৭:৩১ পূর্বাহ্ন

সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
প্রকাশ : সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২১ ১০:২২ পূর্বাহ্ন
BLRI উদ্ভাবিত, আফতাব কর্তৃক বাজারজাতকৃত ‘মাল্টি কালার টেবিল চিকেন’ এর এ টু জেড
পোলট্রি

বাংলাদেশে প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিএলআরআই ) দেশের আবহাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি নতুন দেশীয় জাতের মুরগি উদ্ভাবন করে এখন পরীক্ষামূলকভাবে বাজারজাত করার কাজ শুরু করেছে, এর জন্য আফতাব বহুমুখী ফার্মসের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে বিএলআরআই। এই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইন্সটিটিউট এখনো যৌথ গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে।

গবেষণাগারে উদ্ভাবিত এই মুরগির পালক বহুবর্ণ হবার কারণে এর নাম দেয়া হয়েছে ‘মাল্টি কালার টেবিল চিকেন’। এটি দ্রুত পরিপূর্ণ আকার ধারণ করে, অর্থাৎ খাওয়ার উপযোগী হয়। এই মুরগি আট সপ্তাহ মানে ৫৬দিনে মধ্যে খাওয়ার উপযোগী হবে বলে জানিয়েছেন বিএলআরআই এর পোল্ট্রি উৎপাদন বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শাকিলা ফারুক।

মাল্টি কালার টেবিল চিকেনের বৈশিষ্ট্য নিয়ে শাকিলা ফারুক জানিয়েছেন, এ মুরগি মূলত দেশে মাংসের চাহিদা পূরণের উদ্দেশ্য নিয়ে উদ্ভাবন করা হয়েছে। “মাল্টি কালার টেবিল চিকেন খুব দ্রুত বাড়ে। এটি মাংস খাওয়ার জন্য উৎপাদন করা হবে, ডিমের জন্য ব্যবহার করা হবে না। আট সপ্তাহের মধ্যে এর ওজন সাড়ে নয়শো গ্রাম থেকে এক কেজির মত ওজন হয়।” কিন্তু এর স্বাদ এবং মাংসের গুণাগুণ দেশি মুরগির মতই।

মুরগির শারীরিক গঠন, ঠোট ও ঝুঁটি দেশি মুরগির মত, এর পালকও অনেক রঙ এর হয়। এই মুরগি দেখতে দেশীয় জাতের মুরগির মত। এই মুরগিকে দেশীয় ব্রয়লার বলে থাকেন কেউ কেউ।

প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইন্সটিটিউট ২০১৪ সালে প্রথম নতুন মুরগির এ জাত নিয়ে গবেষণা শুরু করে।২০১৮ সালে গবেষণাগারে সাফল্যের পর মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদন শুরু করা হয়। প্রাথমিক অবস্থায় খুলনা, বরিশাল এবং পাবনায় পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদন ও বাজারজাত করা হয়েছে। এখন খুব অল্প পরিসরে মাল্টি কালার টেবিল চিকেন উৎপাদন করা হচ্ছে।

এই মুহূর্তে চারটি সরকারি এবং দুইটি বেসরকারি খামারে নতুন জাতের মুরগি উৎপাদন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শাকিলা ফারুক। এর মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করে পরীক্ষামূলকভাবে বাজারজাত করার জন্য আফতাব বহুমুখী ফার্মসের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইন্সটিটিউট। গবেষণায় দেখা গেছে আট সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত মাল্টি কালার টেবিল চিকেনের মৃত্যুহার ২ শতাংশের নিচে।

ব্রয়লার ও অন্যান্য মুরগির সাথে ‘মাল্টি কালার টেবিল চিকেন’ এর পার্থক্য:
বাংলাদেশে গত এক দশকে মুরগির চাহিদা এবং ব্যবহার অনেকগুন বেড়েছে।এর মধ্যে ব্রয়লার মুরগি যেমন রয়েছে, তেমনি দেশি মুরগি, সোনালী মুরগি, যা পাকিস্তানি মুরগি নামেও পরিচিত এগুলো বেশ জনপ্রিয়। এই মুরগিগুলোর মাঝে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে।

ব্রয়লার মুরগি ২৮-৩২ দিনে খাওয়ার উপযোগী হয়, অর্থাৎ ওই সময়ের মধ্যে ব্রয়লার মুরগির ওজন এক থেকে দেড় কেজি হয়।সোনালি মুরগির এক কেজি ওজনে পৌঁছাতে সময় লাগে ৭০-৮০ দিন।

কিন্তু মাল্টি কালার টেবিল চিকেন বাজারজাত করতে অন্তত আট সপ্তাহ সময় প্রয়োজন হবে।ব্রয়লার মুরগির মাংস ও হাড় নরম হয়, কিন্তু মাল্টি কালার টেবিল চিকেনের মাংস ও হাড় দেশি মুরগির মত শক্ত।ব্রয়লার মুরগি পালনে বড় জায়গা, নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রা এবং আলো-বাতাসের দরকার হয়, কিন্তু এ মুরগি পালনের ক্ষেত্রে দেশি জাতের মুরগির মত খোলা জায়গায় পালন করা যায়।

প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইন্সটিটিউট জানিয়েছেন, এই মুরগি লালনপালন সহজ, ফলে প্রান্তিক খামারীদের জন্য এটি পালন সহজ হবে এবং ফলে আর্থিকভাবে লাভবান হবার সুযোগ বেশি থাকবে।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : অগাস্ট ২৮, ২০২১ ৯:৪৬ পূর্বাহ্ন
তিন দশকে বাংলাদেশে মাছের উৎপাদন বেড়েছে ২৫ গুণ
বিজ্ঞান ও গবেষণা

মাছ বাঙালি জাতির সংস্কৃতি ও কৃষ্টির অংশ। দেশের ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর পুষ্টি চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্যবিমোচন ও রপ্তানি আয়ে মৎস্য খাতের অবদান আজ সর্বজনস্বীকৃত। মোট দেশজ উৎপাদনের প্রায় ৪.৭৩ শতাংশ মৎস্য উপখাতের অবদান এবং কৃষিজ জিডিপিতে ২৫.৭২ শতাংশ। আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যে প্রাণিজ আমিষের প্রায় ৬০ শতাংশ আসে মাছ থেকে। দেশের প্রায় ১৪ লাখ নারীসহ মোট জনসংখ্যার ১২ শতাংশেরও বেশি অর্থাৎ প্রায় ২ কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মৎস্য খাতের ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করছে। দেশের মানুষ গড়ে জনপ্রতি প্রতিদিন ৬০ গ্রাম চাহিদার বিপরীতে ৬২ দশমিক ৫৮ গ্রাম মাছ বর্তমানে গ্রহণ করছে।

আর এই প্রাণিজ আমিষের প্রধান উৎস মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা তৈরির জন্য অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও আয়োজন করা হচ্ছে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ। এবার ২৮শে আগস্ট থেকে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০২১ শুরু হচ্ছে ।

৩রা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক এটি পালন করা হবে। জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বেশি বেশি মাছ চাষ করি, বেকারত্ব দূর করি’। কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মৎস্য উপখাতের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সম্ভাবনাময়। বিগত ২০০৮ সালে মৎস্য উপখাতে গড় প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫.০ শতাংশ। বর্তমানে প্রবৃদ্ধির হার শতকরা ৬ শতাংশ। দেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৪ দশমিক ০৪ শতাংশ আসে মৎস্য উপখাত থেকে।

সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় ২০১৫ সালের মধ্যে অর্জিত নির্দিষ্ট ৮টি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ সরকার প্রণীত দারিদ্র্যবিমোচন কৌশলপত্রে মৎস্য উপখাতকে দারিদ্র্যবিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দরিদ্রবান্ধব অর্থনৈতিক উন্নয়নে অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচনে মৎস্য উপখাতের, বিশেষ করে মাছচাষ সম্প্রসারণ ও মুক্ত জলাশয়ে মৎস্য সম্পদের জৈবিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার মাধ্যমে দরিদ্রবান্ধব অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে । দেশে বর্তমান বেকার সংখ্যা ২০২১ সালের মধ্যে ১.৫ কোটিতে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বর্তমান দারিদ্র্যসীমার হার ২০ শতাংশ ও চরম দারিদ্র্যের হার ১০ শতাংশে কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে মৎস্য উপখাত সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশ পানিসম্পদে অত্যন্ত সমৃদ্ধ।

এ দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য পুকুর-দীঘি, ডোবা-নালা, নদ-নদী, খাল-বিল ও বাঁওড়। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল জুড়ে রয়েছে বিশাল হাওর এলাকা যা আমাদের মৎস্য সম্পদের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশে ৩ দশমিক ০৫ লক্ষ হেক্টর আয়তনের প্রায় ১৩ লক্ষ পুকুর-দীঘি রয়েছে। দেশের ২৪ হাজার কি.মি. দীর্ঘ নদ-নদীর আয়তন প্রায় ১০ দশমিক ৩২ লক্ষ হেক্টর। এছাড়া রয়েছে ১ দশমিক ১৪ লক্ষ হেক্টর জলায়তনের প্রায় ১১ হাজার বিল, ৫ হাজার ৪৮৮ হেক্টর আয়তনের বাঁওড়, ৬৮ হাজার ৮০০ হেক্টর কাপ্তাই হ্রদ, প্রায় ২.০০ লক্ষ হেক্টর সুন্দরবন খাড়ি অঞ্চল এবং ২৮ দশমিক ৩০ লক্ষ হেক্টরের বিশাল প্লাবনভূমি।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গত তিন দশকে বাংলাদেশে মাছের উৎপাদন বেড়ে হয়েছে প্রায় ২৫ গুণ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা মাছ নিয়ে তাদের ‘দ্য স্টেট অব ওয়ার্ল্ড ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকুয়াকালচার ২০২০’ শিরোনামে প্রকাশিত বৈশ্বিক প্রতিবেদনে বলেছে, স্বাদু পানির উন্মুক্ত জলাশয় থেকে মাছ আহরণে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে তৃতীয়। দেশে উৎপাদিত মাছের ৭৫ শতাংশ এখন বাজারজাত করছেন মৎস্যচাষিরা। এছাড়া কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন ও চাষাবাদ পদ্ধতি উদ্ভাবন করে ফিরিয়ে আনা হয়েছে ২৪ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় দেশি মাছ। সব মিলিয়ে স্বাধীনতার ৫০ বছরে মাছ উৎপাদনে রের্কড সৃষ্টি করছে বাংলাদেশ।

এছাড়াও মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, গত পাঁচ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে মাছের উৎপাদন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে মাছ উৎপাদন হয় ৩৬ লাখ ৮৪ হাজার টন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩৮ লাখ ৭৮ হাজার টন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪১ লাখ ৩৪ হাজার টন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪২ লাখ ৭৭ হাজার টন এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪৩ লাখ ৮১ হাজার টন। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশের মৎস্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা গিয়ে দাঁড়াবে ৪৫ দশমিক ৫২ লক্ষ মে. টন।

বাংলাদেশ এখন মাছে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বর্তমান বিশ্বে মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২২ সাল নাগাদ বিশ্বের যে ৪টি দেশ মাছ চাষে বিপুল সাফল্য অর্জন করবে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। তাছাড়া গবেষণার মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া অনেক প্রজাতির মাছ এখন চাষ করা হচ্ছে। হারিয়ে যাওয়া মাছ চাষ হচ্ছে সরকারি-বেসরকারিভাবেও। এ ছাড়া মা ইলিশ ও জাটকা রক্ষায় সরকার ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ এখন ইলিশ উৎপাদনে বিশ্বে রোল মডেল। বিশ্বে ইলিশ উৎপাদনকারী ১১টি দেশের মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশেই ইলিশ উৎপাদন বেড়েছে; বর্তমানে ১২৫টি উপজেলার নদ-নদীতে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণালব্ধ তথ্যের ভিত্তিতে ২০০৮-২০০৯ সালে দেশে ইলিশের উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৯২ হাজার মেট্রিক টন, যা বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৮-১৯ সালে ৫ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ গত ১২ বছরে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৮৩ শতাংশ। এছাড়া গত ২০১৬ সালে ইলিশ বাংলাদেশের ভৌগলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ইলিশের স্বত্ব এখন শুধুই বাংলাদেশের। এটা জাতির জন্য গৌরবের। বর্তমান সরকারের নানামুখী কর্মকাণ্ড ও বেকারত্ব নিরসনে মৎস্য খাত বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। বর্তমানে মাছ চাষ ও ব্যবসায় দুই কোটির কাছাকাছি মানুষ যুক্ত আছেন।

মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিশ্বজুড়ে মানুষের মাছ খাওয়া বেড়েছে ১২২ শতাংশ। বর্তমানে বিশ্বের ৭টি দেশের মানুষের প্রাণিজ আমিষের অর্ধেকের বেশি আসে মাছ থেকে। বাংলাদেশে প্রাণিজ আমিষের শতকরা ৫৮ শতাংশ আসে মাছ থেকে। আর বিশ্বে গড়ে প্রাণিজ আমিষের শতকরা ২০ শতাংশ আসে কেবল মাত্র মাছ থেকে। এদিকে, গত ১০ বছরে দেশে মাথাপিছু মাছ খাওয়ার পরিমাণ প্রায় শতভাগ বেড়েছে। ২০১০ সালের সর্বশেষ খানা জরিপে উঠে এসেছে- বছরে বাংলাদেশে একেকজন মানুষ প্রায় ১২ কেজি মাছ খেতো। এখন সেটা ৩০ কেজিতে পৌঁছেছে। দেশের জিডিপিতে কৃষির অবদান ১৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। জিডিপিতে কৃষির অবদান কমলেও মৎস্য উপখাতের অবদান কিছুটা বেড়েছে। মোট জিডিপিতে মৎস্য উপখাতের অবদান ২০১৬-১৭ সালে ছিল ৩ দশমিক ৬১ শতাংশ। তা কিছুটা কমে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩ দশমিক ৪৯ শতাংশে দাঁড়ায়। তবে গত অর্থবছরে মৎস্য উপখাতের অবদান কিছুটা বেড়ে ৩ দশমিক ৫২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে টাকার অঙ্কে মৎস্য উপখাত থেকে জিডিপিতে যুক্ত হয়েছে ৮২ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা, যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ৭৪ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। এই খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ১০ শতাংশ।

বাংলাদেশে সামুদ্রিক মৎস্য উৎপাদন মূলত আহরণ নির্ভর। উপকূলব্যাপী ৭১০ কি.মি. দীর্ঘ তটরেখা থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত ১ দশমিক ৬৬ লক্ষ বর্গ কি.মি. বিস্তৃত বিশাল সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসম্পদে ৩৬ প্রজাতির চিংড়ি এবং ৪৭৫ প্রজাতির মাছ রয়েছে। বর্তমানে বঙ্গোপসাগর হতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রল ফিশিং এবং আর্টিসেনাল মৎস্য আহরণের মাধ্যমে মোট ৪ দশমিক ৩৯ লক্ষ মে. টন মৎস্য আহরণ করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ মৎস্য সম্পদের ন্যায় সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মৎস্যজীবীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক নৌযানে মৎস্য আহরণে নিয়োজিত প্রায় ২ দশমিক ৭০ লক্ষ মৎস্যজীবীর পরিবারের ন্যূনতম ১৩ দশমিক ৫০ লক্ষ মানুষের জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে উপকূলীয় সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের মাধ্যমে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে গণভবন লেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মাছের পোনা অবমুক্ত করে মৎস্য চাষকে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দেয়ার শুভ সূচনা করেছিলেন। তৎকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধু ভবিষ্যৎ বাণী করেছিলেন ‘মাছ হবে এ দেশের দ্বিতীয় প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী সম্পদ।’ জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও প্রাজ্ঞ নেতৃত্বে মৎস্যবান্ধব বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের ফলে বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন আজ সফল হয়েছে। এর ফলে একদিকে যেমন দেশ আজ মাছে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ায় সাধারণ মানুষ স্বল্পমূল্যে মাছ ও পুষ্টি পাচ্ছে, অন্যদিকে দেশে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্ব দূর হচ্ছে।

লেখক:
গণযোগাযোগ কর্মকর্তা
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তর
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়
[email protected]
সূত্র: মানব জমিন

শেয়ার করুন

প্রকাশ : অগাস্ট ২৭, ২০২১ ৬:৩০ অপরাহ্ন
মুক্ত জলাশয়ে স্বরূপে ফিরছে কাকিলা
বিজ্ঞান ও গবেষণা

একসময় নদী-নালা, হাওর-বাঁওড় ও খাল-বিলে পাওয়া যেত কাকিলা মাছ। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতা এবং প্রজনন সমস্যায় হারিয়ে যেতে বসেছিল পুষ্টিসমৃদ্ধ মাছটি।আবারও মুক্ত জলাশয়ে এ প্রজাতির দেখা মিলবে। এমন আশার বাণীই শোনালেন দেশের মৎস্যবিজ্ঞানীরা।

বদ্ধ পরিবেশে কাকিলার অভ্যস্তকরণ ও কৃত্রিম প্রজনন কলাকৌশল উদ্ভাবনে সফলতা পেয়েছেন যশোরে অবস্থিত বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) স্বাদুপানি উপকেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা।

মৎস্যবিজ্ঞানীরা বলছেন, একসময় অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে মাছটি অধিক পরিমাণে পাওয়া যেত। কিন্তু জলবায়ুর প্রভাব, প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং মানুষের তৈরি নানা কারণে বাসস্থান ও প্রজননক্ষেত্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এ মাছের প্রাচুর্য ব্যাপক হারে কমে গেছে।

বিএফআরআই’র কোর গবেষণা কার্যক্রমের আওতায় তিন বছর নিবিড় চেষ্টার পর কৃত্রিম প্রজনন কলাকৌশল উদ্ভাবনের সফলতা পেয়েছেন মৎস্যবিজ্ঞানীরা। ফলে আবারও পানিতে ঢেউ তুলবে কাকিলা, রক্ষা পাবে বিলুপ্তির হাত থেকে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) স্বাদুপানি উপকেন্দ্র, যশোরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. রবিউল আউয়াল হোসেন, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম এবং বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শিশির কুমার দে কাকিলা মাছ নিয়ে গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন।

তারা জানান, কাকিলা বা কাখলে একটি বিলুপ্তপ্রায় মাছ। এর দেহ সরু, ঠোঁট লম্বাটে এবং ধারালো দাঁতযুক্ত। বাংলাদেশে যে জাতটি পাওয়া যায় সেটি মিঠা পানির জাত। মাছটি বাংলাদেশের অধিকাংশ অঞ্চলে কাইকল্যা, কাইক্কা নামেই বেশি পরিচিত।

এর বৈজ্ঞানিক নাম Xenentodon cancila। মাছটিকে ইংরেজিতে Freshwater garfish বলে। এটি Belonidae পরিবারের অন্তর্গত। বাংলাদেশ ছাড়াও শ্রীলঙ্কা, ভারত, পাকিস্তান, মায়ানমার, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে এ মাছ পাওয়া যায়। তবে রং ও আকারে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে।

গবেষকদলের প্রধান ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. রবিউল আউয়াল হোসেন জানান, কাকিলার দেহ লম্বা এবং সামান্য চাপা এবং প্রায় সিলিন্ডার আকৃতির। এগুলো লম্বায় ২৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। পরিণত পুরুষ মাছের মাথার শীর্ষে লাল চূড়া দেখতে পাওয়া যায়, যা থেকে সহজেই স্ত্রী ও পুরুষ মাছ আলাদা করা যায়।

তিনি বলেন, পুরুষ মাছের দেহ স্ত্রী মাছের তুলনায় অধিক সরু এবং আকারে একটু ছোট হয়। এটি শিকারি মাছ। এরা মূলত ছোট মাছ খেয়ে থাকে। প্রাকৃতিকভাবে প্রবহমান জলাশয়ে বিশেষ করে নদীতে এবং বর্ষাকালে প্লাবিত অঞ্চলে এরা প্রজনন করে।

তিনি আরও বলেন, পরিণত মাছেরা ভাসমান জলজ উদ্ভিদ নেই এমন স্থানে বসবাস করলেও জলজ উদ্ভিদের পাতার নিচে ও ভাসমান শেকড়ে এদের স্ত্রীরা ডিম ছাড়ে। কাকিলা মাছের কৃত্রিম প্রজনন বাংলাদেশ প্রথম এবং বিশ্বের কোথাও এ মাছের কৃত্রিম প্রজননের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

গবেষক দলের সদস্য ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, রাজবাড়ি জেলা সংলগ্ন কুষ্টিয়ার পদ্মা নদী থেকে কাকিলা ব্রুড (মা-বাবা) মাছ সংগ্রহ করে বিশেষ পদ্ধতিতে অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করে এনে যশোরের স্বাদুপানি উপকেন্দ্রের পুকুরে ছাড়া হয়। পরে হ্যাচারিতে উৎপাদিত কার্পজাতীয় মাছের জীবিত পোনা এবং নানা জলাশয় থেকে সংগৃহীত জীবিত ছোট মাছ খাইয়ে পুকুরের আবদ্ধ পরিবেশে মাছকে অভ্যস্ত করা হয়।

এ গবেষক জানান, চলতি বছরের মে মাস থেকে বৈজ্ঞানিক প্রটোকল অনুসরণ করে কৃত্রিম প্রজননের উদ্দেশ্যে উপকেন্দ্রের হ্যাচারিতে নির্দিষ্ট সংখ্যক মা-বাবা মাছকে বিভিন্ন ডোজে হরমোন ইনজেকশন দেওয়া হয়। এভাবে কয়েকবার বিভিন্ন ডোজের ট্রায়াল দেওয়া হলেও মাছের প্রজননে সফলতা আসেনি। অবশেষে ২৫ আগস্ট প্রজননকৃত মাছের ডিম থেকে পোনা বের হয় এবং কাকিলা মাছের কৃত্রিম প্রজননে সফলতা আসে।

সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা জানান, কাকিলা মাছের প্রজননের জন্য পিজি (Pituitary Gland) হরমোন ব্যবহার করা হয়। গত ১৮ আগস্ট পুকুর থেকে মাছ ধরে চার জোড়া মা-বাবা নির্বাচন করে হ্যাচারির চৌবাচ্চায় নির্দিষ্ট সময় ঝর্ণাধারা দিয়ে মা-বাবা মাছকে একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় হরমোন ইনজেক্ট করা হয়। পরে মা-বাবা মাছকে একত্রে একটি চৌবাচ্চায় রেখে ঝর্ণাধারা দিয়ে সেখানে কচুরিপানা রাখা হয়। প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর মা মাছ ডিম ছাড়ে। ডিমের ভেতরে পোনার বিভিন্ন দশা ও উন্নয়ন অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হয়। ডিম ছাড়ার প্রায় ৯০ থেকে ১০০ ঘণ্টার মধ্যে নিষিক্ত ডিম থেকে বাচ্চা বের হয়।

গবেষকদলের সদস্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শিশির কুমার দে বলেন, কাকিলা মাছের প্রজননের ট্রায়ালের সময় চৌবাচ্চারে পানির গড় তাপমাত্রা ছিল ২৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ৫ মিলিগ্রাম/লিটার এবং পিএইচ ছিল ৭ দশমিক ৬।

গবেষক দলের প্রধান ড. মো. রবিউল আউয়াল হোসেন ও মো. শরীফুল ইসলাম জানান, প্রতি ১০০ গ্রাম খাবার উপযোগী কাকিলা মাছে ১৭ দশমিক ১ শতাংশ প্রোটিন, লিপিড ২ দশমিক ২৩ শতাংশ, ফসফরাস ২ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং দশমিক ৯৪ শতাংশ ক্যালসিয়াম রয়েছে যা অন্যান্য ছোটমাছের তুলনায় অনেক বেশি।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ জানান, দেশের বিলুপ্তপ্রায় ৬৪টি মাছের মধ্যে ৩০টির কৃত্রিম প্রজননে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট সফলতা লাভ করেছে। সফলতার ধারাবাহিকতায় ৩১তম মাছ হিসেবে কাকিলা মাছ যুক্ত হলো।

তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে সব বিপন্ন প্রজাতির মাছকে কৃত্রিম প্রজননের আওতায় আনা হবে, যাতে দেশের প্রতিটি মানুষের খাবার প্লেটে দেশীয় মাছ থাকে। এজন্য ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : অগাস্ট ২৭, ২০২১ ১২:০০ অপরাহ্ন
বাকৃবিতে স্মার্ট এগ্রো-টেকনোলজি ইনোভেশন ইয়ুথ নেটওয়ার্ক (সায়ান)‘র যাত্রা শুরু
ক্যাম্পাস

কৃষিবিদ দীন মোহাম্মদ দীনু,বাকৃবি: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘স্মার্ট এগ্রো-টেকনোলজি ইনোভেশন ইয়ুথ নেটওয়ার্ক” বা সংক্ষেপে “সায়ান” নামে একটি জ্ঞানভিত্তিক প্লাটফর্ম এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে ।প্লাটফর্মটি তরুণদেরকে আধুনিক কৃষি যন্ত্র ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে উৎসাহিত করতে সারা বিশ্বের কিশোর ও তরুণদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ যোগাযোগ স্থাপন করে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিকল্পে ভূমিকা রাখবে ।

বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতির কারনে ২৬ আগস্ট ২০২১ রাত ৮টায় জুম অনলাইন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে “তরুণের মেধা ও শক্তি গড়বে সবুজ পৃথিবী” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সায়ানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আসমি-বাংলাদেশ প্রকল্পের পরিচালক ও কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের প্রফেসর ড. মো. মঞ্জরুল আলম। অনুষ্ঠানটিতে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়-আরবানা শ্যাম্পেইনের এপ্রোপ্রিয়েট স্কেল মেকানাইজেশন কনসোর্টিয়ামের (এএসএমসি) পরিচালক ড. প্রশান্ত কে. কালিতা; ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়-আরবানা শ্যাম্পেইনের সহযোগী ডিন এবং এক্সটেনশন ইমিরিটাসের পরিচালক ড. জর্জ ছাপার এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. এ. কে. এম. জাকির হোসেন।

অনুষ্ঠানটিতে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান।
আসমি-বাংলাদেশ প্রকল্পের সহযোগী পরিচালক ও কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের প্রফেসর ড. চয়ন কুমার সাহা, সায়ান প্রতিষ্ঠার কারণ, সায়ানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিস্তারিত উপস্থাপনার মাধ্যমে নবগঠিত “স্মার্ট এগ্রো-টেকনোলজি ইনোভেশন ইয়ুথ নেটওয়ার্ক” বা সংক্ষেপে সায়ানের বর্ণনা করেন এবং প্রধান এডভাইজর, ৬ জন জাতীয় এডভাইজর, ৪ জন আন্তর্জাতিক এডভাইজর, ৬ জন জাতীয় মেনটর, ৩ জন আন্তর্জাতিক মেনটর, ১২ জন রিজিওনাল মেনটর, এবং সায়ানের ৩১ জন তরুণ এ্যম্বাসেডরের নাম ঘোষণা করেন। পরিচিতি পর্ব শেষে সায়ানের এ্যম্বাসেডর (প্রধান সমন্বয়কারী), এডভাইজরবৃন্দ এবং মেনটরবৃন্দ শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন। সায়ানের এডভাইজরবৃন্দ হতে এসিআই মোটরস লিমিটেড এর এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর সুব্রত রঞ্জন দাস এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর চীফ সায়েন্টিফিক অফিসার ড. মো আইয়ুব হোসেন বক্তব্য প্রদান করেন। এছাড়াও আরডিএ এর প্রাক্তন মহাপরিচালক ড. এম এ মতিন, দি মেটাল প্রা: লিমিটেড এর এমডি প্রকৌশলী সাদিদ জামিল মহোদয় তাদেঁর মূল্যবান বক্তব্য প্রদান করেন।

উল্লেখ্য এপ্রোপ্রিয়েট স্কেল মেকানাইজেশন ইনোভেশন হাব (আসমি)-বাংলাদেশ প্রকল্পটি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ফিড দি ফিউচার প্রোগ্রাম ও ইউ এস এইড এর অর্থায়নে এবং সাসটেইনেবল ইনটেনসিফিকেশন ইনোভেশন ল্যাব (সিল), কানসাস স্টেট ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র ও এপ্রোপ্রিয়েট স্কেল মেকানাইজেশন কনসোর্টিয়াম (এএসএমসি), ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়, যুক্তরাস্ট্র এর কারিগরি সহায়তায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের আয়তায় পরিচালিত হচ্ছে। প্রকল্পটি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের মাঠ পর্যায়ে ব্যবহার উপযোগী লাগসই কৃষি যন্ত্র প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও ব্যবহার বিষয়ক গবেষণার সাথে জড়িত।

গবেষণার পাশাপাশি প্রকল্পটি উদ্ভাবিত প্রযুক্তিগুলোকে প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনীর মাধ্যমে কৃষকদের কাছে পৌঁছে দিয়ে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত কৃষি যান্ত্রিকীকরণ কার্যক্রমকে বেগবান করতে প্রসংশনীয় অবদান রাখছে। তরুণদের মাঝে আধুনিক কৃষি যন্ত্র ও প্রযুক্তি ভাবনাকে ছড়িয়ে দিতে আসমি-বাংলাদেশ প্রকল্পটি কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের অধীনে ২০২১ সালের মে মাসে “প্রাথমিকভাবে সায়ানের সাথে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও দেশের আরও ৭ টি বিশ্ববিদ্যালয় (হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) যুক্ত আছে।

পরে অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়-আরবানা শ্যাম্পেইনের এপ্রোপ্রিয়েট স্কেল মেকানাইজেশন কনসোর্টিয়ামের (এএসএমসি) পরিচালক ড. প্রশান্ত কে. কালিতা সায়ানের অফিশিয়াল লোগোর মোড়ক উন্মোচনের মধ্য দিয়ে সায়ান লগো প্রতিযোগীতার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করেন এবং ভার্চুয়ালি পুরষ্কারস্বরূপ ২০০ ডলারের চেক এবং সার্টিফিকেট হস্তান্তর করেন। এরপর, সায়ানের একজন এ্যম্বাসেডর সায়ানের অফিশিয়াল লোগোর বর্ণনা প্রদান করেন।

সবশেষে, সায়ানের প্রধান এডভাইজর প্রফেসর ড. মো. মঞ্জরুল আলম। “সায়ান আইডিয়া কম্পিটিশন-২০২১” এর পর্দা উন্মোচন করেন। অনুষ্ঠানটির সভাপতি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের মাননীয় ডিন মহোদয় প্রফেসর ড. মো. নজরুল ইসলাম তার সমাপণী বক্তব্যের মাধ্যমে সায়ানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
এটি ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়ের ৪ টি এইচ যথা:- হেড, হার্ট, হ্যান্ড, এবং হেলথ ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত একটি তরুণদের সংগঠন। এর ফলে তরুণরা তাদের সৃষ্টিশীল উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে ক্ষুধা-দারিদ্র মুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ সবুজ পৃথিবী বিনির্মাণ করতে পারবে।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : অগাস্ট ২১, ২০২১ ১২:০৪ অপরাহ্ন
যে ১৪টি রোগ সারাতে পারে আলু!
বিজ্ঞান ও গবেষণা

আলুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল, ভিটামিন, কার্বোহাইড্রেট ও প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। আলু ছাড়া চলেই না কারো। তবুও কারণে অকারণে আমরা খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিচ্ছি আলু। অথচ এই আলুতে আছে বিভিন্ন পুষ্টিগুণ। আলুর সাথে যায় না এমন তরকারি খুঁজে পাওয়া মুশকিল। যদিও আলুতে বাড়ে দেহের ওজন তথাপি পরিমিত পরিমাণে আলু খাদ্যতালিকায় থাকলে তা শরীরের জন্য ভালো।

বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে, আলু ১৪টি রোগ সারাতে সহায়তা করে।

আসুন জেনে নিই আলু কি কি রোগ সারাতে পারে:
১. আলুতে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম সঠিক পরিমাণে থাকে। তাই, আলু রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
২. আলুতে আছে ফাইবার, ভিটামিন সি ও ভিটামিন বি ৬। যা কিনা কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণ করে হার্টকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
৩. ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবেও আলু কাজ করে। আলুতে থাকা ফোলেট যা ডি.এন.এ. তৈরি ও মেরামত করতে সাহায্য করে। এ ছাড়াও আলুতে থাকা ফাইবার কোলন ক্যান্সারের থেকে মুক্তি দিতে পারে।
৪. আলুতে থাকে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও জিঙ্ক। যা শরীরের গঠন মজবুত করে ও হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করে।
৫. আলুতে আছে ফাইবার যা কিনা শরীরের হজমক্ষমতা বাড়িয়ে পাচনতন্ত্রের কার্যকারিতা সচল রাখে।
৬. আলু কিডনিতে স্টোন হওয়ার ঝুঁকি কমায়।
৭. দাঁত বা মাড়ির সমস্যা দূর করতেও সহায়তা করে আলু।
৮. পেটের নানারকম সমস্যায় আলু সেদ্ধ খেলে বেশ উপকারিতা পাওয়া যায়।
৯. আলুতে থাকা ফাইবার ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরের ইলেক্ট্রোলাইসিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
১০. আলুতে আছে কার্বোহাইড্রেট, পটাসিয়াম ও গ্লুকোজ যা কিনা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
১১. আলুতে থাকা ভিটামিন এ ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
১২. আলুতে থাকে সঠিক পরিমাণে প্রাকৃতিক মিষ্টি পদার্থ, ফাইবার ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। যা মাসিকের সময়ে মেজাজ খিটখিটে হওয়া থেকে মুক্তি দেয়। এছাড়াও, এই সময় আলু খেলে শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়।
১৩. অনিদ্রা বা কম ঘুমের সমস্যা থাকলে আলু খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
১৪.আলুতে কম পরিমাণে ফ্যাট এবং বেশি পরিমানে ফাইবার থাকে। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আলু একেবারে বাদ না দিয়ে খাদ্য তালিকায় অল্প পরিমাণ আলু রাখলে ওজন দ্রুত কমে।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : অগাস্ট ৭, ২০২১ ১০:০৩ অপরাহ্ন
জিংকের সমন্বয়ে তৈরি ভিটামিন সি গ্রহণে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট প্রতিরোধ সম্ভব: ড. বিজন
বিজ্ঞান ও গবেষণা

করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ভয়াবহতার জন্য অন্যান্য মিউটিশন (পর্যায় ক্রমে রুপান্তর) এর সাথে T19R মিউটিশন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ কারণে এ ভাইরাস শ্বাসতন্ত্রের উপরিভাগে ঠিক ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের মতো উৎপাদন করার সুয়োগ পেয়েছে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সিঙ্গাপুরের নাগরিক অনু বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল। তিনি বলেন, জিংকের সমন্বয়ে তৈরি ভিটামিন সি গ্রহণে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট প্রতিরোধ সম্ভব।

আজ শনিবার (৭ আগস্ট) রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে ‘Decoding of Delta variant, its catastrophic effects and probable way out: a hypothetical analysis’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এ দাবি করেন তিনি। ওয়েবিনারের আয়োজন করে গণ বিশ্ববিদ্যালয়।

গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক লায়লা পারভীন বানুর সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন: গণ বিশ্ববিদ্যালয় অনু বিজ্ঞানী অধ্যাপক ডা: বিজন কুমার শীল, বক্তব্য রাখেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জুমে বক্তব্য রাখেন বিএসএমএমইউ সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডাঃ  নজরুল ইসলাম ভাইরোলজিস্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী, পিএইচসি’র সাবেক পরিচালক অধ্যাপক জাকির হোসেন,বিএসএমএমইউ’র ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সায়েদুর রহমান, আইইডিসিআর উপদেষ্টা ডা: মোস্তফা হোসেন, প্রধান স্বাস্থ্য বাতায়ন ডাঃ নিজাম উদ্দীন আহমেদ, উপস্থিত ছিলেন গণ
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার ড. এস. তাসাদ্দেক আহমেদ, উপাধ্যক্ষ ডাঃ মুহিব উল্লাহ খোন্দকার, গণস্বাস্থ্যের গণমাধ্যম উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা প্রমূখ।

গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. বিজন কুমার শীল বলেন, ডেল্টা ভাইরাসের সাথে ফ্ল ভাইরাসের যথেষ্ট মিল রয়েছে এবং এটি খুব দ্রত সময়ের মধ্যে ছড়ায়। ফলে পরিবারের কেউ আক্রান্ত হলে বাকি সবাই আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ভাইরাসের ভয়াবহতা রোধে কেউ একজন আক্রান্ত হলে তার নিকটজন সবাইকে পরীক্ষা করতে হবে, হাচিঁ কাশি দেয়ার সময় অবশ্যই কাপড় বা টিস্যু ব্যবহার করতে হবে।

নিয়মিত মাস্ক পরিধান এবং ভ্যাকসিন গ্রহণের কোন বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আক্রান্ত রোগীর শ্বাসকষ্ট শুরু হলে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। ডেল্টা ভাইরাসের চিকিৎসার মতো ড্রাগস বিশ্ববাজারে বিদ্যমান আছে। এছাড়া জিংকের সমন্বয়ে তৈরি ভিটামিন সি গ্রহণ ডেল্টা ভাইরাস প্রতিরোধ সম্ভব।

সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও এ ধরণের ভিটামিন উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে অনুমোদন দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দেশে ভ্যাকসিন তৈরি করার জন্য আমি আগেও প্রস্তাব করেছি, আবারো করছি। অধ্যাপক নজরুল ইসলাম আছেন, অধ্যপক আজাদ আছেন, বিজন কুমার শীল আছেন। আরো যারা দুই-চার জন যারা আছেন, তাদের নিয়ে ভ্যাকসিন তৈরি হবে। বক্তৃতা না দিয়ে দ্রুত প্রদক্ষেপ নেয়া দরকার। এই একটা কাজ করলেও প্রধানমন্ত্রী স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

তিনি বলেন, আমাদের বিজ্ঞানী বিজন কুমার শীল করোনা ভাইরাসের টেল্ট ভেরিয়েন্টের ডিকোটিং করেছেন। এটার জন্য অনেক বেশি গবেষণার দরকার। আজ চীন একশ কোটি টিকা তৈরি করে বিক্রি করবে। ৬ মাসেরও আগে আমাদের এখানে চীন ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করতে চেয়েছিল কিন্তু সেটা হয়নি। ভ্যাকসিন তৈরি নিউক্লিয়াস সাইন্সের ব্যাপার না। আমাদের অভিজ্ঞতা আছে, এখানে বিনিয়োগের প্রয়োজন। আজ রাশিয়ার সহযোগিতা নিয়ে কিউবা ও ইরান ভ্যাকসিন তৈরি করছে। দেড় বছর আগে আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলাম। আমাদের কথা শোনেন নাই। দেশের সকল নাগরিককে আপনি ব্যবহার চেষ্টা করেন। কে আওয়ামী লীগ করে, কে বিএনপি করে তা
আপনার বিবেচ্য না।

গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, একটা ভ্যাকসিন তৈরি করতে আধা ডলারের বেশি খরচ হয় না। তার জন্য নূন্যতম ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। দেশে যারা ব্যবসায়ী আছেন, পরিমনীর জন্য যারা বিনিয়োগ করে থাকেন তারা ইচ্ছা করলে ৭ দিনের মধ্যে ৫০ কোটি টাকা জোগার করে দিতে পারেন। এতদিন যারা দেশ শোষণ করেছেন তারা ভালো একটা কাজ করতে পারেন।

তিনি আরো বলেন, আমাদের টার্গেট হওয়া উচিত ছয় মাসের মধ্যে আমাদের নিজস্ব ভ্যাকসিন তৈরি করা। কিউবা যেমন ভ্যাকসিন তৈরি করেছে, ইরান যেমন ভ্যাকসিন তৈরি করেছে তেমনি বাংলাদেশ যদি চায় তাহলে রাশিয়া আমাদের সহযোগিতা করবে। আমরাই কিউবার মত ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারবো, তখন এর দাম পড়বে আধা ডলার।

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ

শেয়ার করুন

প্রকাশ : অগাস্ট ৬, ২০২১ ১১:০০ পূর্বাহ্ন
উন্নত পদ্ধতিতে যেভাবে তৈরি করবেন গোবর সার
প্রাণিসম্পদ

জৈব সার তৈরী ও সংরক্ষণের ব্যাপারে প্রত্যেক কৃষক ভাইয়ের যত্নবান হওয়া উচিত। কেবল উদ্যোগ নিয়েই নিজস্ব সম্পদ কাজে লাগিয়ে প্রায় বিনা খরচে জৈব সার তৈরী করা সম্ভব। আজকে জানবো কিভাবে আপনি তৈরি করবেন গোবর সার।

উন্নত পদ্ধতিতে যেভাবে তৈরি করবেন গোবর সার:

গোয়াল ঘরের কাছাকাছি সামান্য উঁচু স্থান বেছে নিয়ে ১.৫মিটার চওড়া, ৩ মিটার লম্বা ও ১মিটার গভীর গর্ত তৈরী করুন।গোবরের পরিমাণ বুঝেগর্ত ছোট, বড় বা একাধিক গর্ত করতে পারেন।

গর্তের তলা ভালোভাবে পিটিয়ে সেখানে খড়/কাঁকর/বালি বিছিয়েনিন যাতে পানি সহজে শুষে নিতে পারে অথবা গর্তের তলা এবং চারপাশে গোবর দিয়ে ভালভাবেলেপে নিতে পারেন।গর্তের চারিদিকেই তলদেশের দিকে একটু ঢালু রাখতে হবে এবংগর্তের উপরে চারপাশে আইল দিয়ে উঁচু করে রাখতে হবে যেন বর্ষার পানি গর্তে যেতে নাপারে।

গর্তের পাশ থেকেগোবর ফেলে গর্তটি ভরতে থাকুন অথবা গর্তটিকে কয়েকটি ভাগেভাগ করে কয়েক দিনে এক একটিঅংশ ভরে পুরো গর্ত ভরাট করা ভালো।

গর্তে গোবর ফলারফাঁকে ফাঁকে পুকুর বা ডোবার তলার মিহি মাটি ফেলুন, এতে স্তর আঁটসাট হয়এবং সার গ্যাস হয়ে উবে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না। প্রায় দেড় মাস পর সারের গাদা ওলটপালট করে দিতেহবে।যদিগাদা শুকিয়ে যায় তবে গো-চনা দিয়ে ভিজিয়ে দিন কারণ, গো-চনাও একটিউৎকৃষ্টসার।

গোবরের সাথে টিআসপি (ঞঝচ) ব্যবহার করলে জৈব সারের মান ভালো হয়।গোবরের গাদার প্রতি টনের জন্য ১৫-২০ কেজিটিএসপি ব্যবহার করতে পারেন।

কড়া রোদে গোবর যেনশুকিয়ে না যায় আবার বৃষ্টিতে ধুয়ে না যায় সে জন্য গাদার ওপরে চালা দিয়েদিন।খড়, খেজুর পাতা কিংবা তালপাতা দিয়ে কম খরচে এই চালা তৈরী করতেপারেন।

এমনিভাবে সংরক্ষণের ২ মাসের মধ্যেইগোবর পচে উত্তম মানের সার তৈরী হয় যা পরবর্তীতে জমিতে ব্যবহার করার উপযোগীহয়।জৈবসার ব্যবহার করে রাসায়নিক সারের ওপর নির্ভশীলতা কমিয়ে আনুন এবং পরিবেশ সংরক্ষণেসচেষ্ট হন।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : মে ২৪, ২০২১ ৫:২৯ অপরাহ্ন
বাতাসি মাছের কৃত্রিম প্রজনন উদ্ভাবন বিএফআরআই‘র বিজ্ঞানীদের
বিজ্ঞান ও গবেষণা

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) বিজ্ঞানীরা এবার করোনার মধ্যে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে বিলুপ্তপ্রায় বাতাসি মাছের পোনা উৎপাদনে সফল হয়েছেন। এই সাফল্য বিলুপ্তপ্রায় বাতাসি মাছ রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন তারা।

মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ময়মনসিংহ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

ইনস্টিটিউট সূত্র জানায়, পরিবেশ বিপর্যয়সহ নানা কারণে এ মাছ জলাশয়ে এখন আর তেমন পাওয়া যায় না। ক্রমান্বয়ে মাছটি বিপন্নের তালিকায় চলে গেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিলুপ্তপ্রায় বাতাসি মাছ পুনরুদ্ধারে গবেষণার মাধ্যমে ইনস্টিটিউট থেকে এর প্রজনন কৌশল উদ্ভাবন করা হয়েছে। ফলে মাছটি এখন চাষ করা সম্ভব হবে।

বাতাসি মাছের বৈজ্ঞানিক নাম Notropis Atherinoides| এই প্রজাতির মাছ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল এবং মিয়ানমারে পাওয়া যায়। সুস্বাদু এ মাছটি বর্তমানে বাজারে খুব কম দেখা যায়। এটি দৈর্ঘ্যে সর্বোচ্চ ১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর দেহ চ্যাপ্টা ও ওপরের চোয়াল নিচের চোয়ালের চেয়ে কিছুটা লম্বা। বিএফআরআই সূত্রে জানা গেছে, তারা ২৫ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় ও দেশি মাছের প্রজনন ও চাষাবাদ কৌশল ইতোমধ্যে উদ্ভাবন করেছে।

এর সর্বশেষ সংযোজন হলো বাতাসি মাছ। দীর্ঘ গবেষণার মাধ্যমে গত ১৯ মে এই সফলতা অর্জিত হয়। বগুড়া জেলার সান্তাহারে অবস্থিত ইনস্টিটিউটের প্লাবন ভূমি উপকেন্দ্রে এই সফলতা অর্জিত হয়। গবেষক দলে ছিলেন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ডেবিড রিন্টু দাস, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মালিহা খানম।

বগুড়ার সান্তাহার প্লাবনভূমি উপকেন্দ্র থেকে যমুনা ও আত্রাই নদীসহ বিভিন্ন উৎস থেকে বাতাসি মাছের পোনা সংগ্রহ করে প্রথমে পুকুরে তা নিবিড়ভাবে প্রতিপালন করা হয়। ওই সময় বাতাসি মাছের খাদ্যাভ্যাস পর্যবেক্ষণ করে সে অনুযায়ী খাবার সরবরাহ করা হয়।

গবেষকরা একটি পরিপকস্ফ বাতাসি মাছের খাদ্যনালিতে শতকরা ৮৬ ভাগ প্লাংটন ও ১৪ ভাগ অন্যান্য খাদ্যবস্তুর উপস্থিতি লক্ষ্য করেন। তাছাড়া বছরব্যাপী জিএসআই ও হিস্টোলজি পরীক্ষণের মাধ্যমে বাতাসি মাছের সর্বোচ্চ প্রজনন মৌসুম নির্ধারণ করা হয় মে-জুলাই মাস। এর ডিম ধারণ ক্ষমতা আকার ভেদে হচ্ছে ১২০০-২৫০০টি। একটি পরিপকস্ফ স্ত্রী বাতাসি মাছ ৪ থেকে ৬ গ্রাম ওজনের হলেই প্রজনন উপযোগী হয়।

গবেষণার আওতায় চলতি মে মাসে বাতাসি মাছকে হরমোন ইনজেকশন দেওয়া হয়। হরমোন প্রয়োগের ১২-১৫ ঘণ্টা পর বাতাসি মাছ ডিম ছাড়ে এবং ২৩-২৫ ঘণ্টা পরে নিষিক্ত ডিম থেকে রেণু পোনা উৎপাদিত হয়। ডিম নিষিক্তের হার ছিল শতকরা প্রায় ৭৩ ভাগ। উৎপাদিত রেণু বর্তমানে প্লাবনভূমি উপকেন্দ্রের হ্যাচারিতে প্রতিপালন করা হচ্ছে।

গবেষক দলের প্রধান ড. ডেভিড রিন্টু দাস জানান, প্রতি ১০০ গ্রাম খাবার উপযোগী বাতাসি মাছে পটাশিয়াম ৬১০ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৪০০ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেশিয়াম ২০০ মিলিগ্রাম, জিঙ্ক ১৪.৪ মিলিগ্রাম, আয়রন ৩৩ মিলিগ্রাম এবং ম্যাঙ্গানিজ ২০০ মিলি গ্রাম রয়েছে। যা অন্যান্য দেশি ছোট মাছের তুলনায় অনেক বেশি। জিঙ্ক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। করোনাকালের বাতাসি মাছ খেতে বিজ্ঞানীরা পরামর্শ দেন।

বিএফআরআই মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ জানান, বিলুপ্তপ্রায় মাছ পুনরুদ্ধার করার লক্ষ্যে ইনস্টিটিউটের গবেষণা কার্যক্রম সম্প্রতি জোরদার করা হয়েছে। ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে ব্যবহারের ফলে গত ১২ বছরে পুকুরে দেশি মাছের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় চার গুণ (২ দশমিক ৫ লাখ মেট্রিক টন)। পর্যায়ক্রমে সব দেশি ছোট মাছ প্রজনন ও চাষাবাদের মাধ্যমে মানুষের পাতে ফিরিয়ে আনা হবে।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : মার্চ ২৩, ২০২১ ১০:২৪ পূর্বাহ্ন
সবজি উৎপাদন বৃদ্ধির এক অনন্য হাতিয়ার হাইব্রিড বীজ
কৃষি গবেষনা

সুস্থ-সবল জীবনের জন্য প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণ বিভিন্ন ধরনের সবজি খাওয়া অপরিহার্য। কারণ জীবন ধারণের জন্য অত্যাবশ্যকীয় ভিটামিন ও খনিজ লবণের অন্যতম উৎস হলো সবজি। বর্তমানে বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সবজির চাহিদা পূরণ করতে হলে ১১.২৪ মিলিয়ন টন সবজির প্রয়োজন। সবজি উৎপাদন হয় ৪.০৫ মিলিয়ন টন।

ক্রমহ্রাসমান আবাদি ভূমির চাপকে সমান রেখে সবজির উৎপাদন প্রায় তিনগুণ বাড়াতে হবে। এ পরিস্থিতিতে একমাত্র হাইব্রিড সবজির জাত ব্যবহার ও উন্নত চাষাবাদ প্রযুক্তির মাধ্যমেই এই বিশাল সবজির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।

বর্তমানে বাংলাদেশের কৃষকরা খুব অল্প পরিমাণে (৩০-৪০ শতাংশ) সবজির হাইব্রিড বীজ ব্যবহার করেন। কিন্তু বিশ্বের অনেক দেশেই শতভাগ পর্যন্ত সবজির হাইব্রিড জাত ব্যবহার হচ্ছে।

সংকর (হাইব্রিড) ও সংকরায়ন

সংকরায়ন হলো একটি উদ্ভিদ প্রজনন প্রদ্ধতি যার মাধ্যমে দুই বা ততোধিক ভিন্ন রকম জেনোটাইপ সম্পন্ন উদ্ভিদগুলোর যৌনমিলনের ফলে নতুন ধরনের জাত সৃষ্টি করা। এর ফলে যে নতুন জাত তৈরি হয় তা হলো সংকর বা হাইব্রিড, আর এ প্রক্রিয়াটি হলো সংকরায়ন (Hybridi“ation)।

সংকরায়নের উদ্দেশ্য

সংকরায়নের প্রধান উদ্দেশ্য হলো কৌলিক বিভিন্নতা সৃষ্টি করা।

সংকরায়নের মাধ্যমে কোনো একটি জাতে অন্যান্য জাত বা বন্য প্রজাতিগুলো থেকে এক বা একাধিক বৈশিষ্ট্য স্থানান্তরিত করা যায়।

সংকরায়নের অন্য একটি উদ্দেশ্য হলো প্রজনকদ্বয় অপেক্ষা উন্নতর বা অধিক ফলনশীল (১০-৫০ শতাংশ) পর্যন্ত জাত সৃষ্টি করা।

সংকরায়ন করার আগে নিম্নোক্ত তথ্যাবলি জানা একান্ত প্রয়োজন

পুং-প্রজনক (Male line) সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান।

স্ত্রী-প্রজনক (Female line) সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান।

গাছগুলো এক লিঙ্গ না উভয়লিঙ্গ।

ফুল প্রস্ফুটিত হওয়ার সময়।

ফুল স্বপরাগী (Self pollinated) বা পর-পরাগী (Cross pollinated)।

ফসল সংগ্রহের সময়।

যে কোনো ফসলের হাইব্রিড জাত তৈরি বা সংকরায়নের জন্য অনেকগুলো ধাপ আছে। প্রতিটি ধাপ সতর্কতার সঙ্গে অতিক্রম করলেই শুধু সংকরায়নে কৃতকার্যতা আসতে পারে। ধাপগুলো নিম্নে বর্ণনা করা হলো :

প্রজনক নির্বাচন : সংকরায়নের প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো প্রজনক নির্বাচন। উদ্দেশ্যের ওপর নির্ভর করে প্রজনক নির্বাচন করতে হয়। যদি আমাদের উদ্দেশ্য হয় সবজির ফলন বৃদ্ধি, তাবে যে লাইনদ্বয়ের ফলন বেশি শুধু তাদেরই নির্বাচন করতে হবে। এক্ষেত্রে একটিকে পুরুষ লাইন হিসেবে নির্বাচন করতে হবে এবং অন্যটিকে স্ত্রী লাইন নির্বাচন করতে হবে। তবে উভয় লাইন অবশ্যই সমসত্ব (Homoyygous) হতে হবে। নিদিষ্ট লাইন দুটি যদি সমসত্ব (Homoyygous) না হয় তবে কখনোই সংকর বা হাইব্রিড জাত তৈরি করা যাবে না।

স্ত্রী ও পুরুষ ফুলকে সংকরায়নের জন্য উপযুক্তকরণ : নির্বাচিত স্ত্রী লাইন ও পুরুষ লাইনের নিজ নিজ ফুলকে সংকরায়নের জন্য উপযুক্ত করে নেওয়া সংকরায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।

এক্ষেত্রে ফুলের বৈশিষ্ট্যের জ্ঞান থাকা খুবই জরুরি। কোনো কোনো সবজিতে একই ফুলে পুরুষ (পুংকেশর) ও স্ত্রী (গর্ভমু-) অংগ বিদ্যমান (যেমন- টমেটো, বেগুন ইত্যাদি) আবার কোনো কোনো সবজিতে পুরুষ ফুল ও স্ত্রী ফুল একই গাছে আলাদা আলাদাভাবে থাকে (যেমন কুমড়া জাতীয় ফসল), আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুরুষ ও স্ত্রী গাছেই আলাদা (যেমন পটোল, কাঁকরোল ইত্যাদি)। সবজির প্রকার ভেদ অনুযায়ী কাজের ধরন ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, টমেটো ও বেগুনের ক্ষেত্রে ফুল ফোটার আগের দিন স্ত্রী লাইনের ওই নিদিষ্ট ফুল থেকে পুরুষ অঙ্গ (পুংকেশর) চিমটার সাহায্যে অপসারণ করা হয়। এ কাজটিকে বলা হয় পুংহীনকরণ (Emasculation) এ পুংহীনকরণ কাজটি বিভিন্নভাবে করা যেতে পারে। তবে চিমটার সাহায্যে অপরিণত ফুল হতে পুরুষ অংগ (পুংকেশর) অপসারণ বেশ প্রচলিত।

কিন্তু কুমড়া জাতীয় সবজির ক্ষেত্রে এই কাজটি করা হয় ভিন্নভাবে। এক্ষেত্রে যে স্ত্রী ও পুরুষ ফুল পরের দিন ফোটার সম্ভাবনা আছে, এমন পুরুষ ও স্ত্রী ফুলকে এক বিশেষ ধরনের কাগজের ব্যাগ (Butter paper bag) দিয়ে ঢেকে দিতে হবে, যেন কোনোভাবেই প্রাকৃতিকভাবে পরাগায়ন না হতে পারে। কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে এই ধরনের কাগজের ব্যাগকে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

পরাগায়ন : প্রত্যেক সবজির পরাগায়নের সময় নিদিষ্ট এবং এই সময়কাল ২-৩ ঘণ্টা হয়ে থাকে। ওই নিদিষ্ট সময়ে মধ্যে পরাগায়ন না হলে ফল সেট হয় না। যেমন মিষ্টিকুমড়ার ক্ষেত্রে সকাল ৬টা থেকে সকাল ৯টা ৩০ পর্যন্ত সবচেয়ে উপযোগী সময়। এর আগে বা পরে পরাগধানী ও পরাগ রেণু কার্যকর অবস্থায় থাকে না। এই নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে (টমেটো ও বেগুনের ক্ষেত্রে (সকাল ৮টা ৩০ থেকে ১০টা ৩০ পর্যন্ত) ফুটন্ত স্ত্রী ফুল যা আগে পুংহীন করা হয়েছে, তার গর্ভমু-ের ওপর কাক্সিক্ষত পুরুষ লাইনের গাছ থেকে পুংরেণু (চড়ষষবহ) সংগ্রহ করে তা ভালোভাবে লাগিয়ে দিতে হবে।

এরপর বেগুনের ক্ষেত্রে উক্ত স্ত্রী ফুলটিকে আগে উল্লেখিত বিশেষ ব্যাগ দিয়ে ঢেকে দিতে হবে; কিন্তু টমেটোর ক্ষেত্রে তার প্রয়োজন হয় না। কুমড়াজাতীয় সবজির ক্ষেত্রে, পরাগায়নের আগের দিন ব্যাগ দিয়ে ঢেকে রাখা স্ত্রী ফুলটিকে নির্দিষ্ট সময়ে খুলে কাক্সিক্ষত পুরুষ লাইন থেকে পুরুষ ফুলটিকে ছিঁড়ে পাপড়িগুলোকে আলাদা করে স্ত্রী ফুলের গর্ভমু-ের ওপর ভালোভাবে লাগিয়ে দিতে হবে এবং স্ত্রী ফুলটিকে পুনরায় ঢেকে দিতে হবে।

এক্ষেত্রে একটি পুরুষ ফুল দিয়ে ২-৩টি স্ত্রী ফুলকে পরাগায়ন করা যায়। ফুল ঢাকার ক্ষেত্রে একটি বিশেষ সতকর্তা অবলম্বন করতে হবে, তা হলো ফুল ঢাকার পর ফুলের ভেতর যেন কোনো পিঁপড়া বা অন্য কোনো পোকা প্রবেশ করতে না পারে। কাক্সিক্ষত সংকর (হাইব্রিড) ফল সেট হওয়ার ৩-৪ দিন পর ব্যাগ অপসারণ করে দিতে হবে। সংকরায়িত ফলে অবশ্যই বিভিন্ন তথ্য সংবলিত একটি ট্যাগ ঝুলিয়ে দিতে হবে। ট্যাগের মধ্যে পরাগায়নের তারিখ ও প্রজনকদ্বয়ের নাম অবশ্যই লিখে রাখতে হয়।

বীজ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ : বীজ পরিপক্ব হলে প্রতি গাছের বীজ আলাদা আলাদা ব্যাগে ট্যাগ সহকারে সংগ্রহ করা হয়। বীজ শুকিয়ে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়, যেন তা অন্যান্য বীজের সঙ্গে মিশে যেতে না পারে এবং পোকামাকড় কর্তৃক আক্রান্ত হতে না পারে।

হাইব্রিড বীজের ব্যবহার : উপরোক্তভাবে উৎপাদিত সংকর (হাইব্রিড) বীজকে শুধু একবারেই ব্যবহার করা যাবে। কোনোভাবেই পরবর্তী বছর তা থেকে বীজ রাখা যাবে না এবং খাবারের জন্য ব্যবহার করা উচিত নয়।

দিন দিন আমাদের দেশে হাইব্রিড সবজি চাষাবাদ বাড়ছে। আমাদের দেশকে ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করার লক্ষ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সুখী, সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে সবজি উৎপাদন কয়েকগুণ বাড়াতে হবে। আর এক্ষেত্রে অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে সবজিতে শতভাগ হাইব্রিড বীজের ব্যবহার। হাইব্রিড বীজকে কৃষকের মধ্যে জনপ্রিয় করতে হবে এবং সে সঙ্গে সঙ্গে হাইব্রিড সবজি বীজের প্রাপ্যতাও নিশ্চিত করতে হবে।

এক্ষেত্রে একটি ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত আছে যে, হাইব্রিড সবজির স্বাদ দেশি সবজির মতো হয় না। এ ধারণা সঠিক নয়। হাইব্রিড সবজির স্বাদ নির্ভর করে প্রজনকদ্বয়ের স্বাদের ওপর এবং রাসায়নিক সারের ব্যবহারের ওপর। মাত্রাঅতিরিক্ত রাসায়নিক সারের ব্যবহারের কারণে সবজির স্বাদে কিছুটা ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়।

বর্তমানে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওয়াতাধীন বিএডিসি ‘বিএডিসির সবজি বীজ বিভাগের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে হাইব্রিড সবজি বীজ উৎপাদন প্রক্রিয়াজতকরণ, সংরক্ষণ ও বিতরণ কার্যক্রম শক্তিশালীকরণ প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

আশা করা যায়, এই প্রকল্পের গবেষণা প্রান্তিক পর্যায়ে হাইব্রিড সবজি বীজের স্বল্পমূলে প্রাপ্যতা নিশ্চিত হবে এবং দেশে সবজি চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব হবে।

ড. বাহাউদ্দিন আহমদ ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সবজি বিভাগ, উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র বিএআরআই, জয়দেবপুর, গাজীপুর

শেয়ার করুন

প্রকাশ : মার্চ ৭, ২০২১ ৯:০৮ অপরাহ্ন
কৃষি গবেষণায় উদারভাবে অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছে সরকার: কৃষিমন্ত্রী
কৃষি বিভাগ

একসময় দেশে গবেষণার প্রায় পুরোটাই ছিল বিদেশি সাহায্যনির্ভর। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার কৃষিগবেষণায় ও কৃষির উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে উদারভাবে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক।

রবিবার রাজধানীতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) মিলনায়তনে কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন (কেজিএফ) আয়োজিত সংস্থাটির ‘সার্বিক অগ্রগতি এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা’ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রযুক্তিতে বিদেশনির্ভরতা কমাতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গবেষণা সম্প্রসারণের মাধ্যমে লাগসই দেশিয় প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হবে। চাষাবাদ, উপকরণ ব্যবহার ও অর্গানিক পদ্ধতিতে উৎপাদনসহ সকল কৃষিপ্রযুক্তি নিজেদেরকে আরও বেশি উদ্ভাবন ও তা দ্রুততার সাথে সম্প্রসারণ করতে হবে।

কেজিএফকে বরাদ্দপ্রাপ্ত অর্থের যথাযথ ও সুষ্ঠু ব্যবহারের নির্দেশ দিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, সরকার কেজিএফকে যে উদ্দেশ্যে অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে-সে লক্ষ্য অর্জনে অর্থের যথাযথ ও সুষ্ঠু ব্যবহার করতে হবে। প্রকল্প গ্রহণে অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে। যেনতেন প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ দিলে চলবে না। চরাঞ্চল, উপকূলীয় লবণাক্ত এলাকা, পাহাড় বা হাওরের প্রতিকূল এলাকায় কীভাবে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়- সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট, লক্ষ্যনির্ধারণী ও ফলাফলনির্দিষ্ট গবেষণা করতে হবে। একইসাথে, প্রকল্প বাস্তবায়ন, মূল্যায়ন ও মনিটরিং কার্যক্রমকেও শক্তিশালী করতে হবে। কেজিএফের গবেষণা থেকে বা উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে কৃষি উৎপাদন বা ফলন বৃদ্ধি কতটুকু হয়েছে- তার যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কেজিএফের চেয়ারম্যান ও বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কেজিএফের প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট (হর্টিকালচার) ড. শাহাবুদ্দীন আহমদ। কেজিএফের সার্বিক অগ্রগতি ও ভবিষ্যত পরিকল্পনার উপর উপস্থাপনা করেন কেজিএফের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ড. ওয়ায়েস কবীর এবং বর্তমান নির্বাহী পরিচালক ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস।

শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop