তাল ও ডিম বেগুনের লাভজনক সংযোজন
এগ্রিবিজনেস
আমাদের দেশে বেগুন একটি সুস্বাদু , পুষ্টিকর ও লাভজনক সবজী । বেগুন দিয়ে নানান রকম রান্না ছাড়া ও ফাস্ট ফুড এ ব্যাপক ভাবে ব্যবহার হয়। বেগুনে আছে ক্যান্সার প্রতিরোধী উপাদান।
বেগুনকে শীতকালীন সবজি বলা হয়, কিন্তু আমাদের দেশে সারা বছরই বেগুন পাওয়া যায়। দেশে বিভিন্ন জাতের বেগুন পাওয়া যায়।এই সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’, যা চোখের জন্য খুব উপকারী।এই ডিজিটাল যুগে আমাদেরকে চোখের পরিশ্রম করতে হয় খুব বেশি। এতে চোখের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বেগুন আপনার চোখ ও ত্বকের জন্য বয়ে আনবে সুফল।এই সবজিতে কোলেস্টেরল বা চর্বি নেই। কোলেস্টেরল হলো চর্বিজাতীয় উপাদান, যা রক্তে জমে।
যাঁদের রক্তে কোলেস্টেরল বেশি, তাঁরা কোনো রকম দুশ্চিন্তা ছাড়াই খেতে পারেন বেগুন।পাকস্থলী, কোলন, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদান্ত্রের (এগুলো পেটের ভেতরের অঙ্গ) ক্যানসারকে প্রতিরোধ করে।যেকোনো ক্ষতস্থান শুকাতে সাহায্য করে বেগুন।
বেগুনে আয়রনও রয়েছে, যা রক্ত বাড়াতে সাহায্য করে। রক্তশূন্যতার রোগীরাও খেতে পারেন এই সবজি। এতে চিনির পরিমাণ খুবই সামান্য। তাই ডায়াবেটিসের রোগী, হৃদ্রোগী ও অধিক ওজনসম্পন্ন ব্যক্তিরা নিঃসংকোচে খেতে পারেন বেগুন।বেগুনে রয়েছে রিবোফ্ল্যাভিন নামক উপাদান। এই উপাদান জ্বর হওয়ার পরে মুখ ও ঠোঁটের কোণের ঘা, জিহ্বার ঘা প্রতিরোধ করে। দূর করে জ্বর জ্বর ভাব।
বেগুন ভিটামিন ‘এ’, ‘সি’, ‘ই’ এবং ‘কে’ সমৃদ্ধ সবজি। ভিটামিন ‘এ’ চোখের পুষ্টি জোগায়, চোখের যাবতীয় রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।আর ভিটামিন ‘সি’ ত্বক, চুল, নখকে করে মজবুত।দেহে রক্ত জমাট বাঁধার বিরুদ্ধে কাজ করে ভিটামিন ‘ই’ ও ‘কে’। এই ভিটামিন চারটি শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে করে বহুগুণে কার্যকর।প্রচুর পরিমাণে ডায়াটারি ফাইবার বা আঁশ রয়েছে এই সবজিতে, যা খাবার হজমে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এর ভূমিকা অনেক।ডায়াটারি ফাইবার–জাতীয় সবজি (আঁশ–জাতীয় উপাদান) ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য খুব উপকারী।বেগুনে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম। এই উপাদানগুলো দাঁত, হাড় ও নখ শক্ত করে। দাঁতের মাড়িকে করে শক্তিশালী। ভঙ্গুরতা রোধ করে নখের।অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে বেগুন পরিহার করা উচিত। বেগুন অনেকের অ্যালার্জি বাড়িয়ে দেয়।জিঙ্কের ঘাটতি পূরণ করার জন্য ডায়রিয়া চলাকালে বেগুন খাওয়া অনুচিত। ডায়রিয়া ভালো হয়ে যাওয়ার পরে বেগুন খাবেন।ডায়রিয়া হওয়ার পর দেহে জিঙ্কের ঘাটতি হয়। এই ঘাটতি পূরণ করে বেগুন। জিঙ্কের ঘাটতি বেশি হয় মূলত শিশুদের।শিশুরা সবজি খেতে পছন্দ করে না। তাদেরকে খিচুড়ির সঙ্গে বেগুন মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। এতে শিশুদের শরীরে জিঙ্কের ঘাটতি পূরণ হবে।যাঁরা অ্যালার্জির জন্য ওষুধ খাচ্ছেন, তাঁদের চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বেগুন না খাওয়াই ভালো।
তাল ও ডিম বেগুন এক্ষেত্রে বিশাল জনসংখ্যার পুষ্টির চাহিদা পূরণে সহায়তা করতে পারে।কারন এই ২ জাতের বেগুন এর চাহিদা মার্কেট এ সবসময় বেশি থাকে। ১ টি তাল বেগুন ৭০০-৮০০ গ্রাম ও১ টি ডিম বেগুন ৩০০-৪০০ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। পোকার আক্রমণ কম থাকায় এটাতে ফলন বেশি। চাষিরা এটার দাম ও অনেক ভাল পায় অন্য উচ্চ ফলনশীল জাতের চাইতে। এই বিষয়ে যদি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিউট(BARI) সকল প্রকার কারিগরি সহায়তা করে তবে এই তাল ও ডিম বেগুন সারাদেশ ব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব।
মোঃ আমিনুল খান
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
One thought on “তাল ও ডিম বেগুনের লাভজনক সংযোজন”