোট নয়। কাজকে ভালোবাসলে মানুষের সম্মান বৃদ্ধি বাড়ে। বিদেশে এসব কাজের অনেক মূল্য। স্নাতক পাস দেবিদ্বারের এক ছেলে এসে কাজ শিখেছে। সে বিদেশে গিয়ে এখন মাসে বাড়িতে লাখ টাকা পাঠায়। যারা এই কাজে নাক সিটকাতো তারা এখন দেখতে আসে। এইসব কাজে তার পরিবারে সচ্ছলতা এসেছে। মাছ কাটা ও আঁশ শুকানোর মাধ্যমে কিছু মানুষের কাজের সুযোগ করে দিতে পেরে ভালো লাগছে। ভবিষ্যতে আরো বেশি মানুষের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করতে চাই।

ব্যবসায়ী নেতা শাহ মোহাম্মদ আলমগীর খান বলেন, মাহবুব আলমের মাছের আঁশ সংগ্রহ ও বিক্রি ব্যবসায় নতুন সংযোজন। তার দেখাদেখি এই ব্যবসায় আরো অনেক তরুণ এগিয়ে আসছে। তাদের এগিয়ে দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।

বিসিক কুমিল্লার ডিজিএম মিরাজ শফিক বলেন, ফেলনা উচ্ছিষ্টকে যারা সম্পদে পরিণত করছেন তারাই প্রকৃত উদ্যোক্তা। মাহবুব আলমের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ অনেকের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে। আমরা তাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করবো।

শেয়ার করুন

ads

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop