নার্সারির ব্যবসায় কোটি টাকায় আয়
কৃষি বিভাগ
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার একটি গ্রাম পরিহল পাড়া। এ পরিহল পাড়াকে কুমিল্লার নার্সারির গ্রাম বলা হয়। এ গ্রামে ছোট বড় নার্সারি আছে ৪০টি। গড়ে ১৫ লাখ টাকা করে সেখানে বছরে ছয় কোটি টাকার চারা বিক্রি হয় বলে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে।
এককভাবে কুমিল্লার কোনও গ্রামে এত বেশি নার্সারি নেই।এ গ্রামের চারাগুলো কুমিল্লা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী জেলাসমূহে বিক্রি হয়। পাইকাররা এসে ভ্যান ও মিনি পিকআপে করে চারা নিয়ে যান। কুমিল্লার বাইরে চাঁদপুর, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নোয়াখালীতে বেশি বিক্রি হয় পরিহল পাড়ার নার্সারির চারাগুলো।
সূত্র জানায়, ১৯৯২ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাকিম এ গ্রামে নার্সারি শুরু করেন। আবদুল হাকিম একটি আমেরিকা প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে ময়মনসিংহে কর্মরত ছিলেন। সেখানে তিনি দেখতে পান, ময়মনসিংহের মানুষ নার্সারি করে বেশ সফলতা পাচ্ছেন। তখন মনে মনে চিন্তা করেন, কুমিল্লায় এসে নার্সারি করবেন। গাছের বীজ বপন, রক্ষণাবেক্ষণ, কলম করাসহ চারার পরিচর্যার বিষয়গুলো আয়ত্তে নেন তিনি। একপর্যায়ে চাকরি ছেড়ে দেন আবদুল হাকিম। চাকরি ছাড়ার সময় ৮০ হাজার টাকা পুঁজি ছিল তার কাছে। ওই টাকার কিছু অংশ খাটান নার্সারির কাজে। বাকি টাকা ব্যয় করেন অন্যান্য কাজে।
ছোট পরিসরে শুরু করলেও আবদুল হাকিম কম সময়ের মধ্যে সফলতার মুখ দেখতে থাকেন। প্রকল্পের সাবেক সহকর্মীরা আসেন তার কাজ দেখতে। এতে আরও উৎসাহ পান তিনি। ছোট পরিসরে শুরু করলেও একসময় প্রায় তিন একর জায়গাজুড়ে নার্সারি করেন তিনি। তার দেখাদেখিতে গ্রামের মানুষেরাও শুরু করেন নার্সারি করা।
১৯৯৪ সালের দিকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় পরিহল পাড়ার নার্সারি। দূরদুরান্ত থেকে মানুষ আসেন গাছের চারা কিনতে। নার্সারির সংখ্যাও বাড়তে থাকে। নার্সারির জন্য একটি আদর্শ জায়গায় রূপ নেয় পরিহল পাড়া। বর্তমানে এ গ্রামের চারশ মানুষ কাজ করছেন নার্সারির সাথে। অনেক নার্সারিতে যৌথ মালিকানা আছে। কর্মীরা দৈনিক শ্রমভিত্তিক ও মাসিক বেতনে চাকরি করেন।
গ্রামের মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, নার্সারির শুরুর দিকে কাঠের চারার কদর ছিল। সবাই বাড়িতে চারা লাগাতে পছন্দ করতেন। একপর্যায়ে ফল আর সবজির চারার চাহিদা বেড়ে যায়। বর্তমানে বেশি চাহিদা ফুলের। বৈশাখ-কার্তিক পর্যন্ত প্রচুর ফুলের চারা বিক্রি হয়। স্থানীয়ভাবে কলম করেও চারা উৎপাদন করেন তারা।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাকিম জানান, তখনও কুমিল্লায় নার্সারি করার কথা মানুষের মাথায় আসেনি। আমি নার্সারিতে ভালো সম্ভাবনা দেখতে পাই। তাই শুরু করি। গ্রামের মানুষ এটাকে ইতিবাচকভাবে নেন। তুচ্ছতাছিল্য না করে সবাই এগিয়ে আসেন নার্সারি করতে। এ গ্রামে কোনও চুরি-ডাকাতি নেই। নার্সারির সাথে যুক্ত হয়ে সবাই সচ্ছল।
হারুনুর রশীদ নামে অপর নার্সারি মালিক বলেন, ১৯৯৪ সালে শুরু করি। আমি বেশ সফল। অন্যান্য ফসলের চেয়ে নার্সারি ব্যবসা বেশি লাভজনক। মহাসড়কের পাশে হওয়াতে চারার বেচা বিক্রিতে কোনও ঝামেলায় পড়তে হয়নি। পরিবহন সুবিধা আমাদের বাড়তি সমৃদ্ধি এনে দিয়েছে।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, পরিহল পাড়ার নার্সারি সম্পর্কে আমি অবগত আছি। তারা ভালো করছে। বাসস