গোবর-গোমূত্রের সূত্র ধরে গরু চুরির রহস্য উদঘাটন, গ্রেফতার ৫
প্রাণিসম্পদ
গরুর গোবর ও গোমূত্র থাকার সূত্র ধরে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে মিনি ট্রাকে থাকা গরু চুরির রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এই ঘটনায় দুটি গরু উদ্ধারসহ ৫ জন চোরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৮ মে) বিকেলে জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার ধরমপুরার মোড়ে অভিযান চালিয়ে ঘোড়াঘাট থানা পুলিশ চুরি হওয়া দুই গরু উদ্ধার করে।
এর আগে একইদিন ভোরে দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের ঘোড়াঘাট উপজেলার কারিগরি কলেজ মোড়ে চেকপোস্টে গরু চুরির কাজে ব্যবহৃত মিনি ট্রাকটি আটক করে পুলিশ।
আটক ব্যক্তিদেরকে বুধবার (১৯ মে) সকালে দিনাজপুরের বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হয়েছে এবং আদালত তাদেরকে জেল হাজতে প্রেরণ করেছেন।
গরু চুরির ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা থাকায় গ্রেফতারকৃতরা হলেন গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার অনন্তপুর গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে ট্রাক চালক সাজু মিয়া (২৭), একই উপজেলার কামদিয়া পশ্চিমপাড়া গ্রামের মৃত কেফায়েতুল্লার ছেলে মজনু মণ্ডল (৫৫), দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার নামাকাঁঠাল হরিনাথপুর গ্রামের মৃত রমজান আলীর ছেলে মিজানুর রহমান (৪৪), ঘোড়াঘাট উপজেলার দক্ষিণ দেবীপুর গ্রামের মৃত হাছেন আলীর ছেলে সাহেব মিয়া (৩৮) এবং সিংড়া বেড়ীভিটা গ্রামের মৃত রমজান আলীর ছেলে সাইদুল ইসলাম (৪৫)।
ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিম উদ্দিন বলেন, সোমবার দিবাগত রাতে জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার উত্তর লক্ষ্মীপুর (চিলাপাড়া) গ্রামের আদিবাসী যোগেন সরেনের বাড়ি থেকে ২টি গরু চুরি হয়। মঙ্গলবার ভোরে পুলিশ নিয়মিতভাবে ঘোড়াঘাট উপজেলার কারিগরি কলেজ মোড়ে চেকপোস্টে একটি মিনি ট্রাক (ঢাকা মেট্রো-ড-১২-০৩৬৪) থামিয়ে সেটিতে তল্লাশি চালায়। তল্লাশির এক পর্যায়ে ট্রাকের পেছনে গরুর কাঁচা গোবর ও গোমূত্র দেখতে পায়।
এতে দায়িত্বরত পুলিশের সন্দেহ হলে ট্রাকের চালক সাজু মিয়া ও দুই যাত্রী মজনু মণ্ডল এবং মিজানুরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। মিনি ট্রাকে গরুর গোবর ও গোমূত্র আসার কারণ জানতে চেয়ে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তারা গরু চুরির ঘটনা স্বীকার করে। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে উপজেলার সুজা মসজিদ এলাকার আব্দুল করিম মিয়ার বাড়িতে অভিযান চালায়।
কিন্তু পুলিশ যাওয়ার আগেই করিম গরুগুলো নিয়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে পুলিশ প্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়ে জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার ধরমপুরার মোড়ে অভিযান চালিয়ে দুটি গরুসহ সাহেব মিয়া ও সাইদুল ইসলামকে আটক করে। এই ঘটনার পর থেকে আব্দুল করিম পলাতক রয়েছে।
ওসি জানান, আটক ব্যক্তিরা দিনাজপুরের ফুলবাড়ি উপজেলার উত্তর লক্ষ্মীপুর (চিলাপাড়া) গ্রামের আদিবাসী যোগেন সরেনের বাড়ির দেয়ার কেটে দুটি গরু চুরি করে নিয়ে এসেছিল। গরু উদ্ধারের পর আটক ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গরুর মালিককে খবর দিলে, তিনি ঘোড়াঘাট থানায় এসে ৯ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেন। আটক ব্যক্তিরা আন্তঃজেলা চোর চক্রের অন্যতম সদস্য। তারা দীর্ঘদিন থেকে গরু চুরির সঙ্গে জড়িত। আসন্ন কুরবানির ঈদকে কেন্দ্র তারা সরব হয়ে উঠেছে।
মামলার বাদী এবং চুরি হওয়া গরুর মালিক যোগেন সরেন বলেন, ‘প্রতিদিনের মত হামি সোমবার সন্ধ্যায় গরুগুলা গোয়ালেত তুলে ঘুমাছি। সকালে উঠে দেখি গোয়ালেত হামার গরু নাই। হামার বাড়ির দেয়াল ভাঙা চোর গরু নিয়ে গেছে। অনেক খোঁজাখুঁজি করছি। কিন্তু কোনোটে হামার গরু খুঁজে পাইনি।
মঙ্গলবার দুপুরে হঠাৎ দেখি হামার বাড়িত পুলিশ আসা হামাক কচ্চে, তোমার গরু হারাছে? হামি কনু হ হারাছে। পরে পুলিশ হামাক কলো (বললো) ঘোড়াঘাট থানাত যাও। তোমার গরুসহ গরু চোর ধরছে পুলিশ। পরে হামি ঘোড়াঘাট থানাত যায়া ৯ জন চোরের নামে মামলা কচ্চি।’