কুমিল্লায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে ১২ জাতের আলু আবাদ
কৃষি বিভাগ
এ মৌসুমে আলুর বাম্পার ফলনে খুশি কুমিল্লার আলু চাষিরা। প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে ১২ জাতের আলুর আবাদ করে চাষিরা। উন্নত জাতের আলু আবাদ করে প্রতিবিঘা জমিতে ২০ থেকে ২৫ মণ আলু বেশি ফলন পেয়েছেন তারা।
লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এবারের মৌসুমে প্রায় ২৭ হাজার মেট্রিক টন আলু অতিরিক্ত উৎপাদন হওয়ায় কুমিল্লার ১৬ উপজেলায় আলু চাষিদের আনন্দের মাত্রাটাও অনেক বেশি দেখা দিয়েছে তাদের চোখেমুখে। চলতি মৌসুমে আলুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ায় কুমিল্লার কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের কর্মকর্তারাও অনেক খুশি।
এখনো মাটির নিচে লাখ লাখ টন আলু। ইতিমধ্যে প্রায় আড়াই হাজার মেট্রিক টন আলু তোলা হয়েছে। সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে শুরু হবে কুমিল্লার ১৬ উপজেলায় আলু তোলার মহোৎসব। এবারের মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আলুর বাম্পার ফলন ধরা দিয়েছে জমিতে।
সমগ্র জেলায় চলতি মৌসুমে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৪ হাজার ৯৩৪ হেক্টর জমিতে। আর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আবাদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৬৬ হেক্টর বেশি। হেক্টর প্রতি উৎপাদন ২৫ টনেরও বেশী। সেই হিসেবে চলতি মৌসুমে ৪ লক্ষাধিক টন আলু উৎপাদন হয়েছে। বর্তমানে বাজারে আগাম জাতের নতুন আলু পাওয়া যাচ্ছে।
চলতি মৌসুমে কুমিল্লার ১৬ উপজেলার মধ্যে দাউদকান্দি, চান্দিনা, দেবিদ্বার, আদর্শ সদর, বুড়িচং, হোমনা, মেঘনা, তিতাস, মুরাদনগর, সদর দক্ষিণ, বরুড়ায় এবারে আলুর ব্যাপক ফলন হয়েছে। তবে ফলনের দিক থেকে দাউদকান্দি এগিয়ে রয়েছে। এ উপজেলায় ৫ হাজার ৯২১ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে। ফলনের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চান্দিনা উপজেলা। এ উপজেলায় ২ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে।
দাউদকান্দি, চান্দিনা, বুড়িচং, মুরাদনগর, আদর্শ সদর ও দেবিদ্বারের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে আলু চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবারের আলু মৌসুমে চাষিরা ডায়মন্ড, কার্ডিনাল, গ্র্যানোলা, মালটা, হীরা, অরিগো, কোস্টারিকা, পেট্রোনিজ, বেলেনী, এস্টারিক্স, সাগিতা ও রোজগোল্ড জাতের আলুর আবাদ করেছে। তবে হোয়াইট ডায়মন্ড ও কার্ডিনাল জাতের আলুর ব্যাপক ফলন হয়েছে। এছাড়াও অনেকে অন্যান্য জাতের আলুও আবাদ করেছে।
আলু চাষিরা জানান, অনুকূল আবহাওয়া ও কৃষি উপকরণ সুলভমূল্যে পাওয়ায় এবার ফলন ভালো হয়েছে এবং ন্যায্যমূল্য পেলে ভালো লাভ করা যাবে। তাছাড়া মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ মেনে চলায় শীত ও ঘনকুয়াশায়ও আলু ক্ষেতের কোনরকম ক্ষতি হয়নি। জমিতে সঠিক মাত্রার সুষম সার প্রয়োগ করায় এবারে ফলন বেশি হয়েছে। এখন মৌসুমী আলু ক্ষেতে পরিচর্যা চলছে। আগামী এক দেড় সপ্তাহের মধ্যে আলু উঠানোর কাজ শুরু হবে। এজন্য কৃষকরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।
প্রসঙ্গত, বিগত বছরের চেয়ে এবারে আলুর আবাদ অনেক ভালো। বাম্পার ফলনে তাদের খুশির সীমাও ছাড়িয়ে গেছে। তাই আলু চাষে তাদের আগ্রহ অনেক বেড়ে গেছে। এবারের মৌসুমী আলু বাজারে উঠলে চাহিদা থাকবে ব্যাপক আর দামের দিক থেকেও বেশ সাড়া মিলবে বলে চাষিরা প্রত্যাশা করছেন।
কৃষি সম্প্রারণ অধিদফতর কুমিল্লার উপ-পরিচালক সুরজিত চন্দ্র দত্ত বলেন, কুমিল্লার সবক’টি উপজেলার মাটি আলু চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এবারে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি আলু উৎপাদন হয়েছে। ক্ষেতে আলু ভালো রাখতে প্রতিষেধক হিসেবে ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করে সুফল পেয়েছেন আলু চাষিরা। আমাদের কর্মকর্তাসহ মাঠকর্মীরা সার, কীটনাশক প্রয়োগের ব্যাপারে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছেন। যা এবারের বাম্পার ফলনেই এ চিত্র ফুটে উঠেছে। আমরা কেবল আলু নয়, সব ধরনের কৃষিপণ্য উৎপাদনে কৃষকরা যাতে তাদের প্রয়োজন মতে সহযোগিতা, পরামর্শ পেতে পারে এজন্য জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কৃষি অফিসগুলো দায়িত্বশীল ভূমিকা রেখে চলেছে। বাসস