১১:১৮ অপরাহ্ন

বৃহস্পতিবার, ২ মে , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
প্রকাশ : নভেম্বর ৫, ২০২৩ ১১:১১ পূর্বাহ্ন
গরু মোটাতাজাকরণে জৈব পদ্ধতির ব্যবহার
প্রাণিসম্পদ

গরু মোটাতাজাকরণে ইনজেকশন কিংবা গ্রোথ হরমোন ছাড়া কোন বাস্তবসম্মত উপায় নাই বলে অনেকের ধারণা। কিন্তু এ্টি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। বরং ইনজেকশনের মাধ্যমে এন্টিবায়োটিক প্রয়োগে গরু মোটাতাজাকরণ ও সেই মাংস ভক্ষণ স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই এন্টিবায়োটিক কিংবা গ্রোথ হরমোনের ব্যবহার ছাড়াই জৈব পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণে জোর দিতে হবে।

জৈব পদ্ধতিতে গরুমোটাতাজাকরণ করার জন্য চাই খামারীর ইচ্ছাশক্তি আর সৎ উদ্দেশ্য তাহলেই বিভিন্ন এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার ব্যাতিত গরু মোটাতাজাকরণ করা সম্ভব। সেজন্য কিছু নিয়ম অনুসরণ করলেই চলবে।

মূলত গরুমোটাতাজাকরণ বলতে অধিক মাংস উৎপাদনের জন্য ২ থেকে ৩ বছর বয়সের শীর্ণকায় গরুকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় খাদ্য সরবরাহ করে হৃষ্টপুষ্ট গরুতে রূপান্তরিত করাকেই বুঝায়।

গরুমোটাতাজাকরণের গুরুত্বঃ
দারিদ্রতা হ্রাসকরণ, অল্প সময়ে কম পুঁজিতে অধিক মুনাফা অর্জন, অল্প সময়ের মধ্যে লাভসহ মূলধন ফেরত পাওয়া, প্রাণীজ আমিষের ঘাটতি পূরণ, স্বল্পমেয়াদি প্রযুক্তি হওয়ার কারণে পশু মৃত্যুর হার কম, কৃষিকার্য হতে উৎপাদিত উপজাত পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে সহজেই মাংস উৎপাদন করা, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে আয় বৃদ্ধি করা প্রভৃতি।

গরুমোটাতাজাকরণে জৈব পদ্ধতির ব্যবহার

মোটাতাজাকরণের সঠিক সময়:
বয়সের উপর ভিত্তি করে সাধারণত ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে গরু মোটাতাজাকরণ করা যায়। অনেক সময় ৫ থেকে ৬ মাসও সময় লাগতে পারে। গরু মোটাতাজাকরণের জন্য সুবিধাজনক সময় হচ্ছে বর্ষা এবং শরৎকাল যখন প্রচুর পরিমাণ কাঁচাঘাস পাওয়া যায়। চাহিদার উপর ভিত্তি করে কোরবানী ঈদের ৫ থেকে ৬ মাস পূর্ব থেকে গরুকে উন্নত খাদ্য ও ব্যবস্থাপনা দিয়ে মোটাতাজাকরণ লাভজনক।

স্থান নির্বাচন:
গরু রাখার স্থান নির্বাচনে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে:

১। শুষ্ক ও উঁচু জায়গা হতে হবে, যাতে খামার প্রাঙ্গণে পানি না জমে থাকে।

২। খোলামেলা ও প্রচুর আলো বাতাসের সুযোগ থাকতে হবে।

৩। খামারে কাঁচামাল সরবরাহ ও উৎপাদিত দ্রব্যাদি বাজারজাতকরণের জন্য যোগাযোগ সুবিধা থাকতে হবে।

৪। পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহের সুষ্ঠু ব্যবস্থা থাকতে হবে।

৫। সুষ্ঠু পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকতে হবে।

গরু নির্বাচন:
উন্নত দেশের মাংসের গরুর বিশেষ জাত রয়েছে। বিদেশি গরুর জন্য উন্নত খাদ্য ও ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। তাই দেশীয় গরু মোটাতাজাকরণ অলাভজনক। ২ থেকে ২.৫ বছরের গরুর শারীরিক বৃদ্ধি ও গঠন মোটাতাজাকরণের জন্য বেশি ভাল। এঁড়ে বাছুরের দৈহিক বৃদ্ধির হার বকনা বাছুরের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে। তবে বাছুরের বুক চওড়া ও ভরাট, পেট চ্যাপ্টা ও বুকের সাথে সমান্তরাল, মাথা ছোট ও কপাল প্রশস্ত, চোখ উজ্জ্বল ও ভেজা ভেজা, পা খাটো প্রকৃতির ও হাড়ের জোড়াগুলো স্ফীত, পাজর প্রশস্ত ও বিস্তৃত, শিরদাড়া সোজা হতে হবে।

গরুর খাদ্যের ধরণ:
খাদ্যে মোট খরচের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ ভাগ ব্যয় হয়। তাই স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত খাদ্য দ্বারা খরচ কমানো সম্ভব। এজন্য গরু মোটাতাজাকরণের একটি সুষম খাদ্য তালিকা নিচে দেওয়া হল:

ক) শুকনো খড়: দুই বছরের গরুর জন্য দৈহিক ওজনের শতকরা ৩ ভাগ এবং এর অধিক বয়সের গরুর জন্য শতকরা ২ ভাগ শুকনো খড় ২ থেকে ৩ ইঞ্চি করে কেটে একরাত লালীগুড়/চিটাগুড় মিশ্রিত পানিতে ভিজিয়ে প্রতিদিন সরবরাহ করতে হবে।

পানি: চিটাগুড় = ২০ : ১।

খ) কাঁচাঘাস: প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ কেজি তাজা ঘাস বা শস্যজাতীয় তাজা উদ্ভিদের উপজাত দ্রব্য যেমন- নেপিয়ার, পারা, জার্মান, দেশজ মাটি কালাই, খেসারি, দুর্বা ইত্যাদি সরবরাহ করতে হবে।

গ) দানাদার খাদ্য: প্রতিদিন কমপক্ষে ১ থেকে ২ কেজি দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। নিচে ১০০ কেজি দানাদার খাদ্যে তালিকা দেওয়া হল:১. গম ভাঙা/গমের ভূসি-৪০ কেজি; ২. চালের কুঁড়া-২৩.৫ কেজি; ৩. খেসারি বা যেকোনো ডালের ভূসি-১৫ কেজি: ৪. তিলের খৈল/সরিষার খৈল-২০ কেজি; লবণ-১.৫ কেজি। তাছাড়াও বিভিন্ন রকমের ইউরিয়া মোলাসেস ব্লক ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি হচ্ছে ৩৯ ভাগ চিটাগুড়, ২০ ভাগ গমের ভূসি, ২০ ভাগ ধানের কুঁড়া, ১০ ভাগ ইউরিয়া, ৬ ভাগ চুন ও ৫ ভাগ লবণের মিশ্রণ।

রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা:
ক. প্রতিদিন নিয়মিতভাবে পশুর গা ধোয়াতে হবে;

খ. গো-শালা ও পার্শ্ববর্তী স্থান সর্বদা পরিস্কার রাখতে হবে:

গ. নিয়মিতভাবে গরুকে কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে;

ঘ. বাসস্থান সর্বদা পরিস্কার রাখতে হবে।

ঙ. স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পরিমিত পরিমাণে পানি ও সুষম খাদ্য প্রদান করতে হবে।

চ. রোগাক্রান্ত পশুকে অবশ্যই পৃথক করে রাখতে হবে।

ছ. খাবার পাত্র পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

জ. খামারের সার্বিক জৈব নিরাপত্তা রক্ষা করতে হবে।

ঝ. পশু জটিল রোগে আক্রান্ত হলে পশুচিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

বাজারজাতকরণ:
মোটাতাজাকরণ গরু লাভজনকভাবে সঠিক সময়ে ভাল মূল্যে বাজারজাতকরণের ব্যবস্থাগ্রহণ হচ্ছে আরেকটি উল্লেখ্যযোগ্য বিষয়। বাংলাদেশে মাংসের জন্য বিক্রয়যোগ্য গবাদিপশুর বাজারমূল্যেও মৌসুমভিত্তিক হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। কাজেই একজন প্রতিপালককে গরু মোটাতাজাকরণের জন্য অবশ্যই গরুর ক্রয়মূল্য যখন কম থাকে তখন গরু ক্রয় করে বিক্রয়মূল্যের উর্ধ্বগতির সময়ে বিক্রয়ের ব্যবস্থা নিতে হবে। সাধারণত কোরবানীর ঈদের সময়ে গরুর মূল্য অত্যাধিক থাকে এবং এর পরের মাসেই বাজার দর হ্রাস পায়। তাই এখন গরু মোটাতাজাকরণের উপযুক্ত সময় এবং কোরবানীর সময় তা বিক্রি করে দেওয়া ভাল।
সূত্র: আজকের কৃষি

শেয়ার করুন

প্রকাশ : অক্টোবর ২৮, ২০২৩ ৯:৫৫ পূর্বাহ্ন
শীতে ছাগলের যত্ন…
প্রাণিসম্পদ

শীতের সময়টা ছাগল পালনের জন্য খুবই কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয়। এই সময়ে, তাদের স্বাস্থ্য রক্ষা করা প্রয়োজন। ছাগলের স্বাস্থ্য ও আরামের জন্য যথাযথ পরিচর্যা , খাবার ও ব্যবস্থা করতে হবে।

বাসস্থান

ছাগলের সঠিক পরিচর্যার জন্য ভালো বাসস্থান প্রয়োজন। শীতের সময়, ছাগলকে ঠান্ডা থেকে রক্ষা করার জন্য একটি উষ্ণ আশ্রয় প্রয়োজন। উত্তর বায়ু প্রবাহ থেকে তাদের বাসস্থান রক্ষা করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

ঠান্ডা থেকে সুরক্ষা

ছাগলের স্বাভাবিকভাবেই পুরু চামড়া থাকে , যা তাদের ঠান্ডা মোকাবেলা করতে সাহায্য করে এবং একটি প্রতিরক্ষামূলক ঢাল হিসেবেও কাজ করে। এই পুরু চামড়া ছাগলের শরীরে বাতাসের প্রবল প্রবাহ কমায় এবং শরীরের ভিতরে হালকা আর্দ্রতা ধরে রাখে।

খাদ্য ও পানীয়

সরিষার তেল ছাগলের শরীরে উষ্ণতা প্রদান করে। এ ছাড়া কেকের সঙ্গে আলফা বা মিশ্রিত ঘাসও ছাগলের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

বাচ্চাদের যত্ন নেবেন যেভাবে

বাচ্চা প্রসবকারী ছাগলের শীতকালে বিশেষ যত্ন ও আশ্রয় প্রয়োজন। ছোট বাচ্চাদের শরীরের তাপমাত্রা উষ্ণ রাখতে তাদের মায়ের প্রয়োজন। এমন পরিস্থিতিতে ছাগলের বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।

রোগ প্রতিরোধ

শীতকালে ছাগলের মধ্যে উকুন সংক্রমণের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায় , যা তাদের জন্য বেশ অসুবিধাজনক। এ ছাড়া মারাত্মক রক্তস্বল্পতা এবং ত্বক পচে যাওয়ার মতো সমস্যাও দেখা দেয়। এই পরজীবীগুলি পরিচালনা করতে, আপনাকে অবশ্যই আপনার নিকটস্থ পশুচিকিত্সকের সাহায্য নিতে হবে।

ছাগল পালন খুবই লাভজনক একটি ব্যবসা। তাদের পশুপাল হিসাবে পালন করা একটি সন্তোষজনক অভিজ্ঞতা। সঠিক পরিকল্পনার সাথে প্রতিদিন তাদের যত্ন নেওয়া আপনার ব্যবসাকে খুব লাভজনক করে তুলতে পারে।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : অক্টোবর ২৬, ২০২৩ ২:৫১ অপরাহ্ন
একটি ডেইরী ফার্ম শুরু করবেন যেভাবে
প্রাণিসম্পদ

ডেইরী ফার্ম কিভাবে শুরু করা যেতে পারে এটা অনেকের মনেই প্রশ্ন আসে। ফার্ম শুরু করার আগে ও পরে যে ব্যাপারগুলো বিবেচনা করা দরকার যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উদাহারণ হিসেবে বলা যায়, ফার্মের জায়গাটা কোথায়, সেখানে ডাক্তার, গরুর খাবার, দুধের দাম, দুধ বিক্রি খুব সহজে করা যায় কিনা তা জানতে হবে। এসবের পাশাপাশি অনেকে জানতে চান ফার্মটা কি রকম হবে, কয়টা গরু দিয়ে শুরু করলে ব্যবসাটা লাভবান হতে পারে। তবে লিখাটা তাদের জন্য যারা খুব ছোট আকারে, একেবারে কম খরচে পাইলট প্রোজেক্ট আকারে শুরু করে বুঝতে চান অথবা যাদের বাজেট কম।

পরিকল্পনা এবং কৌশল: বাজেট টাকা ৩৮০,০০০/- এবং কমপক্ষে ১৫ লিটার দুধের গরু (বাছুরসহ) ২ টা। গোয়াল ঘর: ৩০ ফিট বাই ১৫ ফিট, ইলেক্ট্রিক আর পানির ব্যবস্থা অবশ্যই থাকতে হবে। এবার হিসাব নিকাশ এ আসা যাক।

এককালীন খরচ: ২ টা দুধের গরুর দাম : ৩০০,০০০/- গোয়াল ঘর : ৬০,০০০/- ইলেক্ট্রিক/ পানি : ২০,০০০/- মাসিক আয়-ব্যায়ের হিসাব: ‪‎দুধ বিক্রি থেকে আয়: ২০ লি: x ৫০ = ১০০০ টাকা প্রতিদিনের আয়। তাহলে মাসিক আয়: ১০০০ x ৩০ = ৩০০০০ টাকা। (দুধ ২০ লিটার দেখানো হয়েছে কারণ একটা ১৫ লিটার দুধের গরু ৮ মাসই ১৫ লিটার দুধ দেবে না, ধীরে ধীরে কমতে থাকবে, তাই গড়পড়তা ১০ লিটার প্রতিদিন দেখানো হয়েছে) ‪

‎মাসিক ব্যয়: কর্মচারীর মাসিক বেতন: ৭০০০ টাকা, গরু প্রতি খাবার খরচ: ১৫০ টাকা প্রতিদিন, তাহলে মাসিক খরচ: ৯০০০ টাকা। মেডিসিন এবং অন্যান্য: ২০০০ টাকা। তাহলে মোট ব্যয়: ১৮,০০০ টাকা। (গরু যত বেশি হবে ১ জন কর্মচারীর বেতন বাবদ গড়পড়তা খরচ অনেক কম হবে)।

মাসিক লাভ: ৩০০০০-১৮০০০= ১২,০০০ টাকা। এককালীন উপরের ৩৮০,০০০ টাকা খরচগুলো উঠে আসতে সময় লাগবে ৩১ মাস বা ২ বছর ৭ মাস। কৌশলগতভাবে এই মাসিক আয়কে ধরে রাখতে ৮ মাস পরে আবার ২ টা দুধের গরু কিনতে হবে ২য় পদক্ষেপে। তাহলে একটা সার্কেলের মধ্যে পড়ে যাবে এবং সেক্ষেত্রে কখনই পকেট থেকে টাকা খরচ করে খাবার খরচ আর বেতনাদি পরিশোধ করতে হবে না। আর বড় ধরনের দুর্ঘটনা বা অসুখ-বিসুখ যা আমাদের নিয়ন্ত্রিত নয় তা এখানে দেখানো হয়নি।

২.৫ বছর পর ব্যলান্সসিট কেমন হবে? সম্পদের পরিমাণ কত হবে (মানে কতগুলো গরু আছে এবং তার মূল্য কত), এটা বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি তা বের করা যায়, তাহলেই বোঝা যাবে ডেইরী ব্যবসা কেমন হবে।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : অক্টোবর ২৫, ২০২৩ ১২:০৩ অপরাহ্ন
গরু মোটাতাজাকরণে খাদ্য মিশ্রণ তৈরির উপায়
প্রাণিসম্পদ

গরু মোটাতাজাকরণে খাদ্য মিশ্রণ তৈরির উপায় খামারিরা অনেকেই জানেন না। আপনার এলাকায় প্রয়োজনীয় উপকরণের সহজ প্রাপ্যতা এবং দামের বিষয়টি বিবেচনা করে আপনি দানাদার খাদ্যের মিশ্রণের উপকরণ পরিবর্তনও করা যাবে।
প্রথম মিশ্রণঃ

উপকরণ পরিমাণ

১। গমের ভূষি ৫.৪ কেজি

২। খেসারীর ভূষি ২.০ কেজি

৩। তিলের খৈল ১.৮ কেজি

৪। শুটকি মাছের গুড়া ৭০০ গ্রাম

৫। লবন ৫০ গ্রাম

৬। ঝিনুকের গুড়া ৫০ গ্রাম

দ্বিতীয় মিশ্রণঃ

উপকরণ পরিমাণ

১। চাল ভাঙ্গা (খুদ) ২.৫ কেজি

২। গমের ভূষি ১.৫ কেজি

৩। চালের কুড়া ২.০ কেজি

৪। মসুরের ভূষি ১.৯ কেজি গ্রাম

৫। তিলের খৈল ১.৫ কেজি

৬। শুটকি মাছের গুড়া ৫০০ গ্রাম

৭। ঝিনুকের গুড়া ৫০ গ্রাম

৮। লবণ ৫০ গ্রাম

তৃতীয় মিশ্রণঃ

উপকরণ পরিমাণ

১। চাল ভাঙ্গা (খুদ) ১.০ কেজি

২। গমের ভূষি ১.৫ কেজি

৩। চালের কুড়া ৪.০ কেজি

৪। খেসারি ভাঙ্গা ১.০ কেজি গ্রাম

৫। সরিষার খৈল ২.০ কেজি

৬। শুটকি মাছের গুড়া ৪০০ গ্রাম

৭। ঝিনুকের গুড়া ৫০ গ্রাম

৮। লবণ ৫০ গ্রাম

চতুর্থ মিশ্রণঃ

উপকরণ পরিমাণ

১। খেসারীর ভূষি ১.৪ কেজি

২। গমের ভূষি ১.০ কেজি

৩। চালের কুড়া ৫.০ কেজি

৪। মসুরের ভূষি ১.০ কেজি গ্রাম

৫। তিলের খৈল ১.৫ কেজি

৬। ঝিনুকের গুড়া ৫০ গ্রাম

৭। লবণ ৫০ গ্রাম

শেয়ার করুন

প্রকাশ : অক্টোবর ১১, ২০২৩ ৭:০১ অপরাহ্ন
মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান চলাকালে আইন লঙ্ঘন করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে – মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী
প্রাণিসম্পদ

মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান চলাকালে আইন লঙ্ঘন করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

বুধবার (১১ অক্টোবর) সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২৩ বাস্তবায়ন উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী একথা জানান।

এ সময় মন্ত্রী বলেন, মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান চলাকালে যারা আইন লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মা ইলিশ রক্ষায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, আইন অমান্যকারীদের আইনের আওতায় আনা এবং মা ইলিশ সংরক্ষণের সময়ে কোন মাছ ধরা নৌযান যাতে নদী বা সাগরে যেতে না পারে সেজন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার সাথে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গতবছর মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান সফলভাবে বাস্তবায়ন হওয়ায় ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধের ২২ দিনে প্রায় ৫২ শতাংশ মা ইলিশ ডিম ছাড়তে সক্ষম হয়েছে। ফলে গত বছর প্রায় ৮ লক্ষ ৫ হাজার ৫১৫ কেজি ডিম উৎপাদন হয়েছে যা থেকে প্রায় ৪০ হাজার ২৭৬ কোটি জাটকা ইলিশ জনতায় যুক্ত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের কৃষ্টির উল্লেখযোগ্য একটি অংশ জুড়ে রয়েছে ইলিশ মাছ। বিশ্বে উৎপাদিত মোট ইলিশের ৮০ ভাগের ঊর্ধ্বে বাংলাদেশে উৎপাদন হয়। দেশে ইলিশ মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি, গুণগত মানে সমৃদ্ধ করা, বড় আকারের ইলিশ উৎপাদন-এর সব ক্ষেত্রেই বিভিন্ন রকম নিয়ম-কানুন অনুসরণ করা হয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জাটকা নিধন না করা আর মা ইলিশ সংরক্ষণ।

তিনি আরও বলেন, এ বছর ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান পালন করা হবে। অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর সরকার আরও বেশি তৎপর রয়েছে যাতে মা ইলিশ কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। মা ইলিশ ও জাটকা সংরক্ষণের ফলে দেশে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে, গুণগত মান বেড়েছে, বড় ইলিশ মাছ পাওয়া যাচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত রাখার জন্য সরকার এ বছর মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান পালন করতে যাচ্ছে। এর উল্লেখযোগ্য অংশ হিসেবে মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জলপথে, স্থলপথে এমনকি আকাশ পথে মা ইলিশ রক্ষায় পর্যবেক্ষণ করবে। যারা এ সময় ইলিশ আহরণ থেকে বিরত থাকবে, তাদের যাতে কষ্ট না হয় সেজন্য সরকার ভিজিএফ সহায়তা দিচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশের ইলিশসমৃদ্ধ ৩৭ জেলার ১৫৫ উপজেলায় এ সহায়তা পৌঁছে গেছে। এর আওতায় মোট ৫ লক্ষ ৫৪ হাজার ৮৮৭ টি জেলে পরিবারকে ২৫ কেজি হারে মোট ১৩ হাজার ৮৭২.১৮ মেট্রিক টন খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।

মন্ত্রী আরও জানান, ইলিশ সম্পদের উন্নয়নে সরকার নানা সমন্বিত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করায় ইলিশ আহরণ আশাতীতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ইলিশের আহরণ ছিল ২.৯৮ লাখ মেট্রিক টন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের গৃহীত পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় ইলিশের আহরণ বৃদ্ধি পেয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫.৭১ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। বিগত ১৫ বছরে ইলিশের উৎপাদন প্রায় ৯২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

সরকার পর্যাপ্ত ইলিশ উৎপাদনে সহায়তা করছে জানিয়ে
মন্ত্রী আরও যোগ করেন, এ বছর মা ইলিশ বা জাটকা ধরে ফেললে আগামী বছর ইলিশের উৎপাদন কমে যাবে। ইলিশের উৎপাদন কমে গেলে যারা ইলিশ আহরণ করে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বড় ইলিশ উৎপাদন হলে যারা এখন ইলিশ আহরণে সম্পৃক্ত তারাই সে সময় ধরবেন, তারাই বিক্রি করবেন, বেশি মূল্য তারাই পাবেন।

সাংবাদিকদের মন্ত্রী আরও জানান, পরিবেশ, পারিপার্শ্বিকতা জলবায়ুর কারণে ইলিশের বিচরণ ও গতিপ্রকৃতি পরিবর্তন হয়। অপরিকল্পিত ড্রেজিং, যানবাহন থেকে নির্গত পোড়া তেলের দূষণ, অভয়াশ্রমে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মাছ আহরণসহ নানা কারণে ইলিশের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এরপরও সরকার ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সচেষ্ট রয়েছে।

ইলিশ রপ্তানির বিষয়ে এ সময় মন্ত্রী বলেন, ইলিশ এখন কূটনীতির অংশে পরিণত হয়েছে। পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে সীমিত পরিসরে ইলিশ রপ্তানি হয়ে থাকে। যা প্রতিবেশি দুই দেশের বাণিজ্যিকসহ কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। ২০১৯-২০ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত ৫ হাজার ৫৪১ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রপ্তানি করা হয়েছে, যা থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৪৩৯ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকার ৩ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে। এ পর্যন্ত ৬০৯ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রপ্তানি হয়েছে, যা থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৬২ লাখ মার্কিন ডলার।

ইলিশের দাম বৃদ্ধি সংক্রান্ত সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ইলিশ উৎপাদনে ব্যয় না থাকলেও ইলিশ আহরণ, সংরক্ষণ ও পরিবহন খাতে ব্যয় রয়েছে। নিষিদ্ধ সময়ে যারা ইলিশ আহরণে বিরত থাকে তাদের জন্য ভিজিএফ সহায়তা, বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাসহ নানাভাবে সরকার সহায়তা করে। তবে ব্যবসায়ীদের অধিক মুনাফা লাভের কারণে ইলিশের দাম যে পর্যায়ে সহনীয় থাকা উচিত, তার চেয়ে বেশি দেখা যায়। এক্ষেত্রে বাজার ব্যবস্থাপনার সাথে সম্পৃক্তদের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে নানাভাবে তাগিদ দেওয়া হচ্ছে এবং দাম নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে তারা বেশ কিছু কাজও করেছে। মাছ আহরণের কেন্দ্র থেকে বিপণন পর্যন্ত আরও বেশি কঠোর নজরদারি এবং দেখভাল করা হলে ইলিশের দাম আরও সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভব।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ, অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল কাইয়ূম, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : অক্টোবর ৯, ২০২৩ ১১:০৩ পূর্বাহ্ন
গবাদি পশুর গলাফুলা রোগ ও প্রতিকার
প্রাণিসম্পদ

গলাফুলা একটি তীব্র প্রকৃতির রোগ যা গরু এবং মহিষকে আক্রান্ত করে। এটি একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ যা Pasteurella multocida দ্বারা সংঘটিত হয়। এ রোগে মৃত্যুর হার খুবই বেশি। বর্ষাকালে গলাফুলা রোগ বেশি দেখা যায়। আমাদের দেশে বর্ষার শুরুতে এবং বর্ষার শেষে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। পশুর শরীরে স্বাভাবিক অবস্থায় এ রোগের জীবাণু বিদ্যমান থাকে। কোনো কারণে যদি পশু ধকল যেমন ঠান্ডা, অধিক গরম, ভ্রমণজনিত দুর্বলতা ইত্যাদির সম্মুখীন হয় তখনই এ রোগ বেশি দেখা দেয়। গলাফুলা রোগের প্রচলিত নাম ব্যাংগা, ঘটু, গলগটু, গলবেরা ইত্যাদি।

 

এপিডেমিওলজি ও রোগজননতত্ত্ব
গলাফুলা (hemorrhagic septicemia) এশিয়া, আফ্রিকা, দক্ষিণ ইউরোপের কিছু দেশ ও মধ্যপ্রাচ্যে বিদ্যমান। তবে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় এটি বেশি পরিলক্ষিত হয়। গলাফুলা মূলত গরু ও মহিষের রোগ হলেও শুকর, ছাগল, ভেড়া, ঘোড়া, বাইসন, উট, হাতী এমনকি বানরেও এ রোগ হতে পারে। এ রোগ বছরের যে কোনো সময় হতে পারে তবে বর্ষাকালে এর প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি। বাহক পশুর টনসিল ও ন্যাজো-ফ্যারিনজিয়াল মিউকোসায় এ রোগের জীবাণু থাকে। অনুকূল পরিবেশে রক্তে এ রোগের জীবাণুর সংখ্যা বেড়ে গিয়ে
septicemia করে। এই বৃদ্বিপ্রাপ্ত জীবাণু মরে গিয়ে এন্ডোটক্সিন নিঃসৃত হয় যার ফলে রক্ত দূষিত হয়ে পড়ে। এন্ডোটক্সিন রক্তের ক্যাপিলারিস নষ্ট করে; ফলে এডিমা হয়। এছাড়া এন্ডোটক্সিন একদিকে কোষ কলা বিনষ্ট করে দেহে হিস্টামিনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে অন্যদিকে টিস্যু বিনষ্টের ফলে টিস্যুর প্রোটিন ভেঙ্গে রক্তে প্রোটিনের পরিমাণ হ্রাস পায়। ফলে, এডিমার সৃষ্টি হয়। সে কারণে এ রোগে আক্রান্ত পশুর গলা ফুলে যায় ও রক্তে জীবাণুর উপস্থিতির (septicemia) কারণে পশুর দ্রুত মৃত্যু হয়।

লক্ষণ
এ রোগ অতি তীব্র ও তীব্র এ দুই ভাবে হতে পারে। অতি তীব্র প্রকৃতির রোগে হঠাৎ জ্বর (১০৬-১০৭০ ফা) হয়ে মুখ ও নাক দিয়ে তরল পদার্থ বের হতে থাকে। পশু অবসাদগ্রস্থ হয়ে পড়ে ও খাওয়া বন্ধ করে দেয় এবং ২৪ ঘন্টার মধ্যে মৃতু্য ঘটে। তীব্র প্রকৃতির রোগে আক্রান্ত পশু ২৪ ঘন্টার অধিক বেঁচে থাকে। এ সময় পশুর এডিমা দেখা দেয় যা প্রথমে গলার নিচে, পরে চোয়াল, তলপেট এবং নাক, মুখ, মাথা ও কানের অংশে বিসতৃত হয়।
গলায় স্ফীতি থাকলে গলার ভেতর ঘড় ঘড় শব্দ হয় যা অনেক সময় দূর থেকে শোনা যায়। প্রদাহযুক্ত ফোলা স্থানে ব্যথা থাকে এবং হাত দিলে গরম ও শক্ত অনুভূত হয়। সূঁচ দিয়ে ছিদ্র করলে উক্ত স্থান হতে হলুদ বর্ণের তরল পদার্থ বের হয়ে আসে। অনেক সময় কাশি হয় এবং চোখে পিচুটি দেখা যায়। নাক দিয়ে ঘন সাদা শ্লেষ্মা পড়তে দেখা যায়। সাধারণত লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার ৪৮ ঘন্টার মধ্যে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আক্রান্ত পশু মারা যায়। মারা যাবার সাথে সাথে পেট খুব ফুলে উঠে এবং নাক ও মুখ দিয়ে তরল পদার্থ বের হতে থাকে। পোস্টমর্টেম করলে পেরিকার্ডিয়াল স্যাক (pericardial sac) এ রক্ত মিশ্রিত তরল পদার্থ দেখা যায়, যা থোরাসিক (thoracic) এবং এবডোমিনাল ক্যাভিটি (abdominal cavity) তে বিসতৃত হতে পারে। ফ্যারিনজিয়াল এবং সার্ভাইক্যাল লিম্ফনোডে বিন্দু আকৃতির (petechial) রক্তক্ষরণ পরিলক্ষিত হয়।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব
গলাফুলা রোগের যথেষ্ট অর্থনৈতিক গুরুত্ব আছে বিশেষত, এশিয়া এবং আফ্রিকার কিছু দেশে। এশিয়াতে ৩০% গবাদিপশু এ রোগের প্রতি সংবেদনশীল। ভারত দুগ্ধ উৎপাদনে এশিয়াতে সর্বোচ্চ যেখানে ৫০% দুধ আসে মহিষ থেকে, যারা এ রোগের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। ভারতে গত চার দশক ধরে গলাফুলা রোগে মৃত্যু হার গবাদিপশুর মৃত্যুহারের ৪৬-৫৫%। ১৯৭৪ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ভারতে গবাদিপশুর ৫টি মহামারীতে আক্রান্ত গবাদিপশুর ৫৮.৭% মারা যায়। এই ৫টি মহামারী হল ক্ষুরারোগ, রিন্ডারপেষ্ট, বাদলা, এনথ্রাক্স এবং গলাফুলা। শ্রীলংকায় ১৯৭০ এর দশকে পরিচালিত একটি অপঃরাব সারভ্যাইল্যান্স স্টাডিতে দেখা গেছে গলাফুলা আক্রান্ত স্থানসমূহে বছরে প্রায় ১৫% মহিষ এবং ৮% গরু গলাফুলার কারণে মারা যায়। পাকিস্তানে একটি রির্পোটে দেখা গেছে সেখানে গবাদিপশুর মোট মৃত্যুর ৩৪.৪% মারা যায় গলাফুলা রোগে। মায়ানমারে পশু রোগ নিয়ন্ত্রণে বরাদ্দকৃত মোট বাজেটের ৫০ ভাগ ব্যয় হয় গলাফুলা রোগ দমনে। গলাফুলা রোগে শুধু গবাদিপশুর মৃত্যুই ঘটে না, সাথে সাথে বেশ কিছু অপ্রত্যক্ষ ক্ষতিও হয়। যেমন –
উৎপাদন হ্রাসঃ মাংস, দুধ, জোয়াল টানা, হালচাষের বিকল্প উপায়ের জন্য মোট ব্যয় ইত্যাদি। পশুর প্রজনন ক্ষমতা বিঘি্নত হওয়া, চিকিংসা খরচ ইত্যাদি।

প্রতিরোধ
এ রোগ উচ্ছেদ করা অসম্ভব কারণ এ রোগের জীবাণু স্বাভাবিক অবস্থায় পশুর দেহে থাকে। তবে নিম্নোক্ত ব্যবস্থা অবলম্বন করে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
• রোগাক্রান্ত পশুকে সুস্থ পশু থেকে আলাদা করে সুস্থ পশুকে টিকা দানের ব্যবস্থা করতে হবে।
• মড়কের সময় পশুর চলাচল নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
• হঠাৎ আবহাওয়া পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পশুর পরিচর্যার ব্যবস্থা করতে হবে।
• টিকা প্রয়োগের মাধ্যমে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।

ঢাকার মহাখালীতে অবস্থিত এল.আর. আই কতৃর্ক প্রস্তুতকৃত টিকার নাম গলাফুলা টিকা। লোকাল স্ট্রেইন দ্বারা প্রস্তুতকৃত এই অয়েল এডজুভেন্ট টিকা সাধারণত প্রাপ্তবয়স্ক (৬ মাস বয়সের উপরে) গবাদিপশুকে ২ মিলি মাত্রায় ও ছাগল ভেড়াকে ১ মিলি মাত্রায় প্রয়োগ করতে হয়। এ রোগের প্রাদুর্ভাব আছে এরূপ এলাকায় ৬ মাস বা তদুধর্ব বয়সী বাছুরে প্রাপ্ত বয়স্ক গরুর অর্ধেক মাত্রায় টিকা দিতে হয়। এলাম অধঃপাতিত (Alum precipitated) টিকা মাংসে প্রদান করা হয়। যেহেতু দুই ধরনের টিকাই মাঠপর্যায়ে ব্যবহার হয় তাই বিষয়টির দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। কারণ অয়েল এডজুভেন্ট টিকা তেল থেকে প্রস্তুতকৃত বিধায় এই টিকা ভুলক্রমে মাংসে প্রদান করলে মাংসে প্রদাহ সৃষ্টি হয়ে মাংসের ক্ষতি হয় এবং সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। টিকা প্রদানের ২-৩ সপ্তাহ পর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মাতে শুরু করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ১ বৎসর কাল পর্যন্ত বজায় থাকে। এই টিকা মৃত জীবাণুর দ্বারা প্রস্তুত বিধায় এই টিকা প্রদানের মাধ্যমে রোগ বিস্তারের কোনো সম্ভাবনা নাই। টিকা প্রয়োগের স্থান ২/৩ দিন পর্যন্ত ফোলা থাকতে পারে। ত্রুটিপূর্ণ ইনজেকশনের কারণে এই ফোলা স্বাভাবিক এর চেয়ে কয়েকদিন বেশি থাকতে পারে। ক্ষেত্র বিশেষে এনাফাইলেকটিক শক দেখা দিতে পারে। কোনো এলাকায় বা খামারে টিকা প্রদানের পূর্বে অল্প কয়েকটি গবাদিপশুকে টিকা প্রদানের পর ২৫-৩০ মিনিট অপেক্ষা করে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায় কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা শ্রেয়। যদি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায় তবে উক্ত বোতলের টিকা পুনরায় ব্যবহার করা যাবে না। অয়েল এডজুভেন্ট টিকা বেশ ঘন হওয়ায় এই টিকা প্রদানে মোটা বারের নিডল ব্যবহার করা সুবিধাজনক।

রোগ নির্ণয়
হঠাৎ মৃত্যু হয় এ ধরনের রোগ যেমন বজ্রপাত, সাপে কাটা, বাদলা রোগ, রিন্ডারপেস্ট, এনথ্রাক্স ইত্যাদি থেকে গলাফোলা রোগকে আলাদা করতে হবে। সেরোলজিক্যাল টেস্ট যেমন
Indirect hemagglutination test এ উচ্চ টাইটার লেভেল (১:১৬০ বা তার বেশি) পাওয়া গেলে এ রোগ সমন্ধে নিশ্চিত হওয়া যায়।

চিকিৎসা
আক্রান্ত পশুর চিকিৎসায় বিলম্ব হলে সুফল পাওয়া যাবে না। তাই রোগের উপসর্গ দেখা দেয়ার সাথে সাথে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রতিরোধ
ভ্যাকসিনই এ রোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে ভাল উপায়। মূলত তিন ধরনের ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এগুলো হল প্লেইন ব্যাকটেরিন, এলাম অধ:পাতিত ব্যাকটেরিন এবং অয়েল এডজুভেন্ট ব্যাকটেরিন। এর মধ্যে ৬ মাস বিরতিতে এলাম অধ:পাতিত ব্যাকটেরিন এবং ৯ থেকে ১২ মাস অন্তর অয়েল এডজুভেন্ট ভ্যাকসিন দিতে হয়। ভালো ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত খামারে বাছুরকে ৩ থেকে ৬ মাস বয়সে প্রথম, ৩ মাস পরে বুস্টার এবং এরপর বছরে একবার টিকা দিতে হয়। উন্মুক্ত খামারে বর্ষা শুরু হওয়ার আগেই বাৎসরিক টিকার কোর্স শুরু করতে হয়।

লেখক: ডাঃ এ, এইচ. এম. সাইদুল হক
এক্সিকিউটিভ, ভেটেরিনারী সার্ভিসেস, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল

শেয়ার করুন

প্রকাশ : অক্টোবর ৯, ২০২৩ ১১:০৩ পূর্বাহ্ন
গবাদি প্রাণির উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও করণীয়
প্রাণিসম্পদ

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের একটি বিষয়। আবহাওয়ার হঠাৎ পরিবর্তন লাইভস্টকের ক্ষেত্রে একটি বড় বাঁধা। দেশের অনেকেরই জীবিকা নির্বাহের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে গরু মহিষের খামার । জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে যা সরাসরি প্রভাব ফেলছে গবাদি প্রাণির দুধ উৎপাদন এবং স্বাস্থ্যের উপর, ফলে আর্থিক ক্ষতির সম্মূখীন হচ্ছেন কৃষক ।

দুগ্ধজাত গবাদি প্রাণির উপর জলবায়ুগত প্রভাবের ফলে যে সব সাধারণ লক্ষণ দেখা দিচ্ছে তা হলো- খাদ্য গ্রহণ হ্রাস, দুধ উৎপাদন এবং দুধের চর্বি হ্রাস, শ্বাস-প্রশ্বাসের হার বৃদ্ধি, শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস।

 

দুধ উৎপাদনের উপর প্রভাব – তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে গবাদি প্রণিরা কম খাদ্য গ্রহণ করে। যদি পানির ব্যবস্থাপনা সঠিক না হয়, তাহলে প্রাণি তার শরীরে থাকা পানিকে দুধ উৎপাদনে ব্যবহার না করে তার শরীরকে ঠান্ডা রাখার জন্য ব্যবহার করে। যার কারণে দুধ উৎপাদন ও দুধে চর্বি কমে যায়।

প্রজনন কর্মক্ষমতার উপর প্রভাব – দুগ্ধজাত প্রাণিরা শীতের তুলনায় তাপের প্রভাব বেশি অনুভব করে, যা দুগ্ধজাত প্রাণির প্রজনন কর্মক্ষমতাকে বিরূপভাবে প্রভাবিত করে। বেশি তাপের প্রভাবে প্রাণি কম গরমে আসে, গরমে এলেও ভালোভাবে তাপের লক্ষণ দেখা যায় না। এদিকে গর্ভবতী গবাদিপ্রাণির অকালে ভ্রুণ মৃত্যুর সম্ভাবনাও প্রবল।

 

প্রচন্ড গরমে গবাদিপ্রাণির যত্নে যা যা করনীয়ঃ

  • তাপ এবং শক্তিশালী সূর্যালোক থেকে প্রাণিদের রক্ষা করুন।
  • গবাদি প্রাণির জন্য ঘন ছায়াযুক্ত গাছ লাগান।
  • খোলা এবং বায়ুচলাচল শেড তৈরি করুন যা প্রাণীদের আর্দ্রতা এবং সরাসরি সূর্যালোক থেকে রক্ষা করে।
  • শেডের ছাদ পরিষ্কার এবং সাদা রঙের হতে হবে।
  • পুকুরে মহিষকে গোসল করানো এবং ধারায় ঝর্ণার পানি ছিটিয়ে দেওয়া।
  • প্রাণির জন্য সর্বদা বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন।
  • পাখা, কুলার, ফোয়ারা ইত্যাদির মতো শেড কুলিং ডিভাইসের ব্যবস্থা।
  • একটি সুষম খাদ্য নিশ্চিত করুন, যাতে প্রায় ১৬ শতাংশ হজমযোগ্য অপরিশোধিত প্রোটিন থাকা উচিত।
  • খনিজগুলির পরিপূরক করার জন্য পশুর খাদ্যে ধাতব স্ক্র্যাপ যোগ করুন।
  • গ্রীষ্মকালে ১০ টার আগে এবং ৪-৫ টার পরে খাবার প্রয়োগ করুন।
  • মাঠে চরাতে গবাদি প্রাণিকে বাইরে পাঠাবেন না। শীত না হলে ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় সকালে বা সন্ধ্যায় চরাতে হবে ।

 

আশা করা যায় উপরোক্ত বিষয়গুলো মাথায় রাখলে খামারিরা তাদের দুগ্ধজাত প্রাণিকে প্রচণ্ড গরম থেকে বাঁচাতে পারবেন এবং দুগ্ধ ব্যবসা থেকে অধিক মুনাফা অর্জন করতে পারবে।

 

শেয়ার করুন

প্রকাশ : অক্টোবর ৯, ২০২৩ ১০:৫৭ পূর্বাহ্ন
গবাদি পশুর খামার যেভাবে মাছিমুক্ত রাখবেন
প্রাণিসম্পদ

মাছির যন্ত্রণায় কেবল মানুষ বিরক্ত এমনটি নয়। বরং মাছির যন্ত্রণায় সবচেয়ে বেশি বিরক্ত এবং রোগাক্রান্ত হচ্ছে গবাদিপশু। কারণ এই মাছির মাধ্যমে খামারে বিভিন্ন রোগ জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে। যা গবাদিপশুর অত্যন্ত ক্ষতিকর। এই জন্য প্রতিটা গবাদিপশু খামারিকে খামার থেকে মাছি দূর করার উপায় সম্পর্কে জানা খুবই দরকার। কারণ মাছি তাড়াতে না পারলে আপনার স্বপ্নের খামার থেকে প্রত্যাশিত আয় করতে পারবেন না।

খামার থেকে মাছি দূর করার উপায়:

মাছি তাড়ানোর সবচেয়ে ভালো কৌশল হলো খামারের আশে-পাশে গাছ লাগানো। বাতাসে গাছের নড়া-ছড়াতে খামারে মাছি আসবে কম। এছাড়া খামারে আশে-পাশে কিছু সবুজ বৃক্ষাদি থাকলে পরিবেশের জন্যও ভালো।

গবাদিপশুর মল-মূত্র নিয়মতি ও দ্রুত সেসব পরিষ্কার করতে হবে। কারণ এগুলো জমা হলেই মাছি এসে জমাট বাঁধে। আর এটাই হলো মাছিদের ডিম পাড়ার উপযুক্ত জায়গা। একবারে ৭৫–১৫০টি ডিম পাড়ে এরা। ডিম ফুটে বাচ্চা বেরোতে সময় লাগে মাত্র ২৪ ঘণ্টা।

লেবু টুকরো টুকরো করে ভেতরের অংশে অনেকগুলো লবঙ্গ গেঁথে দিন। লেবুর মধ্যে লবঙ্গের পুরোটা ঢুকাবেন শুধুমাত্র লবঙ্গের মাথার দিকের অংশ বাইরে থাকবে। এরপর লেবুর টুকরাগুলো একটি প্লেটে করে খামারের কোণায় রেখে দিন। এই পদ্ধতিতে মশা-মাছি, পোকামাকড় একেবারেই দূর হয়ে যাবে।

ব্যবহৃত চা-পাতা ফেলে না দিয়ে ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিন। এইভাবে ওই চা পাতা ধুনোর বদলে ব্যবহার করুন। শুকনো চা পাতা পোড়ানো ধোঁয়ায় সমস্ত মশা, মাছি পালিয়ে যাবে।

রসুন বেটে পানিতে মিশিয়ে তরল করে পুরো খামারে স্প্রে করতে পারেন। এটা মশা তাড়াতে খুবই কার্যকরী প্রাকৃতিক উপায়। খামারের মাছি তাড়াতে এর যেকোনো একটি উপায় প্রয়োগ করুন।

গরুর গায়ে স্প্রে করার জন্য ২ মিলি তারপিন তেল (অয়েল তারপিন, স্পিরিট তারপিন বা থিনার না), ২ গ্রাম কর্পুর (ন্যাপথালিন গুঁড়াও অনেকে দেন) এ দুইটা জিনিস ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে গরুর গায়ে স্প্রে করলে মাছি বসবে না।

মশা-মাছি কর্পুরের গন্ধ একেবারেই সহ্য করতে পারে না। একটি ৫০ গ্রামের কর্পুরের ট্যাবলেট একটি ছোট বাটিতে রেখে বাটিটি পানি দিয়ে পূর্ণ করুন। এরপর এটি খামারের কোনায় রেখে দিন।

তাৎক্ষণিকভাবেই মশা- মাছি গায়েব হয়ে যাবে। দুই দিন পর পানি পরিবর্তন করে নিন। আগের পানিটুকু ফেলে না দিয়ে ফার্মে ছিটিয়ে দিলে পোকামাকড় ও পিঁপড়ের যন্ত্রণা থেকেও মুক্তি পাবেন।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৩ ১:৫১ অপরাহ্ন
আক্কেলপুরে ছাগল ও ভেড়ার পিপিআর ভ্যাকসিন কার্যক্রমের উদ্বোধন
প্রাণিসম্পদ

দেশব্যাপী ছাগল ও ভেড়ার পিপিআর রোগ নির্মূলের লক্ষ্যে পিপিআর রোগ নির্মূল ও ক্ষুরারোগ নিয়ন্ত্রন প্রকল্পের আওতায় জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে বিনামুল্যে পিপিআর টিকা প্রদান ক্যাম্পের উদ্বোধন করা হয়েছে।

শনিবার সকালে উপজেলার কেশবপুর গ্রামে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনায় ছাগল ও ভেড়ার টিকা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন জেলা ভেটেরিনারি অফিসার ডাঃ রুস্তম আলী। এসময় উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজ হোসেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ রাশেদুল ইসলামসহ অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ ।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস জানায়, ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ৯ অক্টোবর ২০২৩ পর্যন্ত মোট ৭টি বিশেষ টিমের মাধ্যমে উপজেলার সব এলাকায় সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলবে। এই সময়ের মধ্যে প্রায় ৬৯ হাজার ছাগল ও ভেড়াকে বিনামূল্যে পিপিআর টিকা প্রদান করা হবে।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৩ ৬:৫৫ অপরাহ্ন
ডিম সংরক্ষণের ৪ টি সহজ পদ্ধতি…
প্রাণিসম্পদ

ডিমের মূল গুণাগুণ বজায় রাখতে সঠিক নিয়মে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। দিনে ৩-৪ বার ডিম সংগ্রহ করতে হবে। গরমকালে ডিম সংগ্রহের পরই যতটা সম্ভব ঠান্ডা জায়গায় জড়ো করতে হবে। কিছু দিনের জন্য রাখতে চাইলে ১২.৮ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় এবং মাসের পর মাস ডিম রাখতে চাইলে ১.৭-০.৬ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে। ঠান্ডা ঘরের আর্দ্রতা হবে ৮৫%।

আধুনিক পদ্ধতিতে ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ডিম সংরক্ষণ করা গ্রামীণ পরিবেশে সম্ভব নয়, কারণ এতে যে প্রযুক্তি ও আধুনিক সরঞ্জামের প্রয়োজন তা আমাদের নেই। তাই সংরক্ষণের আধুনিক পদ্ধতিকে এড়িয়ে দেশিয় উপযোগী পদ্ধতি ব্যবহারের দিকে নজর রাখা দরকার, যাতে করে গ্রামাঞ্চলে সাধারণ মানুষের পক্ষে তা প্রয়োগ করা সম্ভব হয়।

(১) সোডিয়াম সিলিকেট দ্বারা সংরক্ষণ- ভালো ডিম বাছাই করে তরল সোডিয়াম সিলিকেটে সংরক্ষণ করা হয়। এ পদ্ধতিতে ১ কেজি সোডিয়াম সিলিকেট ১০ লিটার পানিতে ভালোভাবে গুলে তরল করা হয়। এই তরলে ১৫ ডজন ডিম সংরক্ষণ করা যায়। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় আড়াই মাস পর্যন্ত ডিম ভালো থাকে।

(২) চুনের পানি দ্বারা সংরক্ষণ- এ পদ্ধতিতে ১ কেজি চুন ২০ লিটার পানিতে গুলে ১০ মিনিট থিতাল হয়। চুনের পানিতে ডিম  ডুবিয়ে রাখা হয়। এ উপায়ে ২ মাস পর্যন্ত ডিম সংরক্ষণ করা যায়।

(৩) তেল দ্বারা সংরক্ষণ- এ পদ্ধতিতে বর্ণ, স্বাদ ও গন্ধহীন নারিকেল বা সয়াবিন তেল ব্যবহার করা হয়। তেলে ডিমগুলো ডুবিয়ে পরে অন্য পাত্রে উঠিয়ে রাখা হয়। এ পদ্ধতিতে ডিম পাড়ার পর পরই সংরক্ষণ করতে হয়। এভাবে প্রায় এক মাস পর্যন্ত ডিমের গুণাগুণ অক্ষুণœ রাখা সম্ভব। প্যারাফিন ডিমে মাখিয়ে এটাই করা সম্ভব।

(৪) গরম পানি দ্বারা সংরক্ষণ- এ পদ্ধতিতে ১৩০ ডিগ্রি ফারেনহাইট গরম পানিতে ১৫ মিনিট অথবা ১৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইট গরম পানিতে ৩-৫ মিনিট ডিম রেখে তারপর অন্য পাত্রে উঠিয়ে রাখা ভালো। এতে এক মাস পর্যন্ত ডিমের গুণাগুণ অক্ষুণ্ণ থাকে।

এ গুলো ছাড়াও আধুনিক সংরক্ষণ পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে হিমায়িত শুষ্ক ডিম। ডিমকে পুরোপুরি শুকনো করার ব্যবস্থা এখন আরও বেশি চালু। স্থানান্তর করতে জায়গা যেমন কম লাগে ঠিক তেমনি ঠান্ডা ঘরের কোন দরকার পড়ে না। তবে প্রক্রিয়ার মূলধন বেশি লাগে।

 

ডা: মনোজিৎ কুমার সরকার

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, কাউনিয়া, রংপুর

মোবাইল : ০১৭১৫২৭১০২৬

ই-মেইল :[email protected]

শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop