মাঝারি ও ছোট মুরগি খামারিদের জন্যে সৃজনশীল প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা
পোলট্রি
জুলাই থেকে শুরু হওয়া মাঝারি ও ছোট আকারের মুরগি খামারিদের জন্যে সম্মিলিতভাবে ওয়ান হেলথ্ পোল্ট্রি হাব বাংলাদেশ, সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় এবং ভেটেরিনারি হাসপাতাল, আফতাব বহুমুখী ফার্মস্ লিমিটেড এবং প্যারাগণ গ্রুপ লিমিটেড ২দিন ব্যাপী আয়োজন করেন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি।
এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচির প্রথম পর্ব শেষ হলো গত ১৪ই নভেম্বর। চট্টগ্রাম জেলার সাতটি উপজেলায় এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
এই ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে চট্টগ্রামের ১০৭ জন খামারিকে মুরগি লালন-পালন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। ওয়ান হেলথ্ পোল্ট্রি হাব, বাংলাদেশ এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে এনেছে ভিন্নতা। সরকারি পর্যায়ে কর্মরত ভেটেরিনারিয়ান, বেসরকারি সেক্টরে নিয়োজিত ভেটেরিনারিয়ান, একাডেমিক ভেটেরিনারিয়ান, উপজেলা মেডিক্যাল কর্মকর্তা, স্নাতোকোত্তর এবং ইন্টার্ন শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত প্রশিক্ষকদলের মাধ্যমে এই খামারিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।
এই প্রশিক্ষণে সৃজনশীল উপায়ে খামার পর্যায়ের বিভিন্ন সমস্যার দৃশ্যপটে খামারিদের অংশগ্রহণমূলক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার চেষ্টা করা হয়।
খামারিদের জন্যে বিশেষ শিক্ষাসামগ্রী, খামার বিষয়ক বই, লিফলেট এবং ওয়ান হেলথ পোল্ট্রি হাব, বাংলাদেশ কর্তৃক রচিত “পোল্ট্রি ম্যানুয়াল” নামের এই পু্স্তিকা প্রদান করা হয়। খামারিদের মুরগির খামারের জীব-নিরাপত্তা বিষয়ক একটি সচেতনামূলক ভিডিওর মাধ্যমে জীবনিরাপত্তা থাকার ভিত্তিতে দুইটি খামারের লাভের পার্থক্য বিষয়টি বুঝানো হয়। খামারিদের নিয়ে প্রশিক্ষণগণের খামার পরিদর্শন এবং সেই খামারের জীবনিরাপত্তা যাচাই ছিলো এই প্রশিক্ষণের একটি অন্যতম আয়োজন।
সেই সাথে অনলাইন প্লাটফর্ম জুমের মাধ্যমে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাসুদুজ্জামানের সাথে সরাসরি খামারিগণ তাদের খামারের নানাবিধও সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে উক্ত প্রশিক্ষণে। মুরগির বাচ্চার গুণাগুণ, পালন, জীব-নিরাপত্তা, এন্টিবায়োটিকের প্রয়োগ, ভেটেরিনারিয়ানের পরামর্শগ্রহণ প্রভৃতি বিষয়ে খামারিদের জ্ঞান মূল্যায়নের দরুন বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানের পূর্বে এবং পরে তাদের যাচাই করা হয়। খামারিদের খামারকরণে উত্সাহিত ও মনোযোগী করতে, ওয়ান হেলথ্ পোল্ট্রি হাববাংলাদেশ খামারিদের পুরষ্কার এবং সার্টিফিকেট প্রদান করে।
বিভিন্ন পর্যায়ে ভেটেরিনারিয়ানগণ ওয়ান হেলথ্ পোল্ট্রি হাব, বাংলাদেশের এই নতুন ধরনের খামারি প্রশিক্ষণের প্রশংসা করে বলেন, “আপনারা কিভাবে ২দিন ব্যাপী (সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা) খামারিদের মনোযোগ ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন! গতানুগতিক প্রশিক্ষণগুলোতে খামারিগণ এতো মনোযোগ দিতে চায় না এবং প্রশিক্ষণগুলো অংশমূলকও হয় না। তাই,প্রশিক্ষকরা জানতে পারেনা যে তারা এই প্রশিক্ষণটি থেকে কি শিখেছে, যেটা কিনা আমাদের প্রশিক্ষণ আয়োজনের প্রধান লক্ষ্য। এই দিক থেকে ওয়ান হেলথ্ পোল্ট্রি হাব, বাংলাদেশের খামার পর্যায়ে এই প্রশিক্ষণ অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে।”
এই প্রশিক্ষণে খামারিদের প্রাণিখাতের বিভিন্ন আইন যেমন, রোগসংক্রান্ত আইন (খামার নিবন্ধন, জীব-নিরাপত্তা, টিকা প্রদান, রোগসংক্রান্ত রিপোর্ট), প্রাণিখাদ্য আইন এবং প্রাণিকল্যাণ আইন বিষয়ে সচেতনতার জন্যে একটি পর্ব রাখা হয়। প্রাণবন্তভাবে খামারিগণ এই পর্বে অংশ নেয় এবং নানাবিধও আইন মেনে চলার বিষয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়।
চন্দনাইশ উপজেলায় আয়োজিত ৭ম প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন আক্তার। নাসরিন আক্তার বলেন, “পোল্ট্রি শিল্প টিকিয়ে রাখতে খামারিদের প্রশিক্ষিত করার কোনো বিকল্প নেই।
এই ধরনের প্রায়োগিক প্রশিক্ষণ থেকে আমাদের প্রান্তিক খামারিরা অনেক উপকৃত হবেন এবং এর মাধ্যমে সাধারণ ভোক্তাসমাজ ভেজালমুক্ত পোল্ট্রি পণ্য পেতে সক্ষম হবে। ”এছাড়া প্রশিক্ষণে উপস্থিত ছিলেন ডা. রুপেন চাকমা (উপজেলা লাইভস্টক অফিসার, চন্দনাইশ উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতাল); ডা. মাইদুল ইসলাম (এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার-টেকনিক্যাল সার্ভিস, আফতাব বহুমুখী ফার্মস্ লিমিটেড); ডা. মোহাম্মদ ফয়সাল(লাইভস্টক এক্সটেনশান অফিসার, চন্দনাইশ)।
ডা. রুপেন চাকমা খামারিদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনারা অনেক অভিজ্ঞ এবং বহু বছর যাবত্ মুরগি প্রতিপালন করছেন, তবুও আপনাদের মুরগি রোগাক্রান্ত হচ্ছে। যার মাধ্যমে বুঝা যায়, আপনাদের আরো প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। আমি মনে করি, আমরা সৌভাগ্যবান কারণ ওয়ান হেলথ্ পোল্ট্রি হাব বাংলাদেশ চট্টগ্রামের অনেক উপজেলার মাঝে এই উপজেলার খামারিদের প্রশিক্ষণের জন্যে বাছাই করেছেন। আশা করছি, আপনারা এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন।”
ওয়ান হেলথ্ পোল্ট্রি হাব বাংলাদেশের ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেটর প্রফেসর মোঃ আহসানুল হক এবং তার বাংলাদেশ হাব টিম, খামারিদের শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের জন্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় এবং ভেটেরিনারি হাসপাতালগুলোকে“সেন্ট্রাল অব এক্সিলেন্স” হিসেবেকাজ করতে পারে বলে মনে করেন।
প্রফেসর হক জানান, “ওয়ান হেলথ্ পোল্ট্রি হাব বাংলাদেশ বিভিন্ন পর্যায়ের খামারি প্রশিক্ষণের একটি মডেল করতে চায়। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে কর্মরত প্রাণি ও মনুষ্যসেবাখাতের প্রধান অংশীদারদের অংশগ্রহণে এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচিকে আরো টেকসই ও বেগবান করতে সহায়ক হবে।
তিনি আরো বলেন,”ওয়ান হেলথ্ কনসেপ্টকে কেন্দ্র করে এই পুরো প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আয়োজন করা হচ্ছে। ডাক্তার এবং ভেটের মেলবন্ধনে একই প্লাটফরম থেকে খামারিদের জুনোটিক এবং এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স এর মতো গুরুত্বপূর্ণসমস্যাগুলো খামারিদের সামনে তুলে ধরা হয় এই প্রশিক্ষণে।”
এই প্রশিক্ষণসমূহের শিক্ষণীয় উপকরণ তৈরি এবং এর ভবিষ্যত প্রয়োগসহ সামগ্রিক পর্যালোচনার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছেন প্রফেসর আয়োনা সিলভা ফ্লেচার (রয়েল ভেটেরিনারি কলেজ) এবং রবিন এলডার্স (অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি)।ইউকে গবেষণা উদ্ভাবনের জিসিএরএফ-এর মাধ্যমে এই প্রশিক্ষণের অর্থায়ন করা হচ্ছে।