পাটের বাম্পার ফলনে খুশি মোল্লাহাটের চাষিরা
কৃষি বিভাগ
পাট কাটা, পাট জাগ, আশ সংগ্রহ, খড়ি শুকানোসহ পাট পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বাগেরহাটের মোল্লাহাটে পাট চাষিরা।মৌসুমের শুরুতে ভাল দামে খুশি চাষিরা। তবে পাট চাষিদের জন্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন তারা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, কৃষি প্রধান বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে পাট চাষ হয়ে থাকে। এই উপজেলায় এবছর ৯৬০ হেক্টর জমিতে প্রায় চার হাজার চাষি পাট চাষ করেছেন। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় দুই হাজার মেট্রিক টন। উপজেলার বেশিরভাগ গ্রামে পাট জাগের গন্ধ। আশ সংরক্ষণ শেষে কেউ কেউ পাট বিক্রিও শুরু করেছেন। এবছর প্রতি হেক্টর জমিতে দুই থেকে সোয়া দুই টন পাট উৎপাদিত হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ২৫০০ থেকে ৩০০০ হাজার টাকা। মৌসুমের শেষে এই পাটের মণ অন্তত সাত থেকে আট হাজার টাকা হবে বলে দাবি কৃষি কর্মকর্তার। শুধু আশ নয়, প্রতি বিঘা জমির পাটখড়ি বিক্রি হয় ৭ থেকে ১০ হাজার টাকায়।
চাষিরা বলছেন, ধার-দেনা করে চাষ করা হয়। তাই ফসল ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই দেনাদাররা হানা দেয়। দাম কম হলেও দেনাদারের পাওনা পরিশোধ করার জন্য পাটে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি করতে হয় তাদের। যার ফলে ইচ্ছে থাকলেও কষ্টার্জিত ফসল থেকে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন করতে পারে না কৃষকরা। এরপরেও ভাল ফলনে খুশি কৃষকরা।
তরিকুল ইসলাম নামে এক কৃষক জানান, বাংলাদেশের জন্য পাট খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অর্থকরী ফসল। কিন্তু আমরা যারা চাষি, তারা এই পাট চাষ করে তেমন লাভবান হই না। ধার-দেনা ও সুদে টাকা এনে চাষ করি। দাম বৃদ্ধির আগেই দেনা পরিশোধের জন্য পাট বিক্রি করে দিতে হয়। পাট চাষিদের বীজ ও সার কেনার জন্য যদি সরকার কিছু সহযোগিতা করত তাহলে চাষিরা খুবই লাভবান হত বলেন দাবি করেন তিনি।
মোল্লাহাটে তোষা, দেশি, মেস্তা তিন ধরণের পাট চাষ হয়। মার্চের শেষ থেকে মে পর্যন্ত পাট লাগানো যায়। আগস্টের প্রথম থেকে পাট সংগ্রহ শুরু করেন চাষিরা। পাট চাষের জন্য প্রথমে জমি নির্বাচন ও বীজ সংগ্রহ করেন চাষিরা। পরে জমি চাষ ও আগাছা পরিস্কার করতে হয়। এরপরে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে বীজ বপন করেন কৃষকরা। বীজ বপনের পরেই শুরু হয় সেচ দেওয়া। ৫২ শতাংশের প্রতি বিঘা জমিতে চাষের জন্য ব্যয় হয় ২০০০ টাকা। এছাড়াও একই পরিমাণ জমিতে সেচ (পানি) দিতে ২০০০, বীজে ২০০ থেকে ৫০০, আগাছা পরিস্কারে ২০০০, সার প্রয়োগে ২০০০ টাকা ব্যয়। পাট পূর্ণ বয়স্ক হওয়ার পরে কাটা, জাগ ও আশ আলাদা করার জন্য ব্যয় হয় ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা।
মোল্লাহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অনিমেষ বালা জানান, মোল্লাহাটের ভান্ডারকোলা, বাসুরিয়া, আটজুড়ি, চর আস্তাইল, শাসনসহ উপজেলার বেশিরভাগ এলাকায় পাট চাষ হয়েছে। প্রায় ৯৬০ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। আমরা চাষিদের সব ধরনের কারিগরি পরামর্শ ও সহযোগিতা করেছি। এবছর কাঁচা পাটের মণ ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আস্তে আস্তে এই দাম ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা মণে পৌঁছাবে। এ জন্য চাষিদের একটু ধৈর্য্য ধরে পাট বিক্রি করার আহ্বান জানান এই কর্মকর্তা।