ছাদে বাগানের খুঁটিনাটি
পাঁচমিশালি
ছাদে বাগানের প্রথম ধারণা এসেছিল আজ থেকে প্রায় ৩০০০ বছর আগে। মেসোপটেমিয়ায় রাজা নেবুচাঁদ নেজার তার স্ত্রীর জন্য ইউফ্রেটিস নদীর তীরে প্রথম ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান তৈরি করেন। বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে বেশিরভাগ ছাদ অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। এ সকল অব্যবহৃত ছাদে খুব সহজেই পরিকল্পিতভাবে ফুল, ফল ও শাক-সবজির পারিবারিক বাগান তৈরি করা সম্ভব। এর দ্বারা পারিবারিক ফুল, ফল ও শাক-সবজির চাহিদার মিটিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে।
ছাদে বাগান করার প্রয়োজনীয় উপকরণ: মাটি বা সিমেন্টের টব, হাফ ড্রাম কিংবা সুবিধামত ছাদে স্থায়ী বেড; আয়তন ৩ ফুট বাই ৩ ফুট বা ছাদের কার্নিশ বাড়িয়ে স্থায়ী বেড করা যায়। এছাড়া সিকেচার, কোঁদাল, কাঁচি, সাবল, ঝরনা, বালতি, চালনি, করাত, ছুরি, খুপরী, স্প্রে মেশিন ইত্যাদি।
ফুল বা ফলের জন্য কলমের বা গ্রাফটিং চারা ও বিভিন্ন প্রকারের ফুল, ফল ও শাক-সবজি চারা বা বীজ। মাটির মধ্যে বেলে দো-আঁশ মাটি বা পাহাড়িয়া লাল মাটি, গোবর, খৈলসহ বিভিন্ন প্রকার জৈব সার এবং গাছের রোগ-বালাই দমনের জন্য বিভিন্ন কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক।
ছাদে বাগান তৈরি করার উপযোগী গাছসমূহ: ছাদের বাগানে বিভিন্ন রকমের গাছ লাগানো যায়। এর মধ্যে রয়েছে গোলাপ, রজনীগন্ধা, হাসনাহেনা, ক্যনা, গাদা, বেলি, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা অন্যান্য মৌসুমী ফুল, অর্কিড, বনসাই ও ক্যাকটাস লাগানো যায়। ফল গাছের মধ্যে রয়েছে আম্রপলি, আতা, আঙুর, লতা বোম্বাই জাতের আম, পেয়ারা, কুল, আমড়া, সফেদা, লেবু, ডালিম, বাতাবি লেবু, করমচা, বিলম্ব, জামরুল, ছোট জাতের কলা, ছোট জাতের আনারস, কমলা, কামরাঙা ইত্যাদি। সবজির মধ্যে রয়েছে বেগুন, টমেটো, শিম, মরিচ, লাউ, কুমড়া, ঢেঁড়শ, পুইশাক, লালশাক, পটল, শসা, বরবটি, করলা ইত্যাদি।
ছাদে বাগান করার বিভিন্ন পদ্ধতি : টব পদ্ধতি : খুব সহজে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানাš-র করা যায় বলে টব ছাদ, আঙিনা ও ব্যালকণীর জন্য সর্বোত্তম বাগান পদ্ধতি বলে বিবেচিত। দিনদিন টব পদ্ধতির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির কারণে আজকাল প্লাস্টিকের বিভিন্ন ধরনের টব তৈরি করা হচ্ছে এবং এসব টবের ব্যবহার দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। টবে চাষ করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ জৈব সার ব্যবহার করা উচিত। ১৪ ইঞ্চি থেকে ১৮ ইঞ্চি আকারের একটি টবের জন্য জৈব সারের পাশাপাশি ১০০ গ্রাম টিএসপি এবং ৫০ গ্রাম এমওপি সার উত্তমরূপে মিশিয়ে ১০ দিন থেকে ১২ দিন রেখে দিতে হবে। তারপর টব ভরাট করতে হবে।
হাফড্রাম পদ্ধতি :
টব পদ্ধতি ও হাফড্রাম পদ্ধতির মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই। হাফড্রামের তলদেশে ছিদ্র করতে হবে। ছিদ্রগুলোয় ইটের টুকরো বসাতে হবে; তার উপরে ড্রামের তলদেশে প্রথম ১ ইঞ্চি পরিমাণ খোয়া বা সুড়কি দিতে হবে এবং তার উপরে এক ইঞ্চি পরিমাণ জৈব সার বা পচা গোবর দিতে হবে। এর ফলে অতিরিক্ত পানি সহজেই বের হয়ে যেতে পারবে। জৈব সারের পাশাপাশি প্রতিটি ড্রামে ২০০ গ্রাম টিএসপি, ১০০ গ্রাম এমওপি ব্যবহার করা যেতে পারে। আম ও লেবু জাতীয় গাছের জন্য প্রতিটি ড্রামে উপরোক্ত জৈব ও রাসায়নিক সারের পাশাপাশি ৫০০ গ্রাম হাড়ের গুঁড়া ব্যবহার করা যেতে পারে।
স্থায়ী বেড পদ্ধতি :
স্থায়ী বেড পদ্ধতি হল স্থায়ীভাবে ছাদে বাগান করা। ছাদে বাগান করার পূর্বে ছাদ বিশেষভাবে ঢালাই দিয়ে নেট ফিনিশ করে নিতে হবে। এর দু’টি পদ্ধতি আছে। যেমনঃ
ছাদের চারদিকে স্থায়ী বেড পদ্ধতি :
ছাদে বাগান করার জন্য স্থায়ী বেড পদ্ধতি একটি আধুনিক পদ্ধতি। স্থায়ী বেড পদ্ধতির বাগান করার জন্য ছাদের চারিদিকে ২ ফুট প্রস্থের দুই পাশে ১.৫ ফুট উঁচু দেয়াল ৩ ইঞ্চি গাঁথুনির নেট ফিনিশিং ঢালাই দিয়ে তৈরি করলে মাঝখানে যে খালি জায়গা তৈরি হয়, সেই খালি জায়গার তলায় প্রথমে এক ইঞ্চি ইটের সুড়কি বা খোয়া, পরের এক ইঞ্চি গোবর সার দেয়ার পর বাকি অংশ ২ ভাগ মাটি ও ১ ভাগ গোবরের মিশ্রণ দিয়ে ভরাট করে স্থায়ী বেড তৈরি করা হয়।
ট্যাংক পদ্ধতি:
ছাদে এক ফুট উঁচু ৪টি পিলারের উপর পানির ট্যাংক আকৃতির ৩ ফুট দৈর্ঘ্য, ২ ফুট প্রস্থ ও ১.৫ ফুট উঁচু ৩ ইঞ্চি গাঁথুনির নেট ফিনিশিং ঢালাই দিয়ে যে ট্যাংক তৈরি করা হয় একেই বলে ট্যাংক বেড পদ্ধতি।
ছাদে গাছ লাগানোর কৌশল :
গাছের ধরন অনুযায়ী ড্রাম/টব নির্বাচন করে সার-মাটি দিয়ে গাছ লাগাতে হবে। ডাইথেন এম-৪৫ অথবা এ জাতীয় ছত্রাকনাশক ছাই এর সাথে মিশিয়ে মাটিতে প্রয়োগ করে মাটি শোধন করা যায়। মাটি শোধন করে আদর্শ নার্সারি থেকে চারা, কলম, কাটিং, বীজ সংগ্রহ করে নিজেই টবে লাগালে খরচ কম হবে। প্রতি বছর সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর মাসের মধ্যে ড্রাম বা টবের মাটি বদলাতে হবে। ড্রামে বা টবে ইউরিয়া সার না দেয়াই ভাল।
দূষণমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি, অবসর সময় কাটাতে, কর্মসংস্থান ও শারীরিক পরিশ্রমের সুযোগ তৈরি করতে এবং টাটকা ফল ও শাক-সবজি উৎপাদন করে পরিবারের চাহিদা মেটাতে আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে ছাদে বাগান করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে।