৩:৩৬ অপরাহ্ন

শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
প্রকাশ : জানুয়ারী ৩১, ২০২২ ৪:৫৭ অপরাহ্ন
সাপের বিষের প্রতিষেধক তৈরির প্রচেষ্টা
বিজ্ঞান ও গবেষণা

সাপে কাটা মানুষকে বাঁচাতে প্রতিষেধক তৈরির জন্য নিরলস কাজ করে চলেছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ভেনম রিসার্চ সেন্টার। দেশের নানা প্রান্ত থেকে সংগ্রহ করা বিভিন্ন জাতের প্রায় ৩০০ বিষধর সাপ নিয়ে চলছে গবেষণা।

ভেনম রিসার্চ সেন্টারের গবেষকরা বলছেন, তাদের প্রচেষ্টা সফল হলে দেশেই সাপের বিষের প্রতিষেধক তৈরি করা সম্ভব হবে। যা প্রাণ বাঁচাবে অনেক মানুষের।

২০১৮ সালে নেয়া ৫ বছর মেয়াদি প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে গড়ে তোলা হয় ভেনম রিসার্চ সেন্টার। সেখানে থরে থরে সাজানো বাক্সে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৩০০ বিষধর সাপ লালনপালন করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সাপ সংগ্রহ করে প্রথমে ৪০ দিনের কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। পরে চিকিৎসাসহ প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষে রাখা হয় এসব বাক্সে। এরপর নানান ধাপ পেরিয়ে সাপ থেকে সংগ্রহ করা হয় বিষ। পাশাপাশি সাপের খাদ্য হিসেবে সাদা ইঁদুর লালন পালন ও প্রজননও করা হয় ভেনম রিসার্চ সেন্টারে।

সাপগুলোকে বিভিন্ন স্থান থেকে আনা, লালনপালন করা, বিষ সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কাজে নিয়োজিত আছেন একদল পরিশ্রমী গবেষক। আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এসব ধাপ সম্পন্ন করা হচ্ছে বলে জানান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ভেনম রিসার্চ সেন্টারের সহ গবেষক মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী ও সমন্বয়ক ডা: আবদুল্লাহ আবু সাঈদ।

ভেনম রিসার্চ সেন্টারের  প্রধান গবেষক ডা: অনিরুদ্ধ  ঘোষ জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী দেশে প্রতিবছর প্রায় ৬ লাখ মানুষ সাপের কামড়ে আহত হন। আর মারা যান প্রায় ৬ হাজার মানুষ।

চট্টগ্রামের ভেনম রিসার্চ সেন্টারের প্রধান গবেষক বললেন, তাঁরা সফল হলে দেশে সাপের বিষের প্রতিষেধক উৎপাদন সম্ভব হবে। খুলে যাবে সম্ভাবনার বিশাল দুয়ার।

দেশে স্থাপিত সর্বপ্রথম ও একমাত্র এই ভেনম রিসার্চ সেন্টারটি শিগগিরি আরও বড় পরিসরে কাজ শুরু করবে, বানাবে সাপের বিষের প্রতিষেধক। যাতে উপকৃত হবে দেশের মানুষ, কমবে আমদানী নির্ভরতা। এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : নভেম্বর ১৬, ২০২১ ১১:২২ পূর্বাহ্ন
গাঙ্গেয় ডলফিন ও চার প্রজাতির মাছের জীবনরহস্য উন্মোচন
বিজ্ঞান ও গবেষণা

হালদা নদীর কার্প বা রুইজাতীয় চার প্রজাতির মাছ ও গাঙ্গেয় ডলফিনের জীবনরহস্য উন্মোচন (জিনোম সিকোয়েন্স) করেছেন বাংলাদেশের একদল গবেষক। দেশের কার্প জাতীয় মাছের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক প্রজননকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত এই নদীর রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালবাউশ যেমন দ্রুত বাড়ে, স্বাদেও তেমনি অতুলনীয়। জীবনরহস্য উন্মোচনের ফলে এই মাছগুলোর ‘বিশেষত্বের’ দিকগুলো জানা সম্ভব হবে। গাঙ্গেয় ডলফিনসহ মৃগেল ও কালবাউশের জীবনরহস্য উন্মোচন এটাই প্রথম।

এ গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির প্রধান অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া ও চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ এম জে জোনায়েদ সিদ্দিকী।

বিশ্বের জিনোম সিকোয়েন্সবিষয়ক তথ্যভান্ডার হিসেবে স্বীকৃত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা এনসিবিআইতে (ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন) এ গবেষণার ফল জমা দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সংস্থাটির ওয়েবসাইটে তা প্রকাশও করা হয়েছে। এর ফলে অন্য দেশের রুইজাতীয় মাছ ও ডলফিনের সঙ্গে হালদার এসব মাছের তুলনা করা যাবে। এসব জলজ প্রাণীর নানা বৈশিষ্ট্য জানা যাবে।

এর আগে ভারতের গঙ্গা নদীর রুই ও কাতলার জীবনরহস্য উন্মোচন করেছেন দেশটির গবেষকেরা। আর যুক্তরাষ্ট্র উন্মোচন করেছে আটলান্টিক মহাসাগরের ডলফিনের জীবনরহস্য।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, দেশের অন্যান্য নদীর রুইজাতীয় মাছের চেয়ে হালদার মাছ দ্বিগুণেরও বেশি হারে বাড়ে, বড়ও হয় খুব তাড়াতাড়ি। হালদার মাছের স্বাদ সবচেয়ে ভালো বলে মনে করা হয়। যে কারণে এখানকার মাছের পোনার দাম দেশের অন্যান্য রুইজাতীয় মাছের পোনার চেয়ে ১৫ গুণ বেশি। কিন্তু হালদা নদীতে রুইজাতীয় মাছ কেন এত ডিম পাড়ে, আর সেখানকার রুই কেন এত দ্রুত বড় হয়, এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর বিজ্ঞানীদের কাছে অজানা ছিল।

অন্যদিকে হালদা নদীর সঙ্গে গঙ্গার কোনো সরাসরি সংযোগ নেই। এরপরও সেখানে কী করে গাঙ্গেয় ডলফিন এল, এর বৈশিষ্ট্য কী, এটি কি গঙ্গা নদীর ডলফিনের একটি উপ-প্রজাতি, নাকি স্বতন্ত্র গুণাবলি নিয়ে আলাদা প্রজাতির বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছে, বিজ্ঞানীরা অনেক দিন ধরে এসব জানার চেষ্টা করছিলেন। জীবনরহস্য উন্মোচনের ফলে এসব জানা সহজ হয়ে গেল বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা। একই সঙ্গে রুইজাতীয় মাছের আরও উন্নত জাত উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে এ গবেষণা ভূমিকা রাখবে বলে তাঁরা মনে করছেন।

এ ব্যাপারে গবেষণা দলের অন্যতম দলনেতা অধ্যাপক এ এম জে জোনায়েদ সিদ্দিকী বলেন, ‘হালদা পৃথিবীর মধ্যে এক অনন্য নদী। মিষ্টি পানির নদী হওয়া সত্ত্বেও এখানে জোয়ার-ভাটা হয়। এই নদীটি বাংলাদেশের ভূখণ্ডে সৃষ্টি হয়ে এখানেই শেষ হয়েছে। আর এখানকার বিশেষ ধরনের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের কারণে এখানকার রুইজাতীয় মাছের বৃদ্ধি এবং স্বাদ অন্যান্য নদীর মাছের চেয়ে ভালো। তবে এই মাছগুলো কোন জিনগত বৈশিষ্ট্যের কারণে ভালো, এ গবেষণার মাধ্যমে তা আমরা জানার পথে অনেকটা অগ্রসর হলাম।’

প্রায় দুই বছর ধরে চলা এ গবেষণায় অর্থায়ন করেছে পল্লী কর্ম–সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ও ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (আইডিএফ)। চীনের নর্থ-ওয়েস্ট এএনএফ ইউনিভার্সিটি এবং নিউজিল্যান্ডের টেক্সটজেন ইনফরমেটিকস নামের একটি সংস্থার ল্যাবরেটরির সহযোগিতা নেওয়া হয়েছে এ গবেষণায়।

গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়া আরেক অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, হালদা নদী বাংলাদেশের রুইজাতীয় মাছের একমাত্র বিশুদ্ধ প্রাকৃতিক ‘জিন ব্যাংক’। বর্তমানে কৃত্রিম প্রজননকেন্দ্রগুলোতে ইনব্রিডিংয়ের কারণে মাছের বৃদ্ধি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। মাছের বামনত্ব, বিকলাঙ্গতাসহ বিভিন্ন ধরনের জিনগত সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এ গবেষণা মাছের এসব সমস্যা দূর করার ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখবে।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : নভেম্বর ৬, ২০২১ ৩:৪৪ অপরাহ্ন
আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও প্যানডেমিক করোনা ভাইরাস।
বিজ্ঞান ও গবেষণা

ড.সাইফুল ইসলাম সিদ্দিকী :আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে জৈবঅস্ত্র বা জীবাণুর ব্যবহার নতুন কিছু নয়। বিশ্বের বুকে মাথা উচু করে রাখা তথা অন্যকে ছাপিয়ে বিশ্বকে শাসন করার জন্য যে শক্ত অর্থনৈতিক অবস্থান দরকার তা তৈরিতে জীবাণুর ব্যবহার ও নতুন কিছু নয়। এনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রিটেনিকার ভাষ্য অনুযায়ী, জৈব অস্ত্র হলো বিভিন্ন ধরনের রোগ সৃষ্টিকারী এজেন্ট (ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস কিংবা টক্সিন) বা অন্যকোনো জৈব এজেন্ট যা মানব সম্প্রদায়, প্রাণীকুল বা উদ্ভিদের উপর ক্ষতিসাধনের অস্ত্র হিসেবে প্রয়োগ করা হয়। জৈব অস্ত্রের জৈব উপাদান মানুষ, অন্যান্য প্রাণী বা উদ্ভিদকে অসুস্থ করে তোলে এবং ক্ষেত্রবিশেষে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দেয়। এ ধরনের অস্ত্রের মাধ্যমে মানুষ ছাড়াও গবাদি পশু বা ফসলেরও ক্ষতি সাধন করা যায়। কালের পরিক্রমায় জীবাণু অস্ত্র আজ প্রতিষ্ঠিত একটি বিষয়। বায়ো- টেররিজম বা বায়োলজিক্যাল ওয়্যারফেয়ার প্রভূত শব্দ আমাদের কাছে কিছুটা অপরিচিত মনে হলেও মানবসভ্যতায় জৈব রাজনীতি কিন্তু চলে আসছে সেই পৌরাণিক কাল থেকেই। প্রাচীনকালে ভেড়ার শরীরে রোগের জীবাণু প্রবেশ করিয়ে তা প্রতিপক্ষের এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে মহামারি সৃষ্টির উল্লেখ পাওয়া যায় ইতিহাসে। মঙ্গলদের শত্রুর সাম্রাজ্য প্লেগ আক্রান্ত মৃতদেহ ফেলে রাখা, স্প্যানিশদের ওয়াইনের সঙ্গে দূষিত রক্ত মেশানো অথবা রেড ইন্ডিয়ানদের মাঝে ব্রিটিশদের স্মলপক্সের মহামারি ছড়িয়ে দেওয়ার মতো ডজন-ডজন বায়ো টেররিজমের ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যাবে ইতিহাসের পাতায়।

আন্তর্জাতিক রাজনীতি যেসব নিয়ামক দ্বারা প্রভাবিত বা আবর্তিত হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো বৈদেশিক মুদ্রা ও বাণিজ্য। এই জীবাণু বা ভাইরাসের সাথে অর্থনীতি তথা বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ অঙ্গাঅঙ্গীভাবে জড়িত। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে (১) ভাইরাস প্রতিরোধে টীকা (২) ভাইরাস বিস্তাররোধে বা স্বাস্থ্যবিধী মানতে প্রয়োজনীয় উপকরণ যথা মাস্ক, হ্যান্ডগ্লাবস, স্যানিটাজার, ফেসশিল্ড, ইত্যাদি (৩) রোগ নির্ণয়ে কিট, রি-এজেন্ট (৪) স্বাস্থসেবা দিতে পিপিই, যন্ত্রপাতি ( পালস অক্সিমিটার), অক্সিজেন সিলিন্ডার ইত্যাদির বাণিজ্যিক উৎপাদন ও রপ্তানি বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপায়। করোনা কালীন সময়ে এসব মালামাল বা দ্রব্যাদির উৎপাদন ও বিপণনের সাথে কি পরিমাণ আর্থিক সংশ্লিষ্টতা ছিলো তা এখনো অজানা হলেও বিষয়টি যে ব্যাপক তা সহজেই অনুমান করা যায়। করোনা প্যানডেমিক যে বাণিজ্যর সম্প্রসারণ বা আন্তর্জাতিকরণে কোন কোন দেশকে প্রভূত সহায়তা করেছে তা আজ অনেকটাই স্পষ্ট। নিকটতম ভবিষ্যতে World Economic Review হয়তো তা পরিস্কার করে তুলে ধরবে।

করোনা ভাইরাসের উৎস নিয়ে দুটি কথাঃ
করোনা ভাইরাসের উৎস যে দেশ বা প্রদেশ বা ভাইরোলজী ল্যাবই হউক না কেন, এটা আজ বৈজ্ঞানিকভাবে (Genomic study) প্রমাণিত যে SARS ভাইরাস তার পূর্বপূরুষ। Phylogeny বা Phylogenetics Analysis এ দুটি ভাইরাসের বহূত সাদৃশ্যতা পাওয়া যায়। তারা একই Clade বা phylogram বা Cluster এ পড়ে। সহজে বলা যায়, SARS ভাইরাস Mutagenesis এর মাধ্যমে Corona virus এ রুপান্তরিত হয়েছে। প্রশ্ন হলো এই রুপান্তর প্রকৃতিগতভাবে অনুকূল / প্রতিকূল প্রাকৃতিক পরিবেশে হতে পারে আবার ল্যাবরেটরিতে বৈজ্ঞানিকভাবে অনুকূল / প্রতিকূল পরিবেশে হতে পারে। সাধারণত কোনো ভাইরাস কে Unusual host ( প্রতিকূল পরিবেশ) এর ভিতর চালিত করলে ভাইরাসের pathogenecity (রোগ তৈরির ক্ষমতা) লোপ পায়, যা কি-না টীকা তৈরির মূলনীতি। আবার, Usual host ( অনুকূল পরিবেশ ) এর ভিতর চালিত করলে রোগ তৈরির ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া কোনো ভাইরাসের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ অন্যকোন শক্তিশালী ভাইরাসের উদ্ভাবনের সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি হলো Recombinant DNA Technology.উদ্ভাবিত ভাইরাস কেই কেউ Bio engineered ভাইরাস ও বলে থাকে। যে প্রযুক্তি পৃথিবীর যে কেনো জীবের উপর প্রয়োগযোগ্য। বিশ্বব্যাপী Genetic Engineering বা Biotechnology বা Viral Genetics বা Molecular Genetics বা Molecular Biology সহবিভিন্ন নামে এ গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে। পৃথিবীর যেসব দেশ বা এলাকায় SARS ভাইরাসের প্রাধান্য ছিলো বা যেসব ল্যাবরেটরিতে এ ভাইরাসের উপর গবেষণা চলছিল, তারাই যে Pandemic Covid-19এর উৎস তাতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। উৎস যাই হোক না কেন বাহক তো আক্রান্ত মানুষ, এবং মানুষই বিশ্বব্যাপী ভাইরাসটি ছড়িয়েছে।

চীন ও অ্যামেরিকা পরস্পরকে দোষারোপঃ
চীনে SARS ভাইরাসের দীর্ঘ সময় প্রাদূর্ভাব, Wuhan Institute of Virology এর SARS সম্পর্কিত গবেষণা কার্যক্রম ও Covid-19 প্যানডেমিক অবস্থার শুরুর জন্য সংগত কারণেই উহান তথা চীন করোনা ভাইরাস বিস্তারের জন্য দায়ী বলে অনেকেই সন্দেহ পোষণ করে। স্বল্পতম সময়ে টীকা উৎপাদন ও রপ্তানি, করোনা রোগ নির্ণয়ের যাবতীয় কীট, রি-এজেন্ট ও রোগের বিস্তার রোধে প্রয়োজনীয় সামগ্রীসমূহের বাণিজ্যিক উৎপাদন ও বিক্রি উক্ত সন্দেহকে আরো শক্ত করে তোলে। অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ডোনাল্ড চীন কে বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য দায়ী করে আসছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা কে ভাইরাসের উৎস সন্ধানে তদন্তের নির্দেশ প্রদানের মাধ্যমে একই পথে হাঁটছে। চীন বরাবরই এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে অস্বীকার করে আসছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং এর “ভাইরাসের উৎস সন্ধানঃ যুক্তরাষ্ট্র ছাড় পেতে পারে না ” শিরোনামের লেখাটিতে ১৯৯০ সালে অধ্যাপক রালফ বারিফ নর্থক্যারোলাইনার বিশ্ববিদ্যালয়ের (UNC) মেডিসিন স্কুলে Recombinant Corona Virus নিয়ে গবেষণা করেছিলেন – এ দাবী করেছেন। ২০১৫ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ২৮ টি ল্যাবরেটরী দূর্ঘটনা সংঘটিত হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন – এর মধ্যেই ৬ টিতে SARS, MARS ও Corona Virus জড়িত ছিল। এক কথায়, তিনি অনেকটা স্পষ্ট করেই করোনা ভাইরাস ছাড়ানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বায়োল্যাব সুরক্ষার খারাপ অবস্থাকেই দায়ী করেছেন।
করোনা প্যানডেমিক ও বিপর্যস্ত মানবতাঃ
মানবতা আজ সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে। কারণ যদি হয় ইচ্ছাকৃত তাহলে সেটি মানবজাতির সর্বোচ্চ দূঃভাগ্যের বিষয়। চীন বা যুক্তরাষ্ট্র বা অন্যকোন দেশ বা বিশেষ কোন বিজ্ঞান গবেষক বা গবেষকদল যদি বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ভাইরাস ছড়িয়ে থাকে তাহলে সেটা হবে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। দেশ,জাতি,বর্ণ বা ধর্ম নির্বিশেষে প্রত্যেকটি মানুষের এ পৃথিবীতে সুস্থভাবে বেঁচে থাকা তার জন্মগত অধিকার। পৃথিবীকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলার অধিকার কেউ সংরক্ষণ করে না। এমনকি অনিচ্ছাকৃত হলেও তাদের কে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হবে। এজন্যই জাতিসংগের অধীনে সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্তপূর্বক দায়ীদের খুজে বের করে শাস্তিপ্রদান অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

ড.সাইফুল ইসলাম সিদ্দিকী

শিক্ষাবিদ ও গবেষক।

অধ্যাপক, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : নভেম্বর ৪, ২০২১ ৯:৪১ পূর্বাহ্ন
সুসজ্জিত ‘নাহার এগ্রো পোল্ট্রি এবং হ্যাচারিতে’ বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ স্থাপনা
বিজ্ঞান ও গবেষণা

গত ২ নভেম্বর, ২০২১ তারিখে ওয়ান হেলথ্ পোল্ট্রি হাব বাংলাদেশের একদল গবেষক মীরসরাইয়ে অবস্থিত নাহার পোল্ট্রি ফার্ম পরিদর্শনে যান। সেখানে ছিলেন ওয়ান হেলথ্ পোল্ট্রি হাব বাংলাদেশ এর জাতীয় সমন্বায়ক অধ্যাপক মোঃ আহসানুল হক, গবেষণা সহকারী-সমাজবিজ্ঞান নুসরাত আইরিন এবং মাস্টার্স শিক্ষার্থী ডা. মেহেরজান ইসলাম। নাহার এগ্রো পোল্ট্রি এবং হ্যাচারি (মীরসরাই) এর ব্যবস্থাপক মনোজ কুমার চৌহান দুপুর ৩টা থেকে রাত ৮.৩০ মিনিট পর্যন্ত এই গবেষক দলকে পুরো এগ্রো ফার্মটি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখান।

নাহার এগ্রো গ্রুপের এই সিস্টার কনসার্ন ‘পোল্ট্রি খামার এবং হ্যাচারি’র সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় ছিলো এর বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা এবং পরিপূর্ণ জীবনিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা। ওয়ান হেলথ্ পোল্ট্রি হাব বাংলাদেশ এর গবেষক দলের গাড়িটি খামারের ভেতর প্রবেশের পূর্বে প্রয়োজনীয় পদ্ধতিতে জীবাণুনাশ করা হয়। একই সাথে গবেষক দলের জন্যে ছিলো খামারে নির্ধারিত পোষাক এবং সয়ংক্রিয় উপায়ে জীবনুনাশের ব্যবস্থাপনা। হ্যাচারি এবং খামারের প্রতিটি পয়েন্টে ছিলো জীবাণুনাশক ফুটবাথ এবং সয়ংক্রিয় জীবাণুনাশ ব্যবস্থা। প্রাণ-চঞ্চল খামারটিতে প্রতিটি কর্মচারির মধ্যে কর্র্মচাঞ্চলতা এবং নিজ নিজ দায়িত্ব কর্র্তব্যের সাথে পালনের দৃঢ়তা পরিলক্ষিত হয়। ১৯৯০ সালে দেশের আমিষের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ রাকিবুর রহমান, নাহার এগ্রো গ্রুপের কার্যক্রম শুরু করেন।

 

পুরো খামার পরিদর্শনের শেষ প্রান্তে এসে গবেষকদলের দৃষ্টিতে পড়ে খামারটির বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ স্থাপনাটি (Effluent Treatment Plant)। খামারে ব্যবহৃত সকল পানি সরবরাহকারি পাইপের মধ্য দিয়ে এই স্থাপনায় এসে জমা হয়। সেখানে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন প্রয়োগ (অক্সিজেনেশান) এবং প্রক্রিয়াকৃত হয়ে বিশুদ্ধ পানিকে নিষ্কাশন করা হয়। নাহার এগ্রো পোল্ট্রি এবং হ্যাচারি (মীরসরাই) এর ব্যবস্থাপক মনোজ কুমার চৌহান বলেন, “প্রতিদিন খামারের হ্যাচারিতে প্রায় ১লাখ পরিমাণ পানি লাগে। এই পুরো পানিই এখানে প্রক্রিয়াকৃত (জীবাণুনাশ) হয়ে নিষ্কাশন করা হয়। এই পানি পুনরায় প্রক্রিয়াজাত করে খামারে ব্যবহার করা যেত, এতে প্রতিলিটার পানির জন্যে অতিরিক্ত ৭টাকা করে ব্যয় করা লাগবে।”

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ অনুযায়ী প্রতিটি শিল্প প্রতিষ্ঠানে উপযুক্ত ETP (Effluent Treatment Plant) স্থাপন করবে এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত সকল পানীয় বর্জ্য প্রক্রিয়াকৃত করে নিষ্কাশন করবে। নাহার এগ্রো গ্রুপের প্রতিটি খামার এবং হ্যাচারিতে অনুরূপ ETP (Effluent Treatment Plant)রয়েছে।

ওয়ান পোল্ট্রি হাব বাংলাদেশ এর জাতীয় সমন্বায়ক অধ্যাপক মোঃ আহসানুল হক বলেন, “প্রতিটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের এরূপ নিজ নিজ উদ্যোগ দেশ এবং পরিবেশের জন্যে বন্ধু-বান্ধব। যেকোন একটি প্রতিষ্ঠানের এরূপ মহত্ উদ্যোগ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের জন্যেও অনুপ্রেরণামূলক।”

শেয়ার করুন

প্রকাশ : অক্টোবর ৩১, ২০২১ ১২:০৩ অপরাহ্ন
২৫০ উপজেলার কৃষকের আমন ধান কেনা হবে অ্যাপে
কৃষি বিভাগ

চলতি আমন মৌসুমে পরীক্ষামূলকভাবে ২৫০টি উপজেলায় ‘কৃষকের অ্যাপ’-এর মাধ্যমে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনবে সরকার।

এ জন্য কৃষকের অ্যাপের মাধ্যমে কৃষক নিবন্ধন ও ধান বিক্রির আবেদন নিতে আগামী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের নির্দেশনা দিয়ে সম্প্রতি খাদ্য অধিদপ্তর থেকে ঢাকা, খুলনা, রংপুর, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, রাজশাহী ও ময়মনসিংহের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, আসন্ন আমন, ২০২১-২২, মৌসুমে দেশব্যাপী ২৫০টি নির্বাচিত উপজেলায় পাইলট আকারে ‘কৃষকের অ্যাপ’ বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কৃষকের অ্যাপের মাধ্যমে কৃষক নিবন্ধন ও ধান বিক্রয়ের আবেদন গ্রহণের সময়সীমা আগামী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।

‘কৃষকের অ্যাপ’-এর মাধ্যমে কৃষক নিবন্ধন ও ধান বিক্রয়ের আবেদন ও নিবন্ধনের সময়সীমা সম্পর্কে কৃষকদের অবহিত করার জন্য স্থানীয় পর্যায়ে বহুল প্রচারণা চালানো প্রয়োজন। এ জন্য মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য ১৩টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে চিঠিতে।

নির্দেশনাগুলো হলো-
১. নির্বাচিত উপজেলায় ‘কৃষকের অ্যাপ’-এর মাধ্যমে ধান ক্রয় কার্যক্রম সম্পাদন করতে হবে।

২. প্রশিক্ষণ সিডিউল অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সব ইউএনও/উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাসহ খাদ্য অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের সংশ্লিষ্ট মনোনীত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জুমের মাধ্যমে ভার্চুয়াল কর্মশালায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

৩. খাদ্য অধিদপ্তরের ওয়েবেসাইটের নিচের অংশে সংযোজিত ‘ফটো এবং ভিডিও বক্স’ থেকে ‘গাইড লাইন কৃষকের অ্যাপ’ থেকে ভিডিও টিউটোরিয়াল ডাউনলোড করে অ্যাপ ব্যবহার সম্পর্কে ইউএনও/উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবহিত করতে হবে।

৪. কৃষকের অ্যাপের মাধ্যমে ধান সংগ্রহ কার্যক্রমের জন্য প্রস্তুতকৃত লিফলেট ও তৈরিকৃত অডিও মাইকিংয়ের মাধ্যমে এবং টিভিসি (ভিডিও) ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট উপজেলায় প্রচার করতে হবে।

৫. প্রস্তুতকৃত পোস্টার উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ স্থান, বাজার, মসজিদের প্রধান ফটকের বিপরীতে এবং দৃষ্টিগোচর হয় এমন স্থানে সেঁটে দিতে হবে।

৬. প্রস্তুতকৃত লিফলেট জনসমাগম হয় এমন স্থানে, যেমন- মসজিদ, স্থানীয় বাজারের দিন, চায়ের দোকানে বিতরণ করতে হবে।

৭. প্রস্তুতকৃত লিফলেট ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, মেম্বার ও স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।

৮. উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার উঠান বৈঠকে উপস্থিত হয়ে প্রস্তুতকৃত লিফলেট বিতরণ করতে হবে।

৯. কৃষকের অ্যাপের মাধ্যমে ধান সংগ্রহ কার্যক্রমের জন্য তৈরিকৃত অডিও মাইকিংয়ের মাধ্যমে জনসমাগম স্থানে প্রচার করা করতে হবে।

১০. প্রস্তুতকৃত লিফলেট জেলা/উপজেলার ওয়েব পোর্টালে প্রকাশ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

১১. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্টার/লিফলেট প্রকাশ করে প্রচার করতে হবে।

১২. স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে সভা করে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, মেম্বার, মহিলা মেম্বার, ইউডিসি উদ্যোক্তাদের অবহিত করতে হবে।

১৩. ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে উদ্যোক্তার মাধ্যমে কৃষক নিবন্ধন উৎসাহিত করতে হবে।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : অক্টোবর ২৩, ২০২১ ৮:৫৮ পূর্বাহ্ন
হালদার ডলফিন ও কার্প জাতীয় মাছের উন্মোচন হচ্ছে জীবনরহস্য
বিজ্ঞান ও গবেষণা

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) বিপন্ন তালিকায় থাকা ডলফিনকে বাঁচাতে উদ্ঘাটন করা হচ্ছে তার জীবনরহস্য। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিসার্চ ইনস্টিটিউট ও ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক দু’বছর ধরে কাজ করছে ডলফিন নিয়ে। একই সঙ্গে জীবনরহস্য উন্মোচন করছেন তারা হালদার কার্প জাতীয় চার মাছ- রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালবাউশের।

হালদায় কার্প জাতীয় মাছ ও বিলুপ্ত প্রজাতির ডলফিনের জীবন সংরক্ষণ, উৎপাদন, প্রজনন এবং বংশবিস্তারের ক্ষেত্রে কোন কোন জিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে তা বিস্তারিত জানা যাবে জীবনরহস্য উন্মোচনের মাধ্যমে। এরই মধ্যে জিন শনাক্ত করে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন-এনসিবিআইর ডাটা ব্যাংকে জমা দিয়েছেন গবেষকরা। সেখান থেকে মিলেছে অনুমোদন। আর এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশের অধিকারও। আগামী মাসে গবেষণার ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করবেন গবেষকরা। উল্লেখ্য, হালদার ডলফিন ও কার্প জাতীয় চার মাছের জীবনরহস্য উন্মোচনে বাংলাদেশের এ প্রচেষ্টা বিশ্বে প্রথম।

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এএমএএম জোনায়েদ সিদ্দিকী বলেন, পৃথিবীতে আমরাই প্রথম বিপন্ন প্রজাতির ডলফিনের জীবনরহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করছি। এরই মধ্যে ডলফিনের জিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন-এনসিবিআইর ডাটা ব্যাংকে জমা দেওয়ার পর অনুমোদন পাওয়া গেছে। আমরা এখন এ জিনগুলো গ্রুপ করছি।

জিনগুলো ডলফিন ও কার্প জাতীয় চার মাছের জীবনে কোন পর্যায়ে কী ভূমিকা পালন করে তা জানানোর চেষ্টা করছি আমরা। গবেষণার কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। শিগগির এটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করব আমরা। তিনি জানান, জীবনরহস্য উন্মোচনের মাধ্যমে হালদার বিলুপ্ত প্রজাতির ডলফিন এবং কার্প জাতীয় মাছের মালিকানা এখন বাংলাদেশের বলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

গবেষণা দলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়কারী ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কিবরীয়া। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নমুনাগুলো পরীক্ষার জন্য আমরা চীনে পাঠিয়েছি। সেখান থেকে টোটাল ডিএনএ আসে।

এরপর সেগুলো আমরা এনসিবিআইতে জমা দেই। তারা এটা যাছাই-বাছাই করে প্রকাশ করেছেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ওনারশিপ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি জানান, গবেষক দলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচজন শিক্ষার্থী রয়েছেন। এ ছাড়া ভেটেরিনারি ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচজন শিক্ষার্থী রয়েছেন।

জীবনরহস্য উন্মোচিত হলে জানা যাবে কেন হালদার মাছ অন্যস্থানের চেয়ে আলাদা। এ নদীর ডলফিন ও মাছের মধ্যে স্বতন্ত্র কী কী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এদের বংশবিস্তারে কোন জিন কীভাবে ভূমিকা রাখে জানা যাবে সেটিও। সংগৃহীত এসব তথ্য পরে আরও ব্যাপক আকারে আন্তর্জাতিকভাবে প্রকাশ করা হবে।

গবেষণার জন্য যে ডলফিন ও মাছ সংগ্রহ করা হয়েছে তা বিভিন্ন সময় হালদা নদী থেকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। ২০১৮ সালে মৃত অবস্থায় পাওয়া ৭০-৮০ কেজি ওজনের ডলফিন থেকে নমুনা নিয়েছেন গবেষকরা। আর নমুনা নেওয়া রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালবাউশ মাছের ওজন ১৬ থেকে ১৭ কেজি।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : অক্টোবর ১০, ২০২১ ৮:১১ অপরাহ্ন
বিজ্ঞানীদের বিশ্ব র‍্যাংকিঙে খুবি উপাচার্যের মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান লাভ
বিজ্ঞান ও গবেষণা

২০২১ সালে বিশ্ব বিজ্ঞানীদের তালিকায় মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান লাভ করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি এন্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের শিক্ষক, গবেষক, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন। আজ ১০ অক্টোবর ২০২১ খ্রি. তারিখ এডি সাইন্টিফিক ইনডেক্স নামের আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা সংস্থা সারা বিশ্বের ২০৬ দেশের ১৩,৫৩১ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত লক্ষাধিক বিজ্ঞানীর সাইটেশান এবং অন্যান্য ইনডেক্সের ভিত্তিতে এই র‌্যাংকিং তালিকা প্রকাশ করেছে। এই র‌্যাংকিং করার ক্ষেত্রে বিশ্বের ৭,০৮,৪৮০ জন, এশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের ১,৫৩,২৬২ জন, বাংলাদেশের ১৭৯১ জন এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯ জন বিজ্ঞানীর সংশ্লিষ্ট বিষয়ে চলতি বছরসহ গত ৫ বছরের সাইটেশন আমলে নেওয়া হয়। এর মধ্যে গবেষক প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ও ফরেস্ট্রিতে এবং পৃথকভাবে ফরেস্ট্রি উভয় ক্যাটাগরিতে ১ম, দেশে ফরেস্ট্রি বিজ্ঞানীদের মধ্যে ৪র্থ, এশিয়ার বিজ্ঞানীদের মধ্যে ১৫১ তম এবং সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীদের মধ্যে ৮২৫ তম স্থান লাভ করেছেন। ড. মাহমুদ হোসেন একজন নিবেদিতপ্রাণ গবেষক। বন, কৃষি, মৃত্তিকা, পরিবেশ, প্রতিবেশ ও পর্যটনের ক্ষেত্রে রয়েছে তাঁর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গবেষণা যা খ্যাতনামা জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। সুন্দরবনের ওপর রয়েছে তাঁর নানাধর্মী গবেষণা। এছাড়া তিনি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে একজন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ। দেশের মধ্যে প্রথম খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সয়েল আর্কাইভ তাঁর উদ্যোগে ও প্রচেষ্টায় স্থাপিত হয়েছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার ওপর সবিশেষ জোর দিয়েছেন। ইতোমধ্যে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের গবেষণায় আকৃষ্ট করতে স্কলারশিপের পরিমাণ ও সংখ্যা বৃদ্ধি করা ছাড়াও গবেষণা ল্যাব উন্নয়নে পদক্ষেপ নিয়েছেন। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও ২৮ জন শিক্ষক-গবেষক এই র‌্যাংকিং তালিকায় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে স্থান লাভ করেছেন। উপাচার্য তাঁদেরকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এক অভিনন্দন বার্তায় তিনি বলেন, এই অর্জন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে গবেষণায় অনুপ্রেরণা যোগাবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেবে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানের উন্নীত করা এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান তৈরিতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীদের নিরন্তরভাবে গবেষণার মাধ্যমে দেশর কল্যাণে দিকনির্দেশনা প্রদান ও নতুন নতুন উদ্ভাবনার আহবান জানান।

এদিকে এডি ইনডেক্সের র‌্যাংকিংয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন বিশেষ মর্যাদাপূর্র্ণ অবস্থান লাভ করায় তাঁকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা, ডিনবৃন্দ, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত), ডিসিপ্লিন প্রধানবৃন্দ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ও অফিসার্স কল্যাণ পরিষদ।

তথ্যসূত্রঃ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ফেইসবুক অফিসিয়াল পেইজ

শেয়ার করুন

প্রকাশ : সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২১ ১১:১৩ অপরাহ্ন
আবার দেখা মিলবে স্বাদুপানির কাকিলার
বিজ্ঞান ও গবেষণা

স্বাদুপানির অন্যতম মাছ কাকিলা। খেতে সুস্বাদু এ মাছটির দোপেঁয়াজা ভোজনরসিকদের কাছে অমৃতসম। মানবদেহের জন্য উপকারী অণুপুষ্টি উপাদানসমৃদ্ধ এবং কাঁটা কম থাকায় সবার কাছে প্রিয়। একসময় মুক্ত জলাশয়ে বিশেষ করে নদী-নালা, হাওর-বাঁওড়, খাল-বিলে প্রচুর পাওয়া গেলেও এখন বিলুপ্তপ্রায় কাকিলা। অঞ্চলভেদে কিছু কিছু এলাকায় পাওয়া গেলেও পরিমাণে খুবই কম। জলবায়ুর প্রভাব, প্রাকৃতিক বিপর্যয়সহ প্রজনন ক্ষেত্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এ মাছ আর পানিতে বিচরণ করতে দেখা যায় না।

আশার কথা, বদ্ধপরিবেশে অভ্যস্তকরণ ও কৃত্রিম প্রজনন কলাকৌশল উদ্ভাবনে সাফল্য পেয়েছেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) স্বাদুপানি উপকেন্দ্র, যশোরের বিজ্ঞানীরা। ইনস্টিটিউটের কোর গবেষণা কার্যক্রমের আওতায় তিন বছর নিবিড় গবেষণার পর এ সাফল্য পান মাৎস্যবিজ্ঞানীরা। ফলে আবার পানিতে ঢেউ তুলবে কাকিলা, রক্ষা পাবে বিলুপ্তির হাত থেকে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) স্বাদুপানি উপকেন্দ্র, যশোরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. রবিউল আউয়াল হোসেন, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম এবং বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শিশির কুমার দে ওই গবেষণা করেন।

এ প্রসঙ্গে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অভ্যন্তরীণ উন্মুক্ত জলাশয় সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় দেশি মাছের প্রজনন ও বিচরণ ক্ষেত্র ইতিমধ্যে অনেক বিনষ্ট হয়ে গেছে। ফলে প্রাকৃতিক জলাধার যেমন হাওর-বাঁওড়, খাল-বিল ও নদ-নদীতে এসব মাছের প্রাপ্যতা হ্রাস পেয়েছে।

মৎস্য অধিদফতর অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এসব দেশি মাছ সংরক্ষণ ও উন্নয়নে কাজ করছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা হারিয়ে যাওয়া দেশি মাছের স্বাদ মানুষের খাদ্যের সঙ্গে যুক্ত করতে চাই। এজন্য দেশি বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির মাছ পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণে বর্তমানে ইনস্টিটিউটের যশোর, সৈয়দপুর ও ময়মনসিংহ গবেষণা কেন্দ্র থেকে গবেষণা করা হচ্ছে। এতে সাফল্যও আসছে।’

সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা জানান, কাকিলা বা কাখলে একটি বিলুপ্তপ্রায় মাছ। এর দেহ সরু, ঠোঁট লম্বাটে এবং ধারালো দাঁতযুক্ত। বাংলাদেশে যে জাতটি পাওয়া যায় সেটি মিঠা পানির। মাছটি বাংলাদেশের অধিকাংশ অঞ্চলে কাইকল্যা, কাইক্কা নামেই পরিচিত। বৈজ্ঞানিক নাম Xenentodon cancila. মাছটিকে ইংরেজিতে Freshwater garfish. বলে।

বাংলাদেশ ছাড়াও শ্রীলঙ্কা, ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে এ মাছ পাওয়া যায়। তবে রং ও আকারে কিছু পার্থক্য থাকে। গবেষক দলের প্রধান ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. রবিউল আউয়াল হোসেন বলেন, ‘কাকিলার দেহ লম্বা, সামান্য চাপা এবং প্রায় সিলিন্ডার আকৃতির। এগুলো লম্বায় ২৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার হয়। পরিণত পুরুষ মাছের মাথার শীর্ষে লাল চূড়া দেখা যায়, যা থেকে সহজেই স্ত্রী ও পুরুষ মাছ আলাদা করা যায়। এ ছাড়া পুরুষ মাছের দেহ স্ত্রী মাছের তুলনায় সরু এবং আকারে একটু ছোট হয়। এটি শিকারি মাছ।

মূলত ছোট মাছ খেয়ে থাকে। প্রাকৃতিকভাবে প্রবহমান জলাশয়ে বিশেষ করে নদীতে এবং বর্ষাকালে প্লাবিত অঞ্চলে প্রজনন করে থাকে। পরিণত মাছেরা ভাসমান জলজ উদ্ভিদ নেই এমন স্থানে বসবাস করলেও জলজ উদ্ভিদের পাতার নিচে ও ভাসমান শিকড়ে এদের স্ত্রীরা ডিম পাড়ে। কাকিলা মাছের কৃত্রিম প্রজনন এটিই বাংলাদেশে প্রথম এবং বিশ্বের কোথাও এ মাছের কৃত্রিম প্রজননের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।’

ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘রাজবাড়ী জেলাসংলগ্ন কুষ্টিয়ার পদ্মা নদী থেকে কাকিলা ব্রুড (মা-বাবা মাছ) সংগ্রহ করে যশোরের স্বাদুপানি উপকেন্দ্রের পুকুরে ছাড়া হয়। পরে হ্যাচারিতে উৎপাদিত কার্পজাতীয় মাছের জীবিত পোনা এবং নানা জলাশয় থেকে সংগৃহীত জীবিত ছোট মাছ খাইয়ে পুকুরের আবদ্ধ পরিবেশে মাছকে অভ্যস্ত করা হয়। এরপর চলতি বছরের মে থেকে বৈজ্ঞানিক প্রটোকল অনুসরণ করে কৃত্রিম প্রজননের উদ্দেশ্যে উপকেন্দ্রের হ্যাচারিতে নির্দিষ্টসংখ্যক মা-বাবা মাছকে বিভিন্ন ডোজে হরমোন ইনজেকশন দেওয়া হয়।

এভাবে কয়েকবার বিভিন্ন ডোজের ট্রায়াল দেওয়া হলেও মাছের প্রজননে সাফল্য আসেনি। অবশেষে ২৫ আগস্ট প্রজননকৃত মাছের ডিম থেকে পোনা বের হয় এবং কাকিলা মাছের কৃত্রিম প্রজননে সাফল্য আসে।’ প্রধান গবেষক জানান, কাকিলা মাছের প্রজননের জন্য পিজি হরমোন ব্যবহার করা হয়।

১৮ আগস্ট পুকুর থেকে মাছ ধরে চার জোড়া মা-বাবা নির্বাচন করে হ্যাচারির চৌবাচ্চায় নির্দিষ্ট সময় ঝরনাধারা দিয়ে একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় হরমোন ইনজেকশন দেওয়া হয়। পরে মা-বাবা মাছকে একত্রে একটি চৌবাচ্চায় রেখে ঝরনাধারা দিয়ে সেখানে কচুরিপানা রাখা হয়। প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর মা মাছ ডিম ছাড়ে। ডিমের ভিতরে বাচ্চার বিভিন্ন দশা ও উন্নয়ন অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হয়। ডিম ছাড়ার ৯০ থেকে ১০০ ঘণ্টার মধ্যে নিষিক্ত ডিম থেকে বাচ্চা বের হয়। গবেষকরা জানান, প্রতি ১০০ গ্রাম খাবার-উপযোগী কাকিলা মাছে ১৭.১ শতাংশ প্রোটিন, লিপিড ২.২৩ শতাংশ, ফসফরাস ২.১৪ শতাংশ এবং ০.৯৪ শতাংশ ক্যালসিয়াম রয়েছে যা অন্যান্য ছোট মাছের তুলনায় অনেক বেশি।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, ‘দেশের বিলুপ্তপ্রায় ৬৪টি মাছের মধ্যে ৩০টির কৃত্রিম প্রজননে ইতিমধ্যে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট সাফল্য পেয়েছে। সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ৩১তম মাছ হিসেবে কাকিলা যুক্ত হলো।’ বিডি প্রতিদিন

শেয়ার করুন

প্রকাশ : সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২১ ১১:০৩ পূর্বাহ্ন
কাঁচকি মাছের চানাচুর তৈরি করলো বাকৃবির গবেষকদল
ক্যাম্পাস

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের একদল গবেষক প্রক্রিয়া করে তৈরি করেছেন কাঁচকি মাছের চানাচুর, কুড়কুড়ে বাদাম ও তিলের বার। সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে গবেষণাটি পরিচালিত হয়। গবেষক দলের প্রধান ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ নুরুল হায়দার ও সহযোগী গবেষক হিসেবে ছিলেন একই বিভাগের প্রভাষক মো. মোবারক হোসেন।

ড. মুহম্মদ নুরুল হায়দার জানান, কাঁচকি মাছে শরীরের জন্যে প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও ভিটামিন ‘এ’বিদ্যমান। হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কাঁচকি মাছ গুরুত্বপূর্ণ। শিশুসহ সকল বয়সের মানুষের চানাচুর এবং বার জাতীয় খাবার খুব পছন্দনীয়। দুটি ভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৬টি পণ্য উৎপাদন করেছি।

ক্যাটাগরি-১ এর পণ্যগুলো মূলত চানাচুর জাতীয় অন্যদিকে ক্যাটাগরি-২ এর পণ্যগুলো মূলত কুড়কুড়ে বাদাম ও তিলের বার (যা স্থানীয়ভাবে তিল বাদাম তক্তি হিসেবে পরিচিত) তৈরি করা হয়েছে। এতে এসব মুখরোচক খাবারে সাথে মাছের পুষ্টিও গ্রহণ করতে পারবে বলে জানান হায়দার।

মো. মোবারক হোসেন বলেন, মুখরোচক খাবারে প্রয়োজনীয় পুষ্টিমান বৃদ্ধির লক্ষ্যেই আমরা মূলত গবেষণাটি প্রকল্প সম্পন্ন করেছি। ছোট মাছের কাঁটা খেতে হবে চিবিয়ে। এতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম পাওয়া যাবে। অন্যদিকে গর্ভবতী মা ও দুগ্ধদানকারী মায়ের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির যোগান দিয়ে থাকে এ কাঁচকি মাছ।

গবেষকদল জানান, মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ফিশ নিউট্রিশন ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে দেখা যায়, চানাচুর জাতীয় পণ্যগুলোতে গড়ে ৪-৫ % ময়েশ্চার, ২৬-৩০% লিপিড, ১৮-২২% প্রোটিন, ৫% মিনারেল, ২% ফাইবার এবং ৩৯-৪২% কার্বোহাইড্রেট রয়েছে। যেখানে সাধারণ চানাচুরে প্রোটিন থাকে ১২-১৩%। বার জাতীয় পণ্যগুলোতে ২০-২২ % ময়েশ্চার, ১৩-১৯% লিপিড, ১৩-১৫% প্রোটিন, ১২-১৫% মিনারেল, ২-৩% ফাইবার এবং ৩২-৩৪% কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়।

তিল ও বাদামের পণ্যগুলো তৈরি করা হয় বাদাম, মাছ, তিল ও গুড়ের সমন্বয়ে। প্রথমে উপাদানগুলো হাইজেনিক পদ্ধতিতে শুষ্ক করে নেওয়া হয়। যেখানে মাছ, তিল ও বাদাম প্রথমে ভেজে নেওয়া হয়। মাছগুলো মিডিয়াম তাপমাত্রায় ভেজে নেওয়া হয়। এতে মাছগুলো মচমচে হবে। পরে আখের গুড়ের সাথে মিশিয়ে এসব বার তৈরি করা হয়।

অন্যদিকে বাজারের তৈরি চানাচুরের সাথে প্রক্রিয়াকৃত মাছ মিশিয়ে তৈরি করা হয়েছে চানাচুর। মাছ দিয়ে তৈরি এসব পণ্যে পরবর্তীতে মাছে কোনো গন্ধ থাকে না। জিপার ব্যাগে পণ্যগুলো ২ মাসের বেশি সময় পর্যন্ত ভালো থাকে বলে জানান গবেষক দলের প্রধান নুরুল হায়দার।

পণ্যগুলোর বাজার মূল্য কেমন হবে এমন প্রশ্নের জবাবে গবেষকেরা বলেন, সাধারণত বাজারে ২৫ গ্রামের যে পিনাট বার পাওয়া যায় তার দাম ১০ টাকা করে। তাই মাছের তৈরি বারের দাম ১৫-২০ টাকা করে হতে পারে। প্রতি কেজি মাছের তৈরি বার বিক্রি করে ব্যবসায়ীরা ৬০০ টাকা পর্যন্ত লাভ করতে পারবেন। অন্যদিকে মাছের চানাচুরের দাম নির্ধারণ হবে মাছের পরিমাণের উপর। চানাচুরে মাছের পরিমাণ যত বেশি হবে তার দামও ততো বেশি হবে।

বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. ফাতেমা হক শিখা বলেন, এ ধরনের পণ্য বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা গেলে দেশীয় পুষ্টিকর ছোট মাছগুলো সকল শ্রেণির ভোক্তাদের মাঝে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। যা বিপুল জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা পূরণে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে জানান তিনি।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২১ ৫:৩৭ অপরাহ্ন
জাপানে বাংলাদেশী তরুণ বিজ্ঞানীর অনন্য কীর্তি
প্রিয়মুখ

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনিম্যাল সাইন্স এন্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদভূক্ত সার্জারি এন্ড থেরিওজেনােলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মাে. রাশেদুল ইসলাম স্তন্যপায়ী প্রাণির ডিম্বাশয় নিয়ে জাপানের হােক্কাইডাে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদে গবেষণা শুরু করেন। কঠাের পরিশ্রমের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে তিনি তার গবেষণায় অর্জিত ফলাফল দিয়ে প্রথম প্রকাশনাটি একটি খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক গবেষণা জার্নালে (Q1 Rank) প্রকাশ করেন।গবেষণালব্ধ ফলাফল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উপস্থাপন করে তিনি তিন (০৩) বার অন্যতম সেরা বিজ্ঞানীর পুরষ্কার ও খেতাব অর্জন করেন।এরই মধ্যে গবেষণার ফলাফল আরাে দুইটি উচ্চ ইমপ্যাক্টের আন্তর্জাতিক গবেষণা জার্নালে প্রকাশিত হয়, যার ফলশ্রুতিতে ”জাপানীজ সােসাইটি অব ভেটেরিনারি সাইন্স” কর্তৃক অন্যতম তরুণ বিজ্ঞানীর (Young Excellence Research Award) স্বীকৃতি অর্জন করেন।

No description available.

তিনি ২০১৮ সালের এপ্রিলে জাপান সরকার কর্তৃক প্রদত্ত বিশ্বে উচ্চশিক্ষার অন্যতম গবেষণা ফেলােশীপ ”মনবুকাগাকশাে (MEXT: The Ministry of Education, Culture, Sports, Science and Technology)” নিয়ে চার (০৪) বছরের জন্য জাপানের খ্যাতনামা হােক্কাইডাে বিশ্ববিদ্যালয়ে গমন করেছিলেন। গবেষণালব্ধ ফলাফলের প্রকাশনা, আন্তর্জাতিক পুরষ্কার ও স্বীকৃতির জন্য হােক্কাইডাে বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত সময়ের (২৫/৩/২০২২) ছয় (০৬) মাস পূর্বেই (২৪/৯/২০২১) তাঁকে পি. এইচ. ডি. ডিগ্রী প্রদান করেন, যা বিশ্ববিদ্যালয় তথা উচশিক্ষার ইতিহাসে এক অনন্য সম্মানের অর্জন।

ইতােপূর্বে তিনি হাজী সাহেব আলী কেজি স্কুল, মল্লিকবাড়ী; ভালুকা পাইলট উচ বিদ্যালয়; ভালুকা সরকারী ডিগ্রী কলেজ ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠানসমুহ থেকে কৃতিত্ত্বের সাথে পড়াশােনা সম্পন্ন করেন। তন্মধ্যে শিক্ষাজীবনের প্রাথমিক স্কুল পর্যায়ে জেনারেল ও মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে ট্যালেন্টপুল বৃত্তি লাভ করেন তিনি।

ড. মাে. রাশেদুল ইসলাম মনে করেন তার সকল অর্জন পরম করুনাময় আল্লাহ’র অশেষ রহমত, পিতা-মাতার দীর্ঘ সময়ের কঠাের পরিশ্রম ও দােয়ার অর্জন। অর্জিত জ্ঞান যেন দেশের কল্যাণে আসে, সেজন্য তিনি সকলের নিকট দােয়াপ্রার্থী ।

শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop