আগাম আলু চাষে ব্যস্ত কিশোরগঞ্জের কৃষক
কৃষি বিভাগ
জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলায় কৃষক ব্যস্ত আগাম আলু চাষে। ভালো দামের আশায় কৃষির মাঠে তাদের ওই মহাব্যস্ততা। কেউ তৈরি করছেন জমি, আবার অনেকেই জমি তৈরির পর বপন করেছেন আলু বীজ।
কৃষকরা বলছেন, বাজারে নতুন আলুর ভালো দাম পাওয়া যায়। বীজ বপনের পর ৫৫ থেকে ৫৮দিনের মধ্যে ফসল তুলা যায়। এসময়ে বাজারে নতুল আলুর চাহিদা থাকায় দামও ভালো পাওয়া যায়। প্রতিবছর ওই আলু তুলে তারা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার বাজারে বিক্রি করেন। আগাম আলু চাষে অধিক লাভ হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে আবাদ।
উপজেলার বাগাগিলি ইউনিয়নের উত্তর দুরাকুটি গ্রামের শামীম হোসেন বাবু জানান, আগাম আলু আবাদের জন্য প্রয়োজন একটু উঁচু জমি। কৃষকরা ওই জমিতে আগাম জাতের ধানের কর্তনের পর একই জমিতে আগাম আলু আবাদ করছেন। এতে করে একই জমিতে অধিক ফসল ফলানো সম্ভব হচ্ছে। তেমনি আলুর আগাম বাজার ধরে অধিক লাভবান হচ্ছেন কৃষক।
তিনি বলেন,‘গত বছর ২১ বিঘা জমির আলু আগাম বাজারে বিক্রি করে খরচ বাদে লাভ করেছি ১০ লাখ টাকার অধিক। মাত্র ৫৫ থেকে ৫৮ দিনের মধ্যে এ মৌসুমে আলু ছাড়া অন্য কোন ফসল থেকে এ পরিমান লাভ করা সম্ভব হয় না। একারণে এবার ২৫ বিঘা জমিতে আলু আবাদ করেছি। বীব বপনের পর এখন চলছে পরিচর্যা। আবহাওয়া অনুক’লে থাকায় ভালো ফলন এবং ভালো দামের আশা করছি।’
ওই কৃষক বলেন,‘আগে এ সময়টাতে এলাকার মানুষ মঙ্গায় কবলে পড়তেন। শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় এসে কৃষি বিপ্লবের ওপর জোর দেন। সে বিপ্লবের ধারাবাহিকতায় নিত্য নতুন ফসলের আর্বিভাব ঘটায় কৃষি বিভাগ। এখন এলাকার কৃষক আগাম আলু আবাদ করে তাড়িয়েছেন সে মঙ্গা।
একই গ্রামের কৃষক সাইদুর রহমান তাঁর ছয় বিঘা জমিতে আগাম জাতের ধান আবাদের পর ফসল তুলেছেন ঘরে। এখন ওই জমিতে আলু আবাদের প্রস্তুতিও শেষ করে শুরু করেছেন বীজ বপন। অনেকের ন্যায় এবার ভালো ফলনের আশা করছেন তিনি।
ওই উপজেলার রণচন্ডী ইউনিয়নের দীঘলটারী গ্রামের আকবর আলী ও রতন আলী বলেন,‘গত বছর অতি বৃষ্টির কারণে আলু আবাদে কিছুটা বিলম্ব ঘটেছে। এরপরও সেবার আলু তুলে বাজারে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে পেরেছি। এবার কম বৃষ্টি থাকায় দ্রুত সময়ে আলুর জমি তৈরি থেকে বীজ বপন সম্পন্ন করেছি। তাই এবার আরো ভালো দামের আশা করছি।’
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পুটিমারী ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিরেন্দ্র নাথ রায় জানান, এলাকার কৃষকরা আলুর আবাদের পর ওই জমিতে ভুট্টাসহ অন্য ফসলের আবাদ করে থাকেন। জমি তৈরি থাকায় ওই জমিতে পরবর্তী আবাদের জন্য খরচ কম হয়। ফলে সেখানে অধিক লাভবান হচ্ছেন কৃষক।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘রংপুর বিভাগের মধ্যে নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি আগাম জাতের আলুর চাষ হয়। গত বছর জেলায় আলুর আবাদ হয়েছিল ২২ হাজার হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে আগাম জাতের আলুর চাষ হয়েছিল সাত হাজার ২২০ হেক্টর জমিতে। আগাম আলু চাষের জন্য এ অঞ্চলের কৃষকরা আগাম জাতের ধান আবাদ করেও লাভবান হচ্ছেন। এ বছর জেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৩ হাজার হেক্টর জমি । সেপ্টেম্বর মাস জুড়ে আগাম জাতের আলু বীজ বপন করা হবে। এখন সেভেন জাতের আলু বীজ লাগানো হচ্ছে।’