নিষিদ্ধ জালে মাছ শিকার!
মৎস্য
দিন-দুপুরে নিষিদ্ধ জালে মাছ শিকার করলেও দেখার কেউ নেই, অভিযোগ স্থানীয়দের
উপকূলীয় জনপদ বরগুনার বেতাগী উপজেলার বিভিন্ন খাল-বিলে অবাধে নিষিদ্ধ জালে মাছ শিকার হচ্ছে। এতে মারা পড়ছে দেশের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও পোনা। স্থানীয়দের অভিযোগ, মৎস্য কর্মকর্তা এ বিষয়ে এখনো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেননি।
শুক্রবার (২১ অক্টোবর) সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার বিবিচিনি, বেতাগী সদর ও হোসনাবাদ ইউনিয়নের কয়েকটি খালে নিষিদ্ধ বেহুন্দি আর ভাসা জালসহ ছোট ছোট নৌকা নিয়ে নির্ভয়ে মাছ শিকারিরা বসে আছেন। দিন-দুপুরে নিষিদ্ধ জাল পেতে মাছ শিকার করলেও দেখার কেউ নেই, এমন অভিযোগ করেছেন ওই এলাকার একাধিক ব্যক্তি।
উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে জানা গেছে, পৌরসভাসহ সাতটি ইউনিয়ন ও দেড় লক্ষাধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত এ উপজেলায় ছোট-বড় ৪০টি খাল, সাতটি বিল, ১৪টি প্লাবনভূমি, ১১ হাজার ৬২৩টি পুকুর ও একটি নদী রয়েছে। এ থেকে বছরে ৩৩৬৫ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয়। দৈনিক জনপ্রতি মাছের চাহিদা ৬৫ গ্রাম। সে হিসেবে উপজেলায় মোট জনসংখ্যার বাৎসরিক মাছের চাহিদা ২৮০০ মেট্রিক টন। চাহিদা মিটিয়ে বছরে উদ্বৃত্ত থাকে ৫৬৫ মেট্রিক টন। বিবিচিনি ইউনিয়নের কারিকরপাড়া খাল, গড়িয়াবুনিয়া, নাপিতখালী, সিদ্ধান্ত, সদর ইউনিয়নের কবিরাজের খাল, বাসন্ডা, বেড়েরধন, লক্ষ্মীপুরা, হোসনাবাদের উত্তর কাটাখালী, ধনমানিক চত্রা, জলিসা খালসহ উপজেলাজুড়ে বিভিন্ন খাল ও বিলে তিন শতাধিক নিষিদ্ধ জাল ব্যবহারে অবাধে স্থানীয় জেলেরা মাছ শিকার করেন। শিকারিদের জালে আটকা পড়ে বিলুপ্তপ্রায় চিংড়ি, কালিবাউশ, বাইলা, গুইল্লা, পুঁটি গুইল্লা, ইছা, বোয়াল, পাবদা, পুঁটি, শোল ও টাকি মাছ। এছাড়া এসব খালের বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে পানিপ্রবাহের গতিরোধ করা হচ্ছে। এতে মৎস্য উৎপাদন যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি ফসল উৎপাদনও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
বেহুন্দি জাল দিয়ে মাছ ধরছিলেন স্থানীয় এক যুবক। তিনি বলেন, সবাই ধরে, কেউ কিছু বলে না। তাই আমিও ধরি। এই এলাকার বেশিরভাগ জেলে ভাসা জাল, কারেন্ট জাল, বেহুন্দি জাল দিয়ে মাছ ধরেন। এসব জালে প্রায় সব ধরনের মাছ আটকা পড়ে।
স্থানীয়রা বলেন, একসময় এসব খালে বড় বড় বোয়াল, শোল, টাকি, চিংড়ি, বাইন মাছ থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশি মাছ ধরা পড়ত। এখন বাজারে খাঁচা ভরে ছোট ছোট দেশি মাছ বিক্রি হয়। দু’বছর আগেও মাঝে মাঝে প্রশাসনের লোকজন এসে খাল-বিল থেকে অবৈধ জাল তুলে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলতেন। কিন্তু এখন আর কেউ অবৈধ জাল ব্যবহারে নিষেধও করছেন না।
জানা গেছে, স্থানীয় বাজারেই নিষিদ্ধ জাল বিক্রি হচ্ছে। পৌর শহরের বাসিন্দা কামাল হোসেন বলেন, নিষিদ্ধ জাল পাতা বন্ধ করতে হলে দোকানগুলোতে নিয়মিত অভিযান চালাতে হবে। পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে জেলেরা যাতে অবৈধভাবে দেশি মাছ না ধরেন সে বিষয়ে তদারকি জোরদার করতে হবে।
বিবিচিনি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বুলু সিকদার বলেন, নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল দিয়ে দেশি প্রজাতির মাছ ধরার ব্যাপারে মৎস্য কর্মকর্তার ভূমিকা রহস্যজনক।
সংশ্লিষ্ট এলাকার একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ, বেহুন্দি জাল দিয়ে স্থানীয় জেলেরা যে মাছ ধরছেন, তার লভ্যাংশের একাংশ মৎস্য কর্মকর্তার পকেটে যাচ্ছে। এজন্য কর্মকর্তা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল গাফফর ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সুহৃদ সালেহীন জানান, খাল, বিল ও মুক্ত জলাশয়ে কারেন্ট জাল, বেহুন্দি, ভাসা, ডুব জাল, টানা জাল, চর জাল, পেকুয়া জাল সবই নিষিদ্ধ। কেউ এর ব্যত্যয় ঘটালে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বেশ কিছু স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। দ্রুত সেসব স্থানে অভিযান পরিচালনা করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কালের কণ্ঠ