১৪-১৮ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে ১২তম আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি শো ও সেমিনার
পোলট্রি
ডিম ও মুরগির দাম বাড়লেও লাভবান হচ্ছে না উৎপাদনকারিরা
গণমাধ্যমের জেষ্ঠ্য সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় জানালেন পোল্ট্রি উদ্যোক্তারা
ডিম ও মুরগির মাংসের দাম বাড়লেও লাভবান হচ্ছেনা উৎপাদনকারিরা।পোল্ট্রি ফিডের কাঁচামালের বাড়তি দাম ও ডলার সংকটে এলসি খোলার সীমাবদ্ধতায় বিকাশমান এই খাতটি অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় গভীর সংকটে পড়েছে। ফলে খামারিরা ঝরে পড়ছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সরবরাহে।দাম বাড়ার সেটিও একটি কারণ বলে মনে করছেন পোল্ট্রি খাতের উদ্যোক্তারা। ৫মার্চ, ঢাকার একটি হোটেলে পোল্ট্রি শিল্পের সংকট বিষয়ে টেলিভিশন, জাতীয় দৈনিক ও অনলাইনের জেষ্ঠ্য সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় তাঁরা আরও জানান- উদ্ভুত পরিস্থিতিতে পোল্ট্রি খাতের সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজতে ১৪-১৫ মার্চ ঢাকায় দু দিনব্যাপী একটি আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি সেমিনার এবং ১৬-১৮ মার্চ তিন দিনব্যাপী পোল্ট্রি শো’র আয়োজন করতে যাচ্ছে ‘ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স এসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখা’ (ওয়াপসা-বাংলাদেশ)।
মত বিনিময় সভাটি সঞ্চালনা করেন ডিবিসি নিউজের এডিটর প্রণব সাহা। উপস্থিত ছিলেন, মাছরাঙা টিভি’র চীফ এডিটর রেজওয়ানুল হক; দৈনিক জনকন্ঠের নির্বাহী সম্পাদক ওবায়দুল কবির, একাত্তর টিভি’র হেড অব বিজনেস নিউজ কাজী আজিজুল ইসলাম, এনটিভি’র হেড অব নিউজ জহিরুল আলম, আরটিভি’র ডেপুটি হেড অব নিউজ মামুনুর রহমান খান রুমেল, চ্যানেল আই -এর নিউজ এডিটর এম জাহিদ নেওয়াজ খান জুয়েল, বাংলাভিশনের নিউজ এডিটর মোস্তফা কামাল, ইনডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের চীফ নিউজ এডিটর আশিস সৈকত, নিউজ২৪ টিভি’র চীফ নিউজ এডিটর শাহনাজ মুন্নী, নাগরিক টিভি’র চীফ রিপোর্টার শাহনাজ শারমিন, দীপ্ত টিভি’র হেড অব নিউজ এস.এম আকাশ, যমুনা টিভি’র বিজনেস এডিটর সাজ্জাদ আলম খান তপু, দি ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস পত্রিকার স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট দৌলত আক্তার মালা, দৈনিক সমকালের বিজনেস এডিটর জাকির হোসেন, যায় যায় দিনের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট আলতাব হোসেন, বার্তা সংস্থা ইউএনবি’র এডিটর ফরিদ হোসেন, দৈনিক কালবেলা’র চীফ রিপোর্টার রাজ আহমেদ, দৈনিক জনকন্ঠের বিজনেস এডিটর রহিম শেখ প্রমুখ।
ওয়াপসা- বাংলাদেশ শাখার সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, করোনা মহামারির প্রভাব কাটতে না কাটতেই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে ফিড তৈরির কাঁচামালের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। ফলে বেড়েছে ফিডের উৎপাদন খরচ। তিনি বলেন, ২০২২ সালের সাথে তুলনা করা হলে- সয়াবিন মিলের দাম গড়ে প্রায় ১৩৭.৪১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২ সালের জুলাই মাসে সয়াবিন মিলের দাম যেখানে ছিল কেজিপ্রতি ৩৪.৫৪ টাকা; বর্তমানে তা ৮২টাকায় উন্নীত হয়েছে। শুধুমাত্র সয়াবিন মিল ও ভুট্টার মূল্যবৃদ্ধিকে আমলে নিলে গত ১ বছরের ব্যবধানে পোল্ট্রি ফিডের উৎপাদন খরচ বেড়েছে গড়ে প্রায় ৭১.৬৩ শতাংশ। অন্যদিকে সাধারন মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় যে পরিমাণ খরচ করে ডিম-মুরগি উৎপাদন করতে হচ্ছে সে দামে খামারিরা বিক্রি করতে না পেরে অসংখ্য খামার বন্ধ হয়ে গেছে।
মসিউর রহমান বলেন, বর্তমান সময়ে প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ প্রায় ১১টাকা। গত ১ মার্চ ২০২৩ তারিখে খামারি বিক্রয় করেছে বাদামি ডিম ৯.৩৫ টাকা এবং সাদা ৮.৮৫ টাকায়। ২০২২ সালে পাইকারি বাজারে বাদামি ডিমের গড় মূল্য ছিল ৮.৭৯ টাকা এবং সাদা ডিমের ৭.৯২ টাকা; যেখানে গড় উৎপাদন খরচ ছিল ১০.৩১টাকা। অর্থাৎ প্রতিটি ডিম বিক্রি করে খামারির লোকসান হয়েছে গড়ে প্রায় ১.৫২টাকা থেকে ২.৩৯ টাকা।
ব্রিডার্স এসোশিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু লুৎফে ফজলে রহিম খান বলেন, বিগত ২০২২ সালের মে মাস থেকে একদিন বয়সী মুরগির বাচ্চার দরপতন শুরু হয়েছে। মাঝে আগস্ট-সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে মার্কেট কিছুটা কারেকশন হলেও পরবর্তীতে আবারও মূল্য পতনের কারণে রুগ্নপ্রায় শিল্পে পরিণত হয়েছে এ খাতটি। তিনি বলেন, ২০২২ সালে একদিন বয়সী ব্রয়লার বাচ্চার সর্বনিম্ন দাম ছিল ৮ টাকা এবং সর্বোচ্চ দাম ছিল ৫১ টাকা, গড় দাম ছিল প্রায় ৩১.৫৮টাকা যেখানে গড় উৎপাদন খরচ ছিল ৩৮.৭৮ টাকা। কাজেই দেখা যাচ্ছে- প্রতিটি একদিন বয়সী ব্রয়লার বাচ্চা বিক্রি করে উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠানের লোকসান হয়েছে প্রায় ৩.৯১টাকা। অন্যদিকে লেয়ার বাদামী বাচ্চার সর্বনিম্ন দাম ছিল ১৩ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৩১টাকা, গড় দাম ছিল প্রায় ২২ টাকা; যেখানে গড় উৎপাদন খরচ ছিল ৪৬.৭৫ টাকা। অর্থাৎ প্রতিটি লেয়ার বাচ্চায় লোকসান হয়েছে প্রায় ২৪.৭৫ টাকা।
ওয়াপসা- বাংলাদেশ শাখার সাধারন সম্পাদক মো. মাহাবুব হাসান বলেন, এক কেজির একটি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদন করতে খামারির খরচ হয় গড়ে প্রায় ১৪৯ টাকা থেকে ১৫২টাকা। ২০২২ সালে পাইকারি বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে সর্বনিম্ন ১১৮টাকা এবং সর্বোচ্চ ১৪৮ টাকা। গড় মূল্য ছিল ১২৯ টাকা। যেখানে গড় উৎপাদন খরচ ছিল ১৪৪.৯৪ টাকা। কাজেই দেখা যাচ্ছে- প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করে একজন খামারি লোকসান গুনেছে প্রায় ১৫.৯৬ টাকা। মসিউর বলেন, এখনই উদ্যোগ না নিলে এই খাতের বড় ক্ষতি হবে যাবে।