ভালো বীজের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক
কৃষি গবেষনা
ভালো বীজের অভাবে বাড়ছে না কাক্সিক্ষত উৎপাদন। বছরের পর বছর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক। কৃষি বিভাগের তথ্যানুযায়ী, প্রতি বছর দেশে মোট ১৩ লাখ টন বিভিন্ন ফসলের বীজের চাহিদা রয়েছে। অথচ, মানসম্পন্ন বীজের জোগান দেওয়ার দায়িত্বে থাকা সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) সরবরাহ করতে পারছে দেড় লাখ টনেরও কম। এর মধ্যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বীজের একটি অংশ সরবরাহ করলেও চাহিদার বড় অংশ মিটছে প্রান্তিক কৃষকদের প্রথাগত পদ্ধতিতে সংরক্ষিত বীজ থেকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব বীজের মান ঠিক না থাকায় ফলন কম হচ্ছে। বদলে যাচ্ছে জাত।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১০-১১ অর্থবছরে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৬৫ টন বীজ উৎপাদন করে বিএডিসি। ১১ বছর পর গত ২০২০-২১ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৫০২ টনে। ১১ বছরে প্রতিষ্ঠানটির বীজ উৎপাদন প্রবৃদ্ধি মাত্র ৩.৭৮ শতাংশ। এদিকে বাজারে মানসম্পন্ন বীজের চাহিদার এ বিশাল শূন্যতা পূরণে এ সময়ে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। কিছু বীজ তারা দেশে উৎপাদন করছে, কিছু আমদানি হচ্ছে। তবে চাহিদার প্রায় ৩৮ শতাংশ বীজই আসছে কৃষকের ঘর থেকে। তবে এখানে বীজের মান বজায় রাখতে নেই সরকারি উদ্যোগ। অনেক ক্ষেত্রে এসব বীজে কাক্সিক্ষত ফসল হচ্ছে না। এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভালো ফসলের জন্য ভালো বীজ জরুরি। তবে এখনো বীজ উৎপাদনে সয়ংসম্পন্ন হতে পারছে না দেশ। এ খাতটিই সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে। মোট চাহিদার ১১ শতাংশের মতো বীজ সরবরাহ করছে বিএডিসি। সরকারিভাবে বীজ উৎপাদন বাড়লে কম দামে ভালো বীজ পেত কৃষক। কৃষক লাভবান হতো। মানসম্পন্ন বীজ কিনতে পারবে না ভেবে অনেক কৃষক নিজেই প্রথাগত পদ্ধতিতে বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিক্রি করছে। তাদের উৎপাদিত ফসল থেকে বীজ তৈরি করে বিক্রি করছে তারা। এসব বীজে কখনো ভালো ফসল হচ্ছে, কখনো একেবারে মাথায় হাত পড়ছে কৃষকের।
এ ব্যাপারে বিএডিসির সদস্য পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ৪৬ শতাংশ জনবল সংকট নিয়ে চলছে বিএডিসি। তার পরও সর্বোচ্চ সক্ষমতা ব্যবহার করে বীজ উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছি। উৎপাদন বাড়ছেও।
জানা গেছে, দেশে সবচেয়ে বেশি চাহিদা ধান বীজের। এ জন্য ধানের বীজ উৎপাদনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয় বিএডিসি। তবে বোরো মৌসুমে ১৮ হাজার টন বীজের চাহিদা থাকলেও বিএডিসি জোগান দেয় ১৩ শ থেকে ১৪ শ টন। বাকিটা আসে বেসরকারি খাত থেকে। এ ছাড়া বোরো ধানের বীজের ২১৮টি নিবন্ধিত জাতের ২০৩টি আসছে বেসরকারি খাত থেকে। বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যেখানে বছরে ১ হাজার টন সবজি বীজ উৎপাদন করছে, সেখানে বিএডিসি উৎপাদন করছে মাত্র ১১৫ টনের মতো। উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড বীজের ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ আসছে বেসরকারি খাত থেকে।